আঁকিবুকি
রিজওয়ান রিয়াসত অর্ক, রাজুক উত্তরা মডেল কলেজ,ঢাকা, বাংলাদেশ
সোহম চক্রবর্তী, নিভা আনন্দ বিদ্যালয়, কলকাতা
অনুভব শেঠ, ইন্ডিয়ান এমব্যাসি স্কুল, বেইজিং, চীন
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
স্যান্টাক্লসের চিঠি
ক্যালভিন একটা চিঠি পেয়েছে। চিঠিটা লিখেছে স্বয়ং সান্টা ক্লজ। চিঠিতে লেখা আছে ক্যালভিনের চিন্তার কোনো কারণ নেই। সান্টা তার সব নিয়ম কানুন বদলে দিয়েছে। ক্যালভিন যেসব দুষ্টুমি করে তা সব চালিয়ে যেতে পারে। সে কথায় কথায় তার মা বাবার সাথে তর্ক করতেই পারে। সুশিকে বরফের গোলা ছুঁড়ে মারতেই পারে। এইবারের ক্রিসমাসে সান্তা ক্লজ দুষ্টু বাচ্চাদেরই উপহার দেবে। আনন্দে আত্মহারা ক্যালভিনের ঘুম ভেঙে গেলো। আরে এটা তো স্বপ্ন ছিলো। তাও ক্যালভিন চোখ বুঁজে বিছানায় পড়ে থাকে। উঠলেই সে এমন এমন কাজ করবে যাতে সান্টা তাকে খারাপ ছেলে বলেই ধরে নেবে।যদিও তার বিশ্বাস কেউ সারা দিন ধরে কখোনো বাচ্চাদের ওপর নজর রাখতে পারে না। বদমাস বাচ্চাদের জন্য একটা সান্টা ক্লজ থাকলে খুব ভালো হত। ক্রিসমাস যতই এগিয়ে আসে কেলভিনের চিন্তা ততই বাড়ে। মনে মনে ভাবতে থাকে এবার সান্টা তাকে উপহার দেবে তো?
চিন্তা হবারই তো কথা। কারণ ক্যালভিন তো কমিক্স স্ট্রিপের দুনিয়ায় একটি অতি দুষ্টু ছেলে হিসেবে পরিচিত। বয়স তার ছয় কি সাত। বিল ওয়াটারসন (Bill Watterson ) তো তাকে শান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে থাকতে শেখাননি। মা,বাবা অথবা স্কুলের টিচার যা বললো তা চোখ বুঁজে এক কথায় মেনে নেবার পাত্র সে নয়। সে থাকে তার নিজের চিন্তার জগতে।তার কল্পনায় বিরাজ করে দত্যি দানব আর ভিন গ্রহের উদ্ভট সব প্রাণীরা। পড়াশুনোয় সে লবডঙ্কা। কিন্তু তার শব্দ ভান্ডার আর পাকা পাকা কথার দাপটে যে কাউকে হার মানাতে পারে।
ক্যালভিনের জনক বিল ওয়াটারসন কিন্তু ছোট বেলায় ছিলেন খুবই শান্ত।ওহিও আর বাড়িতে তিনি নিজের মতো আঁকাআঁকি করতেন আর কমিক্সের বই পড়তেন।ক্যালভিনও থাকে তার নিজের চিন্তা জগত নিয়ে। কিন্তু তার দস্যিপানা এই কমিক্স স্ট্রিপটিকে করেছে আরো প্রাণবন্ত।তার খেলার সাথী হলো একটা জলজ্যান্ত বাঘ হবস (Hobbes)। কিন্তু আর সবার কাছে সে হল একটা পুতুল মাত্র।সে যাই হোক যে যেভাবে দেখে আর ভাবে।ক্যালভিন কিন্তু তার সমস্ত আলোচনা করে হবস এর সাথে।
বাবা-মারা তাঁদের ছোট বাচ্চাদের বলেন সারা বছর ভালো হয়ে থাকো তাহলে সান্টা তোমাদের বড়দিনের উপহার দেবেন। বাচ্চারাও সান্টার উপহার পাবার আশায় ভালো হয়ে থাকে। কোনো দুষ্টুমি করে না।কোনো প্রশ্ন না করেই শান্ত-শিষ্ট-ল্যাজ বিশিষ্ট হয়ে থাকে। ক্যালভিনকেও তার বাবা মা পইপই করে বলে দিয়েছেন শান্ত হয়ে থাকার জন্য। কিন্তু ক্যালভিন জানতে চায় ভালো হয়ে থাকার...