সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

রামদীনের কেউ নেই--মা নেই, বাবা নেই, ভাই-বোন নেই, আছে শুধু একটা পোষা ভাল্লুক । মা তার ছোট বেলাতেই মারা গেছে। বাবা অনেকদিন বেঁচে ছিল--এই তো বছর খানেক আগে মারা গেল। ঘরে এখন দুটি প্রাণী বাস করে--রামদীন আর ওর ভাল্লুক।

মা'র আদর, স্নেহ-ভালোবাসার কথা ওর মনে আছে। তবে সে সব কথা সে আর মনে করতে চায় না। যত মনে করবে তত তো দুঃখ বাড়বে! বাবার কথা সে ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারে না। সারা দিন ভাল্লুকের খেলা দেখিয়ে রামদীন ঘরে ফেরে। রাতের বেলা রান্না খাওয়া করে যখন সন্ধ্যের পর শুতে যায় তখন না চাইলেও বাবার কথা ওর খুব করে মনে পড়ে যায়।

বাবা অনেক দিন থেকে অসুস্থ ছিল--বিছানা ছেড়ে উঠতে পারত না। রামদীনকে ঘরের সব কাজ করতে হত। বাবাকে দেখা শোনা থেকে নিয়ে ভাল্লুক নিয়ে খেলা দেখিয়ে দু পয়সা রোজকার করা--তারপর ঘরের কাজকর্ম, রান্না বাড়ার কাজ--সব, সব ওকেই করতে হত। ওর বাবা দয়াদীন সব সময় বলত, "বাবা, আমি তো আর বেশী দিন থাকব না, এই ভাল্লুককে দেখিস বাবা ! ওকে দিয়েই আমাদের রোজি রোজগার--ওর দেখা শোনা করিস, ওর খাওয়া দাওয়া সময় করে দিস। ও আমাদের অনেক করেছে রে..."

সেই বাবা একদিন চলে গেল। চিরতরে চলে গেল। সেদিন সকাল থেকে বেশ ঝড় জল চলছিল। বাবার শরীরও দু দিন ধরে বেশ খারাপ চলছিল। রামদীন ভাবছিল ভাল্লুককে নিয়ে বেরোবে কি না। কিন্তু না বেরুলে চলবে কি করে ? ঘরে তো চাল ডাল সবজি সব কিছুই বাড়ন্ত ! সে নিজে আধ পেটা খেলেও বাবাকে তো আর আধ পেটা খাওয়ানো যায় না ! সে জানে তাতে পাপ হয়। বাবা, মাকে দুঃখ দিলে, ভগবানও তা সহ্য করে না !

অগত্যা ভাল্লুককে নিয়ে ভিজতে ভিজতে বেরিয়ে গিয়ে ছিল রামদীন। কিন্তু লোকজন কোথায় ! হাতের ডমরু ডম ডম করে বাজিয়ে চলেছিল সে, তবু ঘর থেকে লোকজন, বাচ্চারা কেউ বের হচ্ছিল না। কেউ কেউ তার ডমরুর আওয়াজে জানলার পর্দা সরিয়ে ঘরের ভিতর থেকে উঁকি ঝুঁকি মারছিল ঠিকই কিন্তু তাতে তো কাজ হয় না--খেলা না দেখলে দুটো পয়সা কে দেবে ? তবু রামদীন শুরু করতে যাচ্ছিল খেলা--দু চার জন কুলি মজুরের দল জুটেও ছিল। ভাল্লুককে সবে মাত্র দাঁড় করিয়ে ডমরু বাজিয়ে বলতে যাবে নাচ ভল্লু, নাচ, তার আগেই জয়রাজ ছুটতে ছুটতে এসে ছিল, ও হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ছিল, "রামু দা রামু দা, তোমার বাবা মারা গেছে গো !"

রামদীন কিছু সময় হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ভল্লু কি বুঝল কে জানে, ও দাঁড়ানো থেকে বসে গেল। রামদীন ছুটে এসে ছিল ঘরে। দেখে ছিল সত্যি ওর বাবা নেই ! মরে গেছে--তার স্থির দুটো খোলা চোখ ভাঙ্গা জানালা দিকে তাকানো--হয় তো মরার আগের মুহূর্তে রামদীনকে একবার দেখতে চেয়ে ছিল! আশপাশের ঝুপড়ি ঘর থেকে লোকজনেরা এসে জড়ো হয়ে ছিল। তারা দেখল রামদীন নীরবে কেঁদে চলেছে। চুপচাপ বাবার দিকে সে তাকিয়ে ছিল।

এ ঘটনার পর একটা বছর কেটে গেছে। রামদীন ভেবে ছিল আর কি--ও এখন একা—কেউ নেই-- কেউ নেই তার। মনে হল এই ঘর ছেড়ে সে কোথাও চলে যাবে। মা, বাবার দুঃখের স্মৃতি বয়ে নিয়ে এখানে পড়ে থেকে কি লাভ ? তারপর হঠাৎ তার মনে হল ভল্লু,ভল্লুর তবে কি হবে? ভল্লুর দিকে ওর চোখ পড়ল। অন্ধকারে তার চোখ দুটো জ্বলছে--ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারল সে যে ভল্লুর দৃষ্টিতে অসহায় ভাব ফুটে উঠে ছিল ! তার ভল্লুকে ফেলে সে কি করে যাবে ? এই ভাল্লুক আজ কত দিন থেকে ওদের সাথে আছে। ও তো এ ঘরেরই একজন। রামদীন তার ছোট বেলা থেকে ওকে দেখে আসছে। এ ঘরের অনেক সুখ দুঃখের ও সাথী।

ওই ঘরবাড়ি ছাড়ার কথা, ভাবনা পর্যন্তই থেকে গিয়ে ছিল। ঘর ছেড়ে ওর আর কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে নি।

রামদীনের মন আজ ভালো নেই। থেকে থেকে মুষলধারে বর্ষা হচ্ছিল। আজ আর বেরোনো যাবে না। ভল্লুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো রামদীন। ওকে দেখে ভল্লু উঠে দাঁড়ালো। --"না, না, তুই শুয়ে থাক আজ--বিশ্রাম কর, কেমন ?"

ভল্লু রামদীনের অনেক কথাই বুঝতে পারে। ও জুলজুল চোখে তাকিয়ে থাকলো রামদীনের দিকে। রাম জানে ওর ভল্লু অনেক কিছু বোঝে--এত দিন ধরে ওদের ঘরে আছে। ওদের সবাইকে দেখেছে। বাবাকে চোখের সামনে হারিয়ে যেতে দেখেছে। ও কি কিছুই বুঝতে পারে না? এমনটা হতেই পারে না--রামদীন ঘর থেকে ভিজানো চিঁড়ের সঙ্গে মধু মাখিয়ে এনে দিল ভল্লুকে। ভল্লু মালিকের দিকে তাকিয়ে কি যেন খানিক ভাবল। তারপর খাওয়া শুরু করল। রামু বুঝতে পারে, ভল্লু বলতে চেয়ে ছিল, "আমায় তো খেতে দিলে, তুমি খেয়েছ তো?" পশু, পাখিরা মানুষের মত সব কিছু না বুঝলেও অনেক কিছুই বোঝে--কেবল অন্যকে বোঝাবার শক্তি ওদের কম।

রামের মাঝ রাত্রে খিদে পাচ্ছিল। ঝড়, জল, প্রলয় যাই হোক না কেন কাল ভল্লুকে নিয়ে তাকে কাজে বের হতেই হবে। না হলে যে ভুখা মরে যেতে হবে ! আর একটা পেটের তো কথা নয়--একটা ভাল্লুকের পেট, একটা মানুষের পেট ! আর ভাবতে পারছিল না রামদীন। আজ প্রায় দশ বছর পার হয়ে গেল--ছোট্ট বাচ্চা থেকে ভল্লু ওদের কাছে বড় হয়েছে। রামদীনের বাবা দয়াদীন গল্প করত--ভল্লু-কে পাওয়ার গল্প। তখন ওরা বিহারের ভাগলপুরে থাকত। শহর ছাড়িয়ে জঙ্গলের ধারে এক গ্রামে ওরা বাস করত। গ্রামের নাম ছিল, ঝিলমারি। এক চিলতে জমির ওপর নিজেদের ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘর ছিল। দিন আনা, দিন খাওয়ার মতই দিন চলত। তখন রামদীনের বয়স পাঁচ, কি ছয় বছর হবে। হঠাৎ এক দিন ওর বাবা দয়াদীন এক ভাল্লুকের বাচ্চা নিয়ে হাজির। ছোট্ট বাচ্চা--একটা বিড়ালের মতই ওর আকৃতি। সবাইকে দেখে ও ভয়ে পালাতে চাইত--বাচ্চাটাকে দয়াদীন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখত। সবাই যা খেত ও তাই খেত।

শুরুতে ও কিছুই খেতে চাইত না, দু'দিন পর থেকে ওটা ধীরে ধীরে খেতে শুরু করল। রাম ওকে মধু এনে খাওয়াত--কলা এনে খাওয়াত। এ ছাড়া, মাসে এক আধবার মাছ, মাংস হলে ভল্লু বিনা দ্বিধায় খেয়ে নিত। দয়াদীন শুরুতে খুব ভয় পেত, মনে হত কে জানে ভাল্লুকের মা তার বাচ্চা খুঁজতে খুঁজতে ওদের বাড়ি এসে পড়বে না তো ! রাম বাবাকে জিজ্ঞেস করে ছিল, বাবা ! এ বাচ্চাটাকে কোথায় পেলে ?
বাবা দয়াদীন বলে ছিল-জঙ্গলে।

রান্নার কাঠ কুড়োতে দয়া জঙ্গলের ধারে গিয়ে ছিল। সে ঠিক সন্ধ্যের আগে আগে। দু চারটে শুকনো ডালপালা ভেঙ্গে এক জাগায় জড়ো করে রাখছিল। ঠিক এমনি সময় কানে এলো ভাল্লুকের কু কউউ আওয়াজ, আওয়াজ খুব কাছেই মনে হচ্ছিল। শুকনো গাছের ডাল কুড়ানো থামিয়ে দিয়ে দয়া ছুটে গিয়ে এক গাছের আড়ালে দাঁড়ালো। সামনেই ভাল্লুক দেখে ওর চোখ তো ভয়ে ছানাবড়া! নিজেকে আরও আড়াল করে নিলো সে। ওরে বাবা ! ও দেখতে পেল ভাল্লুকের সঙ্গে রয়েছে তিন চারটে বাচ্চা ! কি করবে ভেবে পেল না দয়াদীন, তাড়াতাড়ি গাছে উঠে যাবার জন্যে তৈরি হল কিন্তু তা সম্ভব হল না, ভাল্লুক নিশ্চয় তা হলে তাকে দেখেতে পেয়ে যাবে। আর একবার দেখেই যদি ফেলে তবে নির্ঘাত ওকে ছিঁড়ে খাবে--তার মৃত্যু হবে অবধারিত। সঙ্গে বাচ্চা থাকলে ভাল্লুক খুব হিংস্র হয়ে যায়। দয়াদীন তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করল।

দয়ার পাশেই বলতে গেলে ভাল্লুক এসে গেল। আজ বুঝি আর রক্ষে নেই তার! খুব সাবধানে নিজেকে সে আরও আড়াল করে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখবার চেষ্টা করল। বুক ঢিপ ঢিপ করছিল তার। ওই তো গাছের এ পাশে দাঁড়িয়ে দয়াদীন আর ও পাশ চলেছে মা ভাল্লুক তার বাচ্চাদের নিয়ে। মা ভাল্লুক কিছুটা এগিয়ে গেল বাচ্চাগুলি তার পিছে পিছে--ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক হয়ে গা দুলাতে দুলাতে চলেছে। ভাল্লুকের বাচ্চাদের মধ্যে কোনটা যদি ওকে দেখে ফেলে তবেও যে মহা বিপদ ! বাচ্চারা নিশ্চয় তার মা'কে বিপদ সূচক সংকেত দিয়ে দেবে আর ভাল্লুক মা ছুটে এসে আক্রমণ করবে দয়াকে।

মা ভাল্লুক ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল, দেখতে পাচ্ছিল দয়া। তারপর বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেল। তখন জঙ্গলের মধ্যে বেশ অন্ধকার জমে গেছে। ভালো ভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তবু যোগাড় করা শুকনো ডালপালাগুলি খুঁজে পেতে মাথায় বোঝা করে দয়াদীন জঙ্গল থেকে বের হবে বলে হাঁটছিল। যেহেতু চোখে প্রায় কিছুই ঠাওর করা যাচ্ছিল না, তাই কান বেশ সজাগ রেখে ওকে চলতে হচ্ছিল। না, ভাল্লুকের আর দেখা নেই। দূর থেকে কোন রকম সাড়াশব্দ ওর কানে আসছিল না। জঙ্গল পার হয়ে সামান্য দূরে ওদের গ্রামের সীমানা—প্রায় গ্রামের পাশটিতে সে এসে গেছে। গ্রামের ঘরগুলিতে টিমটিম করে আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। মনে মনে দয়া ভাবছে, বাচ্চা-শুদ্ধ ভাল্লুকের এত কাছ থেকে বেঁচে বেরিয়ে আসা বড় ভাগ্যের ব্যাপার !

গ্রামে প্রায় পৌঁছাবে পৌঁছাবে করছে দয়া ঠিক এমনি সময় ওর পেছন দিক থেকে,"কৌ,কৌ," করে দু-তিনবার অল্প অল্প আওয়াজ এলো। ওরে বাবা, মা ভাল্লুক আবার পিছু নিলো না তো! কিন্তু ওরা আক্রমণ করলে তো তার আগে হিংস্র গর্জনের আওয়াজ আসার কথা। অন্তত ধুপধাপ হুড়মুড় ধরনের শব্দ তো হবারই কথা ! তবু ভয় হচ্ছিল দয়ার--ও প্রায় ছুটে চলার মত এগিয়ে গেল গ্রামের দিকে। এমনি সময় ওর পায়ের কাছে কিসের একটা ধাক্কা লাগলো। কোন কুকুর, বেড়াল এমনি কিছু ওর পায়ে ধাক্কা খেয়ে সামান্য দূরে ছিটকে পড়ল মনে হল। "কক, কৌ,"- ধরণের কয়েকবার শব্দ হল--দয়া ভয় পেয়ে চীৎকার করে ডেকে উঠলো, "কোই গো কে আছ, তাড়াতাড়ি বাতি নিয়ে আসো গো!"

মুহূর্ত সময় পরেই হ্যারিকেন নিয়ে একজন বয়স্ক লোক ছুটে এলো, "কি হল গো--কি হল",বলে।
--"দেখত ওই খানে কি ?" আমার পায়ে ধাক্কা খেয়েছে !" দয়া বলে উঠলো।
লোকটা হ্যারিকেন নিয়ে সামনের দিকে দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল। দয়াও মাথা থেকে ডালের বোঝা নামিয়ে রাখল। লোকটা দেখল, কালো একটা কুকুর বা বিড়ালের বাচ্চা ঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে।

"কৌ কু কৌ কু, " মতন শব্দ করে উঠলো বাচ্চাটা। দয়ার মনে কেমন যেন সন্দেহ হল, কুকুর তো এমনি ডাকে না, ও বলে উঠল, বাতি কাছে আনো তো ঠিক করে দেখে নিই। লোকটা এবার বাতি নিয়ে এগিয়ে এলো। বাচ্চাটা আলো দেখে দূরে সরে যেতে থাকল—ওটাকে দেখার জন্যে দয়া আর লোকটা তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল—সামান্য সময় পরেই লোকটা কিছু বুঝতে পেরে, "বাবা গো, " বলে চীৎকার করে ওঠল।

--"কি হল--কি হল?" বলে দয়া এগিয়ে গেল লোকটার কাছে। লোকটা ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিল। দয়ার মনে হল ভাল্লুকের বাচ্চা নয় তো! আর একটু কাছে গিয়ে ও স্পষ্ট বুঝে গেল, ওটা একটা ভাল্লুকের বাচ্চা! ভাল্লুক কু কু করেই তো ডাকে। ও চমকে উঠলো, ওই ভাল্লুকেরই এই বাচ্চাটা হবে ! দয়া চারদিক ভালো করে দেখে নিলো, মা ভাল্লুক ধারে কাছে নেই তো? না, মনে হল না, বাচ্চাটা ওর পেছনে পেছনে ভুল করে মাকে হারিয়ে চলে এসেছে নিশ্চয়।

দয়াদীন নিজের ঘরে ঢুকল, ভাল্লুকের বাচ্চাটা ঘরের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছিল--ও ঘরের ভিতরে ভয়ে ভয়ে উঁকিঝুঁকি মারছিল। দয়া জানে, ভাল্লুকেরা পোষ মানে। ওরা খেলা দেখায়--দয়া দেখেছে, ওদের গ্রামে একজন ভাল্লুক নিয়ে খেলা দেখাতে এসেছিল।

দয়া দ্রুত ঘর থেকে দড়ি নিয়ে বেরিয়ে এলো। আর ছোটাছুটি করে বাচ্চাটাকে ধরে বেঁধে ফেলল। বাচ্চাটা ভয়ে ভয়ে, "কু কু,কুই কুই, করে শব্দ করে চলেছিল। না, সে দয়াকে খামচায় নি, কামড়ায় নি। খুব এ পাশ ও পাশ ছুটোছুটি করছিল বটে !

বাচ্চাটাকে নিয়ে দয়া বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে দিল। কিছু দিন দয়া ভয়ে ভয়ে থাকত--মা ভাল্লুক না রাতে এসে গ্রামের লোকদের ওপর অত্যাচার করে--এমন কি দয়া কিম্বা রামের জীবন তো সংশয় হতে পারে--হতে পারে কোন রাতে মা ভাল্লুক এসে ওদের ওপর চড়াও হল!

দয়ার ছেলে রামদীন ভাল্লুকের বাচ্চাকে দেখে খুব খুশি ছিল। ওর সঙ্গে ধীরে ধীরে রামের ভাব হয়ে গেল। রোজ সকাল বিকেলে রামই ওটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতো। দয়া আর রাম বাচ্চাটাকে আদর করে "ভল্লু" বলে ডাকা শুরু করল। গ্রামের বাচ্চা বুড়োরা রামদের বাড়ি এসে ভল্লুকে দেখার জন্যে ভিড় জমাত। দয়াদীন অবসর সময়ে বাচ্চাটাকে খেলা শিখাত--সেই সেই রকম খেলা--যে রকম ভাল্লুকের খেলা, নাচ সে দেখেছিল।

সেই বাচ্চা ভাল্লু্ক আজ দশ বছর ধরে ওদের ঘরে। সেই দেশ গ্রাম ছেড়ে ওরা এখানে চলে এসেছে আজ ছ, সাত বছর হয়ে গেল। দেশের ঘর, জমিটুকু বিক্রি করে ওরা এখানে চলে আসে। এখন ভাল্লুকই তার এক মাত্র রোজগারের ভরসা। পেট চালাতে গেলে ওর নাচ-খেলা রামদীনকে দেখাতেই হবে।

অনেক রাত হল। রামদীনের চিন্তা শেষ হল। রামের মন ধীরে ধীরে আনন্দে ভরে উঠল। সব চিন্তা-দুঃখ ভুলে গিয়ে ও অনাবিল খুশিতে হেসে উঠে ছিল যখন ওর মনে পড়ল, ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ওর খেলা দেখে কত না আনন্দ পায় ! সবাই হাসি-খুশিতে হাততালি দিয়ে ওঠে-- ভাবতে ভাবতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় রামদীন! ঘুমিয়ে আছে রামদীন। বাইরের ঘরে ভল্লুও অনেক সময় জেগে ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে রামদীনের যখন ঘুম ভাঙল, দেখল, ঝলমলে সকালের রোদ ওদের ঘরের ভিতর খেলা করছে। আর জানলার ওপারে দাঁড়িয়ে ওর ভল্লু ওর দিকেই তাকিয়ে আছে! রামদীন ভল্লুর দিকে তাকাল--ভল্লু দু হাত তুলে যেন বলতে চাইছে, আমি তৈরী, চল আজকে আমি মন ভরে নাচ দেখাবো--আজ তোমার অনেক পয়সা রোজগার হবে।

হাসি খুশি রামদীন হাতে ঢোলক, ডমরু নিয়ে তৈরী হলো ভাল্লুক নাচের খেলা দেখাবে বলে।


ছবিঃপারিজাত ভট্টাচার্য্য

তাপস কিরণ রায় অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেন বেশ কিছু বছর। পরে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি মধ্য প্রদেশের জবলপুর শহরে বাস করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। ছোটদের এবং বড়দের জন্য লেখা তাঁর অনেকগুলি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা