সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
কাঠের ঘোড়া

"দাদান, দাদান এই দেখো আমার নতুন গাড়ি। এটা রিমোট কন্ট্রোলে চলে। দেখবে? এই দেখো," টিনটিন মহা উৎসাহে তার নতুন গাড়ি চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
"দেখো দেখো কী রকম স্পীডে যাচ্ছে," টিনটিন খুব উত্তেজিত।

কিন্তু তাপসবাবু মানে তার দাদানের বিশেষ কোনো ভাবান্তর হল না। তিনি মাথাটাকে একবার তুলে গাড়িটাকে দেখে একটু ম্লান হেসে আবার সেই রকম মাথাটাকে সামনে ঝুঁকিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। নেহাত টিনটিনের নজর গাড়ির দিকে ছিল, দাদানের দিকে নয়, নাহলে ওই রকম ফ্যাকাশে হাসি দেখলে ওরও নির্ঘাৎ মুড অফ হয়ে যেত।

তাপসবাবুর শরীরটা ইদানীং এক্কেবারে ভালো যাচ্ছে না। কী রকম যেন জবুথবু হয়ে পড়েছেন, কোনো কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন না, আজকাল মনেও রাখতে পারেন না অনেক কিছু। স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে যেন অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। একা একা মনমরা হয়ে চুপচাপ থাকতেন বলে রূপা মানে টিনটিনের মা নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। নতুন জায়গা, তার ওপর টিনটিন আছে, একটু পরিবর্তন তো হবে।

তাপসবাবু যদিও প্রথমে আসতে চান নি, আপত্তি করেছিলেন, "এখন আর নিজের জায়গা ছেড়ে কোথাও যেতে ভালো লাগে না রে। এখানে সব পরিচিত লোকজন আছে, তবু দুটো কথা বলা যায়।"

কিন্তু তাঁর আপত্তি ধোপে টিকল না। একে তো মার কাছে দাদান আসছে শুনে টিনটিন লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিল তাছাড়া রূপারা জোর করেছিলেন।

"ওখানেও চেনা পরিচয় হয়ে যাবে। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা পার্ক আছে, ওখানে তো দেখি রোজ বিকেলবেলায় বয়স্ক মানুষদের বেশ একটা জমাটি আড্ডা বসে। আপনাকেও ওখানে ভিড়িয়ে দেব, চিন্তা করবেন না। কি রে টিনটিন দাদানকে নিয়ে রোজ পার্কে যেতে পারবি না?" টিনটিনের বাবা সৌরভ বলেছিলেন।

টিনটিনের তো সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় কাত, "খুব ভালো হবে বাবা। দাদান দাদানের বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করবে আর আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলব। দাদান, আমার বন্ধুদের দাদানরা তোমার বন্ধু হয়ে যাবে, বুঝলে? আমি আমার বন্ধুদের বলে দেব।"

টিনটিনের কথার ধরণে তাপসবাবুও না হেসে পারেন নি। টিনটিনকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে বলেছিলেন, "বেশ, তবে তাই হোক। তোমার কথাই রইল। চলো, তোমার বন্ধুদের দাদানদের সঙ্গে ভাব করে আসি।" সেই বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে টিনটিনদের সঙ্গে আসা। সরকারি বাংলো। সামনে ছোট্ট বাগান, একপাশে উঠোনও আছে। বেশ সুন্দর, খোলামেলা। টিনটিনের গরমের ছুটি চলছে, সে তো প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই দাদানের সঙ্গে আঠার মতো সেঁটে আছে।

"দাদান এটা দেখো, দাদান ওটা করো," সব সময় টিনটিনের মুখে শুধু দাদান আর দাদান। প্রথম কিছুদিন তাপসবাবুও বেশ হাসিখুশী ছিলেন। রোজ টিনটিনের সঙ্গে পার্কে যাচ্ছেন, অনেকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়েছে। প্রথমটা খুব উৎসাহী ছিলেন, তারপর যাচ্ছেন তো ঠিকই কিন্তু ওই যেতে হয় তাই যাচ্ছেন। ইদানীং আরো একটা চিন্তা হয়েছে। বেশ বুঝতে পারছেন তাপসবাবু যে টিনটিনের মা, বাবা তাঁর কাছে থেকে কিছু একটা চেপে যাচ্ছেন। তাঁর শরীরের ব্যাপারেই। এখানে আসার পর হাসপাতালে গেছিলেন দেখাতে। হাসপাতালটা ভালো, অনেক বড়ো বড়ো ডাক্তার আছেন। ডক্টর কিশোর গুপ্ত বলে একজন ডাক্তার তাঁকে দেখলেন। অল্প বয়সী, তা তিনিও অসুখবিসুখের কথা কিছু বললেন না।

"কী হয়েছে আপনার? কিচ্ছু না। সব সময় হাসিখুশী থাকুন, আনন্দে থাকুন। নাতির সঙ্গে সময় কাটান। এখন আর কীসের চিন্তা? কীসের টেকশন? যা ভালো লাগে তাই করুন। দোকান বাজার করুন, হাঁটুন, গল্প করুন, গান শুনুন, সিনেমা দেখুন। কিন্তু মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকা একদম চলবে না, নেভার।"

কিন্তু তাপসবাবু বাড়িতে ফিসফাস শুনেছেন। মেয়ে, জামাই-এর আলোচনা। ব্রেনের সেল শুকিয়ে যাচ্ছে না কীসব যেন! মুশকিল হচ্ছে ওদের জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলছে না। উলটে রূপা সেদিন হারমোনিয়ামের সামনে বসিয়ে দিলেন, বললেন, "কতদিন তোমার গান শুনি নি বাবা, আজ শুনব।"

রবীন্দ্রসঙ্গীতটা তাপসবাবু বেশ ভালোই গান। পাড়ার ফাংশান টাংশানে এককালে অনেক গেয়েছেন। "প্রভু আমার প্রিয় আমার" শুরু করেও মাঝপথে থেমে গেলেন। কীরকম যেন খেই হারিয়ে গেল, কথাও ভুলে গেলেন।

রূপা নাছোড়বান্দা, বললেন, "এবার থেকে নিয়ম করে বোসো তো বাবা। ভুলে গেছি বললে চলবে না। স্বরবিতান রয়েছে। টিনটিনকে শেখাও না। ওকে ভর্তি করেছি গানের স্কুলে কিন্তু তুমি দেখলে আরো ভালো।"

সেই থেকে বসছেন টিনটিনকে নিয়ে মাঝে মাঝেই, কিন্তু ভালো না লাগাটা যেন দিন কে দিন পেয়ে বসছে।

গাড়ি চালাতে চালাতেই দেখল টিনটিন দাদান বাড়ির মধ্যে ঢুকে যেচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে টিনটিনও গেল। দেখল তাপসবাবু কী একটা জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন।

"ওটা কী দাদান?" বলে টিনটিন দেখতে গেল, কিন্তু তাপসবাবু তাড়াতাড়ি ওটাকে লুকিয়ে ফেললেন, বললেন, "কিছু নয় রে।"

ছোট্ট টিনটিনও যেন বুঝছে দাদান পালটে যাচ্ছে। মাকে বললে মা বলে্ন, "দাদানের শরীরটা ঠিক নেই তো, তাই।"

তবে দাদানের হাতে কী ছিল আর দাদান ওকে ওটা দেখান নি – এটা শুনে অবশ্য রূপা একটু আশ্চর্যই হলেন, তারপর টিনটিনকে বোঝাবার জন্যে বললেন, "হবে কোনো দরকারি জিনিস টিনটিন, ছোটোদের না জানলেও চলবে।"

"একদিন না দাদান আমার স্কুলের বন্ধুদের দাদানদের নাম জানতে চেয়েছিল। আমি তো জানি না, তাই পরেরদিন জিজ্ঞেস করে এসেছিলাম। দাদানকে নামগুলো বললাম, দাদান বলল, 'নাহ, এখানেও নেই।' দাদানকে না কিরকম স্যাড স্যাড লাগছিল।"

রূপা আর কিছু বললেন না। সত্যিই মানুষটা কীরকম যেন হয়ে যাচ্ছে! টিনটিনও কী বলছে বোঝা যাচ্ছে না।

তাপসবাবুর নতুন বন্ধু মিত্রবাবু সেদিন বিকেলে আসবেন বলে রেখেছিলেন, কোথায় যেন নিয়ে যাবেন ওনাকে। মিত্রবাবু দেখা গেল খুব পাংচুয়াল। ঘড়ির কাঁটা ধরে সাড়ে পাঁচটায় এলেন।

"চলুন আপনাকে একজনের বাড়ি নিয়ে যাই। খুব গোপ্পে লোক। কোথা দিয়ে সময় কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না," যেতে যেতে বললেন মিত্রবাবু।
"কিন্তু কার বাড়ি যাচ্ছি সেটা তো বলবেন। এখনও অবধি তো সেটাই জানতে পারলাম না।"
"অমলেন্দুবাবুর বাড়ি। অমলেন্দু গুপ্ত। আরে ওই যে কিশোর গুপ্ত আছে না, ডাক্তার, ওর বাবা।"

কিশোর গুপ্তর নাম শুনে তাপসবাবু রাস্তার মাঝেই বেঁকে বসলেন, " না না ওখানে গিয়ে কাজ নেই। ওসব ডাক্তার টাক্তারের বাড়ি, যখন তখন গিয়ে বিরক্ত করার দরকার নেই।"

মিত্রবাবু তো আর জানেন না যে তাপসবাবু কিশোর গুপ্তকে দেখিয়েছেন, তাই তিনি একটু অবাকই হলেন তাপসবাবুর এ হেন প্রতিক্রিয়ায়।

"কেন মশাই কী হল? ডাক্তারের বাড়ি বলে কি তাদের কোনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনও আসতে পারবে না? আমরা তো যাচ্ছি অমলেন্দুবাবুর কাছে, কিশোরের কাছে তো আর নয়। চলুন, চলুন," তাপসবাবুর সব আপত্তি মিত্রবাবু একেবারে উড়িয়েই দিলেন।

তাপসবাবু গেলেন তো কিন্তু কিন্তু করে কিন্তু গিয়ে বেশ ভালো লাগল। অনেকদিন বাদে এত গল্প করলেন। অমলেন্দুবাবু মানুষটা সত্যিই ভালো।

"চলে আসবেন যখন ইচ্ছে করবে, হেসিটেট করবেন না। আমিও যাব আপনার বাড়িতে," বললেন অমলেন্দুবাবু।

তা সত্যি এলেনও। দিন তিনেক পরেই এসে হাজির হলেন। কত গল্প করলেন, টিনটিনের সঙ্গে খেলা করলেন, এমন কী টিনটিনের কাছে শুনে তাপসবাবুকে গান অবধি গাইয়ে ছাড়লেন। সেদিন রূপাদের তাপসবাবুকে বেশ খুশী খুশী মনে হল। তাপসবাবুরও একটা কথা মনে হল সেদিন। আচ্ছা এনাকে বললে হয় না কিশোরকে জিজ্ঞেস করতে ওনার ঠিক হয়েছেটা কী? খুব শক্ত অসুখ কিছু কি? রূপারা তো বলবে না, উনি কিশোরকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সেও কিছু বলবে না। খালি ওই এক কথা, "মন ভালো করে থাকুন, যা ভালো লাগে তাই করুন।"

কাঠের ঘোড়া

গেলেনও ক'দিন পরে অমলেন্দুবাবুর বাড়ি, যেতে যেতে ভেবে গেলেন, আজ কথাটা এক ফাঁকে বলবেন। কিন্তু কথায় কথায় গল্পে গল্পে এক্কেবারে ভুলে গেলেন। মনে পড়ল রাতে খাবার পর শুতে গিয়ে। আর তখনই আরো একটা জিনিসও হঠাৎ স্ট্রাইক করল। আরে এর নামও তো অমলেন্দু গুপ্ত! এত দিন খেয়াল হয় নি তো! টিনটিনকে ওর বন্ধুদের দাদুদের নাম জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু এটা খেয়াল হয় নি! এই সে নয় তো? উত্তেজনায় তাপসবাবু বিছানায় উঠে বসলেন। এ সেই অমলেন্দু গুপ্ত হলে কী যে ভালো হয়। বিছানা থেকে নেমে সুটকেসের ভেতর থেকে জিনিসটা বার করলেন। সেদিন টিনটিন দেখে ফেলার পর থেকে ওটাকে সুটকেসেই ভরে রেখেছেন। কেউ দেখে ফেললে খুব লজ্জার ব্যাপার হবে। টিনটিনই বা কী ভাববে? ওর দাদান একটা রঙচটা কাঠের খেলনা ঘোড়া নিয়ে বসে আছে? তাও আবার আর্দ্ধেকটা! মাথা থেকে শরীরের আর্দ্ধেকটা! বাকী অংশটা নেই। সেই ভয়ে ঢুকিয়ে রেখেছেন। এখন টিনটিন আসার সম্ভবনা নেই, তাই নিশ্চিন্তে বার করেছেন। কত বছরের জিনিস এটা? তিনি তখন টিনটিনের থেকেও একটু ছোটো বোধহয়। আকজকের! এত বছর আছে এই ঢের।

পরেরদিন অমলেন্দুবাবুর বাড়ি গিয়েও একটু অন্যমনস্ক ছিলেন তাপসবাবু। অমলেন্দুবাবু সেটা লক্ষ্য করেছেন, বললেনও, "কী ব্যাপার মশাই? কী ভাবছেন এত?"

তাপসবাবু মুখে তো "না না কিচ্ছু না" বলে এড়িয়ে গেলেন, মনে মনে বললেন, "কী ভাবছি সে কি আর আপনাকে বলা যাবে! একজন অমলেন্দু গুপ্তর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল বছর দশেক আগে। তাকে শুধু আমি এটাই জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তিনি সেই অমলেন্দু গুপ্ত কীনা মানে আমার ছোটোবেলার স্কুলের বন্ধু অমলেন্দু গুপ্ত কীনা। তাতেই তিনি যা বিরক্ত হয়েছিলেন! তারপর থেকে আমি খুব সাবধান হয়ে গেছি। এখন অনেকের কাছে শুনি অবশ্য কীসব সাইটে টাইটে পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছে, কিন্তু আমি তো ওসব কম্পিউটার-টার জানিও না। এখন এই বয়সে আর শেখারও ধৈর্য নেই। তাই আমার বোধহয় আর অমলেন্দুকে খুঁজে পাওয়া হল না।"

সেদিন গল্প আর তেমন জমল না। তাপসবাবুর মাথায় খালি ওই কথাই ঘুরছিল। একবার অমলেন্দুবাবু ঘরে যেতে তাপসবাবু কাঠের খেলনা ঘোড়াটা বার করে টেবিলে একটা বই-এর পাশে একটু আড়াল করে রেখে দিলেন। ওটা সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছিলেন। ভাবলেন, রেখেই যাই এটাকে। যদি এ সেই অমলেন্দু হয় তাহলে ঠিক চিনতে পারবে। রেখেই যাই, কী যে অসুখ বাধিয়ে বসে আছি সে তো কেউ বলছে না। কবে আছি, কবে নেই – কে জানে! একবার শেষ চেষ্টা করে দেখি।

চলে এলেন। পরের চব্বিশ ঘন্টা যে কী করে কাটল তা তিনিই জানেন। একবার মনে হয় দেখেছে কি, তো পরক্ষণেই মনে হয় দেখলে তো ফোন করত, নম্বর তো আছে। আবার মনে হয় হয়তো ফেলেই দিয়েছে, ভাঙা খেলনা ভেবে, তার মানে এও নয়।

বিকেল হতে না হতেই চললেন অমলেন্দুবাবুর বাড়ি। কলিং বেল বাজাতে অমলেন্দুবাবুই খুললেন।
"আসুন, আসুন।"

নাহ, এ নয়। হলে কি আর 'আসুন আসুন' বলত? বিমর্ষভাবেই তাপসবাবু ভেতরে ঢোকেন। কিন্তু ঢুকেই চমকে যান, এতটাই যে সেখানেই একেবারে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেন্টার টেবিলটার ওপর একটা কাঠের খেলনা ঘোড়া! না আর্দ্ধেকটা নয়, আস্ত!

তাপসবাবু অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।

"কী রে, কী দেখছিস? কী ভেবেছিলিস তুই? ঘোড়াটার মুণ্ডুটা তুইই শুধু এতদিন রেখেছিস? লেজের দিকটা আমি রাখি নি? দেখ আস্ত ঘোড়া, যেরকম ছিল ঠিক সেরকম," বললেন অমলেন্দুবাবু।
"তার মানে তুই! তুইই!" তাপসবাবু আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলেন, "যাক এদ্দিনে খুঁজে পেলাম তোকে। আমি আন্দাজে রেখে গেছিলাম। রাখাটা ফলপ্রসু হল। আমি যে কী খুশী তা তকে বলতে পারব না। কিন্তু তুই একটা ফোন করলে তো পারছিস। আমি কাল থেকে কত কী ভাবছি।"
"আরে এটা দেখলাম তো দুপুরবেলা। আমি তো অবাক। এটা কোত্থেকে এল! তারপরেই খেয়াল হল, আরে তোর নাম তো তাপসকুমার ধর! বুঝলাম তুইই সেই তাপস! সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার টুকরোটা নিয়ে এসে জোড়া লাগালাম। ওটা এতদিন আমিও সামলে সুমলে রেখেছিলাম রে!"

দুই বন্ধুতে মিলে পুরোনো দিনের কথায় মেতে গেলেন।

কাঠের ঘোড়া

"খেলনাটা আমারই ছিল। কটক থেকে আনা। কটকে আমার বড়োমামা থাকতেন। কাঠের ঘোড়াটার মাঝখান থেকে খোলা যেত। যখন জলপাইগুড়ি থেকে চলে এলাম, তখন এটার আর্দ্ধেক তোকে দিয়েছিলাম রাখতে," অমলেন্দুবাবু বললেন।
"হ্যাঁ। আমরা ঠিক করেছিলাম যে এদুটো টুকরো আমরা আমাদের সঙ্গে সারা জীবন রাখব। যদি পরে কখনো আবার দেখা হয় তাহলে দুজন দুটোকে বার করব। ছোটোবেলার কী খেয়াল, কী ছেলেমানুষি, অথচ দেখ আমরা এত বছর কিন্তু সেটা মেনে গেলাম। চিঠিপত্র তো তুই চলে যাবার বছরখানেকের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছিল, শুধু এটাই রয়ে গেছিল। আর এটা ছিল বলেই তো তোকে খুঁজে পেলাম, নাহলে নিজে থেকে জিজ্ঞেস করতেও সংকোচ হত, যা শিক্ষা হয়েছে একবার! তোকে পেয়ে নতুন এনার্জি পেলাম রে! কী জানি কী অসুখ করেছে আমার কেউ বলছে না। তোর ছেলেই তো দেখছে। কিন্তু তোকে পাশে পেয়ে এবার ফাইট করব, বুঝলি?"

তাপসবাবুকে এত খুশী, এত আনন্দিত হতে সম্প্রতি কেউ দেখে নি। সব মন খারাপ এক নিমেষে উধাও। এ যেন সেই তাপসবাবুই নয়!

পরে বাবার কাছে সব শুনে কিশোর তো অবাক, বললেন, "তার মানে ভদ্রলোকের কণ্ডিশন এবার নিশ্চিত ইমপ্রুভ করবে।"

"তুই ডাক্তার হলে আমি ডাক্তারের বাবা, এটা ভুলছিস কী করে?" হেসে বললেন অমলেন্দুবাবু, "তাছাড়া বলছিস তো খুব সিরিয়াস কিছু নয়। ও আমি ওকে ঠিক করে দেব। এত বছর পরে ছোটোবেলার বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছি, এত সহজে ছাড়া যায় নাকি!"


ছবিঃ মঞ্জিমা মল্লিক

অদিতি সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কর্মসূত্রে আরব দুনিয়ায় বসবাসের অভিজ্ঞতাও আছে। বই পড়তে ভালোবাসেন। ভ্রমণ,ছবি তোলা,এম্ব্রয়ডারির পাশাপাশি লেখালিখিতেও সমান উৎসাহী। নানান ওয়েব ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা