খেলাঘরখেলাঘর

পথের পাঁচালী

বাঁশঝাড়ের  মধ্যে দিয়ে যে রাস্তাটা সেটা খানিকটা জংলী গাছে ভরা। সেই পথ দিয়ে ছুটে পালাচ্ছে একটা পুঁচকে মেয়ে। তার নাম দুর্গা। পালাচ্ছে কারণ সে লুকিয়ে কতকগুলো ফল পেড়েছে পাশের  বাড়ির বাগান থেকে।

দুর্গা

তার বুড়ি পিসি ফল খেতে ভালোবাসে।লুকিয়ে লুকিয়ে কোচড় থেকে ফলগুলো পিসিকে দেয়। কয়েকটা ডাঁশা পেয়ারা পিসি যত্ন করে তুলে রাখে মাটির মালসায়।

ইন্দির

মা সর্বজয়ার এইসব একদম ভালো লাগে না। তিনি জানেন যে বাগান থেকে দুর্গা ফল নিয়ে আসে একটা সময় তাঁদের ছিলো। কিন্তু এখন নেই। টাকা ধার নেওয়ার জন্য বাগানটা জমা রাখা আছে এক আত্মীয়ের কাছে। দুর্গার ফল পাড়া  নিয়ে তাই নিত্য ঝামেলা। এদিকে মায়ের সাথে ঝগড়া করে বুড়ি পিসি ইন্দিরঠাকরুন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। দুর্গার মন খারাপ হয়। কিন্তু তার মন খুব একটা বেশিদিন খারাপ থাকে না। কারণ তার বাড়িতে...তার মার কোল আলো করে আসে তার পুঁচকে আদরের ভাই অপু।

পরিবার

এরপর থেকেই যেটা হবে আমরা অপু আর দুর্গাকে সবসময় দেখবো কখোনো গ্রামের রাস্তায়...টোলে...যাত্রার আসরে...বাবা হরিহরের সাথে গল্পে...কিম্বা রেলগাড়ি দেখতে কাশফুলের সেই বিশাল জঙ্গলে।


১৯৫৪ সালের ২৬ আগষ্ট পথের পাঁচালী মুক্তি পেয়েছিলো। আর ঠিক তারপর থেকেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস যেন দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেলো। একটা পথের পাঁচালীর আগের যুগ। আর একটা পথের পাঁচালীর পরের যুগ।

পোস্টার
ছবির পোস্টার

এই ছবির পরিচালক কে ছিলেন জানো তো? ঠিক ধরেছো...সত্যজিত রায়। আর লেখক? বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের সম্বন্ধে আমরা ইচ্ছামতীতে আলোচনা করেছি। আগের সংখ্যাগুলো একটু চোখ বোলালেই তা দেখতে পাবে। তুমি প্রশ্ন করতেই পারো...কী ছিলো এই ছবিতে যা মনে হলো একদম আনকোরা নতুন? তুমি যদি  এই ছবিটা খুব মন দিয়ে দেখো তাহলে হয়তো নিজেই বুঝতে পারবে।


তখন সত্যজিত রায় এক বিজ্ঞাপন সংস্থায় চাকরী করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর ছোটদের  সংস্করণ আম আঁটির ভেঁপুর ছবি আঁকার দায়িত্ত্ব তাঁর কাছে এলো।

আম আঁটির ভেঁপু

উপন্যাসটি পড়ে ভালো লাগলো খুব। মনে মনে প্রস্তুতি নিতে থাকলেন এটাই হবে তাঁর প্রথম ছবি। অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ছবির কাজ শেষ হলো। তারপর লোকে যখন দেখলো একটা মেয়ে...তার ভাই...তাদের পিসি...বাবা...মা...একটা গ্রাম...কষ্টের সাথে যুঝে চলা একটা পরিবার...সর্বোপরি নিজের গ্রাম ভিটে মাটি ছেড়ে তাদের চলে যাওয়া। দুর্গার মৃত্যু...অপুর মন কেমন এযেন খুব চেনা কিন্তু ঠিক এমন ভাবে আগে তো দেখিনি সব। মনে মনে ভাবলো সবাই। আর আবার একবার নয় বারবার দেখতে থাকলো পথের পাঁচালী।

পিসি

দুর্গা-অপু

অপু

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে পথের পাঁচালী পুরষ্কার পেল প্রচুর। আর ভারতীয় ছবি জগত সভায় তার আসন করে নিলো চিরদিনের জন্য।
কেউ ভুলতে পারলো না রেল গাড়ি দেখতে না পাওয়া, জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে মরে যাওয়া দুর্গাকে...তার থুড়থুড়ি বুড়ি পিসিকে...নিশ্চিন্দিপুরকে...মা সর্বজয়া...বাবা হরিহর...
আর অবশ্যই অপুকে।

 

চলচ্চিত্রবিদ্যা বিষয়ে অধ্যাপনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, ফিল্ম ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যরচনা, এবং ফাঁকে ফাঁকে পেলে নিজের ব্লগে নানা স্বাদের লেখালিখি - বিবিধ ধারার ব্যস্ততার মধ্যে চাঁদের বুড়ির সাথে ইচ্ছামতীর প্রথম পায়ে হাঁটার দিনগুলিতে হাত ধরেছিলেন কল্লোল । এখনো সময় পেলে মাঝেমধ্যেই ইচ্ছামতীর জন্য কলম ধরেন হুগলী, উত্তরপাড়া নিবাসী কল্লোল।