দুবাই-এর কপালের দারুণ ভাঁজের কারণ তার এক্ষুণি মনে পড়ল যে সে হিতৈষী লাহা ওরফে হিটলার ম্যামের বাড়ির কাজ না করে স্কুলে যাচ্ছে। "নাহ্!" সে ভাবল , "আগের দিনের দুটো কানমলা আর আধঘন্টা বকুনির পর আজ আবার বাড়ির কাজ না করে যাওয়া চলে না"। তাই সে ঠিক করলো স্কুলের উল্টো দিকে যে পুরনো ভাঙাচোরা জমিদার বাড়িটি আছে তাতে আশ্রয় নেবে। বাড়িটিতে শুধু এক বুড়ো মালি থাকে যে বাড়িটি আর তার সামনের বিশাল বাগানটির খেয়াল রাখে। বাগানটা দুবাই-এর বেশ ভালো লাগে কারণ সেখানে নানা রঙের গোলাপ, লাল টুকটুকে জবা থেকে আম, জাম, লেবু ইত্যাদি অনেক গাছ আছে। মালির চোখ এড়িয়ে বাগানে ঢুকে তার আজ প্রথমেই চোখে পড়ল একটা হৃষ্টপুষ্ট টমেটো গাছ। সেটার লাল টুকটুকে টমেটো দেখে দুবাই-এর ভীষণ লোভ হল আর সে একটা টমেটো পেড়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে গাছটির কাছে বসল। এমন সময় আকাশ থেকে এক 'শোঁ-ও-ও...' আওয়াজ আসতেই সে মাথা তুলে দেখে দূরে বেশ উঁচুতে এক উড়োজাহাজ তার ডানা মেলে উড়ছে। হঠাৎ দুবাই-এরও খুব ইচ্ছে করতে লাগল আকাশে ওড়ার। সে চোখ বুজে কল্পনা করতে থাকে সেও রকেটে বসে উড়তে উড়তে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে।
হঠাৎ একটা আওয়াজ তার ব্যাগের মধ্যে থেকে বলে উঠলো, "দুবাই-ই-ই! আমি-ই-ই তোমার একটা-আ-আ ইচ্ছে-এ-এ পুরণ করতে-এ-এ পারি-ই-ই"। সে তক্ষুনি তার ব্যাগ খুলে দেখে যে একটা ছোট্ট সবুজ শুঁয়োপোকা টমেটোর উপর থেকে উঁকি দিচ্ছে। শুঁয়োপোকা আবার বলল, "আমি-ই-ই জানি-ই-ই, তোমার মহাকাশে-এ-এ যাওয়ার খুব ইচ্ছে-এ-এ। আমি-ই-ই তোমায়-এ-এ আজ ওখানে-এ-এ নিয়ে-এ-এ যাব-ও-ও। তুমি-ই-ই তোমার চোখ দুটো-ও-ও বন্ধ-ও-ও কর-ও-ও। শুঁয়োপোকার কথা মত চোখ বন্ধ করে আবার খুলে দেখে সে সত্যিই একটা বিরাট লাল রঙের রকেটে বসে সেটি চালাচ্ছে। কত গ্রহ-নক্ষত্র তার চারপাশ দিয়ে ছুটে চলেছে। মহাকাশটি তার কল্পনার চেয়ে ঢের ঢের বড় ও আশ্চর্যজনক। "জানো-ও-ও দুবাই-ই-ই," তার সামনের প্যানেলের ওপর বসে শুঁয়োপোকাটি বলল "তুমি-ই-ই মহাকাশে-এ-এ আবারও-ও-ও আসতে-এ-এ পারো-ও-ও। যদি-ই-ই তুমি-ই-ই খুব পড়াশোনা-আ-আ কর-ও-ও আর বড়-ও-ও হয়ে-এ-এ মহাকাশচারী-ঈ-ঈ হয়ে-এ-এ যাও-ও-ও। মহাকাশের সম্পর্কে-এ-এ কত-ও-ও কিছু-উ-উ জানতে-এ-এ পারবে । আচ্ছা-আ-আ, এবার ওঠো-ও-ও। ওঠো-ও-ও বলছি-ই-ই!" এই বলে শুঁয়োপোকাটি দুবাইকে কয়েক জোড়া হাত দিয়ে ঠেলতে লাগলো।
ঠেলা খেয়ে দুবাই-এর ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখল সে টমেটো গাছের গোড়ায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল আর বুড়ো মালি তাকে "ওঠো বলছি!" বলে ঠেলা দিয়ে ডেকে যাচ্ছে। তাহলে সে এতক্ষণ ধরে যা দেখল তা সবই কী স্বপ্ন? সে ঘোর ভেঙে উঠে দাঁড়াতেই দেখল একটা সবুজ শুঁয়োপোকা তার গা থেকে পড়ে পালাতে লাগল। দুবাই-এর যেন মনে হল শুঁয়োপোকাটি পালাবার সময়ে একবার পেছন ফিরে দুবাই-এর দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।
গল্প লিখেছেঃ
শুভান্বিতা পাল,
নবম শ্রেণি,
সেন্ট জন্স্ ডায়োসেশন গার্লস এইচ এস স্কুল
গ্রাফিকঃ মিতিল