শিবনগরের জমিদার বাড়ির বড়তরফের কর্তা এখন সুখবিলাসবাবু। এককালে এলাকায় নজরদারি করতে বিলাসবাবুর ঠাকুর্দা ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতেন। প্রজা-শাসনের জন্য বাড়িতে পাইক-বরকন্দাজ-লেঠেল ছিল; নরমে গরমে চলা জমিদারিতে বাঘ আর গরু নাকি একই ঘাটে জল খেত। ভাঙা পালকিটা এখন খিড়কির উঠোনে পড়ে থাকলেও সে রাম নেই, অযোধ্যাও নেই। জমিদারি বহুদিন আগেই গেছে। তবু দুধের কড়ায় চাঁছির মত চারদিকে জড়িয়ে আছে জমি, পুকুর, বাগান, ধানের গোলা, আরও কত কিছু।
রাজার হাল না থাকলেও চাষের ধান, পুকুরের মাছ, গোয়ালের গরুর দুধ, বাগানের আম-কাঁঠাল ইত্যাদির ভরসায় সুখে আর বিলাসেই দিন কাটে বিলাসবাবুর। আছে বিশাল দোতলা বাড়ি, আর বাড়িতে ছেলে-বউ, নাতি-নাতনি, ভাই-ভাইপো, চাকর-বাকর, মুনিষ-মজুর সহ এক ঝাঁক লোক। ফর্সা টুকটুকে চেহারার সঙ্গে একটা বিশাল ভুঁড়ি বিলাসবাবুর সুখের সাক্ষ্য দেয়। আর আছে গালে ভর্তি পান, মুখে ভালোমানুষী হাসি। আর হ্যাঁ, চলে যাওয়া জমিদারির চিহ্ন হিসেবে আছে একটা বন্দুক - আলমারিতে তোলা থাকে সারা বছর। তাঁকে কাজকর্ম করতে কেউ দেখেনি কোনও দিন; তিনি ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যান, কুটো নাড়তে কষ্ট পান। নিদ্রাবিলাস, খাদ্যবিলাস, বাক্যবিলাস, বন্দুকবিলাস আরও নানা ধরনের বিলাস নিয়ে বিলাসবাবু সার্থকনামা মানুষ।
আশেপাশের দশবিশখানা গাঁয়ে নামকরা রাত-কুটুম ছিল দীনদয়াল, সোজা কথায় দীনু-চোর। চোর হিসেবে সেও খুব অভিজাত। শোনা যায়, দীনুর বাবা চানু বাজি রেখে চুরি করত। তখনকার জমিদারবাবু একদিন নৈশভোজ সেরে হাতের পান মুখে ঢোকাতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় ঢেকুর ওঠায় আরামে চোখ বন্ধ হয়ে গেছিল তাঁর। নিমেষের ভেতর পানটা মুখের বদলে চলে যায় চানুর হাতে। জমিদারবাবু বহুক্ষণ মুখ নাড়ার পরে পিক ফেলতে গিয়ে খেয়াল করেন মুখে কিছু নেই আর এককোণে বসে চানু ফিকফিকিয়ে হাসছে। নিদালি বিড়ি আর মন্ত্রের জোরে গেরস্থকে বশে রাখা দীনুর ঠাকুর্দার কাছে জলভাত ছিল। চুরি যে বড়বিদ্যা, চৌষট্টি কলার এক কলা তার প্রমাণ রেখেছিল দীনুর বাপ-ঠাকুর্দা। হট্টগোল বাঁধিয়ে ডাকাতি নয়, দীনুও সিঁদকাঠি নিয়ে পুরানো কেতায় চুরি করত। কলসীর জল তলানিতে ঠেকলেও, দীনু ছিল এ যুগের ওস্তাদের ওস্তাদ। ধরা পড়া তো দূরের কথা, কোনও দিন তাড়াও খায়নি কাজের সময়। তার দীনদয়াল নামটাও সার্থক, কারণ ‘দীনে-দয়া' বশতঃ সে কোনও গরিবের বাড়িতে কখনও চুরি করেনি।
চিতার মত নিঃশব্দ ক্ষিপ্রতা আর বেড়ালের মত নজর নিয়ে দীনু শেষে ধরা পড়ল কিনা মোটাসোটা ভুঁড়িওয়ালা বিলাসবাবুর হাতে, যাঁর আঠেরো মাসে বছর বললে কম বলা হয়! ঘটনাটা তাহলে বিশদেই বলা যাক।
এখানে বিলাসবাবুদের বাড়িটার একটু বর্ণনা দেওয়া দরকার। পুরানো দিনের দালানকোঠা, দোতলায় ছিল কড়িবর্গার উপর কাঠের তক্তা পাতা লম্বা একটা বারান্দা। কিছু তক্তা ঘুণ লেগে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পাল্টানো হয়েছে, আরও কিছু পাল্টানোর অপেক্ষায় আছে। একতলায় উঠোনের তিনদিকে আছে দালান, কয়েকটা ঘর আর একদিকে ধানচালের বস্তা রাখার মাচা। ধানের মাচার দিক থেকে উঠোন পেরিয়ে দালানে উঠলে মাথার ওপরে দোতলার বারান্দা। বামদিকে দালানের শেষ থেকে খাড়া সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়, ডান প্রান্তে খিড়কিদোর; রাতে খিড়কির দরজায় তালা দেওয়া থাকে। সোজা কথায়, সিঁড়ি থেকে খিড়কির দিকে যেতে গেলে ডান দিকে থাকবে ধানের মাচা আর উঠোন, মাথার ওপরে দোতলার বারান্দা। উপরতলায় থাকেন বিলাসবাবু আর গিন্নিমা। বাকি ঘরগুলো পুরানো জিনিসপত্রে ঠাসা, তালাবন্ধ। নিচের তলায় থাকেন বাকিরা, চাকরবাকর সবাই বাইরের দিকে।
গ্রীষ্মের মাঝামাঝি হলেও সে দিনটা ছিল বেশ আরামের। অনেকদিন পরে সন্ধের মুখে অনেকটা ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। ঝড় থেমে গেলেও, মেঘের জন্য চারদিকে ছিল ঘন অন্ধকার; টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছিল সারা সন্ধে জুড়ে। সবাই তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া শেষ করে অনেকদিন পরে একটু আরামে ঘুমানোর তোড়জোড় করছিল। প্রতিদিন অন্ধকারের কাছে হেরে যাওয়া কেরোসিনের টিমটিমে বাতিগুলো সেদিন একেবারে ‘নক-আউট' হয়ে গেছিল। বিলাসবাবুর বাড়িতেও খাওয়াদাওয়ার পাট চুকে গেছিল, নিচের উঠোনে এঁটো বাসনপত্র ডাঁই করা ছিল। বিলাসবাবু দোতলার ঘরে বিছানায় ঢুকে পড়েছিলেন, নাকের ভেতর হালকা আলাপের পর জোড়ের তোড়জোড় চলছিল। বিলাস-গিন্নি হেঁসেলের পর্ব মিটিয়ে ঘরে এসে তাম্বুল-চর্চা সেরে শোওয়ার উদ্যোগ করছিলেন। বাড়ির অন্যরা কেউ শুয়ে পড়েছেন, কেউ শোওয়ার আয়োজনে ব্যস্ত যে যার জায়গায়। বাইরে অল্প হলেও সমানে বৃষ্টি পড়ছিল আর ঝিঁঝিপোকার একটানা ডাকের সঙ্গে ব্যাঙেরা যথাযথ সাথসঙ্গত করছিল। আলোকসম্পাতের দায়িত্বে থাকা লণ্ঠনটা বারান্দায় আলোর চেয়ে ধোঁয়া ছড়াচ্ছিল বেশি। সবকিছু আর পাঁচটা ঝড় জলের রাতের মত হলেও একটু অন্যরকম ঘটনা ঘটল সেদিন।
গিন্নি সবে মশারির মধ্যে ঢুকেছেন, এমন সময় ‘খুট' করে খুব হালকা একটা শব্দ পেলেন। প্রথমে ভাবলেন ইঁদুর-বেড়াল কিছু হবে, কিন্তু একটু পরে আবার একই রকম শব্দ পেয়ে সজাগ হলেন। কয়েক মুহূর্তেই গিন্নি বুঝে গেলেন বুঝলেন ইঁদুর-বেড়াল নয়, এ অন্য কিছু। চোর ঢুকল নাকি! হালকা হাতে ঠেলা দিলেন কর্তাকে। কর্তা তখন গভীর ঘুমে, নাকে মধ্যলয় গৎকরি চলছে।
ঠিকই ধরেছেন গিন্নি, চোর ঢুকেছে বাড়িতে - দীনু। শব্দটা হওয়ার পর সে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল কিছুক্ষণ। কিন্তু উপরতলায় গিন্নির লাগাতার ঠেলায় কর্তার ঘুম প্রায় ভেঙে গেছে, তা সে বুঝতে পারেনি। তারপর গিন্নির চাপাগলার ডাকও তার কানে এল। কথায় বলে ‘চোরের ন'দিন, গেরস্থের একদিন'; গেরস্থের একদিনটা দীনু দেখেনি কখনও। তবু দীনু সাবধান হল, কিন্তু বিধি বাম। গিন্নির গুঁতোয় আর ডাকাডাকিতে হঠাৎ ধড়ফড় করে উঠে বসলেন বিলাসবাবু। কর্তা জাগতেই সাহস পেয়ে গিন্নির চিল চিৎকার শুরু হল – "চোর... চোর... চোর..."
বিনা কালক্ষেপে কর্তার সঙ্গত - "ডাকাত... ডাকাত..."
গিন্নি প্রাণপণ গলা ছাড়লেন – "ওরে কে আছিস... ধর ব্যাটাকে...."
কর্তা আরও জোরে – "মার ব্যাটাকে, বন্দুক কই?"
গিন্নি –"ওগো, বন্দুক পরে, আগে দেখ কোনদিকে গেল..."
কর্তা – "আগে আলমারির চাবি দাও, গুলি বের করি।"
বেগতিক বুঝে দীনু লুকিয়ে পড়ল মাচার পেছনে, কিন্তু কথায় বলে – 'তুমি যাও বঙ্গে, কপাল যাবে সঙ্গে'। চিৎকার শুনে বাড়ির অন্যরা ততক্ষণে উঠে এক এক করে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো। সবাই একযোগে শুরু করল রকমারি মন্তব্য, শব্দ, হল্লাগুল্লা।
- "চোর, চোর, চোর ঢুকেছে...."
- "ধর ধর, সব নিয়ে গেল...."
- "ওরে দেখ দেখ কি নিল...."
- "নিল? নাকি ফেলে দিয়ে পালাল!"
বিপদের সময় সবাই হাতে অস্ত্র নিয়েই বেরিয়েছে; যে যেমন পেয়েছে। কারও হাতে লন্ঠন, কেউ লাঠি; কেউ টর্চ, কেউ পাশবালিশ। ছোট বৌমা মশারি টাঙাচ্ছিল, তার হাতে মশারি। সেজো কাকা এসছেন হুঁকো হাতে, শোওয়ার আগে দু'একটা সুখটান দিচ্ছিলেন। মেজকত্তার হাতে তালপাতার পাখা; ঘামাচি চুলকোনো তখনও শেষ হয়নি। সবাই লম্ফঝম্পে চেঁচামেচিতে ব্যস্ত, শুধু চোর বসে আছে মাচার আড়ালে, আর পালানোর উপায় খুঁজছে।
কেউ জিজ্ঞাসা করল – "কোন দিকে পালাল?"
কেউ চেঁচিয়ে উঠল – "খিড়কির দরজাটা খোলা"
বিলাসবাবুর বড়ছেলে বিপিনের কানে 'খিড়কি' শব্দটা ঢোকা মাত্র এক লাফে দরজার সামনে পৌঁছে লাঠি ঘুরিয়ে বলল "মেরে মাথা ফাটিয়ে দেব, ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব ব্যাটার।" হৈহৈরৈরৈ কান্ডের মধ্যে দীনু শুধু পালানোর ফিকির খুঁজছে। সামনের উঠোনটা দুটো লাফে পেরোতে পারলে দালানে ওঠা যাবে, তারপরে আর দুটো কি তিনটে লাফ দিলেই খিড়কির খোলা দরজা। ভাগ্যিস বিপিন দরজাটা বন্ধ করে দেয়নি, ওকে ভড়কি দেখিয়ে বাইরে বেরনো কঠিন হবে না।
ততক্ষণে আলমারি থেকে বন্দুক বেরিয়েছে। বন্দুকের গুনে বিলাসবাবুর সাহস কয়েকগুন বেড়ে গেছে। বন্দুক উঁচিয়ে তিনি সদর্পে সগর্জনে বারান্দায় পদার্পণ করলেন; পুরানো কাঠের তক্তা মচমচিয়ে উঠল। হারিয়ে যাওয়া জমিদারি মেজাজ ফিরিয়ে এনে বাজখাঁই গলায় তিনি হাঁক পাড়লেন –"ব্যাটাচ্ছেলের খুলি ফুটো করে দেব, লাশ পড়বে, রক্তগঙ্গা বইবে, আজ শেষ দেখে ছাড়ব।"
গিন্নিও পিছপা নয়, হাতের সুপুরি কাটার জাঁতিটা উঁচিয়ে বললেন –"ওরে ছাড়িস না, ঘিরে ফেল, বেঁধে ফেল, কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দে।"
কর্তা-গিন্নির হুঙ্কার আর লম্ফঝম্পের প্রবল প্রতাপে বারান্দার তক্তা আবার কঁকিয়ে উঠল। গোলমালের মধ্যে সেটা কারও কানে গেলনা।
দীনু বুঝলো আর দেরি করা ঠিক নয়, পালাতেই হবে। সে বেরিয়ে এলো আড়াল ছেড়ে; অমনি হট্টগোল কয়েকগুণ বেড়ে গেল। লাফ দিয়ে উঠোনে পড়েই দীনু একটা গর্জন ছেড়ে একপাক ঘুরে নিল। চমকে গিয়ে ভিড়টা মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। সেই সুযোগে আরেকটা লম্বা লাফে সে উঠে পড়ল উল্টো দিকের দাওয়ায়। থমকে যাওয়া চেঁচামেচি আবার চড়বড়িয়ে উঠল; ধরধর মারমার কাটকাট রবের মাঝেই দীনু মারলো আরেকটা লাফ খিড়কির দিকে।
এদিকে "ব্যাটা যাবি কোথায়" বলে দোতলার বারান্দায় এক পেল্লায় লাফ মেরেছেন স-বন্দুক বিলাসবাবু। মন্দ-কপাল দীনুর উপর পড়ল ভগবানের মার। মার মানে কিল চড় তো নয়; পুরানো ঘুণ ধরা তক্তা ভেঙে পাহাড় প্রমান বিলাসবাবু পড়লেন সরাসরি রোগাপাতলা দীনুর ওপর। অংকের হিসেবে 'ওয়ান ইন মিলিয়ন চান্স'। কিছু বোঝার আগেই দেখা গেল দীনু চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে আছে বিলাসবাবুর বিশাল বপুর নিচে, কুস্তিতে যেমন হয়। তখনও বিলাসবাবুর হাতে বন্দুকটা সোজা ধরা আছে, নলটা আকাশের দিকে। ঠিক সময়ে ফটো তুলতে পারলে দারুন হত, বাঘ শিকারের ফটো যেমন হয়। তবে শিকার আর শিকারী দুজনেই অজ্ঞান।
বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগল সবার। ধরাধরি করে দুজনকে আলাদা শোয়ানোর পর চোখে মুখে জল ছিটানো হল। সেবা শুশ্রূষার পরে প্রথমে উঠে বসলেন বিলাসবাবু। জ্ঞান ফিরলেও কোমরে বড় রকমের চোট নিয়ে দীনু উঠতে পারল না। ধোলাই-সুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে ধীরে ধীরে ভিড় পাতলা হয়ে গেল। দীনে দয়া করা জমিদারেরও কর্তব্য, তাই রাত পোহাতেই বিলাসবাবু দীনুকে শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। থানায় নয়; কারণ থানা খুব বাজে জায়গা, সেখানে পুরো ঘটনা কাগজে লিখতে হয়। দীনুকে ডাক্তার দেখাতে পাঠানো হল হাসপাতালে।
বাড়িতে জড়িবুটি মালিশ করে বিলাসবাবুও সামলে উঠেছিলেন তাড়াতাড়ি। তবে ঘটনাটা রঙিন ডালপালা মেলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল আরও তাড়াতাড়ি। বিলাসবাবুর সামনে সবাই মাথা নামিয়ে একেবারে নতুন পদ্ধতিতে চোর ধরার কৃতিত্বটা স্বীকার করত; কিন্তু মাথা নিচু করাকে হাসি লুকোনোর চেষ্টা ভেবে নিন্দুকেরা গুজগুজ করে মরল। সুস্থ হয়েই বিলাসবাবু বন্দুক বিক্রি করে বন্দুক-বিলাসে যবনিকা টানলেন। প্রশ্ন করলে অন্যমনস্ক ভাবে মাটিতে পা ঠুকতে ঠুকতে বলেন – "আইন কানুন বড্ড জটিল হয়ে গেছে! প্রতিপদে ঝামেলা"। তাঁর ধারণা পায়ের নিচে জমিটা শক্ত না হলে পদে পদে বিপদ।
কয়েকদিন হাসপাতালের ভাত খেয়ে দীনু সেবারে বাড়ি ফিরেছিল লাঠি হাতে। বয়সটা যেন এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেছিল; কোমরের চেয়েও মনে চোট লেগেছিল বেশি। ওস্তাদ চোর যদি আলুথালু স্বভাবের কারও হাতে ধরা পড়ে তবে মনের আর দোষ কি! বাড়ি ফিরেই সিঁধকাঠিটা কুলুঙ্গিতে তুলে রেখে বাপ-ঠাকুরদার পেশায় ইতি টানল দীনু। কথা উঠলে বিড়বিড় করতে করতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কপালে হাত ঠেকায় আর বলে – "ইষ্টনাম জপে বাকি কটা দিন শান্তিতে কাটাতে পারলেই হয়"। বিপদ আর বিপত্তারণ দুই-ই ওপরে থাকে বলে তার বদ্ধমূল ধারণা।
সে যাইহোক, এখন দুজনেরই বয়স হয়েছে। প্রতিদিন সকালে লাঠি ঠুকঠুক করে দীনু আসে বিলাসবাবুর বাড়িতে। উঠোনের তক্তপোষে বিলাসবাবু বসেন, নিচে বসে থাকে দীনু। মানীর মান রাখতে একটু দূরত্ব বজায় রাখে সে, ঠেকে শেখা। নিত্যকার চা-জলখাবার দীনুর এখানেই বাঁধা। দুজনের গল্পগাছা চলতে থাকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ নিয়ে; শুধু সেদিনের কথা ভুলেও ওঠে না। তবু হাজারো গল্পের মধ্যে বারবার ঘুরে ফিরে আসে ভীমের হাতে কীচকের মার খাওয়ার গল্প।
ছবিঃ ত্রিপর্ণা মাইতি