সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
কাগা চলল ইশকুলে

সকালবেলা। বাইরের বারান্দায় পড়তে বসেছে পুটুরানী। পড়া তো নয়, সে এক হুলস্থূল কাণ্ড! চারদিকে বইখাতা ছড়ানো, কাগজ উড়ছে, গোছা গোছা রংপেন্সিল, মোম-পেন্সিল এধারে ওধারে গড়াচ্ছে, পুটুরানীর প্রিয় পুতুল আর খেলনাগুলো এদিকওদিক ছড়ানো, মেঝেতে তিন-চারটে বিস্কুটও গড়াগড়ি খাচ্ছে। পুটুরানী একমনে খাতা-পেন্সিল নিয়ে পড়াশুনো করছে আর মাঝে মাঝে এক একটা বিস্কুট তুলে কুটুস কুটুস করে কামড়াচ্ছে।

কাগা চলল ইশকুলে

উঠোনের পেয়ারা গাছটার ডালে বসেছিল কাগা। ঘাড় কাত করে দেখছিল পুটুরানীর কাণ্ড। তার নজর বিস্কুটগুলোর ওপর, টুকরোটাকরা যদি কিছু মেলে!

কাগা চলল ইশকুলে

এমন সময় ভেতর থেকে ডাক শোনা গেল, "পুটুরানী, কোথায় গেলি রে তুই? আয় মা, দুধটা খেয়ে যা শিগগির।"
পুটুরানী তার ঘরসংসার ফেলে ছুটল বাড়ির ভেতর, "যাই, ঠাম্মা।"

কাগা চলল ইশকুলে

কাগা দেখল, এই সুযোগ। বারান্দায় নেমে এসে তুড়ুক তুড়ুক করে সে এগিয়ে গেল বিস্কুটের টুকরোগুলোর দিকে। মেরি বিস্কুট, আহা, ঠোঁটে জল এসে গেল তার।

কাগা চলল ইশকুলে

বিস্কুটের একটা টুকরো ঠোঁটে নিয়েই কাগার নজর গেল একটা কাগজের দিকে। খোলা একটা সাদা পাতা, মেঝের একপাশে পড়ে আছে, তাতে রংবেরঙের বিচিত্র সব ছবি আঁকা, পুটুরানী এঁকেছে। কাগা ভাবল, কাণ্ড দেখো মেয়েটার, বাড়ির সবাই ভাবছে কিনা খুব পড়াশুনো করছে, আর এদিকে সে ছবি আঁকছে! আর ছবির কী ছিরি! একটার সঙ্গে আরেকটার কোনও সম্পর্ক নেই, যা মনে এসেছে এঁকে গেছে। সবই কাগার চেনা জিনিস।

কাগা চলল ইশকুলে

এই তো একটা রসগোল্লা এঁকেছে, এই একটা মই, তার পাশেই একটা লাঠি, এই যে একটা মাকড়সা। একটা সাপ, তার পাশেই দেখো আবার টিভির একটা অ্যান্টেনা, যেমন বাড়ির ছাদে থাকে; কাগা ওতে বসতে খুব পছন্দ করে। অ্যান্টেনার পাশেই এঁকেছে একটা কাপ, কী কম্বিনেশন, আহা! এরকম আনতাবড়ি ছবি আঁকতে কাগা অনায়াসে পারে। নেহাত তার কাগজ পেন্সিল নেই!

কাগা চলল ইশকুলে

অবশ্য, পুটুরানীর থেকে দু'তিনটে কাগজ-পেন্সিল ধার করে নিয়ে গেলেই হয়। বেশ ছবি আঁকা প্র্যাকটিস করা যাবে। আঁকা হয়ে গেলে ফের এই বারান্দায় রেখে গেলেই হবে। কাগার ছবি আঁকার খুব শখ।

কাগা চলল ইশকুলে

যেমন ভাবা তেমন কাজ। পুটুরানীর সেই ছবি আঁকা কাগজটা, আরও দুটো সাদা পাতা আর একটা লাল রঙের পেন্সিল ঠোঁটে নিয়ে কাগা উড়ে চলল বাসায়। আজ সারাদিন ছবি আঁকবে সে।

কাগা চলল ইশকুলে

কাগজ-পেন্সিল নিয়ে গুছিয়ে বসে কাগার মাথায় চিন্তা এল, তাই তো! কিসের ছবি আঁকা যায়? সিনারি? না পোরট্রেট? দু'একবার বন্ধু বগাদার ছবিটা মন থেকে ভেবে ভেবে আঁকার চেষ্টা করে দেখল, নাঃ, কিস্যু হচ্ছে না। মন থেকে ছবি আঁকা ভীষণ শক্ত। দেখে দেখে আঁকার চেষ্টা করা যাক বরং। সে পুটুরানীর ছবি আঁকা কাগজটা পাশে খুলে বসল।

কাগা চলল ইশকুলে

এই তো প্রথমেই পুটুরানী একটা ক্লিপের ছবি এঁকেছে; ছাদের ওপর জামাকাপড় তারে ঝুলিয়ে আটকে রাখে যে ক্লিপ দিয়ে, সেরকম ক্লিপ। কাগা ওরকম ক্লিপ রোজই দেখে। দু'একবার চেষ্টা করেই ক্লিপের ছবি এঁকে ফেলল সে। এই তো হচ্ছে! এরপর কী আছে? পাশাপাশি দুটো কাপ একটা ঢাকনি দিয়ে ঢাকা। সেটাও এঁকে ফেলল কাগা।

কাগা চলল ইশকুলে

এরপরেরটা তো সোজা, একটা বাটি। তার পাশে আরেকটা বাটি, শুধু ওপরে ঢাকা দেওয়া। তারপর একটা চিরুনি, পাশে আরেকটা চিরুনি যেটার আবার একটা দাঁড়া ভেঙে গেছে। ঝটপট এঁকে চলল কাগা। মই, লাঠি, হকিস্টিক, মাকড়সা, রসগোল্লা সব।

কাগা চলল ইশকুলে

কিছুক্ষণের মধ্যেই সাদা পাতা দুটো কাগার আঁকা ছবিতে ভরে উঠল। মন্দ হচ্ছে না! কাগার তো দেখে ভালই লাগছে। তবে নিজের আঁকা ছবি শুধু নিজে দেখে কি সুখ আছে?

কাগা চলল ইশকুলে

সমঝদার কাউকে যদি দেখানো না যায়, তাহলে কি জমে নাকি? কাগার মনে পড়ল বগাদার কথা। তাই তো! বগাদাকে গিয়ে দেখানো যাক ছবিগুলো। কি বলে দেখি! কাগজপত্র ঠোঁটে নিয়ে কাগা উড়ে চলল বিলের দিকে।

কাগা চলল ইশকুলে

বগা যথারীতি বিলের ধারে একপায়ে দাঁড়িয়ে ঝিমোচ্ছিল।
কাগা গিয়ে বলল, "বগাদা, দেখো কত ছবি এঁকেছি।"
"ছবি এঁকেছিস? তুই? বাঃ বাঃ, কই দেখি," বলে বগা মন দিয়ে কাগার আঁকা ছবিগুলো দেখতে দেখতে বলল, "বাঃ, ভালোই তো এঁকেছিস দেখি। কিন্তু, এসব ছবি কি তুই মন থেকে ভেবে ভেবে আঁকলি?"

কাগা চলল ইশকুলে

কাগা একটু মাথা চুলকে বলল, "না বগাদা। মন থেকে ছবি আঁকা ভারি শক্ত। দেখে দেখে এঁকেছি।" এই বলে পুটুরানীর ছবি আঁকা কাগজটা বাড়িয়ে দিল বগার দিকে, "এই যে, এটা দেখে।"

বগা দেখে বলে, "ও, তাই বল! আমি ভাবছি তুই এসব জানলি কোথা থেকে! ওরে বোকা, এগুলো ছবি নয়, ইংরিজি ABCD."
"মানে?"
"মানে ইংরিজি ভাষার বর্ণমালা। তুই তো লেখাপড়া শিখিসনি, তাই ছবি ভেবেছিস।"

কাগা চলল ইশকুলে

"ইঃ, বললেই হল ছবি নয়! এই তো একটা রসগোল্লা, এই যে একটা মই, তার পাশে একটা লাঠি, তারপর একটা হকিস্টিক। এই যে একটা ভাঙা লাঠি, পাশে একটা মাকড়সা।"
"দূর বোকা! ওটা রসগোল্লা নয়, ওটা হল O, মই নয়, ওটা H, তারপর I আর J. তুই যেটা মাকড়সা ভাবছিস সেটা হল ইংরিজি M , তার আগে ভাঙা লাঠিটা হল L."

কাগা চলল ইশকুলে

"আর এই যে একটা সাপ? তারপাশে টিভির একটা অ্যান্টেনা? এগুলোও বুঝি ছবি নয়!"
"না রে। ওটা হল S, তারপাশে T, তারপর U..."
কাগা তো অবাক। বোঝো কাণ্ড! কাপড় মেলার ক্লিপটা নাকি A, ঢাকা দেওয়া পাশাপাশি দুটো কাপ নাকি B, বাটিটা হল C, আর ঢেকে উল্টে দিলেই সেটা হয়ে গেল D, চিরুনির মত দেখতে জিনিসটা E আর দাঁড়ভাঙা চিরুনিটা F

"তাই ভাবি, কতগুলো ছবি ঠিক বুঝতে পারছি না কেন! এই যেমন দেখো এই ছবিটা, একটা রসগোল্লার পেট থেকে ল্যাজ বেরিয়েছে।"
"দূর! ওটা হল Q ."
"আর এই চরকিটা?"
"ওটা X ."
"আর এই যে একটা বুড়োমতন লোক পিঠটা ধনুকের মতো কুঁজো করে হাঁটুদুটো কোলের কাছে নিয়ে বসে আছে?"
"ওটা বুড়ো হতে যাবে কেন? ওকে বলে G ."

কাগা চলল ইশকুলে

কাগার মনটা ভারি খারাপ হয়ে গেল। ইশ, সে কী বোকা! একেবারে মুখ্যু! কিছুই জানে না। এসব ইংরিজি অক্ষরকে সে কিনা ছবি ভেবেছে! কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে সে ধরা গলায় বগাকে শুধোল, "বগাদা, ইংরিজি শেখা যায় কী করে?"

"কেন, ইস্কুলে? লেখাপড়া শিখতে গেলে ইস্কুলে ভর্তি হতে হবে। শিখবি তুই? ইস্কুলে ভর্তি হয়ে যা তবে।"
"আমাকে ইস্কুলে ভর্তি নেবে?"
"কেন নেবে না? আলবাত নেবে। ইস্কুল তো সবার জন্যে খোলা।"

কাগা চলল ইশকুলে

কাগা মনে একটু জোর পেল। তাই তো! ইস্কুলে ভর্তি হয়ে গেলেই হয়। বেশ পড়াশুনো করা যাবে। পুটুরানী যখন বারান্দায় বসে পড়াশুনো করে, কী সুন্দরই না লাগে দেখতে। সেও পুটুরানীর মত পড়াশুনো করবে, বইখাতা নিয়ে পড়তে বসবে, আর মা যখন খেতে ডাকবে তখন খাতা থেকে মুখ না তুলে বলবে, 'দাঁড়াও মা, এই অঙ্কটা করেই আসছি।' আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে কাগা ফিরে চলল বাসায়। কাল সকালেই সে ইস্কুলে ভর্তি হতে যাবে।

কাগা চলল ইশকুলে

পরদিন সকাল। মাঠের পাশের বিরাট বটগাছটায় 'কলকাকলি প্রাথমিক বিদ্যালয়'-এর ক্লাস সবে শুরু হয়েছে। একেবারে নিচের দুটো ডালে নার্সারি আর ক্লাস ওয়ান, তার ওপরে টু আর থ্রি, আর একদম মগডালে ক্লাস ফোর। ফোরের ক্লাসে হেডমিস্ট্রেস মিস কাকাতুয়া গম্ভীরমুখে ঝুঁটি নেড়ে নেড়ে নামতা শেখাচ্ছেন।

কাগা চলল ইশকুলে

এমন সময় হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে তার ঠিক পাশটিতে বসে পড়ল কাগা।
হেডমিস্ট্রেস তো নামতা-টামতা ভুলে গিয়ে বিষম-টিষম খেয়ে একাকার, "এটা আবার কোত্থেকে এল? অ্যাই, তুই কে রে?"
"আমি কাগা।"
"অ, তা এখানে কী চাই?"
"আমি পড়াশুনো করতে চাই। আমাকে এই স্কুলে ভর্তি নেবে?"

কাগা চলল ইশকুলে

শুনে হেডমিস্ট্রেস তো হেসেই খুন। আরেকপ্রস্থ বিষম খেয়ে হেঁচকি-টেচকি তুলে বললেন, "হা হা হা, হাসালি বটে! ওরে বাপ রে বাপ! হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে গেল। তুই করবি পড়াশুনো? কেলেকুষ্ঠি কাকের বংশ, তোর বাপ-দাদারা কোনও জন্মে পড়াশুনো করেছে? সারাদিন তো নোংরা খুঁটে বেড়াস। ইশ, রূপের কী ছিরি! যা, ভাগ এখান থেকে। আমাদের স্কুলে কাকদের নেওয়া হয় না, কস্মিনকালে নেওয়া হয় নি, এ স্কুলের একটা ঐতিহ্য আছে।"

কাগা চলল ইশকুলে

"কিন্তু আমি যে ইংরিজি শিখতে চাই?"
"ওরে বাবা, ইংরিজি! ইনি আবার ইংরিজি শিখতে চান! শখ কত ছেলের! বামুন হয়ে চাঁদ ধরবেন! বলছি না এখানে সুবিধে হবে না? পালালি তুই? শিগগির পালা।"

কাগা চলল ইশকুলে

কাগা দেখল গতিক সুবিধের নয়। সে উড়ে পালাল, চলল বিলের দিকে। বগাদা যে তবে বলেছিল ইস্কুল সবার জন্যে খোলা? এখুনি গিয়ে বগাদাকে সব বলতে হবে।
সব শুনে বগা তো রেগে ফায়ার!
"কী? এভাবে অপমান করল তোকে? পৃথিবীর কোন আইনে বলা আছে যে কাকদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া যাবে না? চল দেখি আমার সঙ্গে, এখুনি যাব ওই স্কুলে।"

কাগা চলল ইশকুলে

ফোরের ক্লাসে মিস কাকাতুয়া তখন ছবি আঁকা শেখাচ্ছিলেন।
কাগাকে সঙ্গে নিয়ে উড়ে এসে বগা বলল, "কই, বার করুন দেখি আপনার স্কুলের সংবিধান। কোথায় লেখা আছে কাকদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া যাবে না?"
বগার রাশভারী চেহারা আর রণচণ্ডী মূর্তি দেখে হেডমিস্ট্রেস থতমত হয়ে গেলেন। আরেকবার বিষম খেয়ে আমতা আমতা করে বললেন, "না, মানে, ওদের মধ্যে তো পড়াশুনোর চল নেই। কাগার বাপ-দাদারা তো কোনোদিন স্কুলের গণ্ডী মাড়ায়নি।"

কাগা চলল ইশকুলে

"তা, কাগার বাপ-দাদারা কোনোদিন পড়াশুনো করেনি বলে কি কাগাও সারাজীবন মুখ্যু হয়ে থাকবে নাকি?"
"না না, তা কেন, তবে এই স্কুলে ঢুকতে গেলে ভর্তির পরীক্ষা দিতে হয়, অ্যাডমিশন টেস্টে পাশ করতে হয়, কাগা কি আর সে সব পারবে?"
"পারে কি না পারে দেখাই যাক না। কী এমন হাতি-ঘোড়া অ্যাডমিশন টেস্ট? ভর্তি তো হবে নার্সারিতে!"

কাগা চলল ইশকুলে

"ওই, একটু বাংলা-ইংরেজি লিখতে-পড়তে জানা চাই আর কি। বাংলা তো নয় হয়ে যাবে, কিন্তু ইংরেজি? মিনিমাম অক্ষরজ্ঞানটা তো থাকা চাই!"
এই বলে মিস কাকাতুয়া মুখ ঘুরিয়ে ডানার নিচে ঠোঁট লুকিয়ে ফিকফিক করে একচোট হেসে নিলেন। এইবারে বাছাধন জব্দ। ইঃ, কাকের পো শিখবে ইংরিজি!

কাগা চলল ইশকুলে

বগা কাগার দিকে ঘুরে বলল, "কী রে কাগা, ইংরিজি কিছু জানিস না?"
"কিছু কিছু জানি। হ্যালো, হাই, গুড মর্নিং, ইয়েস, নো, ভেরি গুড, শাট আপ, ইস্টুপিড..."
"ব্যাস ব্যাস, যথেষ্ট। ওতেই হবে। ইংরিজি বলা আর এমন কি? ও তো অভ্যেসের ব্যাপার।"

কাগা চলল ইশকুলে

মিস কাকাতুয়া বললেন, "কিন্তু লিখতে? লিখতে পারো কি?"
বগা তাড়াতাড়ি বলল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, কিছু কিছু ইংরিজি কাগা লিখতেও পারে। ছোট ছোট শব্দ।"
"কই, লিখে দেখাক তো দেখি?"
"হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই দেখাবে, কাগজ-পেন্সিল দেওয়া হোক ওকে।"
এদিকে বগাদার কথা শুনে কাগার তো ডানা-পা ঠান্ডা হয়ে যাবার জোগাড়। সে আবার ইংরিজি লিখতে পারে নাকি? তার তো অক্ষরজ্ঞানই নেই। কী করবে এখন? বগাদা যে কী করে না!

কাগা চলল ইশকুলে

মিস কাকাতুয়া ক্লাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে একটি ছাত্রকে বললেন, "অ্যাই, তোর খাতা আর পেন্সিলটা একবার এই কাগাকে দে তো।"
সেই ফাঁকে বগা কাগার কানে কানে ফিসফিস করে কী সব বলে নিল।

কাগা চলল ইশকুলে

খাতা-পেন্সিল চলে এল কাগার সামনে। মিস কাকাতুয়া বললেন, "কই, লেখো দেখি।"

বগা বলল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, লিখছে। তবে ওকে দিয়ে কিছু লেখানো ভারি শক্ত। ছোট তো! সবই মুডের ওপর। মুড ভাল থাকল তো লিখে ফেলল, আবার মুড খারাপ থাকলে অনেক সাধ্যসাধনা করলেও কিছু লিখবে না। ওর মুড ভাল রাখার একটা কায়দা আছে। মজার মজার ছড়া শোনাতে হয়। আমি তো মাঝেমাঝেই বানিয়ে বানিয়ে নানারকম ছড়া শোনাই ওকে। এই যেমন,

মইয়ের পাশে ডাইনে রাখা কার চিরুনি?
তারপরে এক ভাঙা লাঠি
ফের একখানা ভাঙা লাঠি
শেষপাতে রসগুল্লা পেলে ঠিক খেয়ে নি।
কই রে কাগা, কিছু লিখলি?"
"হ্যাঁ, লিখছি তো!"
মিস কাকাতুয়া কাগার খাতাটার দিকে ঝুঁকে পড়ে বললেন, "কই দেখি?"
দেখা গেল খাতাটায় বড় বড় করে লেখা হয়েছে HELLO।

কাগা চলল ইশকুলে

বগাও একঝলক দেখে নিয়ে বলল, "বেশ বেশ, লিখে যা। এবারে তোর নামটা লিখে ফেল।"
তারপর ফের মিস কাকাতুয়ার দিকে ফিরে বলে চলল, "বুঝলেন দিদিমণি, বানিয়ে বানিয়ে এই নতুন ছড়া বলা যে কি ঝকমারি! কাগার মুড ভাল রাখতে গিয়ে আমি তো ছড়াকারই হয়ে গেলাম। এই যেমন সেদিন একটা ছড়া বানালাম,

একটা লাঠি, তার পাশে এক ক্লিপ ছিল,
তার পাশে সেই মাকড়সাটা দুলছিল,
এবার রাখি একটা বাটি,
বাটির পাশে ক্লিপ একটি,
কুঁজো বুড়োটা মুড়িয়ে হাঁটু ঢুলছিল,
বলব কী আর, সবশেষে ফের ক্লিপ ছিল।"

"বাঃ, আপনি তো বেশ ভালোই ছড়া বানান! তবে মানেটা ঠিক বুঝলাম না! ক্লিপ মানে?"
"হেঁ হেঁ, ভাল আর কোথায়! ওই আর কি! যা মনে আসে লিখি। ক্লিপ মানে বুঝলেন না? জামাকাপড় শুকোতে দেওয়ার সময় তারে আটকে রাখে যে ক্লিপ দিয়ে সেই ক্লিপ। কই রে কাগা, লেখা হয়েছে?"
"হ্যাঁ বগাদা, লিখেছি।"
দেখা গেল তার খাতায় বড় বড় করে লেখা হয়ে গেছে 'IAM CAGA'।

কাগা চলল ইশকুলে

"বাঃ বেশ। তাহলে দিদিমণি, সামনের সপ্তাহ থেকে কাগাকে স্কুলে পাঠিয়ে দি?"
"কিন্তু ওর গায়ে বড্ড গন্ধ! স্নান করে না। সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়, আবর্জনা ঘাঁটে। এ স্কুলের ডিসিপ্লিন কিন্তু খুব কড়া।"
"সে না হয় স্কুলে আসার আগে কাগা আমাদের বিলে একবার করে ডুব দিয়ে আসবে। কী রে কাগা, মনে থাকবে তো? আপনি ওর নামটা খাতায় তুলে নিন, সোমবার থেকে পাঠিয়ে দেব।"

দিদিমণি আর কী করেন! ব্যাজার মুখে জাবদা খাতাটা টেনে কাগার নামটা লিখে নিলেন।

কাগা চলল ইশকুলে

বিলের ধারে ফিরে এসে কাগা বলল, "বগাদা, ফাঁকিবাজি করে তো ভর্তির পরীক্ষায় পাশ করে গেলাম। এবার? সোমবারে যখন ইস্কুলে যাব তখন যদি ফের দিদিমণি ইংরিজি লিখতে বলেন?"
বগা এক চোখ বুজে আয়েশ করে পেট চুলকোতে চুলকোতে বলল, "ঘাবড়াচ্ছিস কেন? আজ তো সবে মঙ্গলবার। সামনের সোমবার আরও পাঁচদিন দূর। এই ক'দিন খাতা-পেন্সিল নিয়ে সকাল সকাল আমার কাছে চলে আয়। সব শিখিয়ে দেব।"


ছবিঃ ত্রিপর্ণা মাইতি

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তাপস মৌলিক ছোটদের জন্য লিখছে গত কয়েক বছর ধরে। জনপ্রিয় বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকা এবং কাগুজে পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি গানবাজনা এবং ভ্রমণে তিনি সমান উৎসাহী ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা