ছোটোবেলার সন্ধেগুলো এখনকার চেয়ে যেন একটু বেশিই অন্ধকার ছিল। সেই রোজের নিয়মিত অন্ধকারে সঙ্গী ও ভরসা ছিল পেটফোলা, ঝুলকালি হ্যারিকেন। কারো কারো বাড়তি 'য ফলা'-য় কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই তাদের কাছে সে 'হারিকেন'।
দুলে দুলে বাংলা কবিতা বা উনিশের নামতা মুখস্থর সঙ্গে এই হ্যারিকেনের ছিল এক গভীর আত্মীয়তা। দুলুনির ছন্দে তাল মিলিয়ে নেচে উঠত আগুনের শিখা। বাইরের উদ্দাম হাওয়া তাকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারত না। তাই তড়িঘড়ি দক্ষিণের জানলা বন্ধ করার দরকার হত না। দু-দিন ঠিকঠাক জ্বলার পরে তৃতীয় দিন থেকে তার গায়ে মাথায় কালো দাগ পড়তে শুরু করত। অমনি ধুম পড়ে যেত হ্যারিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার।
হ্যারি জ্বলত আর উলটো দিকের দেয়ালে পড়ত অশরীরী ছায়া। নিজেরই অন্য রূপ, তবু কেমন গা ছম ছম করত। মনে হত, ওই এল।
কে সে?
তার কোনো নাম নেই, ঠিকানা নেই, নেই কোনো পূর্ব পরিচয়। তার আসার আশঙ্কা থেকে রক্ষা করত হ্যারি। কখনো কখনো হ্যারির গায়ে থাকত কোনাকুনি এক তারের বেল্ট, কখনো সে এক লম্বা গলা সারস। নেই-আলোর পারে দাঁড়িয়ে ছায়া ধরতে প্রস্তুত।
আমরা যারা হ্যারির স্নেহে একদিন বড়ো হলাম, তাদের জীবন থেকে হঠাৎ একদিন হ্যারি কোথায় যেন চলে গেল। কিন্তু জায়গা তো আর ফাঁকা থাকে না। হ্যারির জায়গায় এল লিকপিকে মোম। শুরু হল এক নতুন কাল।
আর এই মোম রাজার কালে আমরা হ্যারিকে কেমন করে একদিন ভুলেই গেলাম।
ছবিঃ পিক্সাবে