কি গো ইচ্ছামতীর বন্ধু, কেমন আছো? সেই পুজোর পর থেকে তো আর তোমার সঙ্গে কথাই হয়নি...তুমি ভালো আছো তো? পুজো সংখ্যার পর নতুন সংখ্যা নিয়ে একটু ধীরে ধীরেই এলাম। অনেকটা এবারের শীত বুড়োর মত! এসেও যেন আসতে চাইছিল না। দু'পা এগোচ্ছে তো তিন পা পেছোচ্ছে! এদিকে তো ক্যালেন্ডারের পাতায় অগ্রহায়ন মাস পেরিয়ে পৌষ মাস পড়ে গেছে কবে! অথচ আমার ঠান্ডাই লাগছিল না। এখন অবশ্য অবস্থা উলটো। কনকনে উত্তুরে হাওয়া আমার দরজার বাইরে নেচে নেচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু সুযোগ পেলেই হল- হু হু করে ঢুকে পরে কাঁপিয়ে দিচ্ছে আমার সারা শরীর।
এইসব দিনে, ঘরের ভিতর চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আমি ভাবি সেই সব মানুষের কথা, এই শীতে যাদের মাথার ওপর ছাত নেই, অনেকেই যারা রাস্তায় বা ঝুপড়িতে বসবাস করে। তাও তো ভাল যে সূয্যিমামা দিনের বেলা আলোয়, উষ্ণতায় ভরিয়ে রাখেন পৃথিবীকে। ঠান্ডার সাথে মোকাবিলা করতে সূয্যিমামা আমাদের বড় বন্ধু। শুধু সূ্য্যিমামা কেন- আকাশ, জল, মাটি, হাওয়া, গাছপালা, সবাই আমাদের বন্ধু। সবাই আমাদের সুস্থ, সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা নিজেরা কি এদের ভালোভাবে থাকতে দিই? আমরা সবসময়ই দুষ্টু ছেলেমেয়েদের মত এমন সব কাজকর্ম করছি, যে তাতে প্রকৃতি এবং আবহয়াওয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর সেই সব অন্যায়ের ফল কিন্তু আমাদেরকেই ভোগ করতে হচ্ছে। এই যেমন আমাদের এখানে শীত কত দেরি করে এল, আবার এবছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং আমেরিকার কিছু অংশে এত বেশি তুষারপাত হয়েছে এবং এমন ঠাণ্ডা পড়েছে যে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনই করতে পারছে না! এদিকে আবার ক্রমশঃ কল-কারখানা-গাড়ী বেড়ে যাওয়ায় অনবরত ধোঁয়া- ধুলোর মাত্রা বেড়ে গিয়ে পৃথিবীকে ক্রমশঃ গরম করে তুলছে। এইভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীর উষ্ণতা আরো বেড়ে যাবে। তার ফলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করে দেবে, আর সেই বরফগলা জল সমুদ্রের জলে মিশে গিয়ে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়িয়ে দেবে। তার ফলে কি হবে জানো? সমুদ্রের কাছের বহু শহর এবং অনেক দ্বীপ পুরোপুরিভাবে জলের তলায় হারিয়ে যেতে পারে! এইরকম ভয়াবহ পরিস্থিতি যাতে না আসে, সেই নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বের ছোট-বড় বিভিন্ন দেশের নেতা এবং সাধারন মানুষ সবাই জড়ো হয়েছিলেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এ। আবহাওয়ার ভারসাম্য কি করে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সেখানে নানা আলোচনা হয়েছে।
কিন্তু আবহাওয়ার ভারসাম্য বা পরিবেশকে সুন্দর রাখার দায় তো শুধুমাত্র কয়েকজন মানুষের নয়! এ তো আমাদের সবার দায়িত্ব, তাই না? সেজন্য আমাদের সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে , জানতে হবে, কি করে পৃথিবীর উষ্ণতা আমরা কম করতে পারি, কিভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি। তুমিও না হয় এ বিষয়ে একটু পড়াশোনা করো , আর আমাকে চিঠি লিখে জানাও কি ভাবে তুমি পৃথিবীকে সাহায্য করতে পারো।
এবার একটু ইচ্ছামতীর কথায় আসা যাক। ইচ্ছামতী কিনা এক বছরের বড় হয়েছে, তাই ইচ্ছামতীর হাবেভাবে কিছু কিছু বদল হয়েছে। ইচ্ছামতী এখন থেকে প্রকাশ হবে বছরে চারটি সংখ্যায়। আয়তনেও একটু বড় হয়েছে ইচ্ছামতী। আমরা চেষ্টা করছি বেশি বেশি করে গল্প, ছড়া এবং অন্যান্য নিয়মিত লেখা দিতে। এ বিষয়ে কিন্তু তোমার মতামত আমার কাছে খুব জরুরী। তুমি কি ধরনের লেখা পড়তে চাও, তা চিঠি লিখে জানিও আমায়।
এই সঙ্খ্যায় আছে পিন্টু, টুবলু আর সরলের গল্প; আছে হাতি, শামুক আর মৌমাছির গল্প; তার সঙ্গে আমরা বেড়াতে যাচ্ছি একদিকে লাস ভেগাস তো অন্যদিকে বেনারস। আছে দেশ-বিদেশের বন্ধুদের আঁকা ছবি আর অন্যান্য নিয়মিত বিভাগ। তবে গত সংখ্যায় 'জানা-অজানা' বিভাগে শুরু হয়েছিল নতুন ধারাবাহিক 'মারথোমা নাসরানিদের দেশে'। এই ধারাবাহিকের লেখকের বিশেষ অসুবিধা থাকায়,এই সংখ্যায় এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ হল না।
তাহলে আর কথা বাড়িয়ে কাজ নেই! শিগগির পড়তে শুরু করে দাও নতুন ইচ্ছামতী।
আর হ্যাঁ, কথায় কথায় তো তোমাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলেই গেছি! - এই রইলো তোমার জন্য নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা। নতুন বছরে নতুন নতুন প্রতিজ্ঞা করলে নাকি? -রোজ সক্কাল-সক্কাল ঘুম থেকে উঠবো...আর দুষ্টুমি করবো না...সতেরোর নামতাটা মুখস্থ করেই ফেলবো...তার সাথে নাহয় ঐ প্রথমে যে সব কথা হল - পরিবেশ এবং আবহাওয়া নিয়ে, সে বিষয়েও কয়েকটা প্রতিজ্ঞা করে ফেল! তবে প্রতিজ্ঞা করলেই হবে না, সেটাকে মেনে চলতেও হবে। নাহলে এত এত প্রতিজ্ঞা করে কোন লাভ নেই।
এবার কলম থামাই।
ইচ্ছামতীর জন্য পাঠিও তোমার লেখা আর আঁকা ছবি।
তোমার নতুন বছর ভালো কাটুক।
চাঁদের বুড়ি