সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
পেঙ্গুইনদের কান্ডকারখানা
দুই কিং পেঙ্গুইনের সাথে পায়চারি করছে এক জেন্টু পেঙ্গুইন

আন্টার্কটিকা যেন এক রহস্যপুরী। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত এই মহাদেশের চারদিকে শুধু বরফ, বরফ আর বরফ। এখানে সবুজের কোনো চিহ্ন নেই। আছে তুষার ঝড় আর হাড় কাঁপানো শীত। বরফে ঢাকা এই মহাদেশে গাছপালা নেই, মানুষের কোলাহল নেই, কিন্তু আছে পাখির কলরব, আছে নানা ধরনের জীবজন্তু। আকাশে উড়ে বেড়ায় স্কুয়া, ফলমার, পেট্রেল, আর্কটিকান, অ্যালবাট্রাসের মতো পাখিরা। জলে সাঁতার কাটে তিমি, সিল প্রভৃতি প্রাণীরা। আর ডাঙায় ঘুরে বেড়ায় পেঙ্গুইনের দল।

আন্টার্কটিকার প্রধান আকর্ষণ পেঙ্গুইন। সাদা-কালো পালকে ঢাকা পাখিগুলি যখন হেলেদুলে দু-পায়ে হেঁটে বেড়ায় তখন মনে হয় যেন কালো কোট পরা কোনো ভদ্রলোক গুরু-গম্ভীর চালে চলাফেরা করছে। এরা উড়তে পারে না। তবে জলে সাঁতার কাটতে ওস্তাদ। বিশেষজ্ঞদের মতে এরা হল সরীসৃপ থেকে পাখি হওয়ার প্রথম ধাপের পাখি। তাই এদের আদিম পাখি বলা যেতে পারে। আন্টার্কটিকাতে কয়েক ধরনের পেঙ্গুইন দেখা যায়। যেমন এম্পেরর পেঙ্গুইন, অ্যাডেলি পেঙ্গুইন, কিং পেঙ্গুইন, ম্যাকারনি পেঙ্গুইন, জেন্টো পেঙ্গুইন, চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন ইত্যাদি। এদের মধ্যে এম্পেরর ও অ্যাডেলি পেঙ্গুইন সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

অ্যাডেলি পেঙ্গুইনকে আন্টার্কটিকার সঙ বলা হয়। এরা সাঁতারে খুব দক্ষ। শুধু তাই নয়, এরা ভীষণ কৌতুহলী। মাঝে মাঝে এদের মধ্যে কেউ কেউ আন্টার্কটিকায় বিভিন্ন দেশের যে গবেষণাগারগুলি আছে তার কাছাকাছি চলে আসে। বেশ কিছুদিন সেখানে থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করে ব্যাপারটা কী হচ্ছে সেখানে।

পেঙ্গুইনরা খুব মিশুকে। এরা দল বেঁধে থাকতে ভালোবাসে। মানুষের প্রতি এদের কোনো ভয়ডর নেই। বরং মানুষ দেখলেই কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে মুখ বাড়িয়ে এমন ভাব-ভঙ্গি করবে যেন কতদিনের পরিচিত। তবে এরা যে একেবারেই ঝগড়া করে না এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। যখন গলা বাড়িয়ে ঝগড়া করে তখন মনে হবে এরা নামকরা ঝগড়াটে।

পেঙ্গুইনদের কান্ডকারখানা
ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন

পেঙ্গুইনদের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইনরা আকারে সবচেয়ে বড়। এরা লম্বায় চার ফুটের মতো আর ওজনে চল্লিশ কিলোগ্রামের কাছাকাছি হয়ে থাকে। এরা ডিম পাড়ে শীতকালে। তখন সমুদ্র জমে বরফ। চারদিক অন্ধকার। এসময় সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। বইতে থাকে তুষার ঝড়। জমাট বাঁধা বরফের উপর হাজার-হাজার পেঙ্গুইন এসে জড়ো হয় এক জায়গায়। মা পেঙ্গুইন একটি মাত্র ডিম পাড়ে। ডিমে তা দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু বাবার। বরফের উপর ডিম পড়ে যাতে জমে না যায় তাই বাবা পেঙ্গুইন নিজের পায়ের উপর ডিমটি নিয়ে তা দিতে বসে যায়। দু-মাস পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে বাবা-মা দু'জনে খাবার আনতে সমুদ্রে চলে যায়। বাচ্চারা জড়াজড়ি করে বসে থাকে। খাবার নিয়ে বাবা-মায়েরা যখন ফিরে আসে তখন বাচ্চাদের মধ্যে শুরু হয় দৌড় প্রতিযোগিতা। বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যাপারে এম্পেরর পেঙ্গুইনরা খুব উদার। তাই বাচ্চারা সামনে এলেই যে যাকে পারে খাইয়ে দেয়।

পেঙ্গুইনদের কান্ডকারখানা
সন্তানকে খাওয়াচ্ছে অ্যাডেলি পেঙ্গুইন

অ্যাডেলি পেঙ্গুইনরা দেখতে ছোটখাট। লম্বায় দু-ফুটের কাছাকাছি হয়। এরা ডিম পাড়ে গ্রীষ্মকালে। তখন বরফ গলে যায়। তাই এদের ডিম পাড়তে হয় পাথুরে জমির উপর। ডিম পাড়ার আগে এরা ছোট ছোট নুড়ি দিয়ে বাসা বানায়। এই সময় এরা কেউ কারও বন্ধু নয়। বরং সুযোগ পেলেই একজন আর একজনের নুড়ি চুরি করে। আর এব্যাপারে মেয়ে পেঙ্গুইনরা ওস্তাদ। বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যাপারেও এরা খুবই স্বার্থপর। নিজের বাচ্চা ছাড়া অন্য কারও বাচ্চাকে খাওয়ায় না।

পেঙ্গুইনদের কান্ডকারখানা
সাঁতার কাটছে জেন্টু পেঙ্গুইন

পেঙ্গুইনদের প্রাধান শত্রু 'লেপার্ড সিল' আর হিংস্র তিমি 'অরকা'। এরা জলের নীচে বরফের তলায় লুকিয়ে থাকে। খাবারের খোঁজে পেঙ্গুইনের দল জলে নামলেই খপাখপ্‌ ধরে কোঁৎ-কোঁৎ করে গিলে ফেলে। তাই জলের ধারে এসে কে আগে জলে নামবে তাই নিয়ে পেঙ্গুইনদের মধ্যে শুরু হয় ঠেলাঠেলি। এ বলে আগে তুই নাম, ও বলে তুই নাম। জলে আর কেউ নামে না। সাধ করে কে চায় তিমির পেটে যেতে? কিন্তু জলে না নামলে তো চলবে না। খাবার যে ওইখানেই আছে। অতএব সমস্যা সমাধানের জন্য জলের ধারে বরফের উপরেই বসে পেঙ্গুইনদের সভা। সেখানেই ঠিক হয় কে আগে জলে ঝাঁপ দেবে। সাধারণত যে দুর্বল তাকেই বলির পাঁঠা করা হয়। এবার সবাই মিলে তাকে ঠেলতে ঠেলতে জলের ধারে নিয়ে যায়। নিজে থেকে ঝাঁপ দিলে ভালো, নয়তো সবাই মিলে এক ধাক্কায় ঠেলে ফেলে দেবে জলে। ঝুপ করে জলে পড়ার পর বাকিরা মুখ বাড়িয়ে দেখবে বেচারা বেঁচে আছে কি না। যদি থাকে তবে দাঁড়াও বন্ধু আমরাও আসছি। আর যদি না থাকে তবে টা-টা। তুমি থাকো তিমির পেটে আমরা কেটে পড়ি।


ছবিঃ উইকিপিডিয়া

বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সহ সভাপতি কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটদের এবং বড় দের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বহু বই লিখেছেন। বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রপত্রিকা এবং ওয়েব ম্যাগাজিনে তিনি নিয়মিত লেখালিখি করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা