সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চানু পিসি আর মানু পিসি

চানু পিসি থাকেন ধানবাদে আর মানু পিসি থাকেন বোকারোতে। দুজনেই ভীষণ ঝগড়ুটে। চানুপিসি বাপের বাড়ি আসানসোলে পা রাখতে না রাখতেই মানু পিসি সে খবর পেয়ে যান। আর খবরটা পেতেই ব‍্যাগ-পত্তর নিয়ে ঝড়ের বেগে তিনিও আসানসোলে চানুপিসির কাছে হাজির ।

প্রথমে দুজনে দু-তিন মিনিট সময় নেন কুশল বিনিময়ের জন্য। আর তারপরেই শুরু হয় ঝগ়ড়া।

চানু পিসি বলে্ন, ‍" তোর বাতের ব্যথা কেমন আছে ?"
মানু পিসি বলেন, "সে আছে একরকম। কিন্তু তোর মাথা ধরে যাওয়া বদ রোগটা সেরেছে ?"

চানু পিসি এবার জর্দা দেওয়া পান মুখে পুরে হাঁক পাড়ে, "ওরে জগু, (জগু আমার বাবার নাম, ভালো নাম জগদীশ) বলি তোর কাণ্ডটা একবার দেখ দেখি। সেই কোন সকালে ট্রেনে চেপেছি। অথচ একবারটি ফোন করে খবর নিয়েছিস ?"
বাবা তাঁর বোনকে হাড়ে হাড়ে চেনেন। তাই মুখে হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না। কারণ হ্যাঁ বললেও চানু পিসি তাঁকে ছাড়বেন না আর না বললেও না। তাই বাবা এবার মা কে ডাক পাড়েন, "কই গো, মানু-চানুর জন্য চা বানালে ?"

চানু পিসি ঝগড়া শুরু করার একটা মোক্ষম সুযোগ পেয়েও সেটাকে কাজে লাগাতে পারলেন না বলে কিছুটা দমে গেলেন। তবে তিনি এবার মানুপিসিকে নিয়ে পড়লেন।
মানু পিসি চানু পিসির চেয়ে ছোট। তবে তাঁর ভাবখানা এমনই যে মনে হয় তিনিই এ বাড়ির সবচেয়ে বড়। তিনি যখন তখন বাবাকে-মাকে ঝুড়ি ঝুড়ি উপদেশ দেন। পৃথিবীর সব বিষয়েই মানু পিসির অগাধ জ্ঞান। তো চানুপিসির সাথে দেখা হওয়ার দু-মিনিট একান্ন সেকেণ্ড পার হয়ে গেছে অথচ এখনো প্রথম পর্বের ঝগড়া-ঝাঁটি শুরুই হল না বলে আমরা ছোটরা বেশ নিরাশ হলাম।

কিন্তু না ! আমাদের আশা বিফলে গেল না। তিন মিনিট হতে আর দু-সেকেণ্ড যখন বাকি সেসময় ও ঘর থেকে চানু পিসি বললেন, "মানুটার কাণ্ড দেখ দেখি। আমাকে বলে কিনা তার দেওয়ের ছেলের সঙ্গে আমি নাকি কথা বলিনি। আমার নামে এরকম অপবাদ দেওয়ার আগে নিজে চৌদ্দবার ভেবে নিবি। চানু সেরকম বিদ্যে –বুদ্ধি নিয়ে জন্মায় নি। সে একবার যাকে দেখে তাকে দশ বছর পরেও চিনতে পারে। কিন্তু তোর দেওরের ছেলের কাণ্ড শুনলে হাসি পায়। আমাকে বলে কিনা আন্টি ! আমার এতই বয়স হয়ে গেল যে আন্টি বলে ডাকতে হবে ?"
মানু পিসি আর বসে থাকবার মহিলা নয়। তিনি একেবারে রণং দেহি হয়ে চানুর মুখোমুখি সম্মুখ সমরে অবতীর্ন হলেন।
বললেন, "তা ঐ দুধের শিশু ছেলেটার পেটে কি অত বুদ্ধি আছে ?"

আমরা ছোটরা এতক্ষণ পরে চিন্তা মুক্ত হলাম। একে একে ঝগড়া শুনতে ডাইনিং-এ এসে জড়ো হলাম। ওদিকে মা-বাবা এই ঝগড়ার মাঝে এসে কোন হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলেন না। মা একসময় ধোঁয়া ওঠা দু-কাপ চা দুই পিসির হাতে ধরিয়ে দিতেই বাবা হা – হা করে ছুটে এলেন।

আসলে পিসিমণিরা যখন ঝগড়ার একেবারে শেষে এসে পৌঁছা্ন ঠিক তখনই হাতের গেলাস কিংবা কাপ মেঝেতে ছুড়ে রণে ভঙ্গ দেন। আর এটা বাবা খুব ভালো ভাবেই জানে্ন বলে এভাবে ছুটে এসেছেন। বাবা ডাইনিং-এ এসে আমাদের একপাশে সরিয়ে দিলেন, কেননা গরম চা ছিটকে এসে আমাদের গায়েও লাগতে পারে।

চানু পিসি চায়ে চুমুক দিয়ে গলাটা একটু ভিজিয়ে নিতে চাইলেন। কিন্তু এক চুমুক দিয়েই তাঁর কথা বন্ধ হয়ে গেল। ওদিকে মানুপিসিও সুড়ুৎ করে গরম চা জিভ দিয়ে টেনে স্বাদ নিতে গেলেন আর অমনি মিইয়ে গেলেন।

চানু পিসি আর মানু পিসি

ঝগড়ার শেষ পর্বে এসে কাপ ভেঙ্গে ফেলার বদলে দু-জনেই মনোবল হারিয়ে ফেলল কেন ?- আমরা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম।

কারণটা বোঝা গেল একটু পরেই। চানু পিসি বলে উঠলেন, "দেশে কি চিনির আকাল পড়েছে ? এরকম বিতিকিচ্ছিরি চা কি মুখে দেওয়া যায় ?" এই বলে সটান বাথরুমে ঢুকে পড়লেন। আর মানু পিসি ছুটলেন বাগানে, কেন কে জানে!

আমরা বেশ বুঝতে পারলাম এরকম একখানা ফাটাফাটি ঝগড়ায় মা দু-কাপ জল ঢেলে সব শেষ করে দিয়েছেন।

বাবা সব দেখেশুনে মায়ের বুদ্ধির প্রশংসা করতে সোজা রান্নাঘরে গেলেন। সেখানে মা তখন চায়ে মেশানোর জন্য চিনি ডালে মিশিয়ে ফেলে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
বাবাকে রান্না ঘরে দেখে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠলেন, "সব পাগলের দল ! ভালো মানুষও এই পাগলের দলে থেকে পাগল হয়ে যাবে। "

সে কথা শুনে বাবা সোজা নিজের ঘরে এসে গম্ভীর মুখে খবরের কাগজ হাতে বসে পড়লেন।

আর আমরা আরেকটা ঝকঝকে নতুন ঝগ়ড়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

ছবিঃ অঙ্কুশ চক্রবর্তী



 

পুরুলিয়ার বাসিন্দা তরুণ কুমার সরখেল জেলার প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করেন। পাশাপাশি ছোটদের জন্য নিয়মিত লেখালিখি করেন, এবং ছোটদের জন্য একটি মুদ্রিত পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা