গুড ফ্রাইডের পরেই আসে ইস্টার, যা সারা বিশ্বের খ্রীষ্টধর্মের মানুষজনের কাছে এক পবিত্র উৎসব। ক্রুশবিদ্ধ যীশুখ্রীষ্টের পুনরুত্থানের পুণ্যদিবস। এ বছর ২০শে এপ্রিল পালিত হল ইস্টার। আমরা আমেরিকার যে ছোট্ট শহর কলেজ স্টেশনে থাকি, সেখানে ইস্টারের আগের দিন – অর্থাৎ ১৯ শে এপ্রিল, শনিবার – কচিকাঁচাদের নিয়ে শহরের এক পার্কে খুব হৈ চৈ করে পালিত হল “এগ হান্ট” বা ডিম কুড়ানোর পর্ব।
ইস্টারের মাসখানেক আগে থেকেই প্রায় সব দোকানে নানারঙের প্লাসটিকের তৈরি ডিমের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছিল। এই নকল ডিমগুলো মাঝখান থেকে খুলে ফেলে তার ভেতর নানারকমের লজেন্স, টফি, ক্যান্ডি ইত্যাদি ভরে ফেলা হয়। তারপর বাড়ির নানা জায়গায় সেগুলো লুকিয়ে রাখা হয়। ইস্টারের সকালে কচিকাঁচার দলের কাজ হল ঐ ডিমগুলো খুঁজে বার করা আর নিজেদের ঝুড়ি ভর্তি করা। কে কটা ডিম, কত তাড়াতাড়ি উদ্ধার করতে পারে, সেই রোমাঞ্চে সবাই টগবগ করতে থাকে।
এই উৎসবে ডিম আসলে উর্বরতা বা নতুন প্রাণের প্রতীক। পাখির ছানা যেমন ডিম ফুটে বেরিয়ে নতুন দিনের আলো দেখে, তেমনি খ্রীষ্টধর্মের মানুষের চোখে ইস্টারের পুণ্যপ্রভাতে প্রভু যীশু তাঁর সমাধি থেকে পুনরুত্থিত হন লোককল্যাণে। তাই “এগ হান্ট” ইস্টারের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
ইস্টারের শনিবারে স্থানীয় এক চার্চ থেকে শহরের সব বাচ্চাদের (এবং তাদের মা-বাবাদের) নেমন্তন্ন ছিল এই এগ হান্টে শরিক হবার জন্য। পঞ্চাশ হাজার ডিমের ব্যবস্থা করা হয়েছিল – বোঝো কাণ্ড! তবে অত ডিম কি আর লুকিয়ে রাখা যায়? তাই সবাইকে বয়স বা ক্লাস অনুযায়ী গ্রুপ করে নিয়ে এক এক করে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মাঠের মধ্যিখানে এক মস্ত চৌকোনা জায়গা, তার চারিদিকে দড়ির বাউণ্ডারি।
স্বেচ্ছাসেবকেরা মাঠে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নানা রঙের ডিম
বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া মাত্র কয়েকশো কচিকাঁচার দল ছুটলো ঝুড়ি হাতে হলদে-সবুজ-লাল-নীল ডিম কুড়াতে।
ডিম কুড়ানোর জন্য প্রস্তুত সবাই
ছুট...ছুট...ছুট
কিছু কিছু এক্কেবারে খুদে বন্ধুদের মা-বাবারাই তাদের হয়ে ডিম কুড়িয়ে দিচ্ছিলেন।
ডিম কুড়িয়ে ফিরছে সবাই
এই মূল আকর্ষণ ছাড়াও মাঠে ঘুরছিল “ইস্টার বানি” বা ইস্টারের খরগোশ। তার পাশে দাঁড়িয়ে বা কোলে চেপে ক্যামেরাবন্দী হবার হুড়োহুড়ি কিছু কম নয়। তোমাদের এক নতুন বন্ধু জিষ্ণু - যার বয়স এখন এক বছর, আর সারাদিন ঘরে প্রলয়নাচন করে বেড়ায় - ইস্টার বানির কোলে চাপাতেই ভয়ে কেঁদেকেটে অস্থির! খরগোশ বেচারাও ভ্যাবাচ্যাকা!
ইস্টার বানিকে মোটেও পছন্দ নয় জিষ্ণুর
এইভাবে ইস্টারের সকালের ঘন্টাদুয়েক বেশ হুড়োহুড়ি করে কাটল। ইচ্ছামতীর সব বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নিলাম তারই কিছু রঙীন মুহূর্ত।
ডিম কুড়ানোর পরে এবার গোনার পালা- কটা পাওয়া গেল
সকলকে ইস্টারের শুভেচ্ছা জানাই।