শুভ নববর্ষ! শুভ নববর্ষ !! শুভ নববর্ষ !!!
শুভ ১৪১৭। ভালো আছ তো? -ইচ্ছামতী আর চাঁদের বুড়ির তরফ থেকে তোমার জন্য প্রথমেই রইল নববর্ষের অনেক ভালবাসা। ভাবছো, পয়লা বৈশাখ তো কবেই চলে গেছে, আর চাঁদের বুড়ির এতদিন পরে মনে পড়লো শুভেচ্ছা জানানোর কথা? আহা...আমি জানি, একটু দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু তাতে কি? বাংলা নতুন বছরে তোমার সঙ্গে এই তো প্রথম দেখা হল, তাই না?
কি, একটু একটু রেগে আছো নাকি ? ভাবছিলে তো, চাঁদের বুড়ি নির্ঘাত ভুলেই গেছে নিশ্চয়...যে ইচ্ছামতীর নতুন সংখ্যা আসার সময় হয়ে গেছে? সেই কত্তদিন আগে শীত সংখ্যা নিয়ে এসেছিল, তারপর শীত গিয়ে বসন্তকাল কখন ফুরুত করে চলে গেল, আর প্রচন্ড রেগেমেগে এসে গেল প্রখর গ্রীষ্মকাল। সূর্য্যিঠাকুর দক্ষিণ দেশ থেকে বেড়িয়ে ফিরে চলে এলেন, উত্তরের আঙ্গিনায় দিন বড় আর রাত ছোট হয়ে গেল, অথচ ইচ্ছামতীর প্রথম পাতায় এখনও শীতের বরফঢাকা ঠাণ্ডা পাহাড়ের ছবি ! আর এদিকে গরমে সবার হাঁসফাঁস অবস্থা - ভোর না হতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে সূর্যের উজ্জ্বল আলোয়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে গরম, কোথাও বা দরদরে ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর, কোথাও বা বইছে গরম 'লু'...শুকিয়ে যাচ্ছে বারান্দার কোনে লতিয়ে ওঠা নরম অপরাজিতার চারাটা, ঝলসে যাচ্ছে ক্রোটোনের রংবেরঙের পাতাগুলি...
সারাদিন চোখ রাঙ্গিয়ে পৃথিবীকে বকুনি-টকুনি দিয়ে সন্ধ্যের দিকে সূয্যিঠাকুর পাটে গেলে তবেই যেন একটু শান্তি নেমে আসে...তখন দক্ষিণের থেকে সমুদ্দুর পাঠিয়ে দেয় ঠাণ্ডা ঠান্ডা দখিনা হাওয়া, জুড়িয়ে দেয় পৃথিবীর বুক। সারাদিনের ক্লান্তিতে শ্রান্ত পৃথিবী তখন গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ে তারাভরা ঘন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে। আকাশকে ডেকে বলে - ও আকাশ, মেঘের দেশে খবর পাঠাও...সূ্য্যিঠাকুরের রাগ কমাতে হবে তো...তাই শুনে আকাশ তড়িঘড়ি খবর পাঠায় মেঘের দেশে...তার খবর পেয়ে মেঘ রাজা এক বিকেলে পাঠিয়ে দেয় ধূসরকৃষ্ণ মেঘসৈন্যদের...তারা দুন্দুভি-দামামা বাজিয়ে ছেয়ে ফেলে আকাশ, ঝলসিয়ে দেয় বিদ্যুতের চকচকে ফলা, ঢেকে দেয় সূর্য্যকে, শুকনো তৃষিত পৃথিবীর বুকে ঢেলে দেয় ঠাণ্ডা জল, তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে ঝড়ের রানী কালবৈশাখি...
দেখ একবার... আমাদের কেন দেরি হল, সেই গল্প করতে গিয়ে করে ফেললাম গ্রীষ্মের সাতকাহন! আসলে সূ্য্যিঠাকুরের রাগের প্রকোপে আমাদেরও একটু হাঁসফাস অবস্থা। আর তাই, ইচ্ছামতীকে সাজিয়ে গুছিয়ে তোমার কাছে নিয়ে আসতে গিয়ে আমি একেবারে ঘেমে-নেয়ে একসা হয়ে গেছি...যাকগে, আর কথা না বাড়িয়ে , আমি বরং তোমাকে জানিয়ে দিই, এই সংখ্যায় তোমার জন্য কি কি থাকছে। এই সংখ্যায় থাকছে চারটে নানা স্বাদের গল্প, অনেকগুলি ছড়া; থাকছে আইভরি কোস্টের বাসিন্দা আলির গল্প; শীত -গ্রীষ্মের নানান তথ্য; গ্রীষ্মের চিঠি; আর থাকছে নববর্ষে তোমার জন্য কিছু মজাদার উপহার।
আচ্ছা বলতো, বৈশাখ মাসটা কি আমাদের কাছে শুধুমাত্র নববর্ষের জন্যই পরিচিত? নাকি বাংলা বছরের প্রথম মাস বলে? না, শুধুমাত্র এই দুটো কারণের জন্য বৈশাখ আমাদের কাছে এত পরিচিত মাস নয়। এই মাস আমাদের কাছে অনেক বেশি পরিচিত একটা বিশেষ দিনের, বিশেষ তারিখে জন্য। এতক্ষণে তুমি নিশ্চয় বুঝে গেছ কোন দিনের কথা বলছি। হ্যাঁ, পঁচিশে বৈশাখ হল সেই বিশেষ দিন। সেইদিন আপামর বাঙালির মনের মানুষ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ইংরাজি ১৮৬১ সালে ৭ই মে ছিল বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ। এই ২০১১ সালে আমরা তাঁর জন্মদিনের ১৫০ বছর পালন করছি।ভাবো তো, একজন মানুষ, কত বিশাল মাপের হলে, কত ভালবাসার জন হলে, তাঁর জন্মদিন একশো বছরেরও বেশি সময়ে ধরে, সারা দেশ জুড়ে পালন করা হয়...। শুধু তাই নয়, তাঁর লেখা বই 'সহজ পাঠ' স্কুলে ছোটদের বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য পড়ানো হয়; তাঁর লেখা অগুন্তি গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ সব বয়সের মানুষকে নতুন ভাবনা-চিন্তার খোরাক যোগায়; শুধু কি এই? তাঁর লেখা গান, আমাদের জীবনের প্রতি মূহূর্তের সাথী; সকালের প্রার্থনা হোক, বা উতসবের সন্ধ্যা, রবি ঠাকুরের গান ছাড়া যে সবই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই সংখ্যার 'গ্রীষ্মের চিঠি'তে থাকছে এই রবি ঠাকুরের ছোটবেলার, তাঁর ভাবনা-চিন্তার, তাঁর হাতে তৈরি শান্তিনিকেতনের গল্প আর ছবি।
এই মে মাসে ২ তারিখে আমাদের আরেক মনের মানুষ সত্যজিত রায়ের জন্মদিন। তাই এই সংখ্যার 'ছবির খবর' বিভাগে থাকছে অপুর গল্প। পড়ে দেখ কিন্তু।
সত্যজিত রায়
থাকছে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রেবন্ত গোস্বামীর আঁকা আর লেখা; আর থাকছে জনপ্রিয় শিশু-সাহিত্যিক সুনির্মল চক্রবর্তীর লেখা বিদেশি রূপকথা।
চিঠির শুরুতে তোমাকে বলছিলাম মেঘ, বৃষ্টি, কালবৈশাখির গল্প, সূর্য্যিঠাকুরের রেগে যাওয়ার গল্প... এদিকে কিছুদিন আগে পৃথিবী নিজেই যে একটু একটু রাগ দেখাতে শুরু করেছে, সে খবরটা তো তুমি শুনেছ নিশ্চয়...এইয়াফ্যাতলাওকুল (Eyjafjallajokull ) নামের আইসল্যান্ডের সেই আগ্নেয়গিরি, যার ভেতর থেকে মাত্র কয়েকদিন আগে এত লাভা এবং ছাই বেরিয়েছে, যে, সেই ধূসর ছাই কয়েক হাজার ফুট উপরে উঠে গিয়ে ঢেকে ফেলেছিল ইউরোপের অনেকখানি আকাশ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিমানের উড়ান বন্ধ হয়ে গেছিল। এখনও বহু যাত্রী তাদের ঘরে ফিরতে পারেননি, আইসল্যান্ডের বহু খামারের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, এবং এই পরিস্থিতি আরো বেশ কিছুদিন চলতে পারে। এই ছাই ভরতি মেঘের কারনে পরিবেশের ভারসাম্য ও নষ্ট হতে পারে।
এইয়াফ্যাতলাওকুল
এইরকম একটা ঘটনা যখন ঘটে, তখন যেন আমরা নতুন করে, আবার করে বুঝতে পারি, প্রকৃতি মা কতটা শক্তিশালী; তার আঙ্গুলের এক টোকায় ভেঙ্গে পড়তে পারে বিশাল হিমবাহ; তার হালকা ফুঁয়ে উঠতে পারে প্রবল জলোচ্ছ্বাস; সে নড়ে উঠলে জেগে উঠতে পারে আগ্নেয়গিরি। কিন্তু তাই বলে প্রকৃতিকে ভয় পেলে চলবে না। বরং প্রকৃতিকে ভালবাসতে হবে। আগামি ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তুমি কি ভেবে দেখেছ, কিভাবে তুমি তোমার পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারো, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে পারো?
আমি বরং আমার কথা এবার শেষ করি। আর তুমিও বসে পড় ইচ্ছামতীর সাথে, জমিয়ে আনন্দ ভাগ করে নিতে।
ভাল থেকো।
চাঁদের বুড়ি
২১ বৈশাখ ১৪১৭
৫ই মে,২০১০
ছবিঃ উইকিপিডিয়া