সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

হিরো বললেই আমাদের মনে হয় ইয়াব্বড় চেহারা, গায়ে পালোয়ানের মত জোর, দুষ্টু লোকদের অনায়াসে শায়েস্তা করতে পারে এমন একটা লোক । কি তাই তো? কিন্তু রনির কাছে হিরোর মানেটা কিন্তু মোটেই তা নয় । তারই ক্লাসের অন্য বন্ধুরা কলম্বাসদের মতো মানুষদের হিরো মনে করলেও ওর কাছে আসল হিরো হোল ওর দাদুর পোষা কুকুর হাচিকো । ভাবছো তো, সামান্য একটা কুকুর কি করে একজন হিরো হয়ে উঠতে পারে কারোর কাছে ? সেটাই তো আজ বলবো তোমাকে ।

সে অনেকদিন আগের কথা । খাঁচায় করে সেই জাপান থেকে সুদুর আমেরিকায় কোন একজনের কাছে পাঠানো হচ্ছিলো ছোট্ট এক কুকুরছানাকে । অসাবধানতাবশতঃ আমেরিকার এক রেল স্টেশানে খাঁচাটা একটা ঠেলাগাড়ি থেকে পরে গিয়ে ভেঙে যায় । আর অমনি সেই ভাঙা খাঁচা থেকে বেরিয়ে যায় কুকুরছাটি । কিন্তু শুধু খাঁচা থেকে বেরলে কি হবে ? জনবহুল স্টেশনে খেই হারিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে সে । স্টেশানের এদিক ওদিকে ঘুরতে ঘুরতে সে এসে হাজির হয় পার্কার উইলসনের সামনে । বেচারা কুকুরছানাটিকে দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে নিশ্চয়ই ও হারিয়ে গেছে । তাই তিনি সযত্নে ওকে কোলে তুলে নিয়ে স্টেশান মাস্টারের কাছে যান, আর অনুরোধ করেন যে ওর মনিব ওর খোঁজ করতে এলে, যেন তার কাছে ওকে ফিরিয়ে দেন । কিন্তু স্টেশানমাস্টার তো কিছুতেই ওকে নিজের কাছে রাখতে রাজি হন না । অগত্যা পার্কার ওকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন । পার্কার কুকুর ভালোবাসলে কি হবে ? পার্কার এর বউ কেট তো একেবারেই ওকে বাড়িতে রাখতে নারাজ । তাই তো পরের দিন পার্কার ওকে সঙ্গে নিয়েই নিজের কাজে যান । ও বলাই তো হয়নি পার্কার উইলসন হলেন সঙ্গীতের একজন নামজাদা অধ্যাপক । যাই হোক পার্কার ওঁর ছাত্রদের সঙ্গীতের পাঠ পড়ান আর কুকুরছানাটি নিস্পলক ওঁর দিকে তাকিয়ে থাকে; কখনও বা স্টেজে আপন মনে ঘুরে বেড়াতে থাকে । পার্কারের এক জাপানী সহকর্মী ওর গলার কলারে আঁকা এক চিহ্ণ দেখে ওকে বলেন যে সেটি হোল "হাচি", জাপানী ভাষায় যার অর্থ হোল সৌভাগ্যের প্রতীক । তাই দেখে পার্কার ওর নাম দিলেন হাচিকো । পার্কার ওর সাথে খেলা করেন, টিভি দেখেন, ঝড়ের রাতে হাচিকোকে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন, একই বাটি থেকে দুজনে পপকর্ণ ভাগ করে খান । আস্তে আস্তে হাচিকো ওঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায় । আর ওঁর বউ কেটও আস্তে আস্তে নিজের অজান্তেই হাচিকোকে ভালোবেসে ফেলে ।

অন্য কুকুররা যেমন বল নিয়ে খেলা করে, কেউ বল ছুঁড়ে দিলে ছুট্টে গিয়ে সেটা মুখে করে নিয়ে আসে, হাচিকো কিন্তু সেই ব্যাপারে এক্কেবারেই উদাসীন । কেউ বল ছুঁড়ে দিলে মোটেই সে আনতে যেতে চায়না। ব্যাপারটা পার্কারকে বেশ অবাক করে । যাই হোক সময়ের সাথে সাথে বেড়ে ওঠে হাচিকো । গভীর হয় মনিবের প্রতি ওর ভালোবাসা । সবসময় ও মনিবের কাছে থাকতে চায়, আদর খেতে চায় । প্রতিদিন ও পার্কারের সাথে স্টেশনে যায় আর যতক্ষণ না পার্কার ফেরে ততক্ষণ ও স্টেশনেই অপেক্ষা করে । তার পর দুজনে একসাথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরে । এই ব্যাপারটাতেই যেন ওরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল আর তার সাথে ওদের আশেপাশের লোকজনরাও ।

একদিন সকালে যেই না পার্কার নিজের কাজে বেরবেন হটাৎ হাচিকো ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার শুরু করে দিল । সবাই তো অবাক । যেন কিছুতেই ও সেদিন পার্কারকে বেরতে দিতে চায়না । পার্কার বেরিয়ে যেতেই মুখে করে সেই বলটা নিয়ে ছু্টে যায় স্টেশানে । স্টেশনে গিয়েও সেই এক কাণ্ড । পার্কার বেশ অবাকই হন । কিন্তু কিছুতেই ওর এরকম আচরণ এর কারণটা বুঝে উঠতে পারে্ন না । হাচিকোর সমস্ত নিষেধ সত্বেও যেন পার্কার ট্রেনে উঠে পড়েন । আর তার পরেই...........................

কি এমন ঘটলো যে পার্কারের নাতি রনির কাছে একটা সামান্য একটা কুকুরও নায়ক হয়ে উঠল ? জানতে হলে কিন্তু তোমাকে দেখতেই হবে 'হাচি : আ ডগ'স টেল' । রিচার্ড গিয়ার, জোয়া আলেন, কার্ল অ্যালেক্সান্ডার, সারা রোমার প্রমুখের অভিনয় অসাধারন বললে খুবই কম বলা হয় । আর যাদের কথা না বললে ছবিটাই অসম্পূর্ণ, তারা হোল হাচিকোর চরিত্রে তিন সারমেয় চিকো, লায়লা আর ফরেস্ট । সত্যি একটা অবলা প্রাণী যে এত ভালো অভিনয় করে পারে না দেখলে তোমরা বিশ্বাসই করবেনা ।

হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম
হাচি-আ ডগ'স্‌ টেল এর একটি ফ্রেম

'হাচি-আ ডগ'স টেল' ছবির কিছু দৃশ্য

আর জানো তো এই ছবির গল্প কিন্তু মোটেই কাল্পনিক না..... এক্কেবারে সত্য ঘটনা অবলম্বনে লাসে হলস্টর্ম নির্মিত ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৯ সালে । সিয়াটেল আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে প্রথম প্রদর্শিত হয় 'হাচি : আ ডগ'স টেল' । যদিও ১৯৮৭ সালে এই একই গল্প এবং বিষয় নিয়ে আরও একটি ছবি তৈরি হয়েছিল জাপানে, ছবিটির নাম ছিল "হাচিকো মোনোগাতারি" । বলা যেতে পারে 'হাচি : আ ডগ'স টেল' ছবিটি, আশির দশকের 'হাচিকো মোনোগাতারি' নামের জাপানী ছবিটিরই একটি নতুন সংস্করন । এই ছবিটি চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছে যেমন বহুল প্রশংসিত, ঠিক তেমনই সাধারন দর্শকের কাছেও । প্রায় দুই বছর ধরে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল ।

ইংরেজি সাবটাইটেল সহ 'হাচিকো মোনোগাতারি' এবং 'হাচিঃ আ ডগ্‌স্‌ টেল' – দুটি ছবিই দেখতে পাওয়া যাবে ইউটিউবে।


ছবিঃ ফ্রেম ক্যাপচার

দীপায়ন সাহা মাল্টিমিডিয়া ও অ্যানিমেশন নিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। ইতিমধ্যেই দীপায়ন বেশ কিছু ছোট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিও এবং বিজ্ঞাপনের জন্য নির্দেশক, সম্পাদক এবং সিনেমাটোগ্রাফরের ভূমিকায় কাজ করেছেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা