সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
আমাদের পুজো

ঢাকের বাদ্যিটা ক্রমশ এগিয়ে আসছে এইদিকে। আমি, ফুলি, টুসু - আমরা সবাই এই বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। জমিদার বাড়ির লোকজনের ঠাকুর আনতে যাচ্ছে। দুর্গা ঠাকুর - ওই কুমোর পাড়া থেকে আনবে ওরা। আমরা কাহার লোহার শ্রেণী, তাই আমাদের ওদিকে যেতে নেই। যদি কারো সাথে ছোঁয়া লাগে, তাহলে সাঙ্ঘাতিক কান্ড হবে। জমিদার বাবু আর কাউকে রক্ষা রাখবেন না।

ঢাক বাজাতে বাজাতে জমিদার বাড়ির লোকগুলো খুব তাড়াতাড়ি আল পার হয়ে গেল। আমরা বটগাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলাম। আবার যখন ঠাকুর আসবে আমরা এসে এখানে জড়ো হব। এখন খেলব সবাই মিলে।

ওই পুজো বাড়িতে আমরা কখনো যাই না। আমাদের যেতে নেই। আমাদের ছোঁয়া লাগলে নাকি ওদের পাপ হয়, তাই। কিন্তু ঢাকের আওয়াজে মন কেমন করে..........ভীষণ যেতে ইচ্ছা করে ! পুজোর কদিন আমরা নদীর চড়ে বসে থাকি। একটা নতুন জামা দেয় জমিদার বাড়ি থেকে, সেটা পরে নদীর জলে কলাবৌ চান কিংবা দুগ্গা ভাসান দেখি।

আমরা আনন্দের ভাগ পাই না বলে আমাদের নিজেদের খুব পুজো করতে ইচ্ছা করে, কিন্তু বড়রা বলে, ওসব কথা মনেও আনা পাপ ! তাই সবাইকে লুকিয়ে আমরা ছোটরা চলে যাই বাবলা বনের দিকে। ওখানে কেউ যায় না। কাঁটা গাছের জঙ্গল কি না ?

আমরা ওখানে মাটি দিয়ে দুগ্গা গড়ি। লাল শালু পড়াই। রোজ পুজো করি। তারপর দুগ্গা বিসর্জনের দিন নদীতে ভাসান দিই। কেউ জানতে পারে না ! আমরা কাউকে বলি না।

পুজোর দিনগুলো আমাদের খুব আনন্দে কাটে। আমরা গাছ থেকে ফুল তুলে আনি। ফল পেড়ে আনি। আর মন্ত্র ? আমরা বলি, মা খাও, মা কাপড় পরো - এই সব আর কী ! আমরা তো বইয়ের মন্ত্র জানি না !

আমরা জঙ্গল থেকে ঝোড়ো লাল কুল পেড়ে আনি। ওগুলো খুব মিষ্টি হয় ! সেই হলো আমাদের বিসর্জনের মিষ্টিমুখ !

আমরা জমিদার বাড়ি যেতে পারি না বলে আমাদের কোন দুঃখ নেই। আমরা পড়াশোনা করে বড় হয়ে ঠিক ঠাকুর পুজো করবো আমাদের নিজেদের গাঁয়ে ! দেখে নিও !

 

ছবিঃ পার্থ মুখার্জি

মফস্বলের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরতা। খুব ছোটবেলা থেকেই আঁকা ও লেখার প্রতি  আগ্রহ ছিল । সেই সময় থেকেই বহু মুদ্রিত পত্রিকায় এবং পরে ই-পত্রিকা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সংসার ও কর্মজীবনের অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যেও জলরঙে ছবি আঁকতে ও গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখতে ভালোবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা