সকালবেলা স্নান করে জামা পরতে গিয়েই রোহিতের মাথায় বাজ পড়ল। ইউনিফর্মের দু জোড়া জামার একটাতেও বোতাম নেই! কী হবে?
বোর্ডিং স্কুলে থাকে রোহিত। স্কুলের পর বিকেলে ফুটবল খেলেগুলো বেশ জমাটি হয়। সেখানে জামা ধরে টানাটানি তো হতেই পারে! আর সেই টানাটানিতেই জামার বোতাম সব ছিঁড়ে ফর্দাফাঁই!
এখন কী করবে রোহিত? আজ স্কুলের স্থাপনা দিবস। সেই উপলক্ষে ওকে একটা স্পিচ দিতে হবে। বাঙলার স্যার নিজে লিখে দিয়েছেন। রোহিত সেটাকে মন দিয়ে মুখস্থ করেছে যাতে বার বার কাগজ না দেখতে হয়। বেশ কয়েকবার প্র্যাকটিসও করা হয়ে গেছে। বন্ধুরা শুনে বলেছে ওর বলা বেশ ভাল হচ্ছে কিন্তু বোতামহীন জামা পরে সে কী ভাবে সবার সামনে যাবে?
এদিকে ওকে জামা হাতে ব্যাজার মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরিজিৎ বলল, "কি রে? অমন ভ্যাবলা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলি যে? দেরি হয়ে যাবে তো এর পর!"
অরিজিৎ ওর রুমমেট। ওরা একই ঘরে থাকে।
কাঁচুমাচু মুখ করে রোহিত বলল, "জামায় একটাও বোতাম নেই রে! এই জামা পরে কী করে সবার সামনে যাবো?"
অরিজিৎ দেখে বলল, "এ বাবা! আমার অন্যটাতে কালি পড়ে গেছে তাই ওটা যে তোকে পরতে দেবো সেটাও হবে না!"
"এমনিতেও তুই যা টিংটিঙে তোর জামা আমার হত না!"
ঠিক তখুনি তমাল ঘরে এসে ঢুকল, "এই রোহিত তোকে হালদার স্যার ডাকছেন স্টেজে কোন দিক দিয়ে উঠতে হবে আর নামতে হবে দেখানোর জন্যে।। সেকি! তুই এখনও তৈরি হোসনি!"
অরিজিৎ বলল, "আরে ওর জামায় একটাও বোতাম নেই রে! মারা থাকলে ছুঁচ সুতো দিয়ে এখুনি সেলাই করে দিতেন কিন্তু এখানে কে করবে? আমরা তো সেলাই করতে জানি না!"
তমাল মুচকি হাসল, "ওই ফুটবলের টানাটানিতে হয়েছে! আরো ওই গুন্ডা ছেলেগুলোর সঙ্গে ফুটবল খেল! আচ্ছা দাঁড়া, আমি এক মিনিটে আসছি!" বলে ছুটে চলে গেল।
একটু পরেই ফিরে এল এক গোছা সেফটি পিন হাতে নিয়ে!
"এই নে! এতেই আজকের মতন কাজ চলে যাবে! আমি ভুক্তভোগী তো তাই এবার বাড়ি গিয়ে গোছা গোছা নিয়ে এসেছি!"
কাজ সেদিনের মতন উদ্ধার হয়েছিল বটে কিন্তু হেড স্যার পরে জানতে পেরে বেশ রেগে গিয়ে রোহিতকে বলেছিলেন সেফটি পিন নিয়ে যা তথ্য পায় সব খুঁজে বার করে ওনাকে দেখাতে। সেটাই নাকি ওর শাস্তি!
সেফিটি পিন তো তোমরা সবাই দেখেছো, কিন্তু কে যে প্রথম সেটা আবিষ্কার করেছিল সেটা জানো কী? রোহিতও মোটেই জানতা না! যাই হোক সে বইটই ঘেঁটে যা খুঁজে বার করেছিল সেটাই তোমাদের জানাচ্ছি।
গ্রীক ফিবুলা
খ্রিষ্টপূর্ব ১৩-১৪ সালে গ্রীকরা সেফটি পিনের মতন কিছু গয়না বানিয়েছিলেন কিন্তু পিনের ছুঁচলো মুখটা কোন খাপে ঢুকে যাওয়ার ব্যবস্থা তারা করতে পারেননি তাই ওদের তৈরি "ফিবুলা" গয়নার কথা লোকে ভুলেই গিয়েছিল।
আমরা যে রকম সেফটি পিন চিনি সেই রকমটার আবিষ্কারের পিছনে বেশ মজার একটা গল্প আছে। পেশায় মেকানিক ওয়াল্টার হান্টার নামে এক অ্যামেরিকান ব্যক্তি একবার তার বন্ধুর কাছ থেকে পনেরো ডলার ধার নেন। তারপর থেকে সেই ধার আর তিনি কিছুতেই শোধ করে উঠতে পারছিলেন না। এই ভাবেই চলছিল এমন সময় একদিন হঠাৎ ওনার মনে হল, "আমি যদি নতুন কিছু একটা আবিষ্কার করতে পারি তাহলে তো কিছুটা অর্থ উপায় করতে পারব, তাহলে বন্ধুর দেনাটা শোধ হয়ে যাবে!" এই ভেবে তিনি একটা আট ইঞ্চি লম্বা তারের টুকরো নিয়ে সেটাকে মাঝখানে গোলাকার ভাবে বেঁকিয়ে সেফটি পিনের আকারদিয়ে ফেললেন তিনি। মাথার দিকে একটা খাপ লাগিয়ে দিলেন যাতে ছুঁচলো অংশটা গায়ে ফুঁটে না যায়! আরেকটু নাড়াচাড়া করতেই সেফটি পিন তৈরি! সেই আবিষ্কারের জন্যে এপ্রিল ১০, ১৮৪৯ সালে হান্টের নামে একটা পেটেন্ট জারি করা হয়। কোন কিছু নতুন আবিষ্কার করলে একটা সরকারি দফতরে গিয়ে সেটা রিপোর্ট করলে আবিষ্কারকের নামে একটা 'পেটেন্ট' ইস্যু করা হয় যাতে অন্য কেউ সেই আবিষ্কার নিজের বলে চালিয়ে না দিতে পারে! অবশ্য একই সময়েইংল্যান্ডের চার্লস রাওলিও ওই একই ধরনের জিনিস আবিষ্কার করে সেটাকে পেটেন্ট করান।
ওয়াল্টার হান্ট এবং তাঁর সেফটিপিনের পেটেন্টের বিবরণ
পেটেন্টটা ডব্লু আর গ্রেস অ্যান্ড কম্পানির হাতে বিক্রি করে সেটার জন্যে মোট চারশো ডলার পেয়েছিলেন ওয়াল্টার হান্ট। তার থেকে পনেরো ডলার দিয়ে তিনি বন্ধুর ধার শোধ করেন আর বাকিটা নিজের জন্যে রাখেন। ডব্লূ আর গ্রেস অ্যাণ্ড কম্পানি অবশ্য বাজারে সেফটি পিন বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ ডলার রোজগার করেছিল!
পিনের ছুঁচলোঅংশ যে প্যাঁক করে ফুঁটে যাবে না সেটা একটা বেশ আনন্দের ব্যাপার তাই সেফটি পিনকে সবাই পছন্দ করে। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমিশ উপজাতি ছাড়া। তারা মনে করে সেফটি পিন এক বড্ড উন্নত সমাজের প্রতীক এবং তারা সাধারণ অনুন্নত জীবনে বিশ্বাসী তাই তারা সেফটি পিন হাতের কাছে পেলেও ব্যবহার করে না, সেই ছুঁচলো মুখ পিনই ব্যবহার করে!
ছবিঃউইকিপিডিয়া