আজ ৫ই জুন, ২০১৯। আজ একই সঙ্গে একদিকে আমাদের ইসলামধর্মী বন্ধুরা পালন করছের ঈদ-উল-ফিত্র্; অন্যদিকে আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। একদিকে একটি ধর্মীয় উৎসব, অন্যদিকে সমস্ত জীবজগতের প্রতি, পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা খতিয়ে দেখার দিন।
প্রথমেই ইচ্ছামতীর সমস্ত বন্ধুকে জানাই পবিত্র ঈদ-উল-ফিত্রের শুভেচ্ছা। পবিত্র ঈদ-উল-ফিত্রের ভালোবাসার সুরে সুর মিলিয়ে বলি, আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, ধর্ম, খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস, পোষাক বা আচার ব্যবহারের ভিত্তিতে আমরা যেন আমাদের কোনো পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করি, তাদের কোনো ক্ষতি না করি। এই পৃথিবী তোমার, আমার, সবার – এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকার জায়গা। মানুষেরই বানানো তুচ্ছ নিয়মকানুনের ভিত্তিতে আমরা একে অপরের ক্ষতি করলে, শেষ অবধি আমরা নিজেরাও কিন্তু খুব ভালো থাকব না।
এই ভালো থাকা, খারাপ থাকার কথা প্রসঙ্গেই এসে পড়ে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উদযাপনের কথা। এই বছর রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ সূচিতে গুরুত্ব পেয়েছে ‘বায়ু দূষণ’। বায়ু দুষণ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার আছে কি? আমাদের নিত্যদিনের শরীর খারাপ থেকে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণ, সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দূষিত বাতাস। আর বাতাসকে দূষিত করছি আমরাই, নিজেদেরই নানারকমের কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে।
মাঝেমধ্যেই বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজ্ঞানীরা, পরিবেশবিদ, আবহাওয়াবিদেরা আমাদের জানান, পৃথিবীর আয়ু নাকি খুব বেশি নয়। আর মাত্র ৩০, ৫০ বা ১০০ বছরের মধ্যে মানবসভ্যতা শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়। এই বিপদ ঠিক কতটা দূরে, আদৌ কবে সত্যি হবে, বা হবে কি না, সে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা-আলোচনা-বিবাদ চলতে থাকবেই। অদেখা ভবিষ্যতের বিপদের থেকে এই মুহূর্তে দেখা বিপদ কি কিছু কম? ২০১৮ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর সবথেকে বেশি দূষিত শহরগুলি ভারতে এবং চীনে। আমাদের দেশের নয়টা শহর গত বছর সবথেকে বেশি দূষিত শহরের তালিকায় ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই লিঙ্কে গিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে আমরা ঠিক কতটা দূষণের মধ্যে বসবাস করছি।
https://www.who.int/airpollution/data/en/
তাহলে আমরা কী করব? ভবিষ্যতের ভাবনা যতই ভয়াবহ হোক না কেন, ভয় পেলে তো চলবে না। আমাদের পরিবেশকে আমাদের নিজেদের জন্যেই রক্ষা করতে হবে। নিজের অক্সিজেনের যোগাড়ের ব্যবস্থা এবং নিশ্চয়তা নিজেদেরকেই করতে হবে। আর এই পৃথিবীকে, আমাদের পরিবেশকে প্রাণ ভরে ভালোবাসতে হবে। আমাদের মধ্যে কত মানুষ সচেতন হয়ে কত কাজ করছেন। সুইডেনের স্কুলছাত্রী গ্রেটা থানবার্গের কথা তো সবাই জানে। এদিকে বাড়ির কাছে যশোর রোডে বিরাটা বিরাট কয়েকশো বছরের গাছগুলিকে বাঁচাতে পরিবেশকর্মীরা গাছের পাশে রাত জাগছেন। মাত্র কিছুদিন আগেই ইক্যুয়াডোরের অন্তর্গত আমাজন রেইনফরেস্ট এর এক বিশাল অংশকে লোভী তৈল নিষ্কাশন সংস্থাগুলির হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন সেখানকার ওয়ারোনি জনজাতির মহিলারা। সরাসরি সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চালিয়ে এই আদিম জনজাতি আধা মিলিয়ন একর এলাকাকে নিজেদের প্রাচীন এবং বংশানুক্রমিক বাসস্থান হিসাবে চিহ্নিত করাতে পেরেছেন। এর ফলে ঐ জায়গাতে আর খনিজ তেলের খোঁজে জঙ্গল কেটে ফেলা হবে না। এটা শুধু ঐ মানুষগুলোর পক্ষে নয়, প্রকৃতি ও পরিবেশের পক্ষেও একটা বিরাট জয়।
একদিকে যেমন রোজ খবর পাই, কোথাও জঙ্গল দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে, পূর্ব এশিয়াতে লোভী ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে ওরাং-ওটাং-রা নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে, অন্যদিকে আবার পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে জানা যাচ্ছে, যে দেখা মিলছে সেই সব প্রাণীদের যাদের একদিন নিশ্চিহ্ন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, যেমন গ্যালাপাগোস কাছিম এবং ফরমোসান ক্লাউডেড বাঘ । এই সমস্ত খবরগুলি পড়ে মনে হয়, আমাদের আরও বহুদিন রক্ষা করতে পারলে একমাত্র আমাদের আশ্রয়দাত্রী এই পৃথিবীই পারবে। তবে তার জন্য পৃথিবীকে এবং এক সুন্দর পৃথিবীর জন্য, পরিবেশকে সুস্থ রাখাটা আমাদেরই কর্তব্য।
সবুজ থেকো, নিজের জগৎকে সবুজ রেখো।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন চাঁদের বুড়ি
- ক্যাটfগরি: চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠি