আর মাত্র তিন দিন। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে এবছরের দুর্গোৎসব। গত দুই বছরের টানা-পোড়েন, ভয়, দুঃশ্চিন্তা কাটিয়ে আনন্দে মেতে উঠব আমরা সবাই। এইবছর বাঙালির দুর্গাপুজো নিয়ে উত্তেজনা যেন আরও একটু বেশি। একে তো করোনাভাইরাসের ভয় অনেকটাই কমে গেছে; আর দ্বিতীয় ভালো ব্যাপার হল, গতবছর ইউনেস্কোর 'List of Intangible Cultural Heritage' -এর তালিকায় যুক্ত হওয়ার পরে, আমাদের এই বাৎসরিক উৎসব নিয়ে আনন্দ-উদ্দীপনা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে।
দুর্গাপুজো কারোর কাছে ঘরে ফেরার উৎসব; অন্য কারোর কাছে আবার ঘর থেকে ছুটি নিয়ে বেড়িয়ে আসার সময়। কারোর কাছে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে গোলাভরা ফসলের স্বপ্ন, কিংবা বাণিজ্যে উন্নতি; কেউ কেউ আবার সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এই উৎসবের, কারণ এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই তাঁদের রুজিরুটির যোগান হয়। কেউ কেউ মনে করেন, এ উৎসবের মূল মন্ত্র হল দুষ্টের দমন আর শিষ্টের প্রতিপালন। কারোর মতে , এ উৎসবে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয় নিজের সুখ-আনন্দ । কারোর জন্য এ হল নতুন বন্ধু তৈরি করার দিন, কারোর কাছে এ হল পুরনো ঝগড়া মিটিয়ে নেওয়ার সময়। তোমার কাছে দুর্গাপুজো মানে স্কুলে লম্বা ছুটি, আর বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-মজা-হুটোপুটি। আজকের দিনে, বাঙালির দুর্গাপুজো আর কোনো এক বিশেষ ধর্মের মানুষদের নিজস্ব অনুষ্ঠান রূপে পরিচিত নয়। এই উৎসবের প্রতিটা মূহুর্তে জড়িয়ে থাকে ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-জাতি নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাজ, ইচ্ছে, স্বপ্ন, ভালোবাসা। আর ঠিক সেই কারণেই বাঙালির দুর্গোৎসব হয়ে ওঠে অন্যান্য অনেক উৎসবের থেকে একেবারে আলাদা। সেই ফারাক হাতে ধরে, চোখে দেখে বা কানে শুনে বোঝা যায় না; সেই আলাদা মেজাজ বুঝতে গেলে, সব কিছু ভুলে, কয়েকদিনের জন্য সবার সঙ্গে মিলেমিশে এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে হয়। ইউনেস্কোর এই সম্মানে সম্মানিত হয়ে, আমাদের এই প্রাণের উৎসবের রূপ ও রস ছুঁয়ে যাক দেশ-কাল ভেদে সমস্ত মানুষকে—এমনটাই হোক আমাদের চাওয়া।
দুর্গাপুজোর মরসুম ইচ্ছামতীর কাছে কী? আর চাঁদের বুড়ির কাছেই বা কী? ভুলে গেছিলে? এই শিউলি-ঝরা মরসুম ইচ্ছামতীর কাছে আর একটু বড় হওয়ার সময়; আর চাঁদের বুড়ির আর একটু বুড়ো হওয়ার সময়। আজ ২৭ সেপ্টেম্বর, ইচ্ছামতীর জন্মদিন যে! এই বছর চৌদ্দ বছর পূর্ণ করল ইচ্ছামতী, পনেরোয় পা দিল। ইচ্ছামতীর এই এগিয়ে চলার, এই বড় হয়ে ওঠার পথে কালি-কলম-কাগজ-কীবোর্ড-রং-তুলি-পেন্সিল-স্টাইলাস-গ্রাফিক ট্যাব-কল্পনা-ভাবনা-মতামত-উৎসাহ-উদ্যম-সহযোগিতা নিয়ে, হাসি-কান্না-হীরা-পান্না সাজিয়ে সঙ্গে থেকেছেন যাঁরা, আমাদের সেই প্রত্যেক বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাই। ২০০৮ সালের শরতে প্রকাশিত সেই প্রথম সংখ্যা থেকে ইচ্ছামতীকে প্রশ্রয় দিয়েছেন যাঁরা — সেই সমস্ত লেখক, শিল্পী, সহযোগী এবং পাঠকদের অকুন্ঠ ধন্যবাদ জানাই। যাদের কথা মনে রেখে এই পত্রিকার শুরু, আমাদের সেই সব ছোট্ট বন্ধুদের জন্য রইল ভালোবাসা।
অন্যান্য বছরের মতই, আমাদের এই বছরের পুজোস্পেশ্যাল পোস্টারখানি এঁকেছেন শিল্পী অনুভব সোম। এমন পোস্টার দেখে ইচ্ছামতী আর চাঁদের বুড়ি, দুজনেরই মনে হয়েছে — আহা, অমন মেঘের ভেলায় চেপে হুউশ করে কোথাও একটা বেড়াতে চলে যেতে পারলে বেশ হত! অনুভবকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। সারা বছর ধরে ইচ্ছামতীকে রঙে-রেখায় সাজিয়ে তুলতে সাহায্য করেন — আর এই সেপ্টেম্বর কিস্তিতেও ছবি এঁকেছেন যাঁরা — পার্থ মুখার্জি,শিল্পী ঘোষ, আবির, মিতিল ; আমাদের নতুন শিল্পী বন্ধু সুস্মিতা; সবুজ শিল্পী বন্ধু আয়ুসী আর প্রজিতা— সবাইকে এই উৎসবের মরসুমে আরও একবার ধন্যবাদ জানাই।
হাওয়া অফিস বলেছে আমাদের শহরে পুজোর ক'দিন নাকি মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হবে। সে হয় হোক, অল্প-স্বল্প; বাকি সময় থাকে যেন আকাশ ঝকঝকে নীল, সোনালি আলোয় আলোয় যেন ভরে ওঠে উৎসবের দিনগুলি। পরিবার-প্রতিবেশী-বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে কেটে যাক আগামি কয়েকটা দিন। সবসময়ে ভালো থেকো, আনন্দে থেকো।
১০ আশ্বিন, ১৪২৯
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ছবিঃ অনুভব সোম, মিতিল