শান্ত হয়ে থাকার সংজ্ঞাটা ঠিক কী? কিভাবে সান্টা বুঝতে পারে কে ভালো ছেলে আর কে খারাপ। ক্যালভিন সান্টা ক্লজকে পরামর্শ দেয় একটা বই প্রকাশ করার জন্য। যার মধ্যে লেখা থাকবে ভালো হয়ে থাকার গুণ গুলো। একটা বাচ্চা ছেলে ভালো হয়ে থাকতেই পারে কিন্তু খারাপ ঘটনাতো ঘটেই যায়। যা বাচ্চা ছেলেটাকে দুষ্টু প্রমান করে। তাই সান্টার এই সমস্ত বিবেচনা করে একটা গাইড লাইন তৈরী করা উচিত।তাছাড়া পড়াশুনায় ভালো ছেলেরা গিফট পেতেই পারে, কিন্তু সান্টাকে খুঁজে বের করতে হবে কার মনের জোর কতটা বেশি।ক্যালভিনের আরো ডিমান্ড,ফ্রিতে গিফট দেয় বলে সান্টা যা খুশি তাই গিফট দিতে পারে না।সে ভিন গ্রহের প্রানীর সাথে লড়াই করার জন্য মিসাইল আর লঞ্চার চেয়েছিলো কিন্তু তার বদলে সান্টা তাকে দিলো মোজা আর জামা!এটা ইয়ার্কি নাকি? ছোট বলে যা খুশি তাই করবে...? ক্যালভিন জানে সান্টাকে নানা জায়গায় ঘুরতে হয়। কোথাও বা হাড় হিম করা ঠান্ডা...কোথাও বা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু...কোথাও বরফ তো কোথাও সমুদ্র। কিন্তু তাই বলে উপহারে এত গরমিল ! ভুল হবার তো একটা লিমিট আছে! সান্টা বরফের দেশে থাকে বলে একটু আদটু ভুল হতেই পারে কিন্তু তাই বলে মিসাইল আর লঞ্চারের বদলে বদলে জামা আর মোজা!
এদিকে ক্রিসমাস প্রায় এসেই গেলো...ক্যালভিন সান্টা ক্লজকে চিঠিও লিখে ফেলেছে।কিন্তু ক্যালভিনের দস্যিপনা একটুও কমেনি। তাই হবস নিজেই একটা চিঠি লিখে ফেললো ক্যালভিনকে।হবস এমন ভাব দেখালো যেন চিঠিটা এসেছে নর্থ পোল থেকে। চিঠিতে লেখা আছে ক্যালভিনের এখোনো সময় আছে ভালো ছেলে হয়ে থাকার যদি সে না থাকে তাহলে এবারে গিফট সে নাও পেতে পারে। ক্যালভিন কি এতোই বোকা যে হবসের হাতের লেখা চিনতে পারবে না, সাতসকালে তাই ক্যালভিন হবসের পিঠে দুঘা বসিয়ে দেয়।কিন্তু উপহার তার চাই...চাই। তাই সে চিঠি লিখতে বসে...
প্রিয় সান্টা ক্লজ,
আমি মেলভিল (Melville), ক্যালভিনের ছোট ভাই।এই বাড়িতে আসলে দুজন বাচ্চা আছে।...চিঠি লিখতে লিখতে সে হবসকে বলে এই চালাকিটা খাটে কিনা দেখা যাক।এই বছর দুটো চিঠি...।
তুমিও কি এবার সান্টাকে চিঠি লিখে ছিলে? কি গিফট পেলে জানাতে ভুলো না। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকবো। ভালো থেকো, আর নতুন বছর অনেক অনেক আনন্দ আর খুশিতে ভরে উঠুক।
এদিকে ক্রিসমাস প্রায় এসেই গেলো...ক্যালভিন সান্টা ক্লজকে চিঠিও লিখে ফেলেছে।কিন্তু ক্যালভিনের দস্যিপনা একটুও কমেনি। তাই হবস নিজেই একটা চিঠি লিখে ফেললো ক্যালভিনকে।হবস এমন ভাব দেখালো যেন চিঠিটা এসেছে নর্থ পোল থেকে। চিঠিতে লেখা আছে ক্যালভিনের এখোনো সময় আছে ভালো ছেলে হয়ে থাকার যদি সে না থাকে তাহলে এবারে গিফট সে নাও পেতে পারে। ক্যালভিন কি এতোই বোকা যে হবসের হাতের লেখা চিনতে পারবে না, সাতসকালে তাই ক্যালভিন হবসের পিঠে দুঘা বসিয়ে দেয়।কিন্তু উপহার তার চাই...চাই। তাই সে চিঠি লিখতে বসে...
প্রিয় সান্টা ক্লজ,
আমি মেলভিল (Melville), ক্যালভিনের ছোট ভাই।এই বাড়িতে আসলে দুজন বাচ্চা আছে।...চিঠি লিখতে লিখতে সে হবসকে বলে এই চালাকিটা খাটে কিনা দেখা যাক।এই বছর দুটো চিঠি...।
তুমিও কি এবার সান্টাকে চিঠি লিখে ছিলে? কি গিফট পেলে জানাতে ভুলো না। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকবো। ভালো থেকো, আর নতুন বছর অনেক অনেক আনন্দ আর খুশিতে ভরে উঠুক।
পূর্বাশা
নিউ আলিপুর, কলকাতা
নিউ আলিপুর, কলকাতা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
বাষ্প নিয়ে আরো কথা
কোন সময় এমন হয়েছে কিনা মনে করে দেখত।
ধর তুমি কোন ট্যাক্সি বা গাড়ী করে বেড়াতে যাচ্ছ আনন্দ করতে, আর ঠিক সেই সময় নামল বৃষ্টি। ব্যস। জানালা দিয়ে জলের ছাঁট আসতে শুরু করল। জানালা বন্ধ করে গরমে ভাপা ছাড়া আর গতি কি ? সুতরাং সব জানালা বন্ধ হল।
ড্রাইভার কাকুর সামনের কাচ যেটা দিয়ে তিনি রাস্তা দেখেন সেটা ঝাপসা হয়ে গেল ।আর তাতে তিনি কাচ মোছার যন্ত্র (ওয়াইপার) চালু করে দিলেন। এতে একটা কাজ হল। কাচটা একটু পরিষ্কার হল। পুরোটা হল না। ক্রমশঃ কাচটার ঘোলাটে ভাবটা আরও বাড়তে থাকল।
গাড়ির কাঁচ পরিষ্কার করছে ওয়াইপার
এইবার কাকু একটা কাজ করলেন, তিনি হাত দিয়ে কাচের ভেতরের দিকটা মুছে দিলেন। ওমনি সেটা সাফ হয়ে গেল। খেয়াল করে দেখ, তোমার পাশের জানালার কাচটাও কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে। আঙুল দিয়ে দাগ কাট।আর আশ্চ্যর্যের ব্যাপার হল কাচটা তো পরিষ্কার হলই আর তোমার আঙুলটাও ভিজে গেল।
ব্যাপারটা কি হল ?সব কাচ বন্ধ, অথচ ভেতরে জল ?এল কোথা থেকে ? অবাক কান্ড ! কান্ডটা জানতে চাও ?
তাহলে ত "ইচ্ছামতীর" পুরোন সংখ্যাগুলো একটু ঘাঁটতে হয়! বাতাসে যে জলীয় বাষ্প আছে তা প্রমানের জন্য অন্ততঃ দুটো বিষয়ের কথা বলেছি সেই সব সংখ্যায়। মনে করিয়ে দিই একটু ?
একটা শুকনো কাচের গ্লাসে বরফের টুকরো মেশানো জল রাখলে গ্লাসের বাইরের দিকে বিন্দু বিন্দু জল জমে যাওয়া প্রমান করে যে বাতাসে জলীয় বাষ্প আছে -- এ হল প্রথমটা, আর দ্বিতীয়টা হল সেই যে বরফের টুকরো থেকে ধোঁয়া ওঠা ! মনে পড়ে ?
তাহলে এবার আমাদের কথায় অর্থাৎ গাড়ীর ভেতরে জল এল কোত্থেকে সেটা জানার চেস্টা করা যাক। বাইরে ত বৃষ্টি হচ্ছিল,আর এতে কাচ ভিজে ঠান্ডা হয়ে পড়ছিল। অথচ ভেতরের বাতাসটা গরম। গরম বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প ঠান্ডা কাচের ছোঁয়ায় ঠান্ডা হয়ে জলবিন্দুতে পরিণত হয়ে কাচের গায়ে জমে যাচ্ছিল। এ ভাবে অনেক জমা জলবিন্দু কাচকে ঘোলাটে করে দেয়। তাইত ড্রাইভার কাকুকে হাত দিয়ে কাচ মুছতে হয় আর কাচে ঘষলে তোমার হাতের আঙুল ভিজে যায়।
কাঁচের গায়ে জমে থাকা জলবিন্দুর ওপর দিয়ে আঙ্গুল চালিয়ে এঁকে ফেলা যায় মজার ছবি
এতগুলো কথা বললাম কেন সেটা বলতে পারবে ? আসলে আমাদের চার পাশে এমন সুন্দর সুন্দর ব্যাপার ঘটে, যা আমরা দেখতে পেলেও কারন জানি না। যেমন, মেঘ ও বৃষ্টি, শিশির, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত --এ রকম সব ঘটনা। চমতকার ব্যাপার না এসব ?
তুমি যাতে বুঝতে পার তেমন সহজ করে বলার চেষ্টা করছি। প্রথমে বলি শিশিরের কথা। বর্ষার পরেই আসে শরত,কাজেই সে সময় বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। শরতকালে রাতের দিকে মাটি যখন ঠান্ডা হয়ে যায় তখন তার কাছাকাছি থাকা বাতাসও ঠান্ডা হয়ে পড়ে। ফলে সেখানে থাকা বাষ্পও জমে জল হয়ে যায়। সেই জল ঘাসের ডগায় বা ছোট ছোট গাছের পাতায় বিন্দু বিন্দু জলের আকারে জমতে থাকে। সেটাই শিশির। শীত কালে গ্রামাঞ্চলে ঘাসে এত শিশির পড়ে যে তার ওপর দিয়ে হাটতে গেলে পা ভিজে সপসপে হয়ে যায়। হেঁটে দেখো কখনো।
ঘাস এবং পোকাটার গায়ে শিশিরবিন্দু
জলীয় বাষ্প ছাড়াও অনেক রকম ধুলিকণা,ধোঁয়া- এসব ভেসে বেড়ায় বাতাসে। এরা ঠান্ডা হয়ে গেলে তার ওপর বাষ্প জমে জলকণার আকারে ভেসে থাকে। অনেক অনেক এরকম জলকণা জমা হয়ে কুয়াশা তৈরী করে। দুপুরে কিন্তু কুয়াশা কেটে যায়। কেন বলত ? দুপুরে রোদ উঠে গরম পড়লে জল আবার বাষ্প হয়ে যায় বলে।
কুয়াশায় আবছা হয়ে আছে বহুতলের মাথা
কুয়াশায় আবছা হয়ে আছে বহুতলের মাথা
আবার কোন কারনে জলীয় বাষ্প হালকা হয়ে অনেক ওপরে উঠে গেলে সেখানে গিয়ে ঠান্ডা হয়ে ঠিক কুয়াশার মতোই জলকণায় পরিণত হয়ে ভেসে বেড়ায়। এমন একত্রে ভেসে বেড়ানো জলকণাই হল গিয়ে মেঘ। আর মেঘের মধ্যে থাকা জলকণাগুলো জুড়ে জুড়ে এক একটা বড় বড় জলবিন্দু তৈরী হয়। তখন সেগুলো যে ভারি হয়ে যায় বুঝতেই পারছ। এরাই বৃষ্টি হয়ে নীচে নেমে আসে।
আকাশ জুড়ে মেঘ -একটূ পরেই বৃষ্টি নামবে
আকাশ জুড়ে মেঘ -একটূ পরেই বৃষ্টি নামবে
তুষার তৈরী হতে গেলে ধুলিকণা বা ধোঁয়ার কোন দরকার হয় না। খুব ঠান্ডা পড়লে জলীয় বাষ্প জমে গিয়ে বরফ হয়ে যায় আর বাতাসে ভেসে বেড়ায়। পরে বৃষ্টির
মত ঝির ঝির করে পড়তে থাকে। এ হল তুষার পাত।
তুষারপাতে চারিদিক সাদা হয়ে গেছে- চলছে তুষার নিয়ে খেলা
মত ঝির ঝির করে পড়তে থাকে। এ হল তুষার পাত।
তুষারপাতে চারিদিক সাদা হয়ে গেছে- চলছে তুষার নিয়ে খেলা
আর কখনো কখনো বৃষ্টিকে, পড়ার সময় মাটি থেকে অনেক ওপরে কোন খুব ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। তখন বৃষ্টির ফোঁটাগুলো জমে বরফ হয়ে
যায়। সেই সব ছোটবড় বরফের টুকরোগুলো বৃষ্টির মত পড়তে থাকে। এর নামই শিলাবৃষ্টি। মাথায় পড়লে আর রক্ষে নেই।
নানান আয়তনের তুষার জমা শিলা - হাতে নিলে বরফের মত ঠান্ডা
যায়। সেই সব ছোটবড় বরফের টুকরোগুলো বৃষ্টির মত পড়তে থাকে। এর নামই শিলাবৃষ্টি। মাথায় পড়লে আর রক্ষে নেই।
নানান আয়তনের তুষার জমা শিলা - হাতে নিলে বরফের মত ঠান্ডা
ধোঁয়াশার নাম শুনেছ কখনো ? ধোঁয়া আর কুয়াশা একসাথে যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায় তখন এটা হয়। কলকাতার মত বড় বড় শহরে কুয়াশা আর গাড়ীর ধোঁয়া মিশে এরকম ধোঁয়াশা হয়। এমন হলে চারিদিক অন্ধকার অন্ধকার লাগে, সূর্যের আলো এসে পৌঁছায় না। লন্ডন শহরে একবার এরকম হয়ে বেশ কয়েক দিনের জন্য শহরটা অচল হয়ে পড়েছিল।
মহানগরের মাথায় ওপর ভেসে আছে ধূসর কালচে ধোঁয়াশা
আমি কিন্তু এইসব প্রাকিতিক ঘটনাগুলো তোমার যাতে বুঝতে সুবিধা হয় তেমন করে বললাম, বড় হয়ে এ বিষয়ে আরো বিশদে জানতে পারবে।
আজ এখানেই শেষ করি,কি বল ?
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সন্তোষ কুমার রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
স্টুডিও ব্যবস্থা
ধীরে ধীরে ছবির বাজার, ছবি দেখানোর মানচিত্র যতই ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, ততই ছবি বানানোর প্রক্রিয়াটি অগোছালো ও ব্যক্তিনির্ভর হওয়ার বদলে পৃথিবীর সব দেশেই কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করলো- এরা অনেকটা কারখানার মত, যেখানে সমবেত উদ্যোগে কোন জিনিষ তৈরি হয়। সিনেমার জগতে এদেরই স্টুডিও বলে। আর এই স্টুডিও অনেকটাই মোটরগাড়ীর কারখানার নিয়ম অনুসরন করে স্থাপনা করা হল। সুতরাং হলিউডের স্টুডিও ব্যবস্থার মধ্যেও খানিকটা অ্যাসেম্বলি লাইন, অর্থাৎ টুকরো টুকরো জিনিষ বানিয়ে জুড়ে দেওয়ার রীতি শুরু হল।
স্টুডিও নামটির মধ্যেই কেমন একটা মিশ্র পদ্ধতির ইঙ্গিত আছে। তার খানিকটা শিল্পকলার, খানিকটা শিল্পোদ্যোগের। চিত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে ছবি আঁকতেন; কিন্তু সিনেমার স্টুডিও অনেকটা সাবান, কলম, জুতো তৈরি করার মত ব্র্যান্ডনেম তৈরি করতে শুরু করে। যেমন লোকে বলতো অমুক স্টুডিওর ছবি...সত্যজিত রায় নিজেও বলেছেন যে তাঁর কৈশোরে তিনি কলম্বিয়ার ছবির থেকে প্যারামাউন্ট এর ছবি কিভাবে আলাদা হয়, সেটা জানতে খুব কৌতুহলী ছিলেন।
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এইরকম স্টুডিও ব্যবস্থা ছিল- যেমন ইতালিতে চিনেচিত্তা, জার্মানীতে উফা, বা আমাদের কলকাতায় নিউ থিয়েটার্স।
স্টুডিও নামটির মধ্যেই কেমন একটা মিশ্র পদ্ধতির ইঙ্গিত আছে। তার খানিকটা শিল্পকলার, খানিকটা শিল্পোদ্যোগের। চিত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে ছবি আঁকতেন; কিন্তু সিনেমার স্টুডিও অনেকটা সাবান, কলম, জুতো তৈরি করার মত ব্র্যান্ডনেম তৈরি করতে শুরু করে। যেমন লোকে বলতো অমুক স্টুডিওর ছবি...সত্যজিত রায় নিজেও বলেছেন যে তাঁর কৈশোরে তিনি কলম্বিয়ার ছবির থেকে প্যারামাউন্ট এর ছবি কিভাবে আলাদা হয়, সেটা জানতে খুব কৌতুহলী ছিলেন।
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই এইরকম স্টুডিও ব্যবস্থা ছিল- যেমন ইতালিতে চিনেচিত্তা, জার্মানীতে উফা, বা আমাদের কলকাতায় নিউ থিয়েটার্স।
জার্মানির উফার লোগো, ইতালির চিনেচিত্তার প্রবেশপথ
এই স্টুডিওগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল মেট্রো- গোল্ডউইন-মেয়ার, যাকে এম-জি-এম নামে আমরা সবাই চিনি। এদের এমনকি কলকাতা শহরেও নিজস্ব ছবিঘর ছিল -মেট্রো নামে। এখন তার হাতবদল হয়েছে কিন্তু এসপ্ল্যানেডের মেট্রোকে আমরা সবাই চিনি, তাই না? এরা এতদূর দক্ষ ছিল যে তিরিশ দশকের মাঝামাঝি একটা পূর্ন দৈর্ঘ্যের ছবি বানাতে এদের লাগত মাত্র এক সপ্তাহ। সে যুগের হলিউডের বড় বড় পরিচালক ও অভিনেতা -অভিনেত্রীরা সবাই ছিল এদের কাছে দায়বদ্ধ। এরাই বিখ্যাত 'হলিউড রীতি'র ধারক ও বাহক ছিলেন। যেমন High Key Lighting - যাতে দৃশ্যগুলি উজ্জ্বল হত যা দেখতে দর্শকদের ভালো লাগতো।
যদি এমজিএম হয় মার্কিন স্টুডিও ব্যবস্থার সবচেয়ে মার্কিনি ছাপ, তবে প্যারামাউন্ট স্টুডিও উল্টোদিক থেকে সবচেয়ে ইউরোপীয়। এখানে যাঁরা কাজ করতেন তাঁরা অনেকেই জার্মানি থেকে এসেছিলেন। ফলে তাঁদের ছবি অনেক অন্যরকম হত- তাতে অনেক সময়ে থাকতো অন্ধকার আর রহস্যের আভাস।
প্যারামাউন্ট বলতেই আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে সিসিল বি ডিমিল এর জাঁকজমকপূর্ণ ছবিগুলি। তার সাথেই মনে পড়ে লুবিত্জ এর ছবিগুলির কথা।
এমজিএম এর ছবিগুলি যদি মধ্যবিত্ত সমাজের গল্প শোনাতো, প্যারামাউন্ট যদি হয় একটু অন্য রকম ভাবনা চিন্তা করা দর্শকদের জন্য, তাহলে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ছিল মোটামুটিভাবে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য। সেইজন্য এদের ছবিগুলিতে এইসব সাধারন মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় গানবাজনা এবং মেলোড্রামা থাকতো।
আমরা কলম্বিয়া এবং টোয়েণ্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স এর নামও করতে পারি; দ্বিতীয় স্টুডিওর সবথেকে নামকরা পরিচালক ছিলেন জন ফোর্ড। তিনি তৈরি করতেন ওয়েস্টার্ন ছবি।
এই স্টুডিও সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে সবথেকে ছোট ছিল আর কে ও নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
আমেরিকার বিভিন্ন বড় -ছোট স্টুডিও গুলির লোগো
এইসব খুব বড় বড় স্টুডিওগুলির পাশাপাশি কাজ করতো অনেক ছোটখাটো স্টুডিও। যেমন ছিল ইউনাইটেড আর্টিস্টস্। এরাই প্রথম ড্রাকুলা, মাম্মি সিরিজ ইত্যাদি গা-ছমছমে রোমহর্ষক ছবিগুলি তৈরি করে। এছাড়া এই ইউনাইটেড আর্টিস্টস্ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকেই ছবি তৈরি এবং প্রচার করেছিলেন চ্যাপলিন, গ্রিফিথ, মেরি পিকফোর্ড এবং ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস্ এর মত পরিচালক ও অভিনেতারা।
ওপরের সারি -আলফ্রেড হিচকক, জন ফোর্ড; নীচের সারি- মেরি পিকফোর্ড, সিসিল বি ডিমিল
নিউ থিয়েটার্স ও প্রভাত স্টুডিওর লোগো
নাম জানা তো অনেক হল।এবার বরং জানা যাক সিনেমার সংসারে এইসব স্টুডিওদের অবদান কি ছিল। প্রথম এবং প্রধান অবদান ছিল শৃঙ্খলাপরায়নতা। পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীরা, সবাই নিয়ম মেনে নিজের নিজের কাজ করতো। একটা নিয়ম মেনে পরিচালনা পদ্ধতি শুরু করার জন্যই ধীরে ধীরে হাওয়ার্ড হকস্, জন ফোর্ড , আলফ্রেড হিচকক এর মত পরিচালকরা তৈরি হন।
আমাদের দেশেও, স্টুডিও না থাকলে , সত্যজিত রায়ের আগের যুগের যারা বড় পরিচালক, যেমন দেবকীকুমার বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, বা বিমল রায় তৈরি হতেন না।
বাঁদিকে- দেবকীকুমার বসু; ডানদিকে প্রমথেশ বড়ুয়া ও বিমল রায়
নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওই প্রথম বাংলা সাহিত্যের গল্পগুলিকে নিয়ে ছবি তৈরি করে, এবং সুন্দরভাবে এই গল্পগুলিকে বলার এক ধরন তৈরি করে। সেই যুগে, সিনেমা বানানোর জন্য নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার আজকের দিনের মত এত বেশি ছিল না। কিন্তু স্টুডিও ব্যবস্থার মাধ্যমে সিনেমা যেভাবে গল্প বলতে শিখলো, সেই গল্প বলা দেখে এবং শুনে সিনেমাকে আরো বেশি ভালবাসলো সারা পৃথিবীর মানুষ।
সময়ের সাথে এই স্টুডিও ব্যবস্থা একদিন ভেঙ্গে গেল, কিন্তু সেই গল্প হবে পরের সঙ্খ্যায়।
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক, চলচ্চিত্রবিদ্যা বিভাগ,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি
উইকিপিডিয়া
মুভিওয়ালা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দুপায়ের ঘোড়া
তুমি কি কখোনো দুপায়ের ঘোড়া দেখেছো?
আমি অন্তত দেখিনি।
চোখের সামনে একটা দুপায়ের ঘোড়া টাঙ্গা টেনে নিয়ে যাচ্ছে এমন ছবি আমাদের মনে হয় কারো সংগ্রহে নেই।পাড়া পড়শিদের সাথে কিম্বা বন্ধু মহলে তুমি যদি এইসব নিয়ে কথা বলো তাহলে বন্ধুরা ভাববে তুমি টাইমপাস করছো...ইয়ার্কির একটা জায়গা থাকে। কিন্তু আমি যদি তোমাকে নীচের ছবিটার দিকে তাকাতে বলি...একটু ভালো করে দেখোতো ছবিটা...
একটা ছেলের মুখে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে লাগাম। তার মুখ যন্ত্রনায়...কষ্টে...লাল হয়ে উঠেছে। ঠিক তার পরের ছবিটা দেখো...মন দিয়ে দেখো কিন্তু...
একপাল ঘোড়ার মধ্যে সে পিঠে একজন সওয়ারী নিয়ে দৌড়ে নেমেছে। একটা মানুষ আস্তে আস্তে ঘোড়ায় পরিণত হচ্ছে। জন্তুতে রূপান্তরিত হচ্ছে মানুষ।
যে ছবি গুলো দেখলাম সেগুলো একটা ফিল্মের। তার নাম 'Two-Legged Horse' বা 'দুপায়ের ঘোড়া' ।২০০৮ সালে এই ছবিটি তৈরি করেছেন ইরানের চিত্রপরিচালক সামীরা মাখমালবাফ। সামীরার নাম শুনেছ কি? সামীরা হলেন পৃথিবীর সবথেকে কমবয়সী চিত্রপরিচালকদের একজন।১৯৮০ সালে তাঁর জন্ম। তিনি খুব ছোটবেলা থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। আজ পর্যন্ত তিনি মোটে পাঁচটি ছবি ও তথচিত্র বানিয়েছেন - সেগুলি সবগুলিই কিন্তু নানাকরম আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছে।
আমি অন্তত দেখিনি।
চোখের সামনে একটা দুপায়ের ঘোড়া টাঙ্গা টেনে নিয়ে যাচ্ছে এমন ছবি আমাদের মনে হয় কারো সংগ্রহে নেই।পাড়া পড়শিদের সাথে কিম্বা বন্ধু মহলে তুমি যদি এইসব নিয়ে কথা বলো তাহলে বন্ধুরা ভাববে তুমি টাইমপাস করছো...ইয়ার্কির একটা জায়গা থাকে। কিন্তু আমি যদি তোমাকে নীচের ছবিটার দিকে তাকাতে বলি...একটু ভালো করে দেখোতো ছবিটা...
একটা ছেলের মুখে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে লাগাম। তার মুখ যন্ত্রনায়...কষ্টে...লাল হয়ে উঠেছে। ঠিক তার পরের ছবিটা দেখো...মন দিয়ে দেখো কিন্তু...
একপাল ঘোড়ার মধ্যে সে পিঠে একজন সওয়ারী নিয়ে দৌড়ে নেমেছে। একটা মানুষ আস্তে আস্তে ঘোড়ায় পরিণত হচ্ছে। জন্তুতে রূপান্তরিত হচ্ছে মানুষ।
যে ছবি গুলো দেখলাম সেগুলো একটা ফিল্মের। তার নাম 'Two-Legged Horse' বা 'দুপায়ের ঘোড়া' ।২০০৮ সালে এই ছবিটি তৈরি করেছেন ইরানের চিত্রপরিচালক সামীরা মাখমালবাফ। সামীরার নাম শুনেছ কি? সামীরা হলেন পৃথিবীর সবথেকে কমবয়সী চিত্রপরিচালকদের একজন।১৯৮০ সালে তাঁর জন্ম। তিনি খুব ছোটবেলা থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। আজ পর্যন্ত তিনি মোটে পাঁচটি ছবি ও তথচিত্র বানিয়েছেন - সেগুলি সবগুলিই কিন্তু নানাকরম আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছে।
একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সামীরা তার বাবার কাছ থেকে একটা চিত্রনাট্য পান। বাবা বিখ্যাত পরিচালক মহসিন মাখমালবাফ সারা রাত ধরে এই চিত্রনাট্য লিখেছেন। সামীরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে একবারে পড়ে ফেলেন লেখাটা। কিন্তু এটা লিখেছেন তাঁর বাবা? এত কষ্ট...এত যন্ত্রণা...এত দুঃখ এই ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোর।
"এটা কেমন গল্প আর চিত্রনাট্য বাবা?"সামীরা প্রশ্ন করেন। একটা ছেলে যে মানসিক এবং শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধি সে আস্তে আস্তে ঘোড়ায় পরিণত হচ্ছে তার চেয়ে বয়সে একটু কম আরো একটা প্রতিবন্ধি ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে গিয়ে। তার তো সারাদিনের রোজগার মোটে এক ডলার। তার জন্য এত কষ্ট?
বাবা তাঁর সেই খুব অল্প বয়সে পরিচালক হওয়া মেয়েকে বলেছিলেন "চারপাশটা দেখো...তোমার কি মনে হচ্ছে আমরা সবাই ঠিক আছি? যদি মনে হয় ওই ছেলেটা ভুল...ওর কষ্টটাও তাহলে এই ছবিটা কোরো না।" সামীরা বেশ কিছুদিন ভেবে ছিলেন ছবিটা নিয়ে তারপর একদিন অভিনেতা অভিনেত্রী ঠিক করা শ্যুটিং এর আরো অনুষঙ্গ কাজে
মন দিলেন।নিরন্তর পরিশ্রমের পর আমরা তাঁর কাছ থেকে উপহার পেলাম 'টু লেগড হর্স'।
মন দিলেন।নিরন্তর পরিশ্রমের পর আমরা তাঁর কাছ থেকে উপহার পেলাম 'টু লেগড হর্স'।
আফগানিস্তানের এক গন্ড গ্রাম। যেখানে সভ্যতার আঁচটুকু লাগেনি সেইরকম গ্রামে এই গল্পের সূত্রপাত। যুদ্ধ...দাঙ্গা...অভ্যন্তরীণ কলহে দীর্ণ একটা দেশের এক অসহায় অঞ্চলের ছোট্ট ছেলে মেয়েদের কথা আমাদের সামনে বলতে বসলেন সামীরা।কী দেখলো সামীরার ক্যামেরা? দেখলো পরিতক্ত্য বাঙ্কারের মধ্যে থাকে অগণিত বাচ্চা। যাদের মা বাবা কেউ নেই...যারা সবাই বিগত যুদ্ধে মারা গেছেন।যে সব বাচ্চারা রোজ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। তাদের সামনে এক অবস্থাপন্ন বৃদ্ধ আফগান এসে একটা প্রস্তাব রাখেন। একটা সুস্থ সবল ছেলে চাই। কাজ আছে। কাজ করতে পারলে দৈনিক এক ডলার। সবাই পরীক্ষার জন্য হাজির হয়। একটা ছেলেকে তার মধ্যে থেকে পছন্দ করেন বৃদ্ধ। যে তাঁর ছেলেকে পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যাবে স্কুলে...বাজারে...খেলার মাঠে। সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে সে।কিন্তু যে ছেলেটাকে বাছা হয় সেও তো শারিরীক নানা অক্ষমতার শিকার। যে পিঠে নিলো আর যে পিঠে উঠলো তারা যেন একই মেরুর বাসিন্দা হয়ে দুজন কত দূরের। একজনের কেউ নেই আর এক জনের বাবা আছে...বোন আছে...অর্থ আছে কিন্তু তার পা দুটো নেই...মা নেই...এইসব হারিয়েছে সে যুদ্ধে।
তারা দুজনে কখোনো বন্ধু আবার কখোনো মনিব-ভৃত্য।
কিন্তু এই সম্পর্ক খুব একটা বেশি দিন মধুর থাকে না। মনিবের নানা রকম খেয়ালী উদ্ভট খেলায় শরিক হতে হয় দুপায়ের ঘোড়াটকে। মনিব শুধু নয় তার বন্ধুদেরও চড়াতে হয় পিঠে।সবাই তো সত্যিকারের ঘোড়ার পিঠে চড়ে...কিন্তু মানুষ ঘোড়া। চড়েছে কেউ? সে এবার ভাড়া খাটায় তার ঘোড়াকে। আর সেই ছেলেটা যার ছবি তুমি দেখেছো প্রথমে...লাগাম মুখে দিয়ে সে আস্তে আস্তে যন্ত্রণায়...ঘেন্নায়...কষ্টে... কুঁকড়ে যেতে থাকে। তার এই কষ্টের নীরব দর্শক থাকে এক ছোট্ট মেয়ে। যে গ্রামের রাস্তায় ভিক্ষে করে। যার কথা আমরা একটুও জানতে পারি না, যে কোনো কথা বলে না। শুধু হাত বাড়িয়ে থাকে ভিক্ষার। আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা কান্না।
যারা ইস্কুলে যায় আমরা তাদের কথা জানতে পারি। যাদের ছোট্টবেলাটা ধ্বংস করে দিয়েছে বড় বড় মানুষদের যুদ্ধ, যাদের বাবা-মা হারিয়ে গেছে, বাড়ি ঘর ভেঙ্গে গেছে, যারা স্কুলে যায় না, খাওয়ার জন্য যাদের ছোট্টবেলা থেকে কাজ করতে হয়, তাদের কথা আমরা কজন জানতে পারি বা মনে রাখি?
শেষ পর্যন্ত ছেলেটার চাকরী থাকে না। কোনো একদিন প্রবল এক শীতের সকালে পরিতক্ত্য বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে সে দেখে আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা।
তারা যাচ্ছে শীতের দেশ ছেড়ে উষ্ণতার দেশে।
কিন্তু এই ছেলেটা কোথায় যাবে? কোন দেশে? তার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই !
কল্লোল লাহিড়ী
উত্তরপাড়া, হুগলী
ছবিঃ
মাখমালবাফ
মাখমালবাফ
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত