তুমি কি কখোনো দুপায়ের ঘোড়া দেখেছো?
আমি অন্তত দেখিনি।
চোখের সামনে একটা দুপায়ের ঘোড়া টাঙ্গা টেনে নিয়ে যাচ্ছে এমন ছবি আমাদের মনে হয় কারো সংগ্রহে নেই।পাড়া পড়শিদের সাথে কিম্বা বন্ধু মহলে তুমি যদি এইসব নিয়ে কথা বলো তাহলে বন্ধুরা ভাববে তুমি টাইমপাস করছো...ইয়ার্কির একটা জায়গা থাকে। কিন্তু আমি যদি তোমাকে নীচের ছবিটার দিকে তাকাতে বলি...একটু ভালো করে দেখোতো ছবিটা...
একটা ছেলের মুখে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে লাগাম। তার মুখ যন্ত্রনায়...কষ্টে...লাল হয়ে উঠেছে। ঠিক তার পরের ছবিটা দেখো...মন দিয়ে দেখো কিন্তু...
একপাল ঘোড়ার মধ্যে সে পিঠে একজন সওয়ারী নিয়ে দৌড়ে নেমেছে। একটা মানুষ আস্তে আস্তে ঘোড়ায় পরিণত হচ্ছে। জন্তুতে রূপান্তরিত হচ্ছে মানুষ।
যে ছবি গুলো দেখলাম সেগুলো একটা ফিল্মের। তার নাম 'Two-Legged Horse' বা 'দুপায়ের ঘোড়া' ।২০০৮ সালে এই ছবিটি তৈরি করেছেন ইরানের চিত্রপরিচালক সামীরা মাখমালবাফ। সামীরার নাম শুনেছ কি? সামীরা হলেন পৃথিবীর সবথেকে কমবয়সী চিত্রপরিচালকদের একজন।১৯৮০ সালে তাঁর জন্ম। তিনি খুব ছোটবেলা থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। আজ পর্যন্ত তিনি মোটে পাঁচটি ছবি ও তথচিত্র বানিয়েছেন - সেগুলি সবগুলিই কিন্তু নানাকরম আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছে।
আমি অন্তত দেখিনি।
চোখের সামনে একটা দুপায়ের ঘোড়া টাঙ্গা টেনে নিয়ে যাচ্ছে এমন ছবি আমাদের মনে হয় কারো সংগ্রহে নেই।পাড়া পড়শিদের সাথে কিম্বা বন্ধু মহলে তুমি যদি এইসব নিয়ে কথা বলো তাহলে বন্ধুরা ভাববে তুমি টাইমপাস করছো...ইয়ার্কির একটা জায়গা থাকে। কিন্তু আমি যদি তোমাকে নীচের ছবিটার দিকে তাকাতে বলি...একটু ভালো করে দেখোতো ছবিটা...
একটা ছেলের মুখে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে লাগাম। তার মুখ যন্ত্রনায়...কষ্টে...লাল হয়ে উঠেছে। ঠিক তার পরের ছবিটা দেখো...মন দিয়ে দেখো কিন্তু...
একপাল ঘোড়ার মধ্যে সে পিঠে একজন সওয়ারী নিয়ে দৌড়ে নেমেছে। একটা মানুষ আস্তে আস্তে ঘোড়ায় পরিণত হচ্ছে। জন্তুতে রূপান্তরিত হচ্ছে মানুষ।
যে ছবি গুলো দেখলাম সেগুলো একটা ফিল্মের। তার নাম 'Two-Legged Horse' বা 'দুপায়ের ঘোড়া' ।২০০৮ সালে এই ছবিটি তৈরি করেছেন ইরানের চিত্রপরিচালক সামীরা মাখমালবাফ। সামীরার নাম শুনেছ কি? সামীরা হলেন পৃথিবীর সবথেকে কমবয়সী চিত্রপরিচালকদের একজন।১৯৮০ সালে তাঁর জন্ম। তিনি খুব ছোটবেলা থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। আজ পর্যন্ত তিনি মোটে পাঁচটি ছবি ও তথচিত্র বানিয়েছেন - সেগুলি সবগুলিই কিন্তু নানাকরম আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছে।
একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সামীরা তার বাবার কাছ থেকে একটা চিত্রনাট্য পান। বাবা বিখ্যাত পরিচালক মহসিন মাখমালবাফ সারা রাত ধরে এই চিত্রনাট্য লিখেছেন। সামীরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে একবারে পড়ে ফেলেন লেখাটা। কিন্তু এটা লিখেছেন তাঁর বাবা? এত কষ্ট...এত যন্ত্রণা...এত দুঃখ এই ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোর।
"এটা কেমন গল্প আর চিত্রনাট্য বাবা?"সামীরা প্রশ্ন করেন। একটা ছেলে যে মানসিক এবং শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধি সে আস্তে আস্তে ঘোড়ায় পরিণত হচ্ছে তার চেয়ে বয়সে একটু কম আরো একটা প্রতিবন্ধি ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে গিয়ে। তার তো সারাদিনের রোজগার মোটে এক ডলার। তার জন্য এত কষ্ট?
বাবা তাঁর সেই খুব অল্প বয়সে পরিচালক হওয়া মেয়েকে বলেছিলেন "চারপাশটা দেখো...তোমার কি মনে হচ্ছে আমরা সবাই ঠিক আছি? যদি মনে হয় ওই ছেলেটা ভুল...ওর কষ্টটাও তাহলে এই ছবিটা কোরো না।" সামীরা বেশ কিছুদিন ভেবে ছিলেন ছবিটা নিয়ে তারপর একদিন অভিনেতা অভিনেত্রী ঠিক করা শ্যুটিং এর আরো অনুষঙ্গ কাজে
মন দিলেন।নিরন্তর পরিশ্রমের পর আমরা তাঁর কাছ থেকে উপহার পেলাম 'টু লেগড হর্স'।
মন দিলেন।নিরন্তর পরিশ্রমের পর আমরা তাঁর কাছ থেকে উপহার পেলাম 'টু লেগড হর্স'।
আফগানিস্তানের এক গন্ড গ্রাম। যেখানে সভ্যতার আঁচটুকু লাগেনি সেইরকম গ্রামে এই গল্পের সূত্রপাত। যুদ্ধ...দাঙ্গা...অভ্যন্তরীণ কলহে দীর্ণ একটা দেশের এক অসহায় অঞ্চলের ছোট্ট ছেলে মেয়েদের কথা আমাদের সামনে বলতে বসলেন সামীরা।কী দেখলো সামীরার ক্যামেরা? দেখলো পরিতক্ত্য বাঙ্কারের মধ্যে থাকে অগণিত বাচ্চা। যাদের মা বাবা কেউ নেই...যারা সবাই বিগত যুদ্ধে মারা গেছেন।যে সব বাচ্চারা রোজ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। তাদের সামনে এক অবস্থাপন্ন বৃদ্ধ আফগান এসে একটা প্রস্তাব রাখেন। একটা সুস্থ সবল ছেলে চাই। কাজ আছে। কাজ করতে পারলে দৈনিক এক ডলার। সবাই পরীক্ষার জন্য হাজির হয়। একটা ছেলেকে তার মধ্যে থেকে পছন্দ করেন বৃদ্ধ। যে তাঁর ছেলেকে পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যাবে স্কুলে...বাজারে...খেলার মাঠে। সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে সে।কিন্তু যে ছেলেটাকে বাছা হয় সেও তো শারিরীক নানা অক্ষমতার শিকার। যে পিঠে নিলো আর যে পিঠে উঠলো তারা যেন একই মেরুর বাসিন্দা হয়ে দুজন কত দূরের। একজনের কেউ নেই আর এক জনের বাবা আছে...বোন আছে...অর্থ আছে কিন্তু তার পা দুটো নেই...মা নেই...এইসব হারিয়েছে সে যুদ্ধে।
তারা দুজনে কখোনো বন্ধু আবার কখোনো মনিব-ভৃত্য।
কিন্তু এই সম্পর্ক খুব একটা বেশি দিন মধুর থাকে না। মনিবের নানা রকম খেয়ালী উদ্ভট খেলায় শরিক হতে হয় দুপায়ের ঘোড়াটকে। মনিব শুধু নয় তার বন্ধুদেরও চড়াতে হয় পিঠে।সবাই তো সত্যিকারের ঘোড়ার পিঠে চড়ে...কিন্তু মানুষ ঘোড়া। চড়েছে কেউ? সে এবার ভাড়া খাটায় তার ঘোড়াকে। আর সেই ছেলেটা যার ছবি তুমি দেখেছো প্রথমে...লাগাম মুখে দিয়ে সে আস্তে আস্তে যন্ত্রণায়...ঘেন্নায়...কষ্টে... কুঁকড়ে যেতে থাকে। তার এই কষ্টের নীরব দর্শক থাকে এক ছোট্ট মেয়ে। যে গ্রামের রাস্তায় ভিক্ষে করে। যার কথা আমরা একটুও জানতে পারি না, যে কোনো কথা বলে না। শুধু হাত বাড়িয়ে থাকে ভিক্ষার। আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা কান্না।
যারা ইস্কুলে যায় আমরা তাদের কথা জানতে পারি। যাদের ছোট্টবেলাটা ধ্বংস করে দিয়েছে বড় বড় মানুষদের যুদ্ধ, যাদের বাবা-মা হারিয়ে গেছে, বাড়ি ঘর ভেঙ্গে গেছে, যারা স্কুলে যায় না, খাওয়ার জন্য যাদের ছোট্টবেলা থেকে কাজ করতে হয়, তাদের কথা আমরা কজন জানতে পারি বা মনে রাখি?
শেষ পর্যন্ত ছেলেটার চাকরী থাকে না। কোনো একদিন প্রবল এক শীতের সকালে পরিতক্ত্য বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে সে দেখে আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা।
তারা যাচ্ছে শীতের দেশ ছেড়ে উষ্ণতার দেশে।
কিন্তু এই ছেলেটা কোথায় যাবে? কোন দেশে? তার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই !
কল্লোল লাহিড়ী
উত্তরপাড়া, হুগলী
ছবিঃ
মাখমালবাফ
মাখমালবাফ