ঝমঝম বৃষ্টির দিন শেষ। মাঝে মাঝে এক আধ পশলা পড়ছে ঠিকই, কিন্তু আকাশ প্রায় পরিষ্কার - একটা খুশি খুশি নীল রঙের জামা পড়ে ফেলেছে। জলভরা ছাই ছাই মেঘের ফাঁকে ফাঁকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো সাদা সাদা শরতের মেঘ। যদিও এখনও খুব গরম, তবুও সকাল বেলার ঝকঝকে, সোনালি রোদ বেশ ভালোই লাগছে। বাগানে ফুটছে গোলাপি-বেগুনি রঙের দোপাটি, হলুদ কল্কে। আর সন্ধ্যাবেলা ? পথ চলতে চলতে হটাত করে ভেসে আসছে মন কেমন করা শিউলি ফুলের গন্ধ। ভোরবেলা সেই সাদা-কমলা শিউলিগুলিই ছড়িয়ে থাকছে গাছের তলায়, সবুজ ঘাসের বুকে। পাড়ার মোড়ে, অথবা স্কুল যাওয়ার পথে হঠাত করে চোখে পড়ছে বাঁশের কাঠামো। কিসের বলতো ?- কিসের আবার - দুর্গাপুজোর মন্ডপের ! - পুজোর যে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি।
এবার অবশ্য পুজো অনেক আগেই চলে এসেছে। একেবারে বিশ্বকর্মা পুজোর পরের দিনই মহালয়া!! অন্যান্যবার মোটামুটি মাসখানেকের ফারাক থাকে। বেশ বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি উড়িয়ে, প্রসাদ খেয়ে পুজো আসছে-পুজো আসছে ভাবতে ভাবতে, আর কবে ছুটি পড়বে হিসাব করতে করতে, এক মাস কোথা দিয়ে যেন হুশ করে কেটে যায়। এবার আর অতশত সময় নেই। মা দুর্গার বাপের বাড়ি তাড়াতাড়ি আসার মনে হয় খুব খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো। তাই বিশ্বকর্মা ঠাকুরের পেছন পেছনই ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে আসছেন বাপের বাড়ি। তুমি তৈরি তো ? নতুন জামা পরে মা দুগগার সাথে দেখা করার জন্য? প্রচুর হাঁটতে হবে কিন্তু, নানা জায়গার মন্ডপ ঘুরে দেখতে দেখতে; একেক জায়গায় মায়ের একেকরকম রূপ - কোথাও তিনি করুণাময়ী রূপে, কোথাও বা রুদ্রমূর্তি, কোথাও খুব জমকালো সাজগোজ, কোথাও আবার সেই সনাতনী ডাকের সাজ, কোথাও সাবেকি একচালার মূর্তি, কোথাও বা ভিনরাজ্যের সাজে সেজে ওঠা মায়ের মূর্তি। দেখতে দেখতে পায়ে ব্যথা হয়ে গেলে, একটু দাঁড়িয়ে গিয়ে আইসক্রিম, ফুচকা, ঝালমুড়ি; মাঝে মাঝে বড়দের কাছে আবদার করে নাগরদোলা, অথবা পাড়ার মন্ডপে বন্ধুদের সঙ্গে ঢাক বাজানোর প্রতিযোগিতা। এদিকে আবার সবে কেটে গেলো খুশির ঈদ, আর দুর্গাপুজো শেষ হতে না হতেই সামনে আসছে লক্ষ্মীপুজো। এই কয়েকটা দিন ভারি আনন্দের, তাই না?
নতুন জামা, জুতো, উপহারের সাথে সাথে তোমার জন্য এসে গেলো ইচ্ছামতীর নতুন সংখ্যা শরত সংখ্যা ২০০৯। এই পুজোয় ইচ্ছামতী কিন্তু এক বছরে পা দিলো। এই এক বছরে ছোট-বড় সব বয়সী পাঠক-পাঠিকাদের কাছ থেকে ছোট্ট ইচ্ছামতী পেয়েছে অনেক ভালোবাসা, শুভেচ্ছা আর উতসাহ। এই পুজোতে তাই ইচ্ছামতী তোমার জন্য নিয়ে এসেছে বেশ কয়েকটা গল্প, ছড়া, এবং আরো কিছু বিশেষ আকর্ষণ। এই সংখ্যা থেকে শুরু হচ্ছে জনপ্রিয় ছড়াকার ও কার্টুন-শিল্পী রেবতীভূষণের আঁকা ছবি ও লেখা দিইয়ে সাজানো বিশেষ বিভাগ 'উজ্জ্বল অধ্যায়'। তাঁর আঁকা ছবি ও ছোটদের জন্য লেখাগুলি ইচ্ছামতীকে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আছে আমাদের অতি পরিচিত দুই প্রখ্যাত কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ও শ্যামলকান্তি দাসের লেখা ছড়া। ইচ্ছামতীর প্রথম পুজো সংখ্যাকে তাঁদের সৃষ্টিতে সাজিয়ে তুলতে পেরে আমরা আনন্দিত। আছে বিভিন্ন স্বাদের চারটি গল্প, আর 'ইচ্ছেমতন' বিভাগে আছে ক্ষুদে লেখক ঋক ঘোষের ছবি সহ লেখা গল্প - অবশ্যই পড়ো কিন্তু। এছাড়া থাকছে নতুন নতুন মনের খোরাক নিয়ে নিয়মিত সব বিভাগ। আর আছে 'পুজোর চিঠি' আর 'শরতের কথা'। ষষ্ঠী থেকে দশমী অবধি তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য একেবারে তৈরি ইচ্ছামতী।
জানো তো, লৌকিক মতে, মা দুর্গা প্রতি বছর বিভিন্ন বাহনে করে মর্ত্যে আসেন এবং কৈলাশে ফিরে যান। এবার দুর্গা বাপের বাড়ি আসছেন দোলায় চেপে, যার ফল কিনা মড়ক। সত্যি করে মড়ক হোক আর না হোক, আমাদের চারিদিকে কিন্তু অনেক মানুষই খুব কষ্টে আছেন। খবরের কাগজে হয়ত পড়ে থাকবে, বা টেলিভিশনে দেখে থাকবে - সারা দেশের নানা জায়গায় হচ্ছে ভয়ানক বন্যা, ডুবে গেছে ঠিক তোমার মত কত ছোটদের ঘর-বাড়ি। অন্যদিকে কোথাও আবার অনাবৃষ্টি, খরা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের পাকা ধান, জলের তোড়ে ভেসে গেছে কমলি গাই, ভাংছে নদির পাড়, নেই তেষ্টার জল বা মাথার ওপরে ছাত। পুজোর আনন্দের মাঝে মাঝে কিন্তু এইসব মানুষদের ভুলে যেওনা। অষ্টমীর সকালে যখন মা দুর্গার কাছে অঞ্জলি দিয়ে মনে মনে নিজের পরীক্ষার ভালো রেজাল্ট বা নতুন সাইকেল অথবা ভিডিওগেম চাইবে, তখন কিন্তু এইসব অগুন্তি মানুষের জন্যেও চেয়ে নিও মুখের হাসি, পেট ভরা খাবার, মাথা গোঁজার আশ্রয়। তবেই না তোমার পুজো হয়ে উঠবে সত্যিকারের আনন্দ উতসব।
জানো তো, লৌকিক মতে, মা দুর্গা প্রতি বছর বিভিন্ন বাহনে করে মর্ত্যে আসেন এবং কৈলাশে ফিরে যান। এবার দুর্গা বাপের বাড়ি আসছেন দোলায় চেপে, যার ফল কিনা মড়ক। সত্যি করে মড়ক হোক আর না হোক, আমাদের চারিদিকে কিন্তু অনেক মানুষই খুব কষ্টে আছেন। খবরের কাগজে হয়ত পড়ে থাকবে, বা টেলিভিশনে দেখে থাকবে - সারা দেশের নানা জায়গায় হচ্ছে ভয়ানক বন্যা, ডুবে গেছে ঠিক তোমার মত কত ছোটদের ঘর-বাড়ি। অন্যদিকে কোথাও আবার অনাবৃষ্টি, খরা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের পাকা ধান, জলের তোড়ে ভেসে গেছে কমলি গাই, ভাংছে নদির পাড়, নেই তেষ্টার জল বা মাথার ওপরে ছাত। পুজোর আনন্দের মাঝে মাঝে কিন্তু এইসব মানুষদের ভুলে যেওনা। অষ্টমীর সকালে যখন মা দুর্গার কাছে অঞ্জলি দিয়ে মনে মনে নিজের পরীক্ষার ভালো রেজাল্ট বা নতুন সাইকেল অথবা ভিডিওগেম চাইবে, তখন কিন্তু এইসব অগুন্তি মানুষের জন্যেও চেয়ে নিও মুখের হাসি, পেট ভরা খাবার, মাথা গোঁজার আশ্রয়। তবেই না তোমার পুজো হয়ে উঠবে সত্যিকারের আনন্দ উতসব।
মনটা কি অল্প খারাপ হয়ে গেলো? আচ্ছা, মন ভালো করার জন্য অন্য একটা খবর দিই। মা দুর্গা কিন্তু এবার ফিরে যাচ্ছেন হাতির পিঠে চেপে, যার ফল হল 'শস্যপূর্ন বসুন্ধরা' - মানে কি বলতো? এর মানে হলো যে চলে যাওয়ার সময়ে মা কিন্তু পৃথিবীর কোল ভরে দিয়ে যাবেন সবুজ শস্যে - সবার জন্য থাকবে একমুঠি খাবার ! -এই কথা ভাবলেই তো মন অনেক ভালো হয়ে যায়। এখন আর অতটা মন খারাপ হচ্ছে না তো? আসলে তিনি তো সবার মা, তাই যেমন মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করার জন্য কড়া শাসন করেন, আবার ঠিক ততটাই ভালোবাসেন আমাদের সব্বাইকে। তাই তো তিনি মা দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী।
তাই বলি, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, ধূপ-ধুনো আর ফুলের গন্ধ, প্রসাদ আর ভোগের স্বাদ, ঢাকের বাদ্যি আর সমবেত মন্ত্রের শব্দ, নতুন জামা আর বেলুনের রঙ, সব মিলে মিশে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক এক নতুন আলো, কেটে যাক সব অন্ধকার।
দুগগা ঠাকুর ভালো
তাঁর রূপে ভুবন আলো
এসো, সেই আলোয় পথ দেখে, মায়ের হাত ধরে, আরেকবার নতুন করে সবাইকে ভালোবাসতে শিখি আমরা...
তাই বলি, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, ধূপ-ধুনো আর ফুলের গন্ধ, প্রসাদ আর ভোগের স্বাদ, ঢাকের বাদ্যি আর সমবেত মন্ত্রের শব্দ, নতুন জামা আর বেলুনের রঙ, সব মিলে মিশে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক এক নতুন আলো, কেটে যাক সব অন্ধকার।
দুগগা ঠাকুর ভালো
তাঁর রূপে ভুবন আলো
এসো, সেই আলোয় পথ দেখে, মায়ের হাত ধরে, আরেকবার নতুন করে সবাইকে ভালোবাসতে শিখি আমরা...
চাঁদের বুড়ি
দুর্গার ছবিঃ
কৌস্তুভ রায়