সেই মার্চমাসের শেষ থেকে বাড়ির বাইরে বেরনো বন্ধ লকডাউনের জন্য। বাড়িতে বসে কী করা যায়? ছবি আঁকা হবে? বেশ তাই হোক।
রোজ দুপুরে শুরু হলো ঋদ্ধির ছবি আঁকা। একেকদিন একেকরকম ছবি। ইচ্ছামতীর বন্ধুরা সেসব ছবি দেখলে খুব মজা হবে।
প্রথম ছবিতে রয়েছে একখানা পার্ক। বয় অ্যান্ড গার্ল পার্কে খেলে বেড়াচ্ছে। পার্কে স্লাইড আছে, দোলনা আছে, ত্রাম্পোলিন আছে, একধারে আপেলগাছ আর অন্যধারে কমলালেবুর গাছ আছে, পায়ের নিচে নরম সবুজ গাছ আছে, সব মিলিয়ে ভারি আরামের ছবি। ঋদ্ধির নিজেরও এত ভাল লেগেছিল যে ছবির পাতাটা খুলেই রেখেছিল সারা সন্ধে।
আরেকদিন ঋদ্ধি আঁকল রেলস্টেশন। প্ল্যাটফর্মের ওপর ঋদ্ধি বাবা মা আর দিভাই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সবার হাতে ব্যাগ, বোধহয় বেড়াতে যাচ্ছে।
তারপর একদিন ঋদ্ধি বলল "জল আঁকব, বোট শিপ ভাসাবো।"
ড্রইংখাতায় একটা দুটো নৌকো হল, জাহাজ হল, নীল জলের ভেতরে মাছ হাঙ্গর হল, নীল আকাশে ছাইরঙা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালো, মোটকথা এ ছবিও চোখের আরাম।
আরেকদিন। কী আঁকব কী আঁকব? জঙ্গল আঁকা হোক। সে জঙ্গলে গাছপালা তো আছেই, আর আছে হাতি আর হাতির ছানা, ছানাপোনা নিয়ে সিংহমামা, গাছের ফাঁকে ফাঁকে উড়তে থাকা চিড়ু, মানে চিড়িয়া, অর্থাৎ পাখি। সবুজ মাঠে ফুটে থাকা টিউলিপ আর তাতে এসে বসা তিতলি প্রজাপতি আছে, পুকুরের নীল জলে ফুটে থাকা পদ্ম আর জলে খেলে বেড়ানো হাঁস আছে। আর আছে আকাশে ইয়াব্বড় একখানা রামধনু। দেখলেই মনে হয় এক্ষুনি যাব জঙ্গলে!
এরপর একটু রাজারানিদের ব্যাপারস্যাপার আসছে। পরের ছবিতে আছে রং ঝলমলে মস্ত বড় এক কেল্লা, তার একছাদে বসে আছেন রাজা আর রানি, আর আরেক ছাদে সৈনিকরা, সঙ্গে বেড়াল আর বাঁদর। বেড়ালটাকে চিনতে পারলে? এ সেই লন্ডনে গিয়েছিল রানির সঙ্গে দেখা করতে, আর চেয়ারের নিচে বসে থাকা ইঁদুরটাকে ভয় দেখিয়েছিল! বাঁদরটিও তেমন কেউ কেউকেটাই হবেন নিশ্চয়ই।
এরপরের ছবিতে আবার নীল জলরাশি। ছবির চরিত্ররা নতুন, ঋদ্ধির একখানা বই আছে, তাতে ডেভিড সুসান অ্যালেক্স তিন ভাইবোন বাবামায়ের সঙ্গে নানান জায়গায় যায়, আর সেখানে নানান মজা করে। যেমন ধরো এই ছবিতেই। সি-বিচে সবাই কী আনন্দেই না ছুটি কাটাচ্ছে! ডেভিড আর রাহুল চলল মাছ ধরতে, সুসানও কিছু খেলছে, মা চেয়ারে বসে জ্যুস খাচ্ছেন, আকাশে উড়ছে এরোপ্লেন, সব মিলিয়ে শান্ত ছুটির ছবি।
এবারের ছবিটি একটু সিনেমা ঘেঁষা। ঋদ্ধির দুই প্রিয় চরিত্র 'অ্যাডভেঞ্চার অফ জোজো ' র জোজো আর শিবু। তারা দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়ের নিচে, পাশে আছে শিবুর হাতি ননী। পাহাড়ের মাথায় আগুন জ্বলছে, আবার বৃষ্টিও নামছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। কী ব্যাপার কে জানে? নিচের মাঠে ওদিকে পিকনিক চলছে হইহই করে। মাদুর পেতে তাতে লুচি চিকেন জিলিপির প্লেট রাখা হয়েছে, পুতুল আছে ব্যাট আছে বল আছে, এক্কেবারে সত্যিকারের পিকনিকের মতোই আয়োজন সব!
ছবিগুলি এঁকেছেঃ ঋদ্ধি চক্রবর্তী,
লোয়ার কিন্ডারগার্টেন, বিড়লা ওপেন মাইন্ডস ইন্টারন্যাশ্নাল স্কুল, ধানবাদ
ঋদ্ধি তো এখনও গুছিয়ে গল্প বলতে শেখেনি, তাই তার মা, ধূপছায়া মজুমদার ছবির বর্ণনা গুছিয়ে লিখে দিলেন।