বুড়ো আর বুড়ি। নদীর ধরে ছোট্ট কুঁড়ে, সামনে একটু উঠোন, পেছনে একটা গহীন জঙ্গল। বুড়োতে, বুড়িতে থাকে। সকাল বেলা সূয্যিঠাকুর ওঠার সাথে সাথে বুড়ো ওঠে, বুড়ি ওঠে। সূয্যি নমস্কার করে খেয়েদেয়ে বুড়ো যায় কুড়ুল কাঁধে জঙ্গলে, সারাসকাল কাঠ কাটে। সূয্যি মাথায় উঠলে গাছের ছায়ায় বসে বুড়ির দেওয়া দুপুরের খাবার খায় আর তারপরে জঙ্গল পেরিয়ে হাটে গিয়ে কাঠ বেচে। চাল-ডাল-তেল-নুন-মশলা কিনেই সোজা বাড়ি। বুড়ি ততক্ষনে উঠোন নিকোয়, নদীতে টোপ ফেলে মাছ ধরে, তারপর দুপুর হলে নদীতে নেয়ে আগের রাতের বাসি পান্তা খেয়ে রাঁধতে বসে। নদীর সদ্য ধরা মাছের ঝাল, ডাল, আরো কত কি। তারপর বিকেল বেলায় গা ধুয়ে সেজেগুজে অপেক্ষা করে বুড়োর জন্য। বুড়ো ফিরলে দুজনে গল্প করতে করতে খায়। তারপর পাশাপাশি পা ঝুলিয়ে নদীর ধরে বসে। বুড়ো বাজায় বাঁশি, বুড়ি গায় গান। গানে বাজনায় রাত বাড়ে, মাথার ওপর চাঁদমামাও থমকে দাঁড়িয়ে দুদণ্ড শোনেন বুড়ো বুড়ির গানবাজনা। রাত বাড়লে বুড়ো ওঠে, বুড়ি ওঠে, হাত ধরাধরি করে ঘুমোতে যায়।
এমনি করেই দিন কেটে যায়, রাত কেটে যায়। একদিন কাঠ কাটতে গিয়ে বুড়োর পায়ে পড়লো কুড়ুল। সেদিন আর বুড়ো হাটে যেতে পারলো না, সন্ধে সন্ধে বুড়ির কাছেও ফিরলো না। রাত গভীর হলে বুড়ি গিয়ে বুড়োকে খুঁজতে খুঁজতে গাছের তলায় পেয়ে ধরে ধরে বাড়ি নিয়ে এলো। সেদিন আর গান বাজনা হলো না। চাঁদমামাও সেদিন আর দাঁড়ালেন না, বুড়োবুড়ির কুঁড়ের ধারে। পরের দিন সকাল। বুড়ো ওঠে, বুড়ি ওঠে। সেদিন সূয্যিমামা নমস্কার পায়না, বুড়োও যায়না কাঠ কাটতে। বুড়ি টুকটুক করে উঠোন নিকোয়, মাছ ধরে রান্না করে, বুড়োর পায়ে পট্টি বাঁধে। রাত বাড়লে বুড়ি একা একাই গান গায়। বাজনা আর হয়না। দিন যায়, বুড়োর পায়ের চোট কমেনা, জমানো টাকা কমে যায় খালি।
একদিন সকালে বুড়ি ওঠে সূয্যি ওঠার আগে। রেঁধে বেড়ে গুছিয়ে বুড়ি যায় জঙ্গলে কাঠ কাটতে। হাত চলেনা বুড়ির, একটু কাঠ কেটেই থমকে হাঁপায়। সারাদিনের কাজের পরে ছোট্ট একবোঝা কাঠ হাটে বেচে, ক্লান্তিমাখা পা একটার পর একটা ফেলে বাড়ি ফেরে। বুড়ি ফিরে রান্না করে, বুড়ো বুড়ি খায়। সেদিন আর বুড়ি গান গায়না। বুড়োর সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে। সেদিন আর গান হয়না। এমনি করেই দিন যায়।
তারপর একদিন, বুড়ি ওঠে সূয্যি ওঠার আগে। রেঁধে বেড়ে গুছিয়ে বুড়ি যায় জঙ্গলে কাঠ কাটতে। সারাদিনের কাজের পরে ছোট্ট একবোঝা কাঠ হাটে বেচে, ক্লান্তিমাখা পা একটার পর একটা ফেলে বুড়ি বাড়ি ফেরে। ফিরে দেখে, বুড়ো টুকটুক করে উঠোন নিকিয়েছে, টোপ ফেলে মাছ ধরেছে, তারপরেতে সেই মাছের ঝোল রেঁধে, গা ধুয়ে বুড়ির জন্য বসে আছে। বুড়ো বুড়ি গল্প করতে করতে খায়, আর তারপর হাত ধরাধরি করে নদীর পারে যায়। বুড়ো বাঁশিতে লাগে কাঁপা কাঁপা অনভ্যাসের সুর আর বুড়ি সাথে গায় অনেকদিনের ভুলে যাওয়া গান। বহুদিন পর চাঁদমামা নদীর পারে দুদণ্ড দাঁড়ান বুড়োবুড়ির গান-বাজনা শুনতে।
তারপর? তারপর আর কি?
এখন সকাল বেলা সূয্যিঠাকুর ওঠার সাথে সাথে বুড়ি ওঠে, বুড়ো ওঠে। সূয্যি নমস্কার করে খেয়েদেয়ে বুড়ি যায় কুড়ুল কাঁধে জঙ্গলে, সারাসকাল কাঠ কাটে। সূয্যি মাথায় উঠলে গাছের ছায়ায় বসে বুড়োর দেওয়া দুপুরের খাবার খায় আর তারপরে জঙ্গল পেরিয়ে হাটে গিয়ে কাঠ বেচে। চাল-ডাল-তেল-নুন-মশলা কিনেই সোজা বাড়ি। বুড়ো ততক্ষনে উঠোন নিকোয়, নদীতে টোপ ফেলে মাছ ধরে, তারপর দুপুর হলে নদীতে নেয়ে আগের রাতের বাসি পান্তা খেয়ে রাঁধতে বসে। নদীর সদ্য ধরা মাছের ঝাল, ডাল, আরো কত কি। তারপর বিকেল বেলায় গা ধুয়ে সেজেগুজে অপেক্ষা করে বুড়ির জন্য। বুড়ি ফিরলে দুজনে গল্প করতে করতে খায়। তারপর পাশাপাশি পা ঝুলিয়ে নদীর ধরে বসে। বুড়ো বজায় বাঁশি, বুড়ি গায় গান। গানে বাজনায় রাত বাড়ে, মাথার ওপর চাঁদমামাও থমকে দাঁড়িয়ে দুদণ্ড শোনেন বুড়ো বুড়ির গানবাজনা। রাত বাড়লে বুড়ো ওঠে, বুড়ি ওঠে, হাত ধরাধরি করে ঘুমোতে যায়। এমনি করেই দিন কেটে যায়, রাত কেটে যায়।
ছবিঃ অঙ্কুশ চক্রবর্তী