সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সাঁকো

ধীমানদের পাড়াটা গাঁয়ের এক্কেবারে একটা ধারে। বাকি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। পাড়াও কি ঠিক বলা যায়? তিন চারটে বাড়ি কাছাকাছি, আর একটা খড়ের ছাউনি দেওয়া চায়ের গুমটি, নিতাইয়ের দোকান। চা বিস্কুট ছাড়াও সেখানে গুঁড়ো সাবান, বিড়ির বাণ্ডিল আর টিপের পাতা পাওয়া যায়। নেহাত স্কুলের বইয়ে লেখা থাকে ‘কয়েকটি বাড়ি নিয়ে তৈরি হয় একটি পাড়া’, তাই ধীমানদের এটাও পাড়া। মূল গ্রাম থেকে এতটাই আলাদা, যে এই পাড়াটার নামই হয়ে গেছে ‘ওধারপাড়া’। তাও এই দোকানটা আছে বলে গাঁয়ের পাঁচটা লোকের মুখ দেখার সৌভাগ্য ওদের হয়। নইলে তো সেই চারটে বাড়ির মানুষজনকে দেখেই সারাদিন কাটত। বাচ্চারা, মহিলারা আর জোয়ানরা তাও স্কুল বলো, খেতখামারি দোকানদারি বলো, পাঁচরকমের কাজে পাড়ার বাইরে বেরিয়ে গ্রামের মধ্যে ঢোকে। মুশকিল হয় বুড়োবুড়িদের। একেবারে থুত্থুড়ে চারজন ছিল এপাড়ায়, গত দু’মাস ধরে তিনজন আছে। তাদের কাছে পাড়ার বাইরের খবর আসার জানলা বলতে ওই নিতাইয়ের দোকান। নড়েচড়ে রোজ বিকেলে ওই দোকানটার সামনে গিয়ে বসলে তাও গাঁয়ের লোকের মনে পড়ে এপাড়ায় গুটিকয় আদ্যিকালের মানুষও আছে, নইলে বাড়ির লোক ছাড়া এদের আর কেউ মনে রাখত না।

কেবল নিতাইয়ের দোকানই নয় অবশ্য, আরেকটা কারণেও ওধারপাড়াকে লোকে ভুলে যেতে পারে না। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শান্ত নদী কাজলি, সেই নদীর ধারে যাওয়ার রাস্তাটা ধীমানদের এই পাড়া দিয়েই। নদী পেরনোর প্রয়োজন তেমন হয় না, কারণ নদীর ওপারে মানুষের বাস নেই, জঙ্গল। কোনওকালে হয়তো জঙ্গল কেটে সেখানেও বসতি গড়ে উঠবে, দু-তিন বছরে একবার করে কারা যেন আসে, মাপজোক করে ফিরে যায়। যখন তারা আসে, নদীর পাড়ে ভিড় করে দাঁড়িয়ে এপার থেকে যতটা দেখা যায় গাঁয়ের লোকে দেখে, যা দেখা যায় না তা নিয়ে ডালপালা মেলা গল্প তৈরি হয়। কানাঘুষোয় কখনও শোনা যায় ওপারে কারখানা বানাবে, কাপড়ের কল, কেউ বলে কারখানা নয়, গোডাউন হবে, কিংবা কোল্ড স্টোরেজ। বোমাবন্দুকের গোপন কারখানার কথাটাও কেউ কেউ তুলে ফেলে, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় কেউ কেউ, তাকে বাকিরা ধমকে থামিয়ে দেয়। কাজলি নদীর জলের মতোই ঢেউবিহীন এই গ্রামের জীবনচর্যা, তাতে খুব বেশি অ্যাডভেঞ্চারের কল্পনাও কষ্টকল্পনা হয়ে থাকে বেশিরভাগ মানুষের কাছে। কোত্থেকে আসা ওই মাপজোকের দল তিনবছরে একবার করে ঘুরে যায়, আর তার পরের দু’বছর গ্রামের চায়ের দোকানে, কলতলায়, স্কুলের টিফিনবেলায় ওই নিয়ে চর্চা চলতে থাকে।

ধীমানও যথেষ্ট উৎসুক হয়ে এসব গল্পের আসরে মাথা গলাত আগে, যখন ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল বড়দাদু। বড়দাদু আর ধীমান মিলে যা যা গালগল্প জোগাড় করত সারাদিন ধরে, রাতে ঘুমোনোর আগে সবটা দুজনে দুজনের কাছে উগরে দিয়ে তবে শান্তিতে ঘুমোতে পেতো। গত দু’মাস হল অভ্যেসটা বদলে ফেলতে হয়েছে ধীমানকে। অভ্যেস অবশ্য ওদের বাড়ির সবারই বদলেছে কিছুটা করে। একটা মানুষ নেই হয়ে গেলে তার জায়গায় একটা খালি জায়গা তৈরি হয় তো, সেটা আর সেভাবে ভরাট হয় না, প্রত্যেককেই কিছু অভ্যেস একটু একটু করে বদলে নিয়ে খালি জায়গাটাকে ভরাট করার চেষ্টা করতে হয়। ভেতরটা আসলে খালিই রয়ে যায়, ওপর থেকে মনে হয়, হ্যাঁ, শূন্যস্থানটা আর সেভাবে চোখে পড়ছে না।

বড়দাদু ছিলেন ধীমানের বাবার জ্যাঠামশাই। ধীমানের নিজের দাদু পোস্ট অফিসে কাজ করতেন কিছুটা দূরে, সেখানেই থাকতেন, সপ্তাহে একদিন করে আসতেন। বাড়ির ঝক্কিঝামেলা, ধীমানের বাবা পিসি এদের পড়াশোনা সব বড়দাদুই নাকি সামলাতেন। ধীমানের ঠাকুমা যখন মারা যান, তখন বাবা পিসি স্কুলের ওপরের দিকে পড়ে। তারপর থেকে সংসারের ভার বড়দাদুই তুলে নিয়েছিলেন। নিজে বিয়ে করেননি, ভাইপো-ভাইঝিদের মানুষ করেছেন, তাদের বিয়ে-থা হওয়ার নাতিনাতনিদেরও মানুষ করার কাজে হাত দিয়েছিলেন। ধীমানের বড় কাছের লোক ছিলেন বড়দাদু। বড়নাতিকে তিনি চক্ষে হারাতেন। সেও দাদুকে চোখের আড়াল করতে চাইত না পারতপক্ষে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর দুজনের সময়ে টান পড়েছিল ঠিকই, কিন্তু গল্পের পরিমাণ আরও বেড়ে গিয়েছিল। সারাদিনের সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ না দিলে ঘুমই আসত না দুজনের!

গত দু’মাসে সেই অভ্যেস বদলাতে হচ্ছে ধীমানকে। দু’মাস আগে এক রাতে ঘুমের মধ্যেই বড়দাদু চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ধীমান পাশেই ঘুমোচ্ছিল নিশ্চিন্তে, দাদুর হাত জড়িয়েই বোধহয়, তবু কিচ্ছু বুঝতে পারেনি, দাদুর কষ্ট হচ্ছিল কি না, ধীমানকে ডেকেছিল কি না, কিচ্ছু মনে নেই ধীমানের। ধীমান সেদিন একটা স্বপ্ন দেখছিল মনে আছে। খুব মন দিয়ে সারা রাত বোধহয় সেই স্বপ্নটাই দেখেছিল, দাদুর কষ্ট ওকে ছুঁতেই পারেনি সেরাতে। সকালে ধীমান যখন উঠেছে, দেখেছে দাদু ঘুমোচ্ছেন। তারপর আরও বেলা বাড়তে সবাই বুঝেছে সে ঘুম স্বাভাবিক নয়, মানুষটার প্রাণ তাঁর শরীর ছেড়ে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে।

ধীমানকে তার পর থেকে অনেকবার অনেকের কাছে শুনতে হয়েছে একটাই প্রশ্ন, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে,
“তুই তো পাশেই ঘুমোচ্ছিলি, কিছু বুঝতে পারলি না?”
ধীমান কিছু বলার আগেই তারাই হয়তো উত্তর দিয়েছে,
“এরকমই হয়, নিয়তি কে খণ্ডাবে, নিয়তি!”
কিংবা,
“আহা, মানুষটা জল চেয়েছিল হয়তো শেষ সময়ে, ধীমান, ঘুমোচ্ছিলি তো, শুনতে পাসনি!”

হয়তো ধীমান সে রাতে সত্যিই দাদুর ডাক শুনতে পায়নি, কিন্তু সে এদের কথাও শুনতে চায় না একেবারেই। সবাই কেন বারবার একই প্রশ্ন করে? ওরা কি বোঝে না ওতে ধীমানের কষ্ট আরও বেড়ে যায়! নাকি মানুষের কষ্ট বোঝার ক্ষমতাটা বড় হলে একটু একটু করে কমে যেতে থাকে? নাকি বড়দের কষ্ট আর ছোটদের কষ্ট অনেকটাই আলাদা? এসব প্রশ্নের উত্তর ধীমানের কাছে নেই। যার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে বলে জানত, সেই মানুষটাও ঘুমের মধ্যে ওর হাত ছাড়িয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

ধীমানের এখন মনে হয় চারপাশে অনর্থক ভিড় আর হট্টগোল। ভাল লাগে না। ইচ্ছে করে দুই কানে হাত ঢেকে ছুট্টে চলে যায় কাজলির পাড়ে, সারাদিন ওখানেই বসে থাকে বাকি সবাইকে ছেড়ে। রোজ বিকেলে স্কুলের পর খেলে ফেরার পর বড়দাদুকে নিয়ে যেত নদীর ধারে। ইদানিং তেমন শক্তসমর্থ ছিলেন না উনি, বাড়ি থেকে নদীর পথটুকু ধীমানের হাত ধরেই হাঁটতে হত তাঁকে। এখন ধীমান যখন একা একা নদীর ধারে হেঁটে বেড়ায়, বিকেলের নিভে আসা আলো গায়ে মেখে নদীর বুকে সন্ধে নামে, দাদুর হাতের স্পর্শ যেন ধীমানের হাতে লেগে আছে মনে হয়। বিকেলের এই সময়টায় দাদুর সঙ্গে খুব বেশি কথা হত না, কী যেন ভাবত দুজনেই, পাশাপাশি বসে, বা হাঁটতে হাঁটতে। তার চেয়ে অনেক বেশি কথা হত রাতে ঘুমোনোর আগে। আজকাল রাতে ঘুমোনোর আগে কান্না পায় ধীমানের। ওদের কথাগুলো মনে পড়তে থাকে বারবার। সত্যিই বড়দাদু ওকে ডেকেছিল সেরাতে, কষ্ট হচ্ছিল, জল চেয়েছিল? ধীমান বড়দাদুর সব চাওয়া বুঝতে পারত, বাবা মা ওকেই বলত, “দেখ তো বাবু, জ্যাঠামশাই কী চাইছে? তোর মতো কেউ বোঝে না!” ধীমান কি সত্যিই কিছু বোঝেনি সেরাতে? নাকি বড়দাদুই ডাকেননি ওকে, পাছে ঘুম ভেঙে যায়, ধীমানের কষ্ট হয়, সেই ভেবে?

ধীমান এখন খুব ছোট নেই, পনেরো হতে যায় প্রায়, মনে মনে এমন অনেক ভাবনা আসে যা সেভাবে কাউকে বলা যায় না। এইসব ভাবনাগুলোও তেমনই। মাঝেমাঝে মনে হয়, রাতে ঘুমোনোর আগে দাদুকে যত মনে পড়ে, তার চেয়ে অনেক বেশি মনে পড়ে বাকিদের প্রশ্নগুলোকে। দাদুকে বরং অনেক বেশি ছুঁতে পারা যায় কমে আসা বিকেলে, কাজলির পাড়ে। তাই আজকাল কাজলির ধারেই অনেকটা সময় কাটে ধীমানের। স্কুল, পড়া আর খেলা বাদে বাকি সময়টা পুরোটাই প্রায়।

আরেকটা কারণও আছে অবশ্য, কাজলির ধারে অনেকটা সময় কাটানোর। আরও অনেক বেশি নিজের মধ্যে রাখা কথা সেটা, কিছুটা যুক্তিবুদ্ধির বাইরে গিয়েই বলা যায়। যুক্তি দিয়ে ভাবলে সেটা নেহাতই অবান্তর, পনেরো বছরের মন সেটা ভাল করেই জানে। কিন্তু যুক্তির জারিজুরি তো সব সময় খাটে না। তাই একটা প্রায় অবাস্তব আশা নিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই থাকতে ইচ্ছে করে কাজলির পাশে, যদি নৌকোটার দেখা পাওয়া যায় একবার, সেরাতের স্বপ্নটাকে যদি আরও একবার চোখের সামনে দেখা যায়, ছুঁতে পারা যায়!

হ্যাঁ, বড়দাদু যেরাতে চলে গেলেন, সেরাতে ধীমান স্বপ্নে একটা নৌকোকে দেখেছিল সারারাত। তাদের তিরতিরে কাজলির বুকে দুলছে একটা ছোট্ট নৌকো। সামনাসামনি ধীমান তেমন নৌকো কখনও দেখেছে কি? মনে পড়ে না। ছোট্ট নৌকোটায় বড়দাদু একা, ধীমান যেন পাড়ে দাঁড়িয়ে দাদুকে ডাকছে চিৎকার করে, দাদু তাকাচ্ছেনও তার দিকে, সেই বিখ্যাত হাসিটা ছড়িয়ে পড়ছে দাদুর মুখে, কিন্তু কিছুতেই নৌকোর মুখ পাড়ের দিকে ফেরাচ্ছেন না। আরও দূরে চলে যাচ্ছেন কি না তাও ধীমান বুঝতে পারছে না, তার মনে হচ্ছে দাদু বুঝি ওপারে জঙ্গলের দিকে চললেন। তার বুক ভরে উঠছে অভিমানে, যে জঙ্গল অভিযানে তাদের দুজনের একসঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে দাদু একা চলে যাচ্ছেন! সে চিৎকার করে ডাকছে দাদুকে,
“আমিও যাব বড়দাদু, আমাকেও নাও!”
দাদু যেন বলছেন,
“সব জায়গায় সব সময়ে একসঙ্গে যেতে নেই দাদুভাই, সবার সময় একসময়ে হয় না!”
ধীমান দাদুর কথা বুঝতে পারছে না, অভিমান আরও গাঢ় হচ্ছে।
এভাবেই সারা রাত কেটে গিয়েছিল স্বপ্নে। সকালে উঠে দেখেছিল বড়দাদু ঘুমোচ্ছেন। তারপর বোঝা গিয়েছিল মৃত্যু এসে তাঁকে নিয়ে চলে গেছে।

ধীমান কাজলির ধারে ধারে হেঁটে রোজ ওরকমই একটা নৌকোকে খোঁজে। কেন খোঁজে, স্পষ্টভাবে নিজেও জানে না। হয়তো দাদুকে আরেকটু ছুঁতে পারার ইচ্ছে, হয়তো সেই রাতের স্বপ্নটাকে সামনে এনে উল্টেপাল্টে দেখার ইচ্ছে, ‘সত্যিই দাদু ডেকেছিল, ও শুনতে পায়নি?’ এই প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার ইচ্ছে —জানে না ধীমান। ও কেবলই নৌকোটাকে খুঁজে বেড়ায়।

সব খোঁজেরই হয়তো একটা শেষ থাকে। খুব বেশি করে আমরা যা চাই, তা কি সত্যিই এক লহমার জন্য হলেও আমাদের সামনে এসে মূর্ত হয়? স্থায়িত্ব হয়তো ক্ষণেকের, কিন্তু খোঁজের একটা উত্তর তো মেলে! একেই কি ইচ্ছাশক্তি নাম দেন জ্ঞানীগুণীরা? নইলে যে কাজলির বুকে মাপজোকের দলবল ছাড়া তিনবছরের মাঝে নৌকো ভাসানোর তেমন দরকার কারওরই পড়ে না, সেখানে হঠাৎ এক বিকেলে ধীমান নৌকোটার খোঁজ পেল কেমন করে? নদীর ধার ধরে হাঁটতে হাঁটতে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল কখন, বোঝেনি। ঘোর কাটতে দেখল গ্রাম ছাড়িয়ে বেশ অনেকটা চলে এসেছে, আর সামনেই একটা আঘাটায় একটা খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে একটা ছোট্ট নৌকো। অল্প হাওয়া, অল্প ঢেউ, তাতেই মৃদু দুলছে নৌকোখানা। অবিকল নয়, তবে অনেকটাই সেই স্বপ্নটার মতো। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে ধীমান। নিমেষের জন্য বড়দাদুকে খুঁজছিল, সম্বিৎ ফিরতেই সামলে নিলো নিজেকে। সায়েন্স পড়ছে স্কুলে, মৃত্যুর ব্যাখ্যা বিজ্ঞান কীভাবে দেয় বুঝছে আস্তে আস্তে। যে যায়, সে কেবল মনের মধ্যে ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও থাকে না, এ বিজ্ঞানেরই ব্যাখ্যা। বড়দাদুর এখানে আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই, জানে ধীমান। নৌকোটার দিকে এগোয় সে। আঘাটা, সিঁড়িটিড়ি নেই, কাদা জমা পিছল জমি, তাই নিচে নেমে নৌকোটাকে ছুঁতে পারা যায় না। তবে সেরাতের স্বপ্নটাকে যেন আরেকটু বেশি স্পষ্ট মনে হয়। প্রতিটি দৃশ্যের পুনরুদ্ধার চলে ধীমানের মধ্যে।
একসময় ধীমানের কানে বাজে ক্ষীণ একটা কণ্ঠস্বর,
“ডাক এসছে দাদুভাই, যাচ্ছি আমি! ভাল থেকো! আহরণ করতে শিখিয়েছি তোমায়, অভ্যেসটা রেখো। বীজ রইল তোমার ভেতর, সার জল দিয়ে বড় কোরো!”

চমকে এদিক ওদিক তাকায় ধীমান। নাহ, বাইরে কোথাও নয়, এ কণ্ঠস্বরের মূল রয়েছে তার নিজেরই মধ্যে। স্বপ্নে শোনা এই কথাগুলোকে এতদিন ভুলে ছিল কোন জাদুতে কে জানে! আজ বুঝতে পারে ধীমান, ওদের কথা ভুল। দাদু সেরাতে তাকে ডাকেননি, নিজের কষ্টের কথা মোটেই জানাননি তাকে। তাঁর ডাক এসে গেছে, সেকথা ধীমানকে জানিয়ে দিয়ে তিনি চড়ে বসেছিলেন স্বপ্নে দেখা নৌকোটায়, ওপারে যাবেন বলে। আজকের এই সত্যি বিকেল আর সত্যি নৌকো বুঝি সেরাতের সেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে রচনা করল একটা বৃত্ত, যে বৃত্ত ঘিরে থাকবে ধীমানকে, বাঁচিয়ে রাখবে তার আর বড়দাদুর মধ্যেকার সাঁকোটাকে। সার জল দিয়ে বীজকে বড় করতে গেলে ঐ সাঁকোটাকে ধীমানের যে বড্ড দরকার!

ভূতপূর্ব ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে সাংসারিক কাজের মাঝে সু্যোগ পেলেই পড়া আর লেখার আনন্দে মাতার চেষ্টায় থাকেন। সেই গোত্রের মানুষ, যারা আর কিছু না পেলে ঠোঙ্গায় ছাপা খবরও মন দিয়ে পড়েন। সারাদিনের অনেকটা সময় কাটে মেয়ে কুটুনের সঙ্গে; তার কীর্তিকলাপ মাঝেমধ্যে লিখতে চেষ্টা করেন;বর্তমানে ধানবাদের বাসিন্দা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা