মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনেক ন্যাশনাল পার্ক আছে| ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক তাদের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত এবং এটা বিশ্বে প্রথম ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্ককে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণা করা হয়েছিল ১ মার্চ ১৮৭২ সালে। বিশ্বে যত হাইড্রোথার্মাল ফিচার আছে তার অর্ধেক এই ন্যাশনাল পার্কে পাওয়া যায়। এই পার্ক আমেরিকার একটা বৃহত্তম শহর সিয়াটেল থেকে ১২১৪ কিলোমিটার দুরে। আমরা গত বছর সিয়াটেল থেকে সাবাই মিলে ছুটিতে সেখানে বেড়াতে গেছিলাম।
সবুজের সমারোহ
দুদিন মোট বারো ঘণ্টা ড্রাইভ করে যখন আমরা ওয়েস্ট ইয়েলোস্টোন টাউনে পৌঁছলাম তখন দুপুর হয় গেছে। ওখানে পৌঁছে আমরা তখনই হোটেলে না ঢুকে পার্কের দিকে রওয়ানা দিলাম । পার্কের ভেতরের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আমরা মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন সুন্দর গাছপালা দেখছিলাম যেমন ফার (দেবদারু), জুনিপার, স্প্রুস আর পাইন ইত্যাদি।
বাইসন
ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দূর থেকে মনে হল যেন সিংহ দেখছি। আস্তে আস্তে কাছে পৌঁছে দেখলাম তার সিংহের মতন বড় বড় লোম আছে কিন্তু শরীরটা মহিষের মতন দেখতে। আসলে ওটা ছিল একটা বাইসন। তখন মা বলল ইয়েলোস্টোনে অনেক বাইসন আছে । ছবি তুলে আমরা 'ওল্ড ফেইথফুল' গাইজার (গীজার) দেখতে এগোলাম।
'ওল্ড ফেইথফুল' গীজার
গাইজার হছে এক প্রকারের হট স্প্রিং। কিন্তু ওর জল সাধারণত স্প্রিং-এর তুলনায় অনেক বেশি গরম আর অ্যাসিডিক হয়। জানোতো ওখানে পাঁচশর বেশি গাইজার আছে । সবচেয়ে বিখ্যাত গাইজারের নাম হছে 'ওল্ড ফেইথফুল' । ওটা বিখ্যাত কারন ওই গাইজার থেকে খুব উঁচু জলের ইরাপশন হয়। যখন ইরাপ্ট করে তখন জলের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় আর বাষ্পের তাপমাত্রা ১৭৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়। ওখানে পৌঁছে দেখলাম প্রচুর লকজন । সবাই অপেক্ষায় বসে আছে গাইজার ইরাপশান দেখবার জন্যে। আমরা পেছনের দিকে একটা কাটা গাছের গোড়ার ওপর বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ দেখি জলটা আস্তে আস্তে ফোয়ারার মতন উঁচুতে উঠে গেল। ন্যাশনাল পার্কের গাইডের কাছে জানতে পারলাম 'ওল্ড ফেইথফুল' গাইজার দিনে ২০ বার ইরাপ্ট করেই তাই এর নাম 'ওল্ড ফেইথফুল' রাখা হয়ছে । খুব সুন্দর দেখতে ছিল সে দৃশ্য।
গ্রেট প্রিস্মাটিক স্প্রিং
ইয়েলোস্টোন-এর আরেকটা বিখ্যাত জায়গার নাম হচ্ছে 'গ্রেট প্রিস্মাটিক স্প্রিং' । 'গ্রেট প্রিস্মাটিক স্প্রিং' ওপর থেকে দেখলে মনে হয় আকাশের রামধনু টা যেন মাটিতে নেমে এসেছে । ওটা একটা বড় গরম জলের জায়গা যেখানে লাল নীল হলুদ সবুজ আর কমলা রং দেখতে পাওয়া যায় । জলের চারদিকে অনেক থার্মোফাইল ব্যাকটেরিয়া আছে। মাটির দিকে তাকালে অনেক গুলো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। ওই দাগ গুলো হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার কলোনি। এটা দেখার পর আমরা হোটেলে ফিরে গেলাম কারণ সন্ধ্যে হয় গিয়েছিল।
ম্যামথ হট স্প্রিং
পরের দিন আমরা ইয়েলোস্টোন-এর উত্তর দিকে আরেকটা বিখ্যাত জায়গায় ঘুরতে গেলাম। জায়গাটার নাম 'ম্যামথ হট স্প্রিং' । আমারা ওখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হেঁটে ঘুরতে গেলাম। অনেকগুলো কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নামার পরে দেখলাম একটা হট স্প্রিং আর তার সাথে বড় বড় একের ওপর এক সিঁড়ির মতন সাজান কিছু আকৃতি। এই আকৃতিগুলোকে 'ট্রাভেন্টাইন টেরাস' বলে । এখানে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চুনাপাথরের ওপর মাটির তল থেকে আসা অ্যাসিডিক জল গড়িয়ে যায়। এর ফলে ঘোলানো চুনাপাথর বায়ুর সংস্পর্শে এসে সিঁড়ির মতন আকারে জমে যায়।
ইয়েলোস্টোন নদী ও গিরিখাত
এর পর আমরা পার্কে গাড়ি করে চলতে চলতে একটা জায়গায় 'ইয়েলোস্টোন ক্যানিয়ন' আর ' ইয়েলোস্টোন রিভার' লেখা একটা বোর্ড দেখলাম। ক্যানিয়ন হচ্ছে দুটো বড় আর উঁচু পাথরের পাহাড়ের মাঝখানের জায়গা যার মধ্যে দিয়ে সাধারানত একটা নদী বয়ে যায়। বহু বছর এই নদীটাই ওই পাথরের পাহাড় গুলো কে কেটে কেটে ওই ক্যানিয়নটা তৈরি করে। ওপর থেকে ক্যানিয়ন দেখতে খুব সুন্দর হয়। এটা একটা ছবি যেটা আমরা ওপর থেকে তুলেছিলাম।
এসব দেখার পর পরের দিন আমরা টানা বারো ঘণ্টা ড্রাইভ করে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। আর আমাদের ছুটি শেষ হল।
তোমরা আমাদের ঘোরার ভিডিওটা এখানে দিলামঃ
লেখা, ছবি ও ভিডিওঃ আধিতা দত্ত
নবম শ্রেণি
নিউপোর্ট হাই স্কুল, বেলভিউ (সিয়্যাট্ল্ ), ওয়াশিংটন স্টেট,আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র