একদল স্প্যানিশ ব্যবসায়ী চলেছে লস এঞ্জেলেস এর দিকে। সাল ১৮২৯। তাদের লক্ষ - যত তাড়াতাড়ি লস এঞ্জেলেস এ পৌঁছানো যায়। লস এঞ্জেলেস থেকে তারা এখনও ৩০০ মাইল দূরে। দলের নেতা আন্তোনিও। তার দলটা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটানা চলছে। দলের সবাই পরিশ্রান্ত, জল তেষ্টা আর খিদেতে সবাই ক্লান্ত। এভাবে চলতে থাকলে দলের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বে , এমনকি মারাও যেতে পারে। কিন্তু চারিদিকে যতদূর দেখা যায় ধু-ধু মরুভূমি - শুধু ক্যাক্টাস আর কাঁটা গাছ, রুক্ষ্ম প্রান্তর। দলের বাকিদের সঙ্গে পরামর্শ করে আন্তোনিও ঠিক করলো এখানেই তাঁবু ফেলবে। দলের সাহসীদের দুটো দলে ভাগ করে দিয়ে পাঠালো দুই দিকে জলের সন্ধানে। দলের এক সাহসী সহ-নেতা, রাফায়েল ঠিক করলো সে দক্ষিণ-পশ্চিমে জলের খোঁজে যাবে। সে শুনেছে কাছাকাছি একটা মরুদ্যান আছে- যেখানে জল অফুরন্ত, গাছের পাতা সবুজ- যেখানে কান পাতলে এই রুক্ষ পরিবেশেও শান্তির বাতাস বয়ে যায়।
এর পরের ঘটনায় দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার ব্যবসায়ী ইতিহাস সম্পূর্ণ বদলে গেলো। যে রাস্তা দিয়ে আন্তোনিও যাচ্ছিল, তার নাম স্প্যানিশ ট্রেইল। ব্যবসায়ীরা স্প্যানিশ ট্রেইল ব্যবহার করে নিউ মেক্সিকো থেকে লস এঞ্জেলেস অবধি যেত তাদের পসরা নিয়ে। এই পথ ছিল রুক্ষ্ম মরুভূমি, সুউচ্চ পর্বতমালা এবং গভীর গিরিখাতের মধ্য দিয়ে।রাফায়েল মরুদ্যান খুঁজে পেল, তার ফলে তারপর থেকে সব ব্যবসায়ীরা এই মরুদ্যানের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত শুরু করলো। স্প্যানিশ ট্রেইলের নতুন রাস্তা হল মরুদ্যানের মধ্য দিয়ে। স্প্যানিশরা এই জায়গাটার নাম দিল 'লা ভেগা' ; যা বাংলা করলে দাঁড়ায় 'তৃণভূমি'। সেই জায়গাটাই আজকের লাস ভেগাস। মরুভূমির দেশে মরুদ্যান।
এর পরের ঘটনায় দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার ব্যবসায়ী ইতিহাস সম্পূর্ণ বদলে গেলো। যে রাস্তা দিয়ে আন্তোনিও যাচ্ছিল, তার নাম স্প্যানিশ ট্রেইল। ব্যবসায়ীরা স্প্যানিশ ট্রেইল ব্যবহার করে নিউ মেক্সিকো থেকে লস এঞ্জেলেস অবধি যেত তাদের পসরা নিয়ে। এই পথ ছিল রুক্ষ্ম মরুভূমি, সুউচ্চ পর্বতমালা এবং গভীর গিরিখাতের মধ্য দিয়ে।রাফায়েল মরুদ্যান খুঁজে পেল, তার ফলে তারপর থেকে সব ব্যবসায়ীরা এই মরুদ্যানের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত শুরু করলো। স্প্যানিশ ট্রেইলের নতুন রাস্তা হল মরুদ্যানের মধ্য দিয়ে। স্প্যানিশরা এই জায়গাটার নাম দিল 'লা ভেগা' ; যা বাংলা করলে দাঁড়ায় 'তৃণভূমি'। সেই জায়গাটাই আজকের লাস ভেগাস। মরুভূমির দেশে মরুদ্যান।
স্প্যানিশ ট্রেইল
১৮৩০ সালের সেই মরুদ্যান এর থেকে আজকের লাস ভেগাসের চেহারা সম্পূর্ণ আলাদা। পৌনে দুশো বছরের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। এক সময়ে এই মরুদ্যান দুষ্ট লোকেদের আড্ডা হয়ে গেছিল। হেন অন্যায় কাজ নেই যা হতোনা। এমন অবস্থা ছিল যে পুলিশরাই ভয়ে ভয়ে ঐখান দিয়ে যেত। আজ লাস ভেগাসের চেহারা বদলে গেছে। স্টেফী গ্রাফ আর আন্দ্রে আগাসির বাড়ী এখানে। আরো অনেক নামি-দামী মানুষ এখানে বাড়ী নিয়ে আছেন।
তবে আমরা নামি-দামীদের কথা বলবো না আজ। আমরা যাব সেইসব জায়গায় যেখানে টুরিস্টরা ঘুরতে যায় বেশি। যুক্ত্ররাষ্ট্রের বিখ্যাত স্থপতিরা লাস ভেগাসে ভিড় জমিয়েছেন, তাঁদের তৈরি হোটেল আর হোটেলের কারুকার্য হাঁ করে দেখতে হয়। সমস্ত নামি-দামি শিল্পীরা এখানে আসেন তাঁদের শিল্পকলা প্রদর্শন করতে। দুই থেকে তিন বর্গমাইলের মধ্যে একটার পর আরেকটা হোটেল। চলো , আমরা হোটেল গুলোর সৌন্দর্য দেখি। এই লেখার সংগে ছবিগুলি আমার স্ত্রী পিউ আর আমার তোলা। পিউএর বাবা- মা, পিউ আর আমি একসঙ্গে বেড়াতে গেছিলাম, নেভাডায় অবস্থিত লাস ভেগাসে।
প্রথমেই দেখাই রাতের লাস ভেগাস শহরের ছবি। চারিদিকে শুধু আলোর বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
তবে আমরা নামি-দামীদের কথা বলবো না আজ। আমরা যাব সেইসব জায়গায় যেখানে টুরিস্টরা ঘুরতে যায় বেশি। যুক্ত্ররাষ্ট্রের বিখ্যাত স্থপতিরা লাস ভেগাসে ভিড় জমিয়েছেন, তাঁদের তৈরি হোটেল আর হোটেলের কারুকার্য হাঁ করে দেখতে হয়। সমস্ত নামি-দামি শিল্পীরা এখানে আসেন তাঁদের শিল্পকলা প্রদর্শন করতে। দুই থেকে তিন বর্গমাইলের মধ্যে একটার পর আরেকটা হোটেল। চলো , আমরা হোটেল গুলোর সৌন্দর্য দেখি। এই লেখার সংগে ছবিগুলি আমার স্ত্রী পিউ আর আমার তোলা। পিউএর বাবা- মা, পিউ আর আমি একসঙ্গে বেড়াতে গেছিলাম, নেভাডায় অবস্থিত লাস ভেগাসে।
প্রথমেই দেখাই রাতের লাস ভেগাস শহরের ছবি। চারিদিকে শুধু আলোর বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
আমরা সন্ধেবেলা যখন শহরটায় ঢুকছি, তখন সেই একশো বছর আগের ব্যবসায়ীদের মত আমরাও মরুভূমির মধ্য দিয়ে গেলাম। রাস্তাতে লেখা আছে পরবর্তী আশি মাইল কোন পেট্রল পাম্প নেই, তাই সবাই যেন গাড়ীতে তেল ভরে তবে মরুভূমির মধ্যে গাড়ী চালানো শুরু করে। আমরা ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে চললাম এক ঘন্টারও বেশি। হটাত, একেবারেই হটাত একটা বাঁক নিতেই মনে হল আমাদের চোখ যেন ধাঁধিয়ে গেল। যদিও শহর তখনো দূরে,কিন্তু আলোর ছটা তিরিশ মাইল দূর থেকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
আমরা প্রথমে গেলাম আমাদের হোটেলের দিকে- হোটেল স্ট্রাটোস্ফিয়ার। ওই যে হোটেলের মাথায় লাল অ্যান্টেনার মত উঠে আছে, ওটা আসলে একটা মজার জায়গা। ওটা একটা রাইড। নাগরদোলার মত চাপতে হয়। চাপলে রাইডটা সোজা ওপরে নিয়ে গিয়ে হটাত করে ছেড়ে দেয় ! ভাবো তুমি শূণ্যে ভাসমান অবস্থায় সোজা নিচের দিকে নামছো !! নিজেকে ভারহীন মনে হয় তখন! সারা শরীর সিরসির করে তখন, কিন্তু খুব মজাও লাগে।
ওখাণে আবার প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের আদলে একটা হোটেল আছে। আরো একটা মজার ব্যাপার হল - ছবিটায় দেখবে ফোয়ারার জল কত উঁচু অবধি উঠে গেছে।
এই জায়গা বেলাজিওর সামনে। ওখানে প্রত্যেক পনেরো মিনিট অন্তর ফোয়ারার খেলা হচ্ছে। গানের তালে তালে জল শূণ্যে লাফিয়ে উঠছে। ভিড় দেখে বুঝতে পারবে কত লোক দেখতে আসে। চারিদিকেধু ক্যামেরার শাটার আর ফ্লাশের ঝলকানি। সন্ধ্যেবেলা থেকে শহরটাকে মনে হবে এক মায়াময় জগত, যেখানে আঁধার নামলেই আলো ঝলমল করে ওঠে। ফোয়ারা গানের তালে তালে তিরিশ তলা অবধি নাচছে। চারিদিকে হাসি-গল্পের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তারপর চোখের সামনে একটা খুব উজ্জ্বল আলোর শিখা উঠে গেলো আকাশ অবধি। সেটা উঠলো একটা হোটেলের মাথা থেকে। এই হোটেলটা দেখতে পিরামিডের মত। নাম লাক্সর হোটেল। এই আলোর জোর এত যে আড়াইশো মাইল দূর থেকে দেখতে পাওয়া যায়।
আর লাস ভেগাস লেখা নিয়ন আলোটা সবাইকে আমন্ত্রন জানাচ্ছে লাস ভেগাসে আসার জন্য।
এবারে যাই ফ্রিমন্ট স্ট্রীট বলে একটা জায়গা। ফ্রিমন্ট স্ট্রীট হল পুরোনো দিনের লাস ভেগাস। আজও এখানে নিয়মিত শো হয়, অনেক সময় রাস্তায়ও শো হয়।ফ্রিমন্ট হোটেল, গোল্ডেন নাগেট তখনকার দিনের বিখ্যাত হোটেল।
এতক্ষন ঘুরে ক্ষিদে পেয়ে গেলে থামতে হবে চকোলেটের ঝরনার সামনে। সত্যি চকোলেট ঝরনা হয়ে গড়িয়ে আসছে। দেখলেই জিভে জল এসে যাবে।
পরের দিন আমরা দিনের বেলা বাকি হোটেল গুলো ঘুরে দেখলাম।প্রথমেই চোখে পড়বে হারাস- সোনা রঙের জোকাররা যেখানে বিভিন্ন সাজে আছে।
তারপর সীজার'স প্যালেস, যেখানে সব কিছু জুলিয়াস সীজারের প্রাসাদের অনুকরণে তৈরি।
তারপর ট্রেসার আইল্যান্ড এর সামনে জলদস্যুদের খেলা...
হোটেল দ্য মিরাজ -এর সামনে জলের তলা থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত।
এরপর ইতালির ভেনিস শহরের আদলে তৈরি ভেনেশিয়ান। ভেনিস শহরে যেমন গন্ডোলা করে সবাইকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, এখানেও সেরকম গন্ডোলা ফেরি নিয়ে যায়। গোটা হোটেলটার মধ্যে পরিখা বানানো আছে। ছবি দেখে বলতো, আকাশটা আসল , নাকি নকল?
এই হল আজকের লাস ভেগাস- নিরন্তর আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠার, অবাক হয়ে মানুষের সৃষ্টি দেখার জায়গা- কোনও হোটেলে বড় শিল্পীর কাজের প্রদর্শনী চলছে, কোথাও সাদা বাঘের খেলা চলছে, কোথাও বা গানের তালে তালে ডলফিন জল থেকে লাফিয়ে উঠছে। এইসব দেখে শুনে আমরা ক্লান্ত হয়ে ঘরে এসে শোবার তোড়জোড় শুরু করলাম। পরের দিন বাড়ি ফিরতে হবে যে!
এখন শীত। আমি কাজের সূত্রে আছে নায়গ্রা ফলস্ থেকে মাত্র পঞ্চাশ মাইল দূরে। এখানে বরফ পড়া শুরু হয়ে গেছে। শুনেছি এখানে নাকি শীতে খুব ঠাণ্ডা পড়ে। এত ঠাণ্ডার জায়গায় আমি এই প্রথম থাকছি। তোমাকে পরের বারে জানাবো কেমন শীত কাটালাম নায়গ্রার সাথে।
লেখা ও ছবিঃ
দেবাশীষ পাল
ওকলাহোমা সিটি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
দেবাশীষ পাল
ওকলাহোমা সিটি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র