সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
উরুক্কু মাছ – বিবর্তনের এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত

নীল আকাশের বুকে পাখিদের স্বাধীনভাবে পাখা মেলে উড়তে দেখে সেই কোন আদিমকাল থেকে মানুষ চেয়েছে আকাশে উড়ে বেড়াতে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আমেরিকার অধিবাসী রাইট ভ্রাতৃদ্বয় এরোপ্লেন আবিষ্কার করেন। তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের আকাশে উড়ে বেড়াবার আকাঙ্খা আংশিকভাবে পূরণ হয়েছে। কিন্তু এরোপ্লেনে চেপে আকাশপথে ভ্রমণের ফলে মানুষের আকাশে উড়বার দীর্ঘ বাসনা কিঞ্চিৎ পূর্ণতা পেলেও, পাখির মত মনের খেয়ালে উড়ে বেড়াবার সাধ যেন এখনও প্রকৃ্ত অর্থে পূরণ হয়নি। কারণ মানুষ নিরুপায়! মানুষের যে পাখিদের মত ডানা নেই। মানুষ তাই আজও কেবলমাত্র ইচ্ছেডানায় ভর করে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে উড়ে যায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহজ পাঠে লিখেছেন - 'গাছে থাকে পাখী। জলে থাকে মাছ। ডালে আছে ফল। পাখী ফল খায়। পাখা মেলে ওড়ে।' অর্থাৎ কিনা, পাখিরা তাদের মনের খুশীতে আকাশে উড়ে বেড়াবে আর শেষমেশ একটি পছন্দের গাছে বসে মনের আনন্দে ফল খাবে। কিন্তু মাছেদের একমাত্র বাসস্থান জল। তারা পাখিদের মত খেয়াল খুশী মত উড়তে পা্রবে না। ওড়বার অধিকার শুধুমাত্র আমাদের পালকধারী বন্ধুদের। আঁশে ঢাকা মাছেদের জন্য এ কম্ম নয়। এটাই যেন নিয়ম! কিন্তু ওড়বার ক্ষেত্রে পক্ষীকূলের এই একচ্ছত্র আধিপত্য মেনে নিতে রাজি ছিলনা একদল আশ্চর্য মাছ। জল-স্থলের সমস্ত বাসিন্দাদের অবাক করে দিয়ে নিজেদের চেষ্টায় সময়ের সাথে তারা একদিন উড়তে শিখে গেল। ডানা নেই তো কি হয়েছে? পাখনাকে কাজে লাগিয়ে তারা উড়তে লাগল। এই মাছেদের দলকে উড়তে দেখে মানুষ তাদের নাম দিল – উরুক্কু মাছ!

ভ উরুক্কু মাছ সত্যি একটি বিচিত্র প্রজাতির জলজ প্রাণী। পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের সাগরগুলিতে প্রধানতঃ এ মাছের দেখা মেলে। উরুক্কু মাছ দলবদ্ধ ভাবে থাকতে ভালবাসে। এই মাছের দলকে ইংরেজি ভাষায় বলা হয় School। এমন এক-একটি দলে বিশাল সংখ্যক উরুক্কু মাছ থাকে, যা কখনও কখনও দশ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে । আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের উষ্ণ অঞ্চলের জলে হঠাৎ এক ঝাঁক উরুক্কু মাছের জলের ওপর লাফ দিয়ে উঠে বাতাসে উড়বার দৃশ্য প্রায়শই নজরে পরে। এছাড়া ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রচুর সংখ্যক উরুক্কু মাছের সন্ধান মেলে। বিপুল পরিমাণ উরুক্কু মাছের কারণে ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র বার্বাডোসের নাম ছিল 'উরুক্কু মাছের ভূমি'।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৪ প্রজাতির উরুক্কু মাছের খোঁজ পাওয়া গেছে। এটি একটি অতি প্রাচীন প্রজাতির মাছ। বিজ্ঞানীরা উরুক্কু মাছের ২৩৫-২৪২ মিলিয়ন বছর পুরনো, মধ্য ট্রায়াসিক যুগের, একটি জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন বলে জানা যায়। বিজ্ঞানীরা অবশ্য মনে করেন আধুনিক যুগের উরুক্কু মাছের সাথে এই জীবাশ্মের তেমন সাদৃশ্য নেই। আধুনিককালের উরুক্কু মাছের আবির্ভাব ঘটে আনুমানিক ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে।

উরুক্কু মাছ – বিবর্তনের এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত

উরুক্কু মাছেরা দেখতে খুব চিত্তাকর্ষক। অপূর্ব রঙের বৈচিত্র তাদের সারা শরীরজুড়ে। শরীরের উপরিভাগের নীলাভ ধূসর রঙ এবং পেটের দিকের রূপোলী রঙের বাহার দেখবার মত। যেন সমুদ্রের সব রঙ তারা গায়ে মেখে নিয়েছে। মাছগুলি দৈর্ঘ্যে সাধারণতঃ ৭ থেকে ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। কোন কোন প্রজাতির উরুক্কু মাছ যদিও ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। তাদের বক্ষ পাখনাগুলি পাখির ডানার মত প্রসারিত ও বৃহদাকৃতির হয়। কিছু বিশেষ প্রজাতির উরুক্কু মাছের মধ্যে পাখির ডানার আকৃ্তির শ্রোণী পাখনাও দেখতে পাওয়া যায়। এই মাছের লেজ কাঁটার আকারে গঠিত ও দ্বিখন্ডিত থাকে। লেজের নীচের খন্ডটি ওপরের খন্ডটির থেকে লম্বাকৃতির হয়। কয়েকটি প্রজাতির উরুক্কু মাছের ক্ষেত্রে নীচের চোয়ালের আকৃতি ওপরের চোয়াল থেকে বড় ও প্রসারিত হতে দেখা যায়। উড়বার সময় চোয়ালের এই বিশেষ গঠন তাদের শিকার ধরতে ও খাদ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করে। উরুক্কু মাছ একটি সর্বভুক প্রাণী। তারা উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ খাদ্য গ্রহণ করে। তাদের প্রিয় খাদ্য সমুদ্রে ভাসমান আণুবীক্ষণিক জীবাণু, উদ্ভিদ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী। মাছগুলি মূলতঃ সমুদ্রের পৃষ্ঠতল থেকে রাত্রিবেলা খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। কয়েকটি প্রজাতির উরুক্কু মাছ সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়বার সময় তাদের প্রসারিত নীচের চোয়ালের সাহায্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ছোঁ মেরে শিকার ধরে।

উরুক্কু মাছের ইংরেজি নাম Flying Fish। তাদের অবাক-করা উড়বার ক্ষমতার কারণেই এ প্রকার নামকরণ হয়েছে। আসলে কিন্তু এই মাছ পাখির মত মনের খুশীতে আকাশে উড়ে বেড়ায় না। পাখির মত উড়বে কি করে? মাছ্গুলির যে পাখির মত পালকে ঢাকা ডানা নেই! তবে, পাখির ডানার মতই একজোড়া চ্যাপ্টা, ঢাউস ও ফাঁপা বক্ষ পাখনা আছে তাদের। উরুক্কু মাছেরা তাদের সেই বক্ষ পাখনার সাহায্যে বাস্তবে উড়তে পারেনা, কিন্তু বাতাসে ভেসে থাকতে পারে অনায়াসে। কেবলমাত্র বক্ষ পাখনাই নয়, তাদের শরীরে আরও কিছু অভিযোজনের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়, যা তাদের উড়তে সাহায্য করে। তাদের ফুলকা বাতাস থেকেও অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে, যে বৈশিষ্টটি সাধারণতঃ অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যায়না। এর ফলে তারা উড়বার সময় স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে। তাছাড়া, টরপেডোর মতন দেহের গড়ন ও শক্তিশালী লেজ উড়বার সময় তাদের প্রয়োজনীয় গতিবেগ দিতে সহায়ক হয়।

জলের মাছের এই প্রকার বিবর্তনের পিছনে প্রধানতঃ দু’টি কারণ রয়েছে বলে মনে করা হয়। প্রথমতঃ, আত্মরক্ষার তাগিদে জল ছেড়ে হাওয়াতে ভাসার এই অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে উরুক্কু মাছ। তাদের মত ক্ষুদ্র প্রাণীরা অতি সহজেই অন্যান্য বৃহদাকার সামুদ্রিক প্রাণীদের শিকারে পরিণত হয়ে থাকে। উরুক্কু মাছেদের প্রধান শত্রু হল শুশুক, পাখি ও মারলিন, টুনা, ম্যাকরল, তরোয়াল মাছ প্রভৃতি বড় সামুদ্রিক মাছ, এবং অবশ্যই মানুষ। এমতাবস্থায় শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে প্রাণ রক্ষা করা তাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পরে। দ্বিতীয়তঃ, উরুক্কু মাছের আবাস সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে নীচের দিকে মাত্র ২০০ মিটার পর্যন্ত প্রসারিত এবং সেক্ষেত্রে, সমুদ্রের উপরিস্তরের প্রখর স্রোত উরুক্কু মাছের মত ছোট মাছেদের বেঁচে থাকার পক্ষে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে। গবেষণায় জানা যায়, উরুক্কু মাছের পাখনার বিবর্তন-প্রক্রিয়ায় তাদের আবাসস্থলের কঠিন পরিবেশগত বিষয়গুলি অনুঘটকের কাজ করেছে। এর ফলস্বরূপ, উরুক্কু মাছ একটি অনন্য বৈশিষ্টের অধিকারী হয়েছে যার দ্বারা সে তার পরিবেশের সাথে সুন্দর ভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। বাতাসে ভাসতে শেখার ফলে তারা প্রতিকূল পরিবেশ ও শত্রুদের বোকা বানাতে সক্ষম হয়েছে। বিপদের আভাস পেলেই এই মাছেরা দল বেঁধে জলের ওপর লাফ মেরে উঠে বাতাসে ভেসে যায়।

উরুক্কু মাছ – বিবর্তনের এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত

বাতাসে ভাসমান থাকার প্রক্রিয়াটা অবশ্য খুবই মজাদার। জলের ওপর লাফিয়ে উঠবার আগে উরুক্কু মাছগুলি প্রবল গতিবেগে সমুদ্র পৃষ্ঠতলের দিকে প্রায় ৩৭ মাইল(৬০ কিলোমিটার) প্রতি ঘন্টা বেগে ধেয়ে যায়। এ সময় তাদের বক্ষ পাখনা দু’টি শরীরের পাশে ভাজ করা থাকে। এর ফলে দ্রুততার সাথে জল কেটে ওপরের দিকে এগিয়ে চলা সম্ভব হয়। জলের উপর উঠবার আগে তারা সমুদ্র পৃষ্ঠতলকে কৌণিকভাবে ছেদ করে। এ সময় তারা লেজটিকে অতি তীব্রতার সাথে নাড়তে থাকে, যা প্রতি সেকেন্ডে ৭০ বার পর্যন্ত হতে পারে। এরপর তারা টুপ করে বাতাসে উঠে যায়। আক্রমণকারীরা এতে একবারে বোকা বনে যায়। এই তো ছিল এক ঝাঁক মাছ, হঠাৎ কোথায় গেল? উরুক্কু মাছেরা তখন দলবলসহ একেবারে উধাও! এদিকে বাতাসে উঠেই মাছগুলি তাদের পাখনা মেলে দেয়, ঠিক যেমন পাখিরা ডানা মেলে ওড়ে। সাধারণতঃ এভাবে তারা বাতাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ ফিট উচ্চতায় গ্লাইড করতে পারে। তবে, ১৯৪৮(ইং) সালে নরওয়েবাসী লেখক থর হায়ারডালের লেখা 'The Kon-tiki Expedition : By Raft Across the South Seas' বইটিতে একটি জাহাজের ডেকের ওপর এই মাছের অবতরণের কথা লিপিবদ্ধ করা আছে। অর্থাৎ এ মাছ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ২০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছতে সক্ষম বলে জানা যায়। পুনরায় জলে অবতরণের পূর্বে তারা এভাবে গ্লাইড করে প্রায় ৬৫৫ ফিট দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এ সময় তারা ঘন্টায় ৭০ কিলোমিটারের অধিক গতিবেগে উড়তে পারে। গতিবেগ কমে এলে তারা বক্ষ পাখনা দু’টি ভাজ করে জলে অবতরণ করে। মন চাইলে, জল ছঁয়ে তারা পুনরায় জলের ওপর লাফ দিয়ে উঠে বাতাসে গ্লাইড করতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় বিরামহীন ছোট ছোট উপর্যু্পরি উড়ানের সাহায্যে তারা প্রায় ১,৩১২ ফিট দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। এমন একটি ছোট উড়ান সাধারণতঃ ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। তবে, ২০০৮ সালের মে মাসে একটি জাপানী টেলিভিশন সংস্থার পক্ষ থেকে জাপানের ইয়াকুশিমা দ্বীপের উপকূলে একটি উরুক্কু মাছের ৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত একটানা বাতাসে উড়বার দৃশ্য ভিডিয়ো-ক্যামেরা বন্দী করা হয়! এটিকে, আজ অবধি নথিভুক্তিকৃ্ত, উরুক্কু মাছের দীর্ঘতম উড়ান বলে মনে করা হয়।

উরুক্কু মাছেদের কিন্তু রয়েছে এক মারাত্মক দুর্বলতা। আরও অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর মত তাদেরও রয়েছে রং-বেরঙের আলোর প্রতি তীব্র আকর্ষণ। তাদের এই আলোর নেশাকে কাজে লাগায় মাছ শিকারিরা। রাত্রিবেলা হরেকরকম নজরকাড়া আলোর ফাঁদে ফেলে শিকারিরা তাদের সুকৌশলে জালে আটকে ফেলে। উরুক্কু মাছ খেতে অতি সুস্বাদু। তাই বাণিজ্যিকভাবে উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়া মহাদেশে প্রচুর পরিমাণে উরুক্কু মাছ ধরা হয়। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, জাপান, ভিয়েতনাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ানে এই মাছের বিশেষ রান্নার পদগুলি খুবই জনপ্রিয়। এটি বার্বাডোসের জাতীয় খাদ্যের একটি উপাদান। একটি উরুক্কু মাছের গড় আয়ু মাত্র ৫ বছর। উপরন্তু বাণিজ্যিক কারণে মাছগুলিকে প্রচুর পরিমাণে ধরা হয়। তবে, সৌভাগ্যবশতঃ এদের সংখ্যা এখনও যথেষ্ঠ স্থিতিশীল এবং সে কারণেই এখনও এদের বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

উরুক্কু মাছ – বিবর্তনের এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত

অস্বাভাবিক চরিত্রগত বৈশিষ্টের কারণে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশজ সংস্কৃতিতে উরুক্কু মাছ এক বিশেষ সম্মানের স্থান দখল করেছে। এই মাছ বার্বাডোসের সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছে। তাদের মুদ্রা, পর্যটন কর্তৃপক্ষের লোগো এবং পাসপোর্টে এ মাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বার্বাডোসের মতই, তাইওয়ান ও অন্যান্য এশীয় সংস্কৃতিতে উরুক্কু মাছকে উচ্চ মর্যাদার আসনে রাখা হয় এবং এ মাছকে কেন্দ্র করে নানারকম উৎসব উদযাপিত হয়। তাইওয়ানের অধিবাসীরা নিজেদের দ্বীপকে 'উরুক্কু মাছের আবাস বলে অভিহিত করে। প্রতি বছর বসন্তকালে তাইওয়ানের উপকূলবর্তী উষ্ণ জলে প্রচুর সংখ্যক উরুক্কু মাছের আগমন ঘটে। এই আগমনকে উৎযাপন করতে প্রতি বছর মার্চ মাসে সেখানে এক বর্ণাঢ্য উৎসব পালিত হয়। তাইওয়ানের সংস্কৃতিতে এ মাছটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের ঋতুচক্র এ মাছের আগমনের ওপর নির্ভর করে। বসন্তকালকে বলা হয় ‘রাজুন’ বা ‘উরুক্কু মাছের ঋতু’।

প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমপরিবর্তন ফলে উরুক্কু মাছের এই অসামান্য বিবর্তন আমাদের অবাক করে। চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের মূল তত্ত্ব হল 'যোগ্যতমের উদ্বর্তন' (Survival Of The Fittest) । এর অর্থ - প্রকৃ্তি সে সকল জীবকে অগ্রাধিকার দেয় যারা প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে ক্রমাগত সংগ্রাম করে সবচেয়ে বেশী মানিয়ে নিতে পারে। অর্থাৎ সংগ্রামের শেষে সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রাকৃতিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানো প্রজাতিটি পৃথিবীর বুকে টিকে থাকবে। উরুক্কু মাছ এই তত্ত্বের একটি বাস্তব উদাহরণ।

অনেকের কাছে উরুক্কু মাছ শুধুমাত্র একটি কৌতূহল উদ্রেককারী জলজ প্রাণী, কারোর জন্য মাছটি তার জীবনধারণের উপায়। আবার, শত্রুকে দিশেহারা করে জলের ওপর দিয়ে উড়ে যাবার অসাধারণ ক্ষমতার কারণে পৃথিবীর অনেক সম্প্রদায়ের মানুষের মনে এই অদ্বিতীয় মাছটি সম্মানের আসনে বিরাজ করছে। বর্তমানে পর্যটনের ক্ষেত্রে সমুদ্রভ্রমণ জনপ্রিয়তা লাভ করায় আরও বেশী সংখ্যক মানুষ জলের এই আশ্চর্য সুন্দর প্রাণীটিকে দেখবার সুযোগ পাচ্ছেন। কোনদিন সমুদ্রভ্রমণে গিয়ে এক ঝাঁক উরুক্কু মাছের দেখা মিললে ভাল করে লক্ষ্য করো তাদের সমলয়ের হাওয়াই উড়ান এবং সেই সাথে প্রকৃ্তির এই অসামান্য উপহারটির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে ভুলো না যেন ।


ছবিঃ উইকিপিডিয়া, বেস্ট অফ বারবাডোস, স্যান ডিয়েগো রিডার

পেশায় আইনের শিক্ষক। ছোট-বড় সকলের জন্য গল্প ও প্রবন্ধ লিখতে ভালবাসেন। পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অবসর সময় কাটান বই পড়ে, ছবি এঁকে ও সঙ্গীত চর্চা করে। এছাড়া বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানে ভ্রমণ এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ক্যামেরাবন্দি করতে উৎসাহী।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা