সন্ধ্যে হয়ে আসছে। নিচের পার্ক থেকে বন্ধুদের গলা শোনা যাচ্ছে। টুপাই, তোর্সা, ঋদ্ধি, আর সায়ন নিশ্চই খেলছে এখনো। ওরা কী মিঠাই কে মিস করছে? মিঠাই চুপ করে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। ওদের আট তলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে নিচের গাড়িগুলোকে ছোট্ট ছোট্ট বাক্সর মতো দেখতে লাগছে। আকাশে অল্প গোলাপি আভা। সেই নরম আলো ডানায় মেখে পাখিগুলো বাসায় ফিরছে। অন্যদিন হলে মিঠাই এখন নিচে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছে বা কুমিরডাঙ্গা। কিন্তু আজকের দিনটা আলাদা। আজ ওর খুব মন খারাপ। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না, মা খুব রেগে আছে। ও বুঝতে পারছে, কিন্তু মা তো ওর কথা শুনতেও চাইছে না। তাহলে মিঠাই কী করবে?
আজ দাদানও খুব ব্যস্ত। নিজের ঘরে লেখালেখি করছেন। মিঠাই দু একবার উঁকি মেরে দেখে এসেছে কিন্তু দাদান এতো ডুবে ছিলেন নিজের কাজে যে মিঠাইকে দেখতে পাননি। আর মিঠাইও ওঁকে বিরক্ত করা উচিত হবে না ভেবে চুপচাপ চলে এসেছে। কিন্তু ওর আর ভালো লাগছে না, খুব কান্না পাচ্ছে। মা যদি একটু বুঝতো! মিঠাই মিথ্যে বলেনি, কোনো অন্যায়ও করেনি কিন্তু সুমিতা মিস কিচ্ছু শুনলেন না। দুম করে মাকে ফোন করে ডেকে মিঠাইয়ের নামে নালিশ করলেন! এমনকি ওকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে, এই রকম ভয়ও দেখালেন। খুব স্বাভাবিক যে এইসব শুনে মা রেগে যাবেন, আর হয়েছেও তাই।
এই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মিঠাই খুশি নয়। আগে ও একটি ছোট্ট স্কুলে পড়তো। মায়ের সঙ্গে যেত, সেখানে নানা রকম খেলা হতো, টিচাররা কি ভালো ছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর বয়স হতেই বাবা ওকে এই বড় স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। বিশাল বিল্ডিং, কিন্তু দেখলেই ভয় করে। লম্বা লম্বা করিডোর, কেমন অন্ধকার, গা ছমছম করে। মিঠাইয়ের স্কুলটাকে কিছুতেই ভালো লাগে না। টিচাররা বড্ড গম্ভীর, বাংলায় কথা বললে বকেন, ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে দ্যান। মিঠাই ভয়ে ভয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে ভয় পায় সুমিতা মিসকে , যিনি ওদের অঙ্ক শেখান। যোগবিয়োগে একটু ভুল হলে এতো বকেন যে মিঠাই ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকে আর তাতে ওর আরোই ভুল হয়ে যায়। আর সুমিতা মিস রোজ ক্লাস শুরু করেই ওকে বোর্ডে ডেকে অঙ্ক করতে বলেন। বুক দুরুদুরু করে ওর। দু একবার ভুল করেছে নামতা বলতে আর কপালে খুব বকুনি জুটেছে। সেই সব নিয়ে মিঠাই রাগ করে নি, খারাপ লেগেছে তাই আরো বেশি করে দাদানের কাছে অঙ্ক প্র্যাক্টিস করেছে। সুমিতা মিসকে ও খুশি করবেই। আজকের ঘটনাটা সম্পূর্ণ আলাদা। না তো ও নামতা ভুল বলেছে, না অঙ্কে কোনো ভুল করেছে। মিস শুধু শুধু ওর ওপর এতো রাগ করলেন । কিন্তু সেটা মিঠাই কাকে বলবে? বাবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরলেই মা নিশ্চই সব বলে দেবে । কী হবে তখন?
মা ডাকছে ওকে। সন্ধ্যে হয় গেছে। নিচের মাঠ ফাঁকা, কারুর গলা শোনা যাচ্ছে না। এখন খেয়ে মিঠাই কে পড়তে বসতে হবে, রোজকার নিয়ম। মিঠাই ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে। মা চিঁড়ের পোলাও দিয়ে গেছে। ও চামচ দিয়ে নাড়তে থাকে। খেতেও ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ বেল বাজলো। বাবা আজ এতো তাড়াতাড়ি এসে গেলো?
মা দরজা খুলতেই গমগমে কণ্ঠস্বরে ঘরটা ভরে গেল। "কি সঞ্চিতা, কেমন আছো?" আরে! এতো মইদাদুর গলা! মিঠাই চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে। ছুটে গিয়ে দাদুর সামনে দাঁড়ায় কিন্তু মায়ের গম্ভীর মুখের দিকে চোখ পরে যেতেই ওর পা আটকে যায়। এক রাশ কষ্ট ওর বুকে ঠ্যালা মারে, চোখের জল আটকানোর জন্য ও তাড়াতাড়ি মুখ নিচু করে নেয়। কিছুতেই দাদুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে না।
মইদাদু নামটা কি অদ্ভুত না? আসলে ওঁর নাম মহীতোষ, ছোটবেলায় মিঠাই উচ্চারণ করতে পারতো না তাই মইদাদু বলতো, আর সেই ডাকটাই রয়ে গেছে। উনি দাদানের বন্ধু, ভারী মজার মানুষ। ঘুরে বেড়ান এদিকসেদিক, আর ফিরে এসে নানা গল্প শোনান ওদের। মিঠাইকে কত উপহার দেন, বই, বিদেশী পুতুল, বা কয়েন। মিঠাই ওঁর জন্যই বিভিন্ন দেশের পতাকা, স্ট্যাম্প, আর বিখ্যাত স্থাপত্যের কথা জানতে পারে।
মিঠাইয়ের নিশ্চল ভাব দেখে মইদাদু অবাক হলেও মুখে কিছু বললেন না। দাদানের ঘরে চলে গেলেন। মিঠাইও নিজের ঘরে গিয়ে বই খাতা নিয়ে পড়তে বসে গেল। দাদানের ঘর থেকে মা আর মই-দাদুর গলা শুনতে পাচ্ছিল। ওর খুব ইচ্ছে করছিল অন্যদিনের মতো মইদাদুর সঙ্গে গল্প করে কিন্তু কিছুতেই যেতে পারছিল না।
যাওয়ার সময়ে মইদাদু নিজেই মিঠাইয়ের ঘরে এলেন। খানিকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কী খুঁজলেন কে জানে! তারপর ওর মাথায় একটা হাত রেখে, আলতো স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, "কী হয়েছে, মুড়কিছানা?"
এইটুকুই যেন মিঠাইয়ের দরকার ছিল! কেউ যেন এক টোকায় ওর ভেতরের সব অনুভূতি গুলোকে নাড়িয়ে দিল, আর সারা দিনের জমে থাকা দুঃখ, কষ্ট, আর যন্ত্রণা দু চোখ উপচে ঝরে পড়তে লাগল। মইদাদু ওর এই রকম কান্না দেখে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিলেন । মিঠাইকে কাছে টেনে নিয়ে বিছানায় বসলেন, তারপর আস্তে আস্তে ওর পিঠে হাত বুলোতে লাগলেন যতক্ষণ না ও শান্ত হয় । এইভাবে কেঁদে ফেলাতে মিঠাইও একটু লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল, ও চোখ মুছে নেয় তাড়াতাড়ি। মইদাদু এতক্ষণ পর কথা বললেন, "এবার বলত মুড়কিছানা, কী হয়েছে?" মিঠাই আস্তে আস্তে ওঁকে সব বলে। সুমিতা মিসের ওকে ভয় দেখানো, স্কুলে অঙ্ক না পারার জন্য শাস্তি, সব। "কিন্তু জানো দাদু, আমি কিন্তু মিথ্যে কথা বলিনি আজ। "
"হ্যাঁ, সেটাই তো জানতে চাইছি দিদিভাই, আজ কী হয়েছিল যে উনি তোমার মাকে ডেকে পাঠালেন?"
মিঠাই আরেকবার চোখ মুছে শুরু করে, "আমরা আজও মাঠে খেলছিলাম রোজকার মতো, আমি সবার শেষে ফিরছিলাম ক্লাসে। হঠাৎ কিচ কিচ আওয়াজ শুনে দেখি আমগাছের নিচে একটা পাখির ভাঙা বাসা। ওই গাছে অনেক কাক, শালিখ, আর টিয়া পাখির বাসা আছে, তাদেরই একটা হয়তো পড়ে গেছে। জানো মইদাদু, বাসার মধ্যে তিনটে বাচ্চা ছিল, এই কুট্টি কুট্টি। উড়তেও পারে না, আর তাই ওরা ভয়ে ওই রকম আওয়াজ করছিল। ওদের ফেলে চলে আসা কী ঠিক হতো, তুমি বলো?"
মই -দাদু ঘাড় নেড়ে সায় দেন, "ঠিকই তো, ওদের ও ভাবে ফেলে আসা কখনোই উচিত নয়। "
মিঠাই উৎসাহ নিয়ে বলতে থাকে, "হ্যাঁ, যদি কোনো বেড়াল বা কুকুর ওদের মুখে করে নিয়ে চলে যেত, তাহলে ওদের মায়ের কত কষ্ট হতো ভাবো?"
"তা তুমি কী করলে তখন, মুড়কিছানা?"
মিঠাই হাত নেড়ে আশ্বস্ত করল দাদুকে, " আমাদের স্কুলের মালিকাকু তো গেটের কাছেই থাকে, ওখানেই ওর ঘর। আমি এক ছুট্টে কাকুর কাছে গেলাম। কাকুকে সব বলতেই কাকু এসে বাসাটাকে তুলে আবার গাছের ডালে বসিয়ে দিল। ছানাগুলোও যেন কেমন চুপ করে গেল। এই জন্য আমার ক্লাসে যেতে দেরী হয়ে গেল আর সুমিতা মিস আমায় বকে ক্লাসের বাইরে বের করে দিলেন। "
"তুমি মিস কে বলোনি কেন তোমার দেরী হল?" মিঠাই বাবার গলা শুনে ঘুরে দেখে দরজার কাছে বাবা, মা, আর দাদান দাঁড়িয়ে। ওরা চুপ করে মিঠাইয়ের কথা শুনছিল এতক্ষণ!
"উনি আমায় কিছু বলতেই দিলেন না, তার আগেই মাকে ফোন করলেন", বাবার প্রশ্নের উত্তর দেয় ও। "ঠিক আছে, তোমায় আর ভাবতে হবে না, আমি স্কুলে গিয়ে মিসের সঙ্গে কথা বলে নেবো। " দাদানের কোথায় ওর মুখে অল্প হাসি ফোটে, একটু নিশ্চিন্ত বোধ করে মিঠাই।
এরপরের এক সপ্তাহ নির্বিঘ্নেই কেটে গেল। মিঠাই মন দিয়ে পড়াশোনা করে, অঙ্কে বেশ উন্নতি হয়েছে ওর, আগের মতো আর যোগবিয়োগে ভুল করে না।
পরের শনিবার ওকে মা সক্কাল বেলায় ঘুম থেকে তুলে দিল। মিঠাই অবাক হয়ে দেখে, বাবা, মা, আর দাদান রেডি। "আমরা কোথায় যাব?"ওর প্রশ্নের উত্তরে বাবা শুধু বললো সেটা সারপ্রাইজ। কি আর করা, মিঠাইও তাই চটপট রেডি হয়ে নিল। ফুল ফুল ছাপ জামা, মাথায় হেয়ার ব্যান্ড আর পায়ে ওর পছন্দের নীল জুতো পরে গাড়িতে উঠে বসল। বাইপাস ছাড়িয়ে বেশ ফাঁকা ফাঁকা একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে বাবা ওদের সবাইকে নামতে বলল।
রাস্তা থেকে নেমে একটু হেঁটে ওরা এসে দাঁড়ালো একটা বড় গেটের সামনে। ওদের দেখে একজন দারোয়ান এসে গেটটা খুলে দিতে ওরা সবাই ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে চারপাশ দেখতে লাগল | বিশাল মাঠ একটা, তার একপাশে জাল দিয়ে ঘেরা। সেখানে খরগোশ খেলছে। তার পাশেই বিশাল একোয়ারিয়ামে নানা রঙের মাছ। একটা ছোট ডোবা, তাতে পদ্ম ফুটে আছে। মিঠাই তো প্রথমেই ছুট্টে চলে গেছে খরগোশ দেখতে। পুঁতির মতো চোখ, বড় বড় সাদা কান ঝুলিয়ে তুড়ুক তুড়ুক করে লাফাচ্ছে খরগোশগুলো। ওকে দেখে একটুও ভয় পেল না, বরং কেমন ওর পায়ের কাছে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল ।
দাদান, মা, আর বাবা ডোবার জলে মাছ দেখতে পেয়ে খুব খুশি। ওরা সবাই মাছ আর খরগোশ নিয়ে যখন মশগুল তখন খেয়ালই করেনি যে কখন এক ভদ্রলোক ওদের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। ছোটোখাটো মানুষটি, টাক মাথা, আর মুখটি হাসিতে ভরা। উনি নিজের থেকেই বলে উঠলেন,"কেমন লাগছে আমাদের এই স্কুল?" মিঠাই তো শুনেই অবাক, এটা স্কুল! দাদান,মা, আর বাবা ওনাকে হাত তুলে নমস্কার জানিয়ে আলাপ শুরু করল। উনি এই স্কুলের প্রিন্সিপাল । মিঠাইয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, "কি দেখবে নাকি আমাদের স্কুলটা? চলো, তোমায় ঘুরে দেখাই। " তারপর মিঠাই এর হাত ধরে ওকে নিয়ে গেলেন খরগোশের খাঁচায়। ওমা, খরগোশ গুলো কেমন ওনার পায়ের কাছে এসে বসলো, হাত থেকে পাতা খেলো, আবার একটু দৌড়ে এসে আবার ওনার পায়ের কাছেই ঘোরাঘুরি করতে লাগল। উৎসাহ পেয়ে মিঠাইও ওদের নিজের হাতে গাজর খাওয়াল।
তারপর ওকে নিয়ে গেলেন পুকুরের কাছে, সেখানে ওরা মাছেদের মুড়ি খাওয়াল, একোয়ারিয়ামের মাছ ও দেখল। প্রিন্সিপাল স্যার মাছেদের নাম বললেন মিঠাইকে। পাশেই একটা জাল ঘেরা জায়গা, প্রথমে মিঠাই দেখতে পায়নি, স্যার দেখিয়ে দেওয়াতে বুঝল ওটা কচ্ছপদের বাড়ি। বিভিন্ন সাইজের কচ্ছপ সেখানে ঘুরছে। ইতিমধ্যে স্কুলে টিফিনের ঘন্টা পরে গেছে। বাচ্চারা কলকল করতে করতে মাঠে ছুটে এসেছে।
ওদের মধ্যে কেউ কেউ খরগোশের খাঁচায় ঢুকে খেলতে শুরু করল, কেউ কচ্ছপ কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মিঠাই যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। এই রকমও হয়?
প্রিন্সিপাল স্যার ওদের বুঝিয়ে দিলেন যে এই স্কুলের নিয়ম অন্য সব স্কুলের থেকে আলাদা। এখানে বাচ্চারা পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি পাঠ নেয়, ওরা জন্তু জানোয়ারদের খেয়াল রাখতে শেখে, নিজেরাই যত্ন নেয়। এমন কি চাইলে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখতে পারে। মিঠাই কে উনি হেসে জিগ্যেস করলেন, "তুমি নিয়ে যাবে কাউকে বাড়িতে? " মিঠাই ঘাড় কাত করে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, "হ্যাঁ, আমি তিড়িংকে বাড়ি নিয়ে যাব। " বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "তিড়িং কে?" মিঠাই হাত তুলে দেখিয়ে দিল, " ওই যে ধবধবে সাদা খরগোশটা খুব লাফাচ্ছিল আমার পায়ের কাছে, ওর নাম তিড়িং। আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাব। " ওর কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। মা বললেন, " ও বাবা আবার নাম ও দেওয়া হয়ে গেছে নতুন বন্ধুর!"
ওর গাল টিপে স্যার বললেন, " খুব মিষ্টি নাম দিয়েছ তোমার বন্ধুর। তা মিঠাই, তোমার এই স্কুলটা পছন্দ হয়েছে? তুমি এখানে পড়বে?" মিঠাই ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাল। "খুব সুন্দর এই স্কুলটা, আমি এখানেই পড়ব। কিন্তু বাবা, আমার পুরোনো স্কুলের কী হবে?"
দাদান এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলেন, এবার এগিয়ে এসে বললেন, "তোমার যেখানে ভালো লাগে তুমি সেখানে পড়বে। শুধু মনে রাখবে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে আর টিচারদের কথা শুনতে হবে।"
"হ্যাঁ দাদান, আমি মন দিয়ে পড়ব, কোনো দুষ্টুমি করবো না। তোমরা দেখো। " স্যার শুনে খুব খুশি হলেন, "এই তো চাই, মনের আনন্দে পড়বে, খেলবে, তবে না ঠিক মতো বড় হবে। "
তার পরের সপ্তাহ থেকেই মিঠাই নতুন স্কুলে যাওয়া শুরু করল। নতুন স্কুলে ওর অনেক বন্ধু এখন, মিঠাই সবার সঙ্গে মিলে মিশে ক্লাস করে, টিফিন খায়, আর খুব খেলে। খরগোশ, পাখি, মাছ, সবার সঙ্গে ওর ভাব। তিড়িং তো ওকে দেখলেই লাফিয়ে আসে। তিড়িংয়ের জন্য বাড়িতে একটা ছোট খাঁচা বানানো হয়েছে, ও এলে সেখানে থাকবে। মিঠাই ওর যত্ন নিতে শিখছে। ওই তো বাড়িতে তিড়িংয়ের একমাত্র বন্ধু, ও খেয়াল না রাখলে হবে? আর হ্যাঁ, মিঠাই এখন আর অঙ্কে ভয় পায় না। ও রোজ দাদানের কাছে বসে অঙ্ক কষে, আর ক্লাসে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
ছবিঃ আবির