দিয়া এবার প্রথমবার বইমেলায় যাবে। সামনের রবিবার দিয়ার মা-বাবা দিয়াকে বইমেলায় নিয়ে যাবে। সেই থেকে দিয়ার খুব আনন্দ। বাবা বলেছে- কলকাতা বইমেলা নাকি অনেক বড়। সেখানে এত বই থাকে যে, দেখেই শেষ করা যায় না। দিয়া কী কী বই কিনবে বুঝেই উঠতে পারছে না। ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে খুব ভালোবাসে দিয়া। মা যে দিয়াকে কত বই কিনে দিয়েছে! স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটা ম্যাগাজিনের স্টল পড়তো। রোজ সেখানে দিয়া একটু দাঁড়াবেই। মা বলতো- ‘দিয়া, আর কত ম্যাগাজিন দেখবি? এবার তো বাড়ী চল। এই তো চাঁদমামা কিনলি। বাড়ী গিয়ে পড়তে হবে তো এটা।‘ তখন দিয়া ম্যাগাজিন ঘাঁটা বন্ধ করে মায়ের হাত ধরে বাড়ীর দিকে হাঁটতে শুরু করতো। দিয়াদের পাড়াতেও একটা বইয়ের দোকান আছে। সেখানে কিছু গল্পের বই রাখে। সেখানে সুধীরকাকু বসে। তাকে বইয়ের নাম বলে দিলেও সে কলকাতা থেকে বই নিয়ে আসে। মা দিয়ার জন্য অনেকরকম বইয়ের নাম কাগজে লিখে রাখে। তারপর কাকুকে লিষ্টটা দিয়ে দেয়। কাকু কলেজ স্ট্রীট থেকে বই নিয়ে আসে। মা বলেছে- ‘দিয়া, বই হল সবচেয়ে ভালো বন্ধু। ছোট থেকে যদি বই পড়ার অভ্যাস তৈরী করতে পারো, তাহলে দেখবে জীবনে নিজেকে কখনো একা মনে হবে না। বই সবসময় তোমার সাথে থাকবে।‘
তারপর থেকে দিয়া রোজ বই পড়ে। এমনি করে দিয়ার যে কত বই জড়ো হয়েছে বইয়ের তাকে। স্কুলের পড়া শেষ করে দিয়া এর মধ্যেই ডুবে থাকে। হাসির গল্প, ভূতের গল্প, রূপকথার গল্প, জ্ঞানবিজ্ঞানের গল্প...আরো কত কী...। কিন্তু দিয়ার একটাও কমিকস বা রহস্য গল্পের বই নেই। তাই এবার মা বলেছে- দিয়াকে বইমেলা থেকে এই বইগুলো কিনে দেবে। তাই শুনে দিয়ার মনে আনন্দ আর ধরে না। রোজ ভাবছে কবে রবিবার আসবে।
রবিবার সকাল আটটা। ‘দিয়া, উঠে পড়ো তাড়াতাড়ি।‘ মা দিয়ার ঘরের জানালার পাল্লা খুলে দিতেই ঝলমলে রোদ এসে দিয়ার চোখে পড়লো। চোখ মেলতেই দিয়ার মনে পড়লো—‘আরে, আজ তো রবিবার। বইমেলা যাওয়ার দিন।‘ তাড়াতাড়ি উঠে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে দিয়া জিজ্ঞেস করলো-‘ও মা, কখন বেরনো হবে আজ? বাবা কোথায়?’ দিয়ার মা বললো-‘ তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে স্নান করে নাও। বাবা বলেছে যে আজ দশটায় বেরোবে। সকাল সকাল যাবো আমরা আর সন্ধের আগেই বাড়ী চলে আসবো। যা ভিড় হয় সন্ধের পর। আর দুপুরে আমরা ওখানেই কিছু খেয়ে নেবো। আর শোনো- মাস্ক কিন্তু মনে করে পড়বে। ভুলে যেও না যেন।‘ দিয়া মাথা নেড়ে সায় দিলো।
দিয়ারা যখন বইমেলার গেটের কাছে পৌঁছলো, তখন দুপুর পৌনে বারোটা। আজ দিয়া কাঁধে একটা ছোট্ট ঝোলাব্যাগও নিয়েছে। দিয়ার মা আগের বছর নিউমার্কেট থেকে এই ব্যাগটা দিয়াকে কিনে দিয়েছিল। মা বলেছে- ‘দিয়া, বইমেলায় দেখবে অনেক বইয়ের স্টল। অনেক প্রকাশক স্টল দেন বইমেলায়। প্রকাশনা সংস্থাগুলোর নিজস্ব বইয়ের ক্যাটালগ থাকে। তুমি বিভিন্ন স্টলে যাবে যখন, ওখানে বই কিনলে বইয়ের সাথে বা এমনি চাইলেও ওরা তোমায় ক্যাটালগ দেবে। সেটা নিয়ে তুমি ব্যাগে রেখে দেবে। তারপর আমি আর তুমি বাড়ী এসে ঐ ক্যাটালগগুলো দেখে আরো অনেক বই সিলেক্ট করে রাখবো। তারপর যখন যেটা ইচ্ছে হবে কিনবো।‘ দিয়া এটা শুনে হাততালি দিয়ে উঠেছিলো।
দিয়ারা যখন বইমেলার গেটে পৌঁছলো, তখনও বইমেলা খোলেনি। মিনিট পনেরো পর বইমেলার গেট খুললো। ভেতরে ঢুকে দিয়া তো হাঁ হয়ে গেলো। কত বড় জায়গা। কত স্টল। বইমেলা এত বড়! মা বাবাকে একদিকে দেখিয়ে বললো- ‘ঐ স্টলটা থেকে শুরু করি চলো। পরে এই স্টলগুলো খুব ভিড় হয়ে যাবে। এখন ফাঁকা থাকতে থাকতে ঘুরে নিই।‘ দিয়ারা একটা স্টলে ঢুকলো। কত বই চারদিকে! চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিয়া বইয়ের নাম দেখছিলো। মা বললো- ‘দিয়া, তুমি কিন্তু বইয়ের পাতা উল্টে দেখতে পারো। কেউ কিছু বলবে না।‘ ‘হাত দেবো মা?’ দিয়া চোখ বড় বড় করে মা কে জিজ্ঞেস করলো। ‘দাও’, দিয়ার মা হেসে বললো। দিয়া একটা রূপকথার বই দেখলো প্রথমে। তারপর দেখলো একটা ছড়ার বই। কী সুন্দর সুন্দর ছবি! আর কী সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে বইগুলো থেকে! কিন্তু কোন বইটা ছেড়ে কোন বইটা দেখবে দিয়া তো ভেবেই পাচ্ছে না। এর মধ্যেই দিয়া দেখলো- মা একটা বই খুব মন দিয়ে পড়ছে। দিয়া ছুটে মা এর কাছে গেলো আর জিজ্ঞেস করলো- ‘মা, কি বই পড়ছো?’ মা বললো- ‘এই দ্যাখো দিয়া, এই বইয়ে কত বিখ্যাত মানুষের ছোটবেলার কথা আছে। পড়বে তুমি?’ দিয়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। মা খুশী হল। কাউন্টারে গিয়ে বললো- ‘এই বইটা আমি নেবো।‘ সঙ্গে সঙ্গে বই, ক্যাশমেমো একটা সুন্দর প্যাকেটে করে চলে এলো। সাথে একটা ক্যাটালগও। দিয়া তো খুব খুশী। ক্যাটালগ তার ঝোলাব্যাগেতে ঢুকিয়ে বায়না জুড়লো- ‘মা, আমি বইয়ের প্যাকেট হাতে নেবো।‘ ‘তুমি ফেলে দেবে দিয়া।‘ মা বললো। ‘না মা, ফেলবো না।‘ দিয়া বললো। ‘আচ্ছা নাও।‘ মা সায় দিলো। দিয়া মহানন্দে হাতে প্যাকেট ঝুলিয়ে স্টল থেকে বেরোল।
তারপর তো এই স্টল, ঐ স্টল ঘুরতে ঘুরতে আরো বেশ কিছু বই কেনা হল। মা, বাবা নিজেদের পড়ার জন্যও বই কিনলো। সাথে দিয়ার জন্য রহস্য গল্পের বইও কেনা হল। এবার দিয়ার খুব খিদে পেয়ে গেলো। ‘বাবা, খিদে পেয়েছে। চলো খাই কিছু।‘ দিয়া বাবার হাত ধরে টানতে লাগলো। ‘দাঁড়া, আগে ম্যাপটা দেখি। ফুড কোর্ট কোথায় আছে দেখতে হবে।‘ ম্যাপ দেখে দিয়ারা বুঝলো ওরা ফুড কোর্টের খুব কাছেই আছেই। এর মধ্যেই দিয়া বাবার কাছে ম্যাপ দেখা শিখে নিয়েছে। ম্যাপ দেখে দিয়ারা ফুড কোর্টে পৌঁছলো। দিয়ার ইচ্ছে চিকেন মোমো খাবে। ভালো একটা স্টল দেখে চিকেন মোমো খাওয়া হল।‘বাবা, এবার একটা আইসক্রীম খাবো।‘ দিয়া বললো। ‘না দিয়া, ঠাণ্ডা লেগে যাবে।‘ মা বারণ করলো। ‘খাই না মা। কতদিন খাইনি।‘ দিয়ার চোখ ছলছল করলো। বাবা মা কে বললো-‘খেতে চাইছে যখন আজ, খেতে দাও। আমরাও তো কতদিন আইসক্রীম খাইনি। চলো সবাই মিলে আজ আইসক্রীম খাই।‘
অবশেষে মা রাজী হলো। দিয়ার আনন্দ আর দেখে কে! সামনেই ছিল আইসক্রীমের স্টল। তিনজনে তিনটে আইসক্রীম নিয়ে খেতে শুরু করলো। খেতে খেতেই হাঁটতে থাকলো ওরা। এর মধ্যেই দিয়ার মনে পড়ে গেলো কমিকস তো কেনাই হয়নি এখনো। তাড়াতাড়ি সে মা কে বললো- ‘ও মা, কমিকস কেনা হলো না তো!’
মা বললো-‘ ও তাই তো! চলো, ঐ স্টলে যাই।‘ মা একটা স্টল দেখিয়ে বললো।
দিয়া প্রায় দৌড়তে দৌড়তে স্টলের কাছে পৌঁছলো।
‘দিয়া, এত জোরে দৌড়িও না। পড়ে যাবে। হাত ধরে থাকো। আস্তে আস্তে কেমন ভিড় হয়ে যাচ্ছে দেখছো তো!‘ মা পিছন থেকে চেঁচালো।
দিয়া মায়ের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর মায়ের হাত ধরে স্টলের ভেতরে ঢুকলো। স্টলের বাইরে কত কমিকসের ছবি। দিয়া অবাক হয়ে দেখছিল। স্টলে ঢুকে দিয়ার খুব মজা হল। কত রকমের রঙীন কমিকস। মা আর দিয়া এর মধ্যে থেকেই বেছে বেছে কয়েকটা কমিকস নিল। ‘মা, কমিকসের প্যাকেট আমি নেবো কিন্তু।‘ দিয়া আগেভাগেই বলে রাখলো। পেমেন্ট হয়ে যেতে কাউণ্টার থেকে কমিকসের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।
এমন সময়ই দিয়ার মনে হল তাকে কেউ ডাকছে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখে অদৃতা। দিয়ার ক্লাসমেট। ‘দিয়া, তুই এখানে?’ অদৃতা এসে দিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
‘অদৃতা, তুই?’ দিয়া তো খুব খুশী।
অদৃতা জিজ্ঞেস করলো-‘দিয়া, তুই কখন এসেছিস?’
দিয়া বললো-‘আমাদের তো ঘোরা প্রায় হয়েই গেলো। অনেকক্ষণ এসেছি আমরা।‘
অদৃতা বললো-‘আমরা তো এইমাত্র ঢুকলাম। এই স্টলেই প্রথম ঢুকলাম। যাহ, তাহলে আর তোর সাথে ঘোরা হবে না।‘
দিয়া বললো-‘হ্যাঁ রে। আমরা এখন বাড়ী ফিরবো। বাবা বলেছে- সন্ধের আগে মেলা থেকে বেরোবে। ভিড় হয়ে যাবে তা না হলে।‘
অন্যদিকে দিয়া আর অদৃতার মা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। আর একদিকে ওদের বাবারা।
একটু পরে দিয়া আর অদৃতা একে অপরকে টা টা করলো। ওদের মা-বাবারাও হাত নেড়ে একে অপরের থেকে বিদায় নিলো।
‘আজ বেশ ভালোই ঘোরা হল, তাই না দিয়া?’ বিধাননগর স্টেশনে অটো থেকে নেমে বাবা জিজ্ঞেস করলো দিয়াকে।
‘হ্যাঁ বাবা, দারুণ মজা হল আজ।‘
‘দিয়া, কমিকসের প্যাকেটটা নিয়েছিলি তো?’ মা জিজ্ঞেস করলো দিয়াকে।
‘এই যাঃ! ও মা, আমি তো প্যাকেটটা নিয়েছিলাম। অদৃতার সাথে কথা বলতে বলতে প্যাকেটটা ভারী লাগছিলো বলে কাউন্টারের পাশেই রেখেছিলাম। আসার সময় ভুলেই গেলাম ওটার কথা। কি হবে মা এবার? আমার কমিকসগুলো আর পাবো না মা?’ দিয়ার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
‘এ বাবা! ভুলে গেলি?’ মা বলে উঠলো।
‘কি গো, কী হবে এখন? এতগুলো কমিকস! ইস!’ মা অস্থির হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো।
‘এখন আর ফেরা সম্ভব নয়। ট্রেনে ভিড় হয়ে যাবে। একটা প্যাকেটও তোমরা ঠিক করে নিতে পারো না।‘ বাবা গম্ভীর হয়ে বললো।
‘দেখি, কাল সকালে একবার ঐ প্রকাশকের কলকাতার দোকানে ফোন করে দেখবো। বিলটাও তো নেই কাছে। সেও তো ঐ প্যাকেটেই। নেট থেকে ফোন নাম্বার খুঁজে বের করতে হবে। ওদের কলকাতার দোকানে যেতে হবে। তারপর আবার বোঝাতে হবে যে আমরাই ঐগুলো কিনেছিলাম। সব বইয়ের নামও তো মনে নেই। ক্যাশ পেমেন্ট করেছি আবার। যাই হোক, এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই। যা হবার হবে।‘ বাবা বললো।
বিধাননগর থেকে ট্রেনে বাড়ী ফেরার পথে দিয়া সারা রাস্তা আর একটা কথাও বলেনি। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। এসে রাতে অল্প একটু খেলো। তার খুব মনখারাপ করছিলো। মা বললো- ‘দিয়া অত মনখারাপ করো না। পরে তোমায় কমিকস কিনে দেবো।‘
কিন্তু তাও দিয়ার মনখারাপ গেলো না। রাত্রে ঘুমনোর সময় মাকে জড়িয়ে ধরে একটু কেঁদেও নিল দিয়া।
‘দিয়া, ঘুমিয়ে পড়ো এখন। বাবা তো কাল ফোন করবে বলেছে ওখানে। দেখো না কী হয়!’ মা বললো।
রাত্রে শুয়ে শুয়ে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলো দিয়া। একটা পরী এসে দিয়ার হাতে কমিকসের প্যাকেটটা দিয়ে বলছে- ‘দিয়া, এই নাও তোমার কমিকস।‘
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দিয়ার মনে পড়ে গেলো কমিকসগুলোর কথা। বাকী বইগুলোও কাল রাতে বাড়ীতে ফিরে দেখা হয়নি আর। দিয়া দেখেছিল কাল রাতে মা ঐ বইগুলো টেবিলে রেখে দিয়েছে। এখন সেগুলো দেখতে খুব ইচ্ছে করছে দিয়ার। দিয়া ঘুম ঘুম চোখে উঠে টেবিলের কাছে গেল।
‘আরে এ কী!’ দিয়া চেঁচিয়ে উঠলো। টেবিলের ওপর সেই কমিকসের প্যাকেট।
‘ও মা! শিগগিরি এসো। পরী এসে আমার কমিকস দিয়ে গেছে। কালই আমাকে স্বপ্নে বলে গেছিল।‘ দিয়ার মুখে হাসি।
‘পরী নয়। তোমার সুধীরকাকু কমিকস দিয়ে গেছে।‘ মা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকে বললো।
‘মানে?’ দিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
আজ সকালে তোমার বাবা যখন বাজার যাবে বলে বেরোচ্ছে, দ্যাখে তোমার সুধীরকাকু আমাদের বাড়ীর দিকে আসছে। হাতে সেই কমিকসের প্যাকেট। তোমার বাবা তখন আমাকে ডাকলো।
সুধীরদা এসে বললেন- ‘বৌদি, দাদা, কাল আপনাদের বইমেলায় দেখলাম। আপনারা যে স্টলে ছিলেন, আমিও সেই স্টলেই ছিলাম। আপনারা আমায় দেখতে পাননি। ঐ স্টলে বই বিক্রীর দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সাথে আমি কথা বলছিলাম। কয়েকজনের সঙ্গে আমার খুব ভালো পরিচয় আছে। ঐ প্রকাশকের কলেজ স্ট্রীটের দোকান থেকে আমি প্রায়ই বই নিয়ে আসি। ওরা আমার খুব চেনাজানা। দিয়া মামণি কাল বইয়ের প্যাকেট ভুলে রেখে চলে গেল। আমি সেটা দেখতে পেয়ে আপনাদের ডাকলাম। কাউন্টার থেকেও ডেকেছে আপনাদের। কিন্তু আপনারা শুনতে পাননি। আপনাদের ডাকার জন্য স্টলের বাইরে গেলাম। কিন্তু তখন হঠাৎ করে এমন ভিড় হয়ে গেল, আপনাদের আর দেখতে পেলাম না। আপনাদের ফোন করেছিলাম তখন। কিন্তু মেলার অত আওয়াজে আপনারা শুনতে পাননি বোধহয়। কাল মেলা শেষ হওয়া অবধি আমি ঐ স্টলেই ছিলাম। ভাবলাম আপনারা নিশ্চয়ই মনে পড়লে প্যাকেটটা ফেরত নিতে আসবেন। কিন্তু এলেন না। ঐ স্টলে আমার পরিচিত যাঁরা ছিলেন, তাঁদের তখন আমি বললাম যে- ওনারা তো আর প্যাকেট ফেরত নিতে এলেন না। আমি তো ওনাদের বাড়ীর কাছেই থাকি। তাহলে আমি কি প্যাকেটটা নিয়ে গিয়ে ওনাদের দিয়ে দেবো? ঐ প্রকাশকের কলকাতার দোকানের সাথে তো আমার অনেক বছরের বিশ্বাসের সম্পর্ক। তাই ওনারা সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে গেলেন। আমাকে প্যাকেটটা দিয়ে দিলেন। কাল বাড়ী ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল বৌদি। তাই কাল আর আপনাদের প্যাকেটটা দিতে আসতে পারিনি। ফোনও করিনি আর। আজ তাই সকালেই চলে এলাম। জানি দিয়া মামণির নিশ্চয়ই মনখারাপ।‘
সুধীরদাকে তখন আমরা বললাম-‘সুধীরদা, কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো! আমরা তো এগুলো পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভাবছিলাম ওনাদের কলেজ স্ট্রীটের দোকানে গিয়ে খোঁজ নেবো। কাল বাড়ী ফিরে আমাদেরও মনটা খারাপ হয়ে গেছিল। মোবাইলের কল লিষ্টও আর চেক করা হয়নি। আপনার ভাইঝি তো কেঁদেই সারা। নিজের হাতে বেছে বেছে জীবনে প্রথম কমিকস কিনেছে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কমিকসগুলো দেখে খুব খুশী হবে।‘
সুধীরকাকু তখন বললেন-‘বৌদি আপনাদের হাতে এগুলো দিতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে। আমি ওনাদের ফোন করে জানিয়ে দেবো যে আপনাদের প্যাকেটটা পৌঁছে দিয়েছি।‘
সুধীরকাকু চলে যাওয়ার পর তোমার বাবা বললো-‘ভাগ্যিস সুধীরদা কাল ওখানে ছিলেন। এত দায়িত্বশীল একজন মানুষ। উনি না থাকলে কমিকসগুলো এত সহজে পাওয়া যেত না।‘
সব শুনে দিয়া বললো-‘মা, আজ তাহলে স্কুলে যাওয়ার সময় সুধীরকাকুর দোকানে গিয়ে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে আসবো।‘
‘নিশ্চয়ই বলবে দিয়া। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।‘ মা দিয়ার স্কুলব্যাগ গোছাতে শুরু করলো। দিয়া প্যাকেট থেকে কমিকসের বইগুলো বের করে পাতাগুলো উল্টে গন্ধ শুঁকে বললো-‘হ্যাঁ মা, যাচ্ছি। আমি কিন্তু স্কুল থেকে ফিরে আজ আর পড়তে বসবো না। শুধুই কমিকস পড়বো।‘
কমিকসগুলো দিয়ার দিকে তাকিয়ে যেন মুচকি হেসে উঠলো।
ছবিঃ আবির