নমস্কার বন্ধুরা। আমি গেছোদিদি। আমার ভাইকে হয়ত তোমরা চেনো, সে যেখানে খুশি যেতে পারে। আর আমি? আমি যখন খুশি যেতে পারি। গত তিন’কিস্তিতে আমরা কেটি বাউম্যানের (Katie Bouman) কৃষ্ণগহ্বরের ছবি, রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের (Rosalind Franklin) ডিএনএ অণুর ছবি, মার্গারেট হ্যামিল্টনের (Margaret Hamilton) অ্যাপলো ১১ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, এবং হেডি লামারের (Hedy Lamarr) ফ্রিকোয়েন্সী হপিং নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। জেনেছিলাম কীভাবে ছবিদুটো তোলা মোটেও সহজ ছিল না, প্রচুর মেহনত ও গণনা করেই ফল মিলেছিল। জেনেছিলাম কীভাবে হ্যামিল্টনের প্রায়রিটি ডিস্প্লে না থাকলে হয়ত আর্মস্ট্রং আর অল্ড্রিনের চাঁদে নামাই হত না। জেনেছিলাম কীভাবে লামারের ফ্রিকোয়েন্সি হপিং স্প্রেড স্পেক্ট্রাম প্রযুক্তি ব্যবহার করেই প্রথমদিকের ব্লুটুথ ও ওয়াই-ফাই শুরু হয়েছিল। এদের মধ্যে ফ্র্যাঙ্কলিন সবচেয়ে বঞ্চিত, ডিএনএ আবিস্কারের জন্য প্রাপ্য নোবেল উনি পাননি। ফ্র্যাঙ্কলিনের মতই আরেকজন বিজ্ঞানীও নোবেল পাননি। ইনিও মহিলা, এবং এনার অবদানও নোবেলযোগ্যই ছিল।
সুইডেনের কুনগ্যেল্ভ (Kungälv) শহরে যাওয়া যাক। সালটা ১৯৩৮, ক্রিসমাসের সময়। কনকনে ঠান্ডা, বরফশাদা চারদিক। বনের মধ্যে দু’জন হাঁটছে। একজনের বয়স ৩৪, পুরুষ, পায়ে স্কি। অন্যজনের বয়স ৬০, মহিলা, পায়ে স্কি নেই। স্কি ছাড়াই বরফের মধ্যে দিয়ে দিব্যি স্কি-পরা ভাইপোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হেঁটে চলেছেন ভদ্রমহিলা। গভীর আলোচনায় মগ্ন দু’জনে। বার্লিনে কর্মরত এক ভূতপূর্ব সহকর্মীর চিঠি এসেছে, আলোচনার বিষয় সেই চিঠিই।
স্কি-বিহীন মহিলাঃ ভাইপো, বুঝলি, অটো বেশ ফাঁপরে পড়েছে।
স্কি-পরা ভাইপোঃ রসায়নের লোক তো, কাজটা করে দিয়েছে, কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী হচ্ছে ধরতে পারে নি বোধহয়।
স্কি-বিহীন মহিলাঃ না, একদম ধরতে পারেনি বোধহয় নয়। সন্দেহ করছে, কিন্তু হাতে আঙ্কিক প্রমাণ নেই বলে জোর দিয়ে বলতে পারছে না।
স্কি-পরা ভাইপোঃ আঙ্কিক প্রমাণের জন্য ওঁর চাই পদার্থবিদকে। অর্থাৎ তোমায়, তাই তো?
স্কি-বিহীন মহিলাঃ আর আমার চাই তোকে। দু’জনে মিলে দেখি ব্যাপারটার সুরাহা করতে পারি কিনা। চ’, ওইখেনে গাছের গুঁড়িটা কাত হয়ে রয়েছে, ও’তে বসে একটু খামপিছ আঁক কষি। কলম কাগজ আছে তো?
স্কি-পরা ভাইপোঃ কলম নেই, পেন্সিল আছে। কলমটা লীক করছে…ইয়ে, হেল্লো।
বাঙালি কায়দায় — কেউ বলবেন উত্তমকুমারীয় কায়দায় — নমস্কার করলাম। মহিলা ভুরু কুঁচকে তাকালেন।
স্কি-বিহীন মহিলাঃ হ্যালো, গুটেন মর্গেন।
গেছোদিদিঃ সুপ্রভাত। আমি গেছোদিদি, এ’দিক-ও’দিক ঘুরে বেড়াই, ঐতিহাসিক ঘটনা লিপিবদ্ধ করি। আপনাদের আলোচনাটা শুনতে খুব ইচ্ছে করছে। অবশ্যই যদি কোনও আপত্তি না থাকে তাহলেই।
স্কি-বিহীন মহিলাঃ না না আপত্তি নেই, আমি প্রফেসর মাইটনার, লিজে মাইটনার (Lise Meitner)। ইনি আমার ভাইপো, প্রফেসর অটো ফ্রিশ (Otto Frisch)। জার্মানিতে আমার বহুকালের সহকর্মী প্রফেসর অটো হানের (Otto Hahn) কাছ থেকে এই চিঠিটা পেয়েছি। হান বলছে ইউরেনিয়ামে নিউট্রন বম্বার্ডমেন্ট করে বেরিয়াম পেয়েছেন।
চিত্র ১ঃ (বাঁদিকে) প্রফেসর লিজে মাইটনার; (ডানদিকে) প্রফেসর অটো ফ্রিশ
অটো ফ্রিশঃ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের তত্ত্ব অনুযায়ী এ’টা অসম্ভব।
লিজে মাইটনারঃ বর্তমান তত্ত্ব, ভাইপো। পারমাণবিক পদার্থবিদ্যায় বিস্ময়ের অভাব নেই, অতএব এটাও সম্ভব হতেই পারে। পেন্সিলটা দে দেখি, আর কাগজটা দে।
ফ্রিশঃ ইয়ে, কাগজ…দাঁড়াও, কাগজটা কোথায়…
মাইটনারঃ ঠিক আছে, ছাড়, হানের এই চিঠির খামের পেছনেই হয়ে যাবে। নে, তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল, ইউ-২৩৫কে নিউট্রন বম্বার্ডমেন্ট করলে বে-৫৬ বেরচ্ছে, তাহলে কি ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসটা ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেল? কিন্তু তাও কীকরে সম্ভব? নিউক্লিয়াস তো আর কাঁচের গুলি নয় যে হাতুড়ি মারলেই ভেঙে…
বন্ধুরা, পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার আলোচনায় যাওয়ার আগে একবার অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে যাওয়া যাক। ১৮৭৮ সাল, ৭ নভেম্বর। হেডউইগ ও ফিলিপ মাইটনারের সেজ সন্তান জন্ম নিলেন, নাম রাখা হল এলিস মাইটনার (Elise Meitner)। আট বছর বয়সে এলিসের প্রথম রিসার্চ শুরু — জলের ওপর তেলের পাতলা স্তরের মধ্যে রঙের খেলা, সাবানের বুদবুদে রঙের খেলা, প্রতিফলিত আলো — এইসব বিষয়ে ছোট্ট এলিসের নোটস জমা পড়তে লাগল বালিশের তলায় লুকোনো নোটবুকে। ১৮৯২ সালে ইস্কুল শেষ, ভিয়েনা শহরে তখন মেয়েদের উচ্চশিক্ষা হওয়া বেআইনি। ১৮৯৭ সালে এই নিয়ম পাল্টালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে এলিসের জায়গা হল। ১৯০১ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার পেলেন এলিস, চার বছরের মধ্যে তাঁর পিএইচডি ডিসার্টেশন জমা পড়ল, অনুমোদনও পেল। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় মহিলা ডক্টরেট হলেন মাইটনার। জন্মেছিলেন ইহুদি হয়ে, ১৯০৮ সালে খ্রীষ্টধর্ম বেছে নিলেন, নাম পালটে হলেন লিজে মাইটনার। ডঃ লিজে মাইটনার।
চিত্র ২ঃ ১৯০৬ সালে ডঃ এলিস (পরে লিজে) মাইটনার
জার্মানিতে ফ্রীডরিখ উইলিয়াম (Friedrich William) (বর্তমানে হাম্বোল্ট, Humboldt) বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত পদার্থবিদ্যার মাক্স প্লাঙ্কের (Max Planck) লেকচার শুনতে গেলেন মাইটনার। সেখানে আলাপ রাসায়নিক অটো হানের সঙ্গে, গবেষণা শুরু তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে। গবেষণাগার বলতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে এক কাঠমিস্ত্রির ঘর। মাইটনার মহিলা, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। কী ভাগ্য ছুতোরঘরটার সঙ্গে বাইরের সরাসরি সংযোগ ছিল! বাথরুমে যেতে হলে মাইটনারকে খানিক দূরে রেস্তরাঁয় যেতে হবে। এক বছর এই অবস্থা চলল, পরের বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মহিলাদের প্রবেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্ত্বরে লাগানো হল শৌচালয়। শোনা যায় তাতে নাকি অনেকেই অখুশি হয়েছিলেন। তাতে অবশ্য মাইটনারের কাজে কোনও খামতি পড়েনি। অবৈতনিক কাজ সত্ত্বেও নয়।
১৯১২ সালে অটো হান কাইজার উইলহেল্ম ইন্সটিউটে (Kaiser Wilhelm Institute) চলে গেলেন, প্রফেসর হয়ে। মাইটনারও গেলেন, তবে হানের ডিপার্টমেন্টে গেস্ট জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে, বেতন শূন্য। এদিকে ১৯১০ সালে ফিলিপ মাইটনার মারা গেছেন, প্রিয় ছাত্রীকে অর্থাভাবে কাজ ফেলে ভিয়েনা ফিরে যেতে হবে এই ভেবে প্লাঙ্ক নিজের সহকারী পদে মাইটনারকে বহাল করেন। একাডেমিয়াতে “সহকারী” সবচেয়ে নীচুপদ হলেও বেতন তো পাবেন অন্তত। তাই সই।
১৯৩৮ সাল অবধি এই কাইজার উইলহেল্ম ইন্সটিউটেই ছিলেন ডক্টর, পরে প্রফেসর মাইটনার। এখানেই আবিষ্কার করলেন প্রোট্যাক্টিনিয়াম (protactinium) মৌল, আবিষ্কার করলেন অগার-মাইটনার এফেক্ট (Augur-Meitner Effect)। জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পদার্থবিদ্যায় মহিলাদের মধ্যে প্রথম প্রফেসর পদ পেলেন মাইটনার, ১৯২৬ সালে। ধীরে ধীরে নাম ছড়িয়ে পড়ল বৈজ্ঞানিক মহলে, মহিলা পদার্থবিদ হিসাবে মারি স্কোডফস্কা ক্যুরি (Marie Skłodowska Curie) ও ইরেন জোলিও-ক্যুরির (Irène Joliot-Curie) সঙ্গে একই বাক্যে উচ্চারিত হতে থাকল মাইটনারের নাম।
১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। বার্লিনের রাইখস্টাগে জার্মানির চান্সেলর পদে শপথ নিলেন অ্যাডলফ হিটলার। সেই বছরই ৭ এপ্রিল সিভিল সার্ভিস ও একাডেমিয়ায় ইহুদিদের চাকরি পাওয়া নিষেধ হল। মাইটনার অস্ট্রিয় নাগরিক, তায় খ্রীষ্টধর্ম নিয়েছেন, তাই বেঁচে গেলেন। ১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়ার ওপর আধিপত্য বিস্তার (anschluss) করল, অস্ট্রিয়া জার্মানির অংশ হল। মাইটনার অস্ট্রিয় নাগরিকত্ব হারালেন, জার্মানিতে তাঁর পক্ষে থাকাটা বিপজ্জনক হয়ে উঠল। অটো হান ও ওলন্দাজ পদার্থবিদ ডার্ক কস্টার (Dirk Coster) মিলে প্ল্যান করলেন মাইটনারকে জার্মানি থেকে বের করে নিয়ে যেতে হবে। প্ল্যানমত কস্টার ও মাইটনার ট্রেনে চেপে সীমান্ত পেরোলেন। সীমান্তে জার্মান সৈনিক মাইটনারের কাগজপত্রে ফ্রাউ প্রফেসর (Frau Professor) দেখে হয়তো ভেবে থাকবে মাইটনার কোনও প্রফেসরের স্ত্রী। উদ্বাস্তু প্রফেসর মাইটনার স্থান পেলেন সুইডেনে ম্যেন সীগবানের (Manne Siegbahn) গবেষণাগারে। ব্যাগে মাত্র ১০ মার্ক ও অটো হানের দেওয়া একটা হীরের আংটি। নিজের মা’র আংটিটা হান মাইটনারকে দিয়েছিলেন, যদি পথে কাউকে ঘুষ দিতে হয়।
সীগবান অবশ্য সরাসরি বলেই দিলেন তাঁর টাকা নেই, মাইটনারকে কাজ করার জায়গা দিতে পারলেও বেতন বা সহকারীদের জন্য আর্থিক সংস্থান করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সুইডিশ একাডেমিয়া তখন জার্মানদের পক্ষে, সেখানে জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা উদবাস্তুদের খুব একটা ভাল চোখে দেখা হত না। সীগবান নিজেও মাইটনারকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। এতকিছু সত্ত্বেও যথাসম্ভব নিজের কাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন মাইটনার।
বার্লিনে তখনও যুদ্ধ বাঁধেনি, অটো হান ও ফ্রিৎজ স্ট্রাসমান (Fritz Strassmann) একমনে ইউরেনিয়ামে নিউট্রন বম্বার্ডমেন্ট…
মাইটনারঃ শুনছেন? কী নাম যেন, বাউমশোয়েস্টার?
গেছোদিদিঃ ইয়ে, হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, বাউম মানে গাছ আর শোয়েস্টার মানে দিদিই বটে।
মাইটনারঃ ক্যাল্কুলেশন কমপ্লীট, বুঝলেন? কী ঘটছে ব্যাপারটা বোঝা গেছে। আপনি ওখানে বসে কী লিখছেন?
গেছোদিদিঃ আপনার সংক্ষিপ্ত জীবনী।
মাইটনারঃ তাই নাকি? ডাঙ্কে। যারা পড়বে তারা কি পদার্থবিদ?
গেছোদিদিঃ ইয়ে, না। সবাই না। মানে বেশির ভাগই লেপার্সেন।
মাইটনারঃ তাহলে নিউক্লীয়ার ফিজিক্সের বেসিক ব্যাপারস্যাপারটা সহজ করে না বোঝালে কী করে হবে?
গেছোদিদিঃ আজ্ঞে যা বলেছেন, আপনিই যদি…
মাইটনারঃ বেশ, দেখি ভাই বাউমশোয়েস্টার, কলমটা দাও দেখি। দেখছিস অটো, ইনি কলম ব্যবহার করেন।
ফ্রিশঃ পিসি, পেন্সিল কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। উনি গেছোদিদি। গাছ। কাঠ।
চুপ কর অটো। ফ্রয়েন্ডে — বন্ধুরা, আমি লিজে মাইটনার। নিউক্লীয়ার ফিজিক্স — ও, বেশ তো, নিজে থেকেই অনুবাদ হচ্ছে — পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা নিয়ে আমার কাজ। এক্ষুণি ভাইপো প্রফেসর ফ্রিশের সঙ্গে যে কাজটা করলাম সেটা বোঝাতে এবং বুঝতে হলে আগে পারমাণবিক পদার্থবিদ্যাটা একটু ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। চিন্তা নেই, বেশি গোলমেলে কিছু নয়, যোগ-বিয়োগ মাত্র। ২ + ২ = ৪ ব্যাপার।
যে সব পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায়না তাদেরকে রাসায়নিক মৌল (chemical element) বলা হয়। ভাঙনের শেষে যা পড়ে থাকে তা হল পরমাণু (atom)। পরমাণুর মূলত দু’টি ভাগ — কেন্দ্রে ক্ষুদ্র একটি নিউক্লিয়াস, চারপাশে ইলেক্ট্রন। নিউক্লিয়াসের মধ্যে মূলত থাকে প্রোটন ও নিউট্রন। মৌলের মধ্যে হাইড্রোজেন সবার সরল, নিউক্লিয়াসে একটা প্রোটন ও বাইরে একটা ইলেক্ট্রন। একটা প্রোটন হওয়ার জন্য হাইড্রোজেনের পারমাণবিক সংখ্যা (atomic number) বা “পারসং” হল ১। ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম হাইড্রোজেন দুই আইসোটোপ — ডিউটেরিয়ামে একটা নিউট্রন ও ট্রিটিয়ামে দুটো নিউট্রন। এই দুই আইসোটোপের পারসং সেই ১, কেননা প্রোটনের সংখ্যা একই থাকছে। এদের ভর সংখ্যা (mass number) বা “ভরসং” ২ এবং ৩, কেননা ভরসং হল প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যার যোগফল। একইভাবে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াসে দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন, পারসং ২, ভরসং ২ + ২ = ৪। বলেছিলাম ২ + ২ = ৪ ব্যাপার।
চিত্র ৪ঃ (বাঁদিকে) হাইড্রোজেনের তিন আইসোটোপ, p মানে প্রোটন, n মানে নিউট্রন, প্রোটিয়ামকেই আমরা সাধারণ হাইড্রোজেন বলে থাকি; (ডানদিকে) হিলিয়াম পরমাণু, + চিহ্ন গোলাপি বৃত্ত প্রোটন, চিহ্নহীন নীল বৃত্ত নিউট্রন, ডানদিকে মৌলের সঙ্কেত ও তার পারসং (২) ও ভরসং (৪)
পরমাণুও সম্পূর্ণ অবিভাজ্য নয়। অঁরি বেক্যরেল (Henri Becquerel), মারি ক্যুরি, ও পিয়ের ক্যুরির (Pierre Curie) গবেষণায় তেজস্ক্রিয় মৌলের অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। আলফা বা বিটা ক্ষয় ইত্যাদি দ্বারা নিউক্লিয়াসের রূপান্তর ঘটে। ইউরেনিয়ামের (Uranium) কথাই ধরা যাক। ইউ-২৩৮ আইসোটোপে নিউক্লিয়াসে ৯২টা প্রোটন (অতএব পারসং ৯২) এবং ১৪৬টা নিউট্রন (অতএব ভরসং ২৩৮, এবং তাই ইউ-২৩৮)। ইউ-২৩৮ তেজস্ক্রিয় মৌল, আলফা ক্ষয় হয়ে এটা থো-২৩৪ মৌলে পরিণত হয়। থোরিয়ামের (Thorium) এই আইসোটোপের পারসং ৯০ ও ভরসং ২৩৪, অতএব ১৪৪টা নিউট্রন। আলফা ক্ষয় হলে নিউক্লিয়াস থেকে দু’টো করে প্রোটন ও নিউট্রন বেরিয়ে যায়, একে আলফা কণা (alpha particle) বলা হয়, আদপে এটা ইলেক্ট্রনবিহীন হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস।
বিটা ক্ষয় একটু অন্যরকম, এতে নিউট্রন প্রোটনে রূপান্তরিত হয়। সীসা (Lead) মৌলের সী-২১২ আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়, পারসং ৮২, ভরসং ২১২, অতএব নিউট্রনের সংখ্যা ১৩০। সী-২১২ বিটা ক্ষয় হলে নিউট্রনের সংখ্যা কমে হয় ১২৯, প্রোটনের সংখ্যা বেড়ে হবে ৮৩, তৈরি হবে বিসমাথ (Bismuth) মৌলের বি-২১২ আইসোটোপ, পারসং বেড়ে হবে ৮৩, ভরসং একই থাকবে।
মেন্দেলীভের (Dmitri Mendeleev) পর্যায় সারণীটায় (periodic table) একবার চোখ বোলানো যাক। বাঁদিকে ওপরদিকে প্রথম সারিতে H হল হাইড্রোজেন, মাথার ওপরের নম্বরটা পারসং। উল্টোদিকে He হিলিয়াম, পারসং ২। দ্বিতীয় সারিতে C কার্বন, N নাইট্রোজেন, O অক্সিজেন চেনা মৌল। ছ’নম্বর সারির সবুজ অংশে Pb সীসা ও তার এক ঘর পরে ডানদিকে Bi বিসমাথ আছে। কেননা বিসমাথের পারসং ১ বেশি।
এবার নজর দেওয়া যাক ৯২ নম্বর মৌলটিতে। ১৭৮৯ সালে মার্টিন হাইনরিখ ক্ল্যাপরথ (Martin Heinrich Klaproth) এই মৌল আবিষ্কার করেন। ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয় মৌল, ইউ-২৩৮ আইসোটোপ আলফা ক্ষয় হয়ে থোরিয়াম থো-২৩৪ হয়, পর্যায় সারণীতে দু’ঘর নীচে নামে, ৯২ থেকে ৯০। এটা ইউরেনিয়ামের প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা। কিন্তু ইউরেনিয়ামের যদি বিটা ক্ষয় হয় তাহলে কী হবে? পারসং ১ বেড়ে ৯৩ হবে, তাই তো? তৈরি হবে নতুন এক মৌল!
চিত্র ৫ঃ দিমিত্রি মেন্দেলীভের পর্যায় সারণী (periodic table), আধুনিক সংস্করণ
১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক (James Chadwick) নিউট্রন আবিষ্কার করলেন। এদিকে ইরেন ও ফ্রেডেরিক জোলিও-ক্যুরি (Frédéric Joliot-Curie) অ্যালুমিনিয়াম মৌলের (পারসং ১৩) দিকে আলফা কণা নিক্ষেপ করে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করে ফেলেছেন, তৈরি হয়েছে দু’ঘর পরের মৌল ফসফরাস (পারসং ১৫)। ইতালিতে এনরিকো ফের্মি (Enrico Fermi) নিউট্রন নিক্ষেপ করলেন ইউরেনিয়ামের দিকে, তৈরি হল বেশ কিছু নতুন মৌল। ফের্মির মনে হল এর মধ্যে অন্তত কিছু মৌলের পারসং ৯২-র বেশি হতেই হবে। [গেছোদিদিঃ ১৯৩৮ সালে ৯২টা মৌলের কথায় জানা ছিল। ফের্মি আংশিকভাবে এই ট্রান্সিউর্যানিক মৌল “আবিষ্কারের” জন্য ১৯৩৮ সালে নোবেল পুরষ্কার পান।] অটো হান ও আমরা ভাবলাম ফের্মি হয়ত প্রোট্যাক্টিনিয়ামের (পারসং ৯১) কোনও আইসোটোপ পেয়েছেন। একই পরীক্ষা আমরাও করতে লাগলাম, এক্সপেরিমেন্ট ও থিওরি পাশাপাশি চলতে থাকল। প্রথমদিকে হানও ফের্মির রেজাল্টই মেনে নিয়েছিল, আমি অতটাও নিশ্চিত ছিলাম না। তারপর কাজ ফেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হলাম সুইডেনে। বার্লিনে স্ট্রাসমানের সঙ্গে হান কাজ চালাতে লাগল। কয়েকদিন আগে, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৩৮, হানের এই চিঠিটা পেলাম। ইউরেনিয়ামের দিকে নিউট্রন নিক্ষেপ করলে যে মৌল তৈরি হয় সেটা মৌল ৯৩ নয়, মৌল ৫৬। বেরিয়াম!
এই নিয়েই আমি ও আমার ভাইপোর আলোচনা। বেরিয়াম কোত্থেকে এল? আরে বাবা পারমাণবিক নিউক্লিয়াস তো আর কাঁচের বল নয় যে নিউট্রন মারলে ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যাবে। নিউক্লিয়াসের মধ্যে কী আছে? প্রোটন ও নিউট্রন। নিউট্রন বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ, নিউট্রাল। প্রোটনের পজিটিভ চার্জ, দু’টো বা তার বেশি প্রোটনের মধ্যে বৈদ্যুতিক কুলম (Coulomb) বিকর্ষণ শক্তি কাজ করবে, তাই তারা একে অপর থেকে দূরে থাকতে চাইবে। নিউক্লিয়াসে প্রোটন – এবং নিউট্রনদেরও – একত্রে বেঁধে রেখেছে নিউক্লিয়ার বল (nuclear force), এই বল আদানপ্রদানের দায়িত্বে আছে ইউকাওয়ার মেসন কণা (Hideki Yukawa, meson particle)। এদের মধ্যে নিরন্তর টাগ-অফ-ওয়ার চলছে, কুলম বল চাইছে নিউক্লীয় সংসার ভাঙতে, নিউক্লীয় বল চাইছে নিউক্লীয় সংসার জোড়া রাখতে।
নিউক্লিয়াসে যত বেশি প্রোটন থাকবে, অর্থাৎ মৌলের পারসং যত বেশি হবে, প্রোটনদের মধ্যে কুলম বিকর্ষণের মান ততই বাড়বে। ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসে ৯২টি প্রোটন, অতএব বিকর্ষণকারী বল বেশ বেশিই। ভাইপো ফ্রিশের সঙ্গে আঁক কষে দেখলাম, ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসে কুলম বিকর্ষণ নিউক্লীয় বলের মানের খুবই কাছাকাছি। বন্ধু হান ইউ-২৩৫ নিউক্লিয়াস লক্ষ্য করে নিউট্রন নিক্ষেপ করেছেন। নিউক্লিয়াস ও নিউট্রনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, নিউক্লিয়াসটি নিউট্রনটিকে গিলে ফেলে ইউ-২৩৬ হয়েছে, অতিরিক্ত শক্তি নিউক্লিয়াসটিকে উদ্দীপ্ত (excited) করছে। অনেকটা তরল ফোঁটার মত। জর্জ গ্যামোর (George Gamow) লিকুইড ড্রপ মডেল মাথায় এল। নিউট্রন গিলে ফেলার পর উদ্দীপ্ত নিউক্লিয়াসটি তরল ফোঁটার মতই টলমল করবে, তারপর মাঝখান থেকে দু’টো ফোঁটায় বিভক্ত হয়ে যাবে। অনেকটা যেভাবে জীববিজ্ঞানে কোষবিভাজন ঘটে [গেছোদিদিঃ বা ধর যেভাবে আটার লেচি টেনে দু’টো লেচি করা হয়]। উদ্দীপ্ত ইউ-২৩৬ বিভক্ত হয়ে বে-১৩৯ সৃষ্টি করবে। বেরিয়াম, পারসং ৫৬! অন দ্য রাইট ট্র্যাক তাহলে। [গেছোদিদিঃ এ ছাড়াও ক্রিপ্টন-৯৪ সৃষ্টি হবে (পারসং ৩৬), কিন্তু সেটা তখন জানা ছিল না। পারসং দুটো যোগ করলে ৫৬ + ৩৬ = ৯২ হচ্ছে, আর ভরসং যোগ করলে ১৩৯ + ৯৪ = ২৩৩। ৫ এবং ৬ নম্বর ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে ইউরেনিয়াম দু’টুকরো হওয়ার পর ৩টে নিউট্রনও বেরচ্ছে। অর্থাৎ হিসেব ঠিক]।
চিত্র ৬ঃ লিকুইড ড্রপ মডেল ব্যবহার করে নিউক্লীয় বিভাজনের ব্যাখ্যা। ৭ নং ছবিটির সঙ্গে এটা দেখলে বুঝতে সুবিধে হবে
হুম, দেখে মনে হচ্ছে সব মিলে যাচ্ছে, কিন্তু একটা মুশকিল এখনও রয়ে যাচ্ছে। ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াস দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার পরে সদ্যজাত দু’টি নিউক্লিয়াস কুলম বিকর্ষণের ফলে প্রচণ্ড বেগে একে অপরের থেকে দূরে সরে যাবে। এই বেগ সৃষ্টির জন্য লাগবে ২০০ এমিভি শক্তি (200 MeV), এত শক্তি আসবে কোত্থেকে? ২০০ এমিভি মুখের কথা নয়। একটা ইলেক্ট্রনকে ভ্যাক্যুমে ১ ভোল্ট (1 volt) বৈদ্যুতিক বিভব পার্থক্যে (electric potential difference) রাখলে ইলেক্ট্রনটি যতটা গতিশক্তি অর্জন করবে তাকে ইলেক্ট্রন-ভোল্ট (electron-volt, eV) বলে। ১ এমিভি হল ১ মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ ইলেক্ট্রন-ভোল্ট (1 MeV = 1,000,000 eV)।
চিত্র ৭ঃ লিকুইড ড্রপ মডেল ব্যবহার করে ইউরেনিয়াম মৌলের নিউক্লীয় বিভাজন। ইউ-২৩৫ আর নিউট্রনের সংঘর্ষে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজিত নিউক্লীয়াস ইউ-২৩৬, সেটা তরল ফোঁটার মত বা জীববিজ্ঞানের কোষের মত দুই ভাগে আলাদা হয়ে শেষমেশ তৈরি হচ্ছে বেরিয়াম (Ba-139) ও ক্রিপ্টন (Kr-94) মৌল, বাড়তি তিনটি নিউট্রন। ১৩৯ (বেরিয়ামের ভরসং) + ৯৪ (ক্রিপ্টনের ভরসং) + ৩ (বাড়তি তিনটে নিউট্রন) = ১৩৬ = ১৩৫ + ১ (ইউ-২৩৫ + ১ নিউট্রন)। ৬ নং ছবিটির সঙ্গে এটা দেখলে বুঝতে সুবিধে হবে
ভাগ্যের বিষয়, বিভিন্ন মৌলের নিউক্লীয় ভর কীভাবে কষে বের করতে হয় সেই ফর্মুলাটা আমার মনে ছিল। চটপট দু’জনে মিলে মাতা ইউরেনিয়াম ও তার দুই বিভাজীয় সন্তানের নিউক্লীয় ভর কষে ফেললাম। যা ভেবেছিলাম তাই! যোগফল ইউরেনিয়ামের ভরের চেয়ে কম। কতটা কম? মোটামুটি একটা প্রোটনের ভরের পাঁচ ভাগের এক ভাগ কম। এই অতিরিক্ত ভরটা যাচ্ছে কোথায়? শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে নিশ্চয়ই। কতটা শক্তি? আইনষ্টাইনের ফর্মুলা E = mc2 ব্যবহার করা যাক। প্রোটনের ভর যদি m_p বলি, তাহলে E = (m_p/5) c2 বসালে পাচ্ছি মোটামুটি ওই 200 MeV!
অটো ফ্রিশঃ পিসি, অন্তত বার পনের নোবেল প্রাইজের জন্য তোমার নাম উঠেছে। এবার না হয়ে যায় না।
লিজে মাইটনারঃ দেখ ভাইপো, নোবেল পেলে ভালই লাগবে, অনেকদিন ধরে এই প্রব্লেমটা নিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে। কিন্তু আগে এই যুদ্ধের দামামা থামুক, মানুষে মানুষে এই অসম্ভব ঘৃণাটা থামুক। আমার আর ভাল লাগে না এই বুড়ো বয়সে বিদেশ-বিভুঁইয়ে বসে কাজ করতে। নিজের দেশে ফিরতে চাই। জার্মানি ফিরতে চাই। আমার সেই পুরনো জার্মানি, যেখানে বুদ্ধির সমাদর হত, সে যে জাতির লোকই হোক না কেন। বিজ্ঞান তো সব মানুষেরই। যাক গে, অনেক লেকচার দিলাম, তুই কোপেনহাগেন ফিরে এই রেজাল্টটা নীলস বোরকে (Niels Bohr) দেখাস, দেখ কী বলেন
[গেছোদিদিঃ নীলস বোর সব শুনেটুনে কপাল চাপড়ে বলেছিলেম, “আমরা কী নির্বোধ! What idiots we have been!”]।
ফ্রিশঃ তাও, নোবেলটা…
মাইটনারঃ প্রবলেমটা সল্ভ করতে পেরেছি, তাই অনেক। ব্যাটা অনেকদিন জ্বালাচ্ছিল। চ’, লাঞ্চ করা যাক।
না, মাইটনার নোবেল পাননি। ১৯৪৪ সালের রসায়নে নোবেল প্রাইজ পেলেন একা অটো হান। স্ট্রাসমান পেলেন না কেননা তখন বরিষ্ঠ গবেষককেই নোবেল দেওয়ার রীতি ছিল। তেজস্ক্রিয়তা তখনও রসায়নের বিষয় বলেই মনে করা হত, তাই রসায়নে নোবেল। পদার্থবিদ্যাতেও মাইটনার ও ফ্রিশ নোবেল প্রাইজের জন্য অনেকবার মনোনীত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু পাননি। কেন পাননি তার অনেক কারণ আছে। পাওয়া উচিত যে ছিল, সে নিয়ে আধুনিক জমানায় কারুরই মনে সন্দেহ নেই। তবে কী, নিউক্লীয়ার ফিশন বা বিভাজন তত্ত্বের জননী ও জনক যে লিজে মাইটনার ও অটো ফ্রিশই, সেই তথ্য এখন পাব্লিক ডোমেনে চলে এসেছে। সান্ত্বনা পুরষ্কার। জীবদ্দশায়...থাক গে।
এখানে একটাই ছোট গোলমাল করেছি আমি। মাইটনারের সময়ে পর্যায় সারণীতে ৯২ নম্বর মৌল ইউরেনিয়ামের পর আর কিছু ছিল না (ছবি ৮)। আধুনিক কালে ১১৮ নম্বর মৌল অবধি আবিষ্কার হয়েছে। মাইটনার আমার কাছে পর্যায় সারণীর ছবি চাইলে ভুল করে ৫ নম্বর ছবিটা ওনার হাতে দি। সেটা দেখে উনি কী বললেন দেখা যাক।
চিত্র ৮ঃ ১৯৩০র দশকের পর্যায় সারণী, ৫ নং ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখ
মাইটনারঃ বন্ধুরা, পর্যায় সারণীর একদম নীচের সারিটায় চোখ রাখো, দেখবে একদম শেষে ইউরেনিয়াম……এক মিনিট, ১১৮টা মৌল!!! ইউরেনিয়ামের পরে এটা কী? নেপচুনিয়াম, প্লুটোনিয়াম…এ’সব কী?
গেছোদিদিঃ মাপ করবেন প্রফেসর, ভুল করে ২০২২ সালের পর্যায় সারণী আপনার হাতে দিয়েছি। চিন্তা নেই, এই তথ্য আপনার মনে থাকবে না। কিন্তু তার আগে একবার যদি ১০৯ নম্বর মৌলটা ভাল করে দেখেন…
লিজে মাইটনারঃ ১০৯…১০৯…মাইটনেরিয়াম! (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আমার নামে?
গেছোদিদিঃ হ্যাঁ, ভবিষ্যত আপনাকে মনে রাখবে প্রফেসর। নোবেল তো শুধু একটা প্রাইজ। ক’জন নোবেল লরিয়েটকে মনে রেখেছি? নিউক্লিয়ার বিভাজনের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন লিজে মাইটনার ও অটো ফ্রিশ, এই তথ্য ইতিহাসের পাতায় চিরকাল লেখা থাকবে। প্রফেসর মাইটনার, আপনি অমরত্ব লাভ করেছেন। সেলাম আপনাকে!
ছবিসূত্রঃ
চিত্র ১: https://physicstoday.scitation.org/do/10.1063/pt.6.6.20171107a/full/ এবং https://www.atomicheritage.org/sites/default/files/O.R.%20Frisch.jpg
চিত্র ২: https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/7/76/Lise_Meitner12.jpg
চিত্র ৩ : https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/7/73/Hahn_and_Meitner_in_1912.jpg
চিত্র ৪ : https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/6/66/Hydrogen_Deuterium_Tritium_Nuclei_Schmatic-en.svg
চিত্র ৫ : https://pubchem.ncbi.nlm.nih.gov/periodic-table/
চিত্র ৬ : https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/3/3a/Kernspaltung.gif
চিত্র ৭ : https://www.nuclear-power.com/nuclear-power/fission/liquid-drop-model/
চিত্র ৮ : http://www.teachnlearnchem.com/pt1930.gif