একটা নতুন বছর শুরু হয়ে দুটো মাস পেরিয়েও গেল। নতুন বছরের সব থেকে ভালো খবর এটাই যে ধীরে ধীরে আবার খুলছে সব স্কুল। হয়ত কারোর একটু আগে, কারো বা একটু পরে। কিন্তু ক্রমে স্বাভাবিক হচ্ছে আমাদের প্রতিদিনের জীবন, ঠিক যেমন ছিল দুই বছর আগে। ২০২০ আর ২০২১ সাল — এই দুই বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। বদলে গেছে আমাদের পড়াশোনার ধরণ, বদলে গেছে জীবনের অনেক নিয়ম কানুন। বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসে একসঙ্গে বসে পড়াশোনা করার বদলে অভ্যাস করতে হয়েছে বাড়িতে বসে অনলাইন ক্লাস করা । কিন্তু জানো কি, অনেক অনেক ছোট ছোট বন্ধুদের পড়াশোনার পথটাই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শিশুশ্রমিকে পরিণত হয়েছে। একটু বড় মেয়ে যারা, তাদের অনেকের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুমি যদি বড় শহরে বসে আমার এই লেখা পড়ো, তুমি বলবে- যাহ, এমন হয় নাকি? কিন্তু তুমি যদি কোনো দূর গ্রামে বা ছোট্ট শহরে থাকো, বড় শহরের বা মহানগরের ঝলমলে আলো আর সহজলভ্য ইন্টারনেট সংযোগ থেকে অনেক দূরে, যেখানে এমনিতেই পড়াশোনার সুযোগ কম, যেখানে সবাই সহজে স্মার্টফোন কিনতে পারে না, যেখানে গত দুই বছরে হয়নি কোনো অনলাইন ক্লাস, তাহলে তুমি বলবে- হ্যাঁ,জানি, এমনটা হয়।
এমন সব সুযোগসুবিধা বিহীন বন্ধুদের জন্য খোলা মাঠে বসে পড়াশোনা করার উদ্যোগ নিয়েছেন অনেক শিক্ষক, অনেক সাধারণ মানুষ। তবুও, আরও অনেকে সেই সুযোগটাও পাচ্ছে না। খুব মন দিয়ে লেখাপড়া করত, অনেকদূর পড়াশোনা করতে চেয়েছিল — এমন কত শত ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে গত দুই বছরে, কেউ তার হিসাব রাখে না। তাই তোমরা যারা নিয়মিত পড়াশোনা করার, অনলাইন ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছ , যাদের হাতের কাছে সবসময়ে রয়েছে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ — তারা কিন্তু এইসব সুযোগসুবিধায় অন্য বহু সমবয়সী ছেলেমেয়েদের থেকে এগিয়ে আছ। আর এইসব সুযোগ সুবিধার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নানারকম বই,পত্রিকা, ওয়েব পত্রিকা পড়তে পাওয়ার সুযোগ। এই সুযোগকে হেলায় হারিয়ে যেতে দিওনা যেন।
সদ্য পেরিয়ে এলাম আরও একটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সারাদিন ধরে দেশে বিদেশে হল গান-বাজনা সহ প্রভাতফেরী, কত অনুষ্ঠান, কত আলোচনা। একুশে ফেব্রুয়ারির সেই সকালে, ইচ্ছামতী এসে বলল, ওর বন্ধুরা ওকে জিজ্ঞেস করেছে, চাঁদের বুড়ি বা বাড়ির বড়রা সবসময়ে বাংলা বই পড়ো, বাংলা গল্পের বই পড়ো বলতে থাকেন কেন? ইংরেজি বই পড়া কি খারাপ? বাংলা বই-ই পড়তে হবে কেন? আমি বললাম, এই প্রশ্নের সহজ উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন কাজ, আমি বরং তোমায় একটা গল্প বলি, সঙ্গে তোমার বন্ধুরাও নাহয় শুনুক একটু।
এটা আজ থেকে একান্ন বছর আগের গল্প। রঞ্জু নামের একটা ছোট্ট ছেলে ছিল। তার এগারো-বারো বছর বয়স। সে তার নানীর সঙ্গে থাকত কাঁকনডুবি নামে একটা ছোট্ট গ্রামে। আমাদের আজকের প্রতিবেশী বাংলাদেশ— সেই সময়ে তার পরিচয় ছিল 'পূর্ব-পাকিস্তান' । ১৯৪৭ সালে ভারত যখন ইংরেজ শাসনমুক্ত হয়, দেশভাগ হয়, তখন ভারতের উত্তর পশ্চিম দিকের খানিকটা অংশ আর পূর্ব দিকের খানিকটা অংশ নিয়ে তৈরি হয় পাকিস্তান নামের এক নতুন দেশ। একটা দেশের দুটো টুকরো- পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান। সেই পূর্ব পাকিস্তানের একটা ছোট্ট গ্রাম ছিল কাঁকনডুবি। কাঁকনডুবি নামে সেই গ্রামে একটা স্কুল ছিল, গ্রামের মাঝখান দিয়ে বড় রাস্তা ছিল, মন্দির-মসজিদ ছিল, গ্রামের পাশে কালী-গাং নামের নদী ছিল, নদী পেরিয়ে অচেনা জঙ্গল ছিল, আর ছিল নানাবয়সী, নানা কাজের এবং অকাজের মানুষ।
রঞ্জুর কাছের বন্ধু হল মামুন। দুজনেরই পড়ায় মন নেই। পড়াশোনার থেকে তাদের বেশি আনন্দ গ্রামের পথে ঘাটে ঘুরে বেরানোতে, স্কুলে যাওয়া আসার পথে বলাইকাকুর চায়ের স্টল থেকে ফ্রি তে চা আর কুকি বিস্কুট খাওয়াতে, আর সেখানে রেডিওর খবর শোনাতে। তবে রেডিওতে খবর ঊর্দুতে পড়া হয়, তাই তারা এক দুটো শব্দ ছাড়া কিছুই বোঝে না। এটাও বোঝে না, পূর্ব পাকিস্তানে যখন দুটো বাজে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানে একটা বাজে কেন। বলাইকাকুর দোকানে চা খেতে আসা মানুষদের কথাবার্তাও তারা মন দিয়ে শোনে— তারা দেশের কথা, রাজনীতির কথা, ইলেকশনের কথা আলোচনা করে। রঞ্জু আর মামুন পুরোটা বোঝে না, কিন্তু 'খুব বুঝেছি' ভাব করে আর নিজেদের মত করে কিছু একটা বুঝে নেয়।
তাদের স্কুল বেশ বড়— পাকা বাড়ি,খেলার মাঠ আছে, আশেপাশের অনেক গ্রামের ছেলেরা আর মেয়েরা পড়তে আসে। একদিন তাদের স্কুলে এলেন এক নতুন মাস্টারমশাই। তাঁর খুবই অল্প বয়স, সবে কলেজে পড়াশোনা করছেন। এক মাস্টারমশাই ছুটি নিয়েছেন বলে তাঁর বদলে কিছুদিন ক্লাস নেবেন। এই স্যারকে ক্লাসের সবার খুব পছন্দ হল, কারণ তিনি এসেই বললেন যে যেহেতু তিনি নিজেও এখনও ছাত্র, তাই স্যার এর বদলে 'মাসুদভাই' বলে ডাকতে। আর তিনি এটাও জানান যে তিনি এসেছেন তাদের কিছু শেখাতে নয়, বরং তাদের যে যে কাজে আগ্রহ আছে, সেসবে উৎসাহ দিতে।
মাসুদভাই-এর উৎসাহেই রঞ্জুদের স্কুলে প্রথমবার একুশে ফেব্রুয়ারি—শহীদ দিবস পালন করা হল। আর এর কিছুদিন পরেই শুরু হল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। গ্রামের সব মানুষ প্রথমে ভাবল, যুদ্ধ তো লেগেছে বড় বড় শহরে— ঢাকা, খুলনা, যশোর, চিটাগাং — কাঁকনডুবির মত একটা ছোট্ট, অচেনা গ্রাম, বড় শহর থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে — এখানে যুদ্ধের আঁচ লাগবে কি? এখানে মিলিটারি এসে করবে কী?
কিন্তু তাদের এই ভাবনা খুব তাড়াতাড়ি পাল্টে গেল। প্রথমে একজন, তারপরে দুইজন, তারপরে এল দলে দলে মানুষ, যারা প্রাণের ভয়ে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। ক্রমে কালী গাং-এর জলে ভেসে আসতে থাকল মৃত মানুষের দেহ। এদিকে রঞ্জু-মামুনের ক্লাসে পড়ত নীলিমা, তার পরিবার চুপিচুপি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেল। রঞ্জুদের গ্রামের সবথেকে সম্ভ্রান্ত পরিবার কাজীবাড়িতে , শহর থেকে মা আর দিদি নোরার সঙ্গে এল রঞ্জুর সমবয়সী ডোরা। ডোরা আর নোরার বাবার মৃত্যু হয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। মাসুদভাই যোগ দিলেন মুক্তিবাহিনীতে। আর কিছুদিন পরে গ্রামে এল পাকিস্তানি মিলিটারি। তারা রঞ্জুদের স্কুলটাকে নিজেদের আস্তানা বানাল আর গ্রামের সাধারণ মানুষদের ওপর নানারকমের অন্যায় অত্যাচার চালাতে থাকল।
এমন এক অদ্ভূত পরিবেশে, যুদ্ধ যুদ্ধ রবে যখন চারদিক সরগরম, শহরের মেয়ে ডোরা আর গ্রামের ছেলে রঞ্জুর মধ্যে বন্ধুত্ব হল। ডোরা আর রঞ্জু দুজনেই চেয়েছিল দেশের জন্য যুদ্ধ করতে, মুক্তিবাহিনীর অংশ হতে। দুজনে মুক্তিবাহিনীর অংশ হবে বলে নিজেরাই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত যত শব্দ, সবরকমের বন্দুকের আর অস্ত্রশস্ত্রের নাম — সব শিখে ফেলেছিল। মিলিটারিকে কীভাবে শায়েস্তা করবে, দুজনে মিলে তার পরিকল্পনা করত। এতটা পড়ে তুমি ভাবছ, দশ-এগারো বছরের ছেলেমেয়েকে কেউ যুদ্ধে নেয় নাকি? কিন্তু গল্প যত এগোতে থাকে, আমরা দেখি, শেষ অবধি তারা দুজনেই মাসুদভাই আর তাঁর বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতার যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয়, আর সবাই মিলে কাঁকনডুবি গ্রামকে মিলিটারিদের কবল থেকে মুক্ত করে। আর শুধু তাই না, তারা সবাই মিলে কাঁকনডুবি গ্রামের মিলিটারি ক্যাম্প দখল করার কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকায় পাকিস্তানি মিলিটারি আত্মসমর্পন করে। তৈরি হয় বাংলায় কথা বলা মানুষদের জন্য আলাদা একটা দেশ— 'বাংলাদেশ'। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষাকে ভালোবেসে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল, সেই লড়াই শেষ হল ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে এসে।
আমি গল্পটা এইখানে যেই শেষ করলাম,অমনি ইচ্ছামতী আমাকে এত্তগুলো প্রশ্ন করল - ডোরা আর রঞ্জু কীভাবে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিল? ওরা কীভাবে যুদ্ধ করল? মাসুদভাইয়ের কী হল? বলাইকাকুর কী হল? মিলিটারি অত্যাচার করছিল কেন? মুক্তিযুদ্ধ হলই বা কেন? রঞ্জুদের স্কুলটার কী হল? নীলিমা কোথায় গেল? — তোমার মনেও এমন সব প্রশ্ন জাগছে কি? তাহলে শোনো — এত এত প্রশ্ন শুনে আমি মুচকি হেসে ইচ্ছামতীকে যা বলেছি সেটা তোমাকেও বলি - এটা একটা প্রায় আড়াইশো পাতার উপন্যাস। আমি কী করে সেটা এত অল্প সময়ে বলে দিতে পারি? পুরোটা জানতে হলে নিজেকে পড়তে হবে। উপন্যাসটার নাম 'গ্রামের নাম কাঁকনডুবি', লিখেছেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ছোটদের জন্য, ছোটদের মত করে বাংলাভাষায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা এমন বই খুবই কম আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের আরও একটি কিশোর উপন্যাস হল 'আমার বন্ধু রাশেদ'। সেই উপন্যাস পড়লে অবশ্য মন খুব খারাপ হবে।
রঞ্জু আর ডোরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠার গল্পটা কিন্তু হ্যারি পটার বা মার্ভেল অ্যাভেঞ্জার্সদের অভিযানগুলির থেকে কোনো অংশে কম নয়। আসলে এই কাহিনি স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো একটা অচেনা গ্রামের কোনো দুটো ছেলে-মেয়ের গল্প নয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন যত নারী-পুরুষ, যত ছোট ছোট মেয়ে আর ছেলে, সবার গল্প বলে 'গ্রামের নাম কাঁকনডুবি'। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে নানারকমের ভয়াবহ, তেতো অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে,ছোট্ট রঞ্জু আর ডোরাও মনে মনে অনেক বড় হয়ে উঠেছিল। এই বইটা একই সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে, বন্ধুত্বের, মানবিকতার, সাহসের, মানুষে মানুষে ভালোবাসার গল্প শোনায়, ভালো আর মন্দের ফারাক করতে শেখায়, দেশকে ভালোবাসতে শেখায়। আবার একই সঙ্গে আমাদের কাছে ভাষা শহীদ দিবস — যাকে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপেও পালন করি — তার গুরুত্বও কত সহজে বুঝিয়ে দেয়।
রঞ্জু আর ডোরার যুদ্ধ করার গল্প কোনো কল্পনা করা জাদুর দুনিয়ার গল্প নয়। এ একেবারে সত্যিকারের মানুষের জীবনের গল্প। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে, মুহম্মদ জাফর ইকবালের বয়স ছিল কাহিনির মাসুদভাইয়ের মতই। তিনি তখন সদ্য কলেজের পড়া শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর বাবা এই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। লেখক এই উপন্যাসটি লেখেন অনেক পরে, ২০১৫ সালে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাঁর নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা যে তাঁর লেখা এই উপন্যাসের মধ্যেও ফুটে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক। দেশের নামে, দেশের উন্নতির নামে যেকোনো দেশের রাজনৈতিক নেতারা যতরকমের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, অকারণে অন্যায় করে, যুদ্ধ করে, তার প্রভাব সবথেকে বেশি পড়ে দেশের ছোটদের ওপর। ঠিক যেমন এখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া। সে দেশেও তো রয়েছে রঞ্জু, ডোরা, মামুন, নীলিমার মত ছেলেমেয়েরা। হয়ত তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঠিক রঞ্জু আর ডোরার মত লুকিয়ে দেশের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আজ থেকে বহু বছর বাদে, কেউ হয়ত ইউক্রেনীয় ভাষায় তাদের লড়াই নিয়েও লিখবে এমনই আর একটা উপন্যাস। হয়ত আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে, ইউক্রেনের শিশুরা আবার কোনো গল্পের মাধ্যমে পড়বে আজকের অন্যায় যুদ্ধের কথা। সেই উপন্যাস বাংলা কিংবা ইংরেজিতে অনুবাদ করা হলে হয়ত পড়ব আমরাও।
প্রতিটা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব একটা সংস্কৃতি থাকে, প্রতিটা ভাষার কিছু নিজস্ব জাদু থাকে । 'গ্রামের নাম কাঁকনডুবি'— এই উপন্যাসটা ইংরেজিতে লেখা হতেই পারত। কিন্তু তাহলে এই গল্পটা বাংলায় পড়ার যে স্বাদ, সেটা আমরা হারাতাম। গ্রামের নাম কেন 'কাঁকনডুবি' হল — এই নিয়ে মাসুদভাইয়ের সঙ্গে রঞ্জু আর তার বন্ধুদের যে সরস আলোচনাটা হয়, সেটা ইংরেজি ভাষাতে সঠিকভাবে ফুটেই উঠত না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন 'চরমপত্র' নামে এক অনুষ্ঠান হত, যেটা শুনে দেশের সাধারণ মানুষেরা মনের জোর পেতেন — জঙ্গলের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে থাকা রঞ্জু আর ডোরাও শুনত সেই অনুষ্ঠান। বাংলায় লেখা আর পাঠ করা সেই চরমপত্রের মজা কি আর ইংরেজি ভাষাতে একইভাবে প্রকাশ হত ?
আমি তো মোটে একটা বাংলা গল্পের বই-এর গল্প বললাম। 'বাংলা বই পড়বে কেন?' — সেই প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর দিলাম না । এটুকু বলতে পারি, বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের এক বিশাল ভান্ডার রয়েছে — ভারতের অন্য কোনো ভাষায় ছোটদের জন্য এত বিভিন্ন স্বাদের বই আছে কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশে প্রকাশিত ছোটদের সমস্ত বাংলা বই- ও এর সঙ্গে যোগ করা উচিত। বাঙালি হয়ে, আমাদের প্রত্যেকের উচিত সেই সবের মধ্যে থেকে কিছু অন্তত বই পড়া। নিজের মাতৃভাষাকে ভালোভাবে জানা মানে নিজের শিকড়কে ভালোভাবে জানা; আর নিজের শিকড়কে যত ভালোভাবে জানবে, তত বেশি আত্মবিশ্বাসী মানুষ হয়ে দুনিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াতে শিখবে তুমি।
তবে, রঞ্জু আর মামুনের মাসুদভাই-এর মত — আমরা, বড়রা শুধু তোমাকে উৎসাহ দিতে পারি ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা বই পড়ার জন্য, কিন্তু তোমাকে জোর করে বাংলা বই পড়তে শেখাতে পারি না। নিজের ভাষাকে তুমি কতটা ভালোবাসবে, সেটা তোমাকেই ঠিক করতে হবে।
তোমার জন্য রইল পলাশ- শিমুলের রং মাখা ভালোবাসা ।
সূত্র ছবিঃ
পাড়ায় শিক্ষালয়, বাহাদুরপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, পিপলা-পাহাড়পুর-লালগোলা
সৌজন্যঃ নীহারুল ইসলাম