সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
ছোট্ট পিকোলা

পিকোলা নামের ছোট্ট মেয়েটা থাকত ইতালিতে। হ্যাঁ, ইওরোপের সেই দেশ ইতালি, যেখানে অনেক কমলালেবু ফলে, আর সারা বছর ধরে সূয্যিমামা আকাশে ঝলমল করতে থাকে। তোমার কি মনে হচ্ছে পিকোলা একটা অদ্ভূত না- এরকম নাম আবার কোন ছোট্ট মেয়ের হয় নাকি? এরকম তোমার মনে হতেও পারে, কিন্তু সে দেশে এই নাম শুনে মোটেও কেউ অবাক হত না, কারণ ইতালীয় ভাষায় 'পিকোলা' মানে হল 'ছোট্ট'। আমাদের মধ্যে কতজনেরই তো ডাকনাম নয় ছোটু বা ছুটকি , তাহলে 'পিকোলা' নামই বা হবে না কেন? আর পিকোলার মা মনে করতেন তাঁর মেয়ের জন্য এর থেকে সুন্দর, মিষ্টি নাম আর হতেই পারে না।

তবে কিনা, পিকোলারা ছিল বড়ই গরিব। পিকোলার না ছিল কোন বড় দাদা বা দিদি, না ছোট্ট ভাই বা বোন, না ছিল মাথার ওপরে ছাতার মত বাবার স্নেহের ছায়া। পিকোলার শুধু ছিলেন মা, আর মায়ের ছিল পিকোলা। তারা দুজনে একটা অনেক পুরনো পাথরের দেওয়ালওয়ালা বাড়িতে থাকত; সে বাড়িটা ছিল একটা অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে গলির শেষে। পিকোলার মা দিনভর অন্য লোকের বাড়িতে কাপড় কেচে, ঘর ঝাড়-পোঁছ করে কোনমতে নিজের আর মেয়ের জন্য দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতেন। তাই বুঝতেই পারছ, পিকোলা প্রায় সারাদিন বাড়িতে একলা একলাই থাকত; নেহাত কিনা সে ছিল খুব হাসিখুশি একটা ছোট্ট মেয়ে, না হলে যে সারাদিন কিভাবে কাটাত কে জানে। তার খেলার জিনিষ বলতে ছিল পেছনের উঠোনে জমানো একগাদা পাথরের টুকরো, যেগুলি একের পর এক বসিয়ে পিকোলা পুতুলের বাড়ি তৈরি করত। আর ছিল একটা খুব , খুব পুরনো, ছেঁড়াখোঁড়া পুতুল; পুতুলটাকে তার মা একদিন রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়ে মেয়ের জন্য নিয়ে এসেছিলেন।

কিন্তু পিকোলা কখন সব থেকে খুশি হত জানো? বলছি শোন। পিকোলাদের বাড়ির পেছনের পাথরের দেওয়ালের অল্প খানিকটা অংশ ভাঙা ছিল। সেই ভাঙা অংশ দিয়ে দেখতে পাওয়া যেত তাদের প্রতিবেশির বাড়ির বাগানের খানিকটা অংশ। কি সুন্দর সবুজ, নরম ঘাসে ঢাকা সেই বাগান, আর কত ফুলের গাছ। ভাল করে কান পাতলে বাগানের এক কোনায় থাকা ফোয়ারাটার জল উপচে পড়ার শব্দও পাওয়া যেত। সেই বাড়ি আর বাগানের মালিক ছিলেন এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক, আর তাঁর মোটেও ঘাস, ফুল, গাছপালা নিয়ে একটুও উৎসাহ ছিল না, তাই তিনি কোনদিনও সেই বাগানে হাঁটতেও আসেন নি। আর কেউ বোধ হয় সেই বাড়িতে ছিলও না, তাই পিকোলা কোনদিন কাউকে সে বাগানে দেখতেও পায়নি।

একবার শরতের শেষে, শীত যখন সবে আসি আসি করছে, আশে পাশের গাছগুলি থেকে ঝরে পড়ছে শুকনো পাতা, পিকোলার মা জানালেন যে সেই বুড়ো পড়শী নিজের কোন আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেছেন। যাওয়ার সময়ে তিনি বাড়িটাকে কয়েক মাসের জন্য এক বিদেশি পরিবারকে ভাড়া দিয়ে গেছেন। সেই পরিবারে অনেকগুলি বাচ্চা, আর তাদের মা খুব অসুস্থ। তাই তারা শীতের ছুটিতে হাওয়াবদল করতে ইতালিতে বেড়াতে এসেছে। বেশ কয়েকমাস থাকবে সেখানে। এর পরে যে কি হল, সে তো বোঝাই যাচ্ছে। দেওয়ালের সেই ভাঙা অংশ দিয়ে পিকোলা সারাদিন অন্যদিকের বাগানে সেই বাচ্চাদের হুটোপুটি করা দেখত। তার আর একা লাগত না। নতুন প্রতিবেশির ছেলেমেয়েরা সারাদিন রোদের মধ্য বাগানে খেলে বেড়াত, গান গাইত, মাঝেমধ্যে নাচ ও করত। আর এইসব দেখতে দেখতে পিকোলার বেশ সময় কেটে যেত। তারা কিন্তু এত কিছুর মধ্যে পিকোলাকে লক্ষ্যই করেনি। বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে একদিন তাদের বেড়ালছানা ছুটতে ছুটতে পিকোলাদের ভাঙা দেওয়ালের দিকে এগিয়ে এ। তার পেছনে পেছনে ছুটে এল যত হুল্লোড়ে ভাইবোন। সেই সময়ে তারা দেওয়ালের সেই ছোট্ট গর্তের ওপাশে পিকোলার কালো চোখজোড়া দেখতে পেল। দুপক্ষই একে অপরকে চেনে না, তাই তারা খানিক্ষণ পিকোলাকে দেখে, মনে হয় খানিকটা ভয় পেয়েই তাড়াতাড়ি করে বাড়ির দিকে ফিরে গেল। কিন্তু পরের দিন খেলতে এসে দেখে, আবার সেই দেওয়ালের পেছন থেকে উঁকি দিচ্ছে পিকোলা, তার চোখের কালো মণিতে একরাশ কৌতূহল। এবার ওপাশের বাচ্চাদের মনে হয় ভয় একটু কমল, কারণ পিকোলাও তো আসলে একটা ছোট্ট মেয়েই! তাই ওদের ভাইবোনেদের মধ্যে যে সব থেকে বড়, রোস্‌ নামের সেই মেয়েটা এগিয়ে এসে পিকোলার সাথে একটু কথাও বলল। তারপরে তো একে একে পিকোলার সাথে সবারই ভাব হয়ে গেল। আর ওরা যখন জানতে পারল পিকোলার সাথে খেলা করার কেউ নেই, তারপর থেকে তো ওরা রোজই পিকোলার সাথে গল্প করতে আসত; ওর সাথে মাঝেমধ্যেই নানারকমের ফল, মিষ্টি, চকোলেট ভাগ করে নিত।

একদিন তো ওরা সেই ছোট্ট গর্ত টা দিয়ে ওদের বেড়ালছানাটাকেও পিকোলার কাছে পাঠাতে চাইল। কিন্তু সেটা এতই ছোট একটা গর্ত ছিল যে তার মধ্যে দিয়ে বেচারা মোটুসোটু বেড়ালছানাটা তো গলতেই পারেনা! সে বেচারি ম্যাও ম্যাও করে কেঁদে, আঁচড়ে-কামড়ে তো একেবারে অস্থির ! এই ঘটনার পরে, রোসের ভাই বলল, সে তাদের বাবাকে জিজ্ঞাসা করবে দেয়ালের গর্তটাকে আরেকটু বড় করা যায় কিনা, যাতে পিকোলা এসে তাদের সাথে খেলতে পারে। রোসের বাবা জানতেন পিকোলার মা খুবই ভাল মানুষ, আর পিকোলাও একটা ছোট্ট , ভাল মেয়ে, তাই তিনি আর বেশি ভাবলেন না। এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলেন দেওয়ালের আরো কয়েকটা পাথর সরিয়ে গর্তটাকে আরো বড় করে দিতে, যাতে পিকোলা সহজেই তাঁদের বাগানে খেলতে আসতে পারে।

ওহঃ, পিকোলার যে সেদিন কি আনন্দই না হচ্ছিল। আর পাশের বাড়ির বাচ্চারাও খুবই খুশি ছিল। পিকোলা সেদিন তার সবথেকে ভাল জামাটা পড়ে নিল - একটা রংচঙে উলের স্কার্ট; গলায় পড়ল একটা পুঁতির মালা, আর পায়ে পড়ল একজোড়া ছোট্ট কাঠের জুতো। কাঠের জুতো শুনে অবাক হচ্ছ তো, ভাবছ, কই , আমরা তো পরিনা ! আমরা নাই পরতে পারি, কিন্তু ইওরোপের বিভিন্ন দেশে কাঠের তৈরি জুতো পরার প্রচলন আছে। সেখানে কৃষক, দিনমজুর ও শ্রমিকেরা বেশিরভাগ সময়েই কাঠের জুতো পরে কাজকর্ম করেন। পিকোলা আর ওর মা সেইরকম কমদামি কাঠের জুতো ছাড়া আর কোনদিন কিছু পরেই নি। পিকোলার তো মোজাও ছিল না। সে সারাদিন কুকুরছানা, হাঁসের ছানাদের মত খালি পায়ে ছোটাছুটি করে বেড়াত।

তা সেইদিন ভাল সাজগোজ করে পাশের বাড়িতে খেলতে গিয়ে পিকোলা সারাদিন বড়ই আনন্দে কাটাল। সবার সাথে খুব হুল্লোড় করল। আর পিকোলার মা ও বেশ খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন যে, এত ভাল আর নিরাপদ জায়গায় তাঁর ছোট্ট মেয়েটা সময় কাটাতে যাচ্ছে।

এইভাবে হই-হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে ডিসেম্বর মাস এসে গেল। আমেরিকা থেকে আসা পিকোলার প্রতিবেশি বন্ধুরা খ্রিস্‌মাস আসার আনন্দে নানারকমের গল্পে মশগুল হল। একদিন, যখন পিকোলা পাঁচিলের ভাঙা গর্ত দিয়ে ঢুকে তাদের সাথে খেলতে এল, তখন তারা সবাই মিলে জিজ্ঞাসা করল- " পিকোলা, তুই এবার বড়দিনে কি উপহার পাবি বলতো? "

"বড়দিনের উপহার? সেটা আবার কি? "- জানতে চাইল পিকোলা!
এই প্রশ্ন শুনে তো তার বন্ধুরা সব অবাক ! তারপরে, রোস্‌, যে কিনা সবার বড়, সে খুব গম্ভীরভাবে বল- "পিকোলা, তুমি কি জাননা বড়দিন কাকে বলে?"

জানে বইকি ! পিকোলা তো জানে, বড়দিন হল সেই আনন্দের যেদিন, যেদিন যীশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিকোলা তো সেইদিন গীর্জায় গেছে, সেখানে শুনেছে কি সুন্দর গান হচ্ছে। সেখানে একটা ছবিও ও, একটা আস্তাবলের ভেতরে, খড়ের গাদায় শুয়ে আছে একটা ছোট্ট শিশু; তার আশেপাশে রয়েছে ঘোড়া, ভেড়ার দল। পাশে রয়েছেন তার বাবা আর মা। পিকোলা তো সে সবকিছুই জানে। কিন্তু বড়দিনের উপহারটা কি? সেটা তো সে জানে না !

এই কথা শুনে তার বিদেশি বন্ধুদের কি হাসি ...তারা হাসতে হাসতেই তাকে বোঝাতে লাগল বড়দিনের উপহার মানে কি। কিন্ত সবাই মিলে এমনই হট্টগোল করতে লাগল যে পিকোলা ভাল করে কিছু বুঝতেই পারল না - শুধু কতগুলো শব্দ- " চিম্‌নি", "সান্টা ক্লস", "মোজা", "খেলনা", "বল্গা হরিণ" - এইসব শব্দগুলো কানে এল। অত হইচইতে পুরো কানে তালা লেগে যাওয়ার দশা। " আরে বাবা, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। রোস্‌, তুমি আমাকে বোঝাও তো।"- বলল পিকোলা। তখন রোস্‌ তাকে সান্টা ক্লসের গল্প বলল - সেই হাসিখুশি বুড়ো, যার গালগুলো কেমন লাল-লাল, মুখ ভরা সাদা দাড়ি, গায়ে লোমের কোট; তার সাথে বল্গা হরিণে টানা একটা স্লেজ গাড়ি, যাতে ভর্তি থাকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য কত্ত উপহার। " প্রত্যেক বড়দিনে আগের রাতে, যেদিনটাকে আমরা বলি 'খ্রীস্‌মাস ইভ' , সান্টা ক্লস চিম্‌নি বেয়ে নেমে আসে, আর যারা লক্ষ্মী ছেলে আর লক্ষ্মী মেয়ে তাদের মোজায় ভরে দিয়ে যায় কত সুন্দর সব উপহার। পিকোলা, তুমিও তোমার মোজা ঝূলিয়ে রেখ এইবার, সকালে উঠে দেখবে তুমিও হয়ত পেয়েছ দারুণ সুন্দর একটা উপহার।" পিকোলা শুনে ভাবল- আরে, এ তো বেশ মজার ব্যাপার ! ওদিকে তার বন্ধুরা ততক্ষণে তাকে এর আগে যে সব উফার তারা পেয়েছে, সে সব নিয়ে গপ্পো শোনাতে বসল। দিনের শেষে পিকোলা যখন বাড়ি ফিরল, তখন তার মাথায় খালি পুতুল, খেলনা গাড়ি, চুলের ফিতে আর ভালমন্দ খাবারের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।

পিকোলা বাড়ি গিয়ে মা'কে সান্টা ক্লসের কথা জানাল। পিকোলার মা বললেন, সান্টা ক্লস মনে হয় জানেন না যে, অন্ধকার গলির ভেতর এই পুরনো বাড়িটাতে কোন ছোট্ট মেয়ে থাকে, আর তাই মনে হয়না তিনি খ্রিস্‌মাস ইভের রাতে তাদের বাড়ি আসবেন কোন উপহার নিয়ে। কিন্তু এদিকে পিকোলার বন্ধুরা তো বলেছে তারা পিকোলার কথা জানিয়ে সান্টা ক্লস কে একখানা চিঠি লিখে চিম্‌নির ভেতর ঢুকিয়ে দেবে। তাই পিকোলা বেশ নিশ্চিতই হয়ে গেল যে সান্টা ক্লস এবার তার জন্য উপহার আনবেন।

অবশেষে খ্রিস্‌মাস ইভ এল। বড়দিনের আগের সন্ধ্যে। পিকোলার মা কাজ সেরে একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরলেন। মা-মেয়ে দুজনে মিলে অল্প রুটি আর স্যুপ খেয়ে নিলেন। এবার ঘুমাতে যাওয়ার পালা - কারণ না ঘুমালে তো সান্টা ক্লস আসবেনই না। কিন্তু ওহঃ হো ! পিকোলার এই প্রথম মনে পড়ল , তার তো কোন মোজাই নেই । এমনকি তার মায়ের ও কোন মোজা নেই। তাহলে সে উপহার পাওয়ার জন্য মোজা ঝোলাবে কি করে?

ইশ্‌ ! এবার কি হবে? সান্টা ক্লস এসে যদি মোজা না দেখতে পান, তাহলে হয়ত রেগেমেগে উপহার না দিয়েই চলে যাবেন...

ফায়ারপ্লেসের সামনে দাঁড়িয়ে ছোট্ট পিকোলার চোখ দিয়ে টস্‌টস্‌ করে বড় বড় জলের ফোঁটা গড়িয়ে তার দু গাপ বেয়ে নামতে লাগল। তক্ষুনি ওদিকে তার মা ডাক দিলেন- "পিকোলা সোনা, ঘুমাতে এস। এবার পিকোলা কি করবে? কান্না থামিয়ে পিকোলা একটু ভাবল। তারপরে এক ছুট্টে গিয়ে নিয়ে এল এক পাটি কাঠের জুতো। সে জুতোটাকে চিমনির কাছে সাবধানে রেখে দিল, আর মনে মনে নিজেকে বলল, " সান্টা ক্লস ঠিক বুঝতে পারবেন এটা এখানে কেন রাখা আছে। উনি ঠিক জানেন, আমার মোজা নেই, তাই আমি তার বদলে খালি জুতো রেখেছি।"

এইবারে তার মনটা বেশ খুশি খুশি হয়ে গেল, সে দৌড়ে গিয়ে মায়ের কোল ঘেঁষে শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন খুব ভোরে, সূর্য যখন সবে আড়মোড়া ভেঙে উঠে একটু একটু করে তার কিরণ ছড়াচ্ছে, সেই সময়ে পিকোলার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে দৌড় দিল চিমনির দিকে। জুতোটা গত রাতে যেখানে রেখে গেছিল, ঠিক সেখানেই পড়ে আছে। কিন্তু তার ভেতর - তুমি ভাবতেও পারবে না তার ভেতর কি রয়েছে।

পিকোলা যদিও নিজের মায়ের ঘুম ভাঙাতে চায়নি, কিন্তু উপহারখানা দেখে সে আর চুপ করে থাকতেই পারল না। জুতোটাকে হাতে নিয়ে লাফাতে লাফাতে বিছানার কাছে গিয়ে মা'কে ডেকে বলল, " মা, মা! দেখ, দেখ একবার ! সান্টা ক্লস আমার জন্য কি এনেছেন দেখ ।"

তার মা বিছানা থেকে মাথাটা অল্প তুলে জুতোর ভেতরে দেখে বললেন-" আরে পিকোলা, এ কি কান্ড ! তোমার জুতোর মধ্যে একটা ছোট্ট পাখির ছানা? সান্টা ক্লস তো দেখছি খুব ভাল লোক- তোমাকে একটা পাখি এনে দিয়েছেন !"

"হ্যাঁ, হ্যাঁ, সান্টা ক্লস ভাল, খুব ভাল! " আনন্দে চিৎকার করে উঠল পিকোলা।; মনের আনন্দ আর ধরে রাখতে না পেরে সে একবার মাকে চুমু খেল, একবার পাখিটাকে, এমনকি একবার নিজের জুতোটাকেও চুমু খেল; মনে মনে সান্টা ক্লসকে অনেক ধন্যবাদ জানাল সে।

ছোট্ট পিকোলা

পাখিটাকে খুব সাবধানে জুতোর ভেতর থেকে বার করে দেখা গেল, সে বেচারা উড়তে পারছে না, খালি ঘরের এদিক থেকে ওদিক লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। তখন বোঝা গেল, তার একটা ডানা একটু জখম হয়েছে। মা ডানাটাকে যত্ন করে বেঁধে দিলেন, মনে হল তাতে পাখিটার ব্যথা একটু কমল।পাখিটা খুবই শান্তশিষ্ট, সে দিব্যি একটা ছোট্ট পাত্র থেকে জল খেল, পিকোলার হাত থেকে রুটির গুঁড়ো আর গমের দানা খেল। পরে পিকোলা যখন তার বড়দিনের উপহার তার বন্ধুদের দেখাতে নিয়ে গেল, তখন তার মনে মনে যে কি গর্ব হচ্ছিল সে কি বলব। তার বন্ধুরাও অনেক দারুণ সব উপহার পেয়েছে - রঙিন ছবির বই, খেলনা গাড়ি, কথা বলা পুতুল, খেলনা পিয়ানো; কিন্তু সেগুলি কোনটাই পিকোলার পাখির ছানার মত জীবন্ত নয়।

সব্বার পাখিটাকে খুব পছন্দ হল। রোস্‌ গিয়ে সারা বাড়ি খুঁজে একটা পুরনো পাখির খাঁচা নিয়ে এল, যেটাতে একসময়ে তার পোষা একটা পাখি থাকত। সে পিকোলাকে সেই খাঁচাটা দিল। পিকোলার পাখি দিব্যি খাঁচার ভেতর ঢুকে মনের আনন্দে দাঁড়ে বসে দোল খেতে লাগল, আর তার ঝকঝকে চোখে চারিপাশে ঘিরে থাকা বাচ্চাদের দিকে দেখতে থাকল। রোস্‌ পিকোলাকে এক ঠোঙ্গা ভর্তি নানারকমের লজেন্স আর টফি দিল।

দিনের শেষে, নিজের প্রিয় পাখিকে খাঁচার ভেরতে বসিয়ে পিকোলা যখন বাড়ি গেল, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সেই সময়ে গোটা ইতালি জুড়ে ওর থেকে বেশি খুশি আর কোন ছোট্ট মেয়ে ছিল না।


মূল গল্পঃ লিট্‌ল্‌ পিকোলা
লেখকঃ নোরা এ স্মিথ


[ নোরা আর্চিবল্ড স্মিথ (১৮৫৯-১৯৩৪) উনবিংশ শতকের শেষ থেকে বিংশ শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ছিলেন। নিজের বোন কেট ডগ্‌লাস উইগিন এর সাথে তিনি ছোটদের জন্য একাধিক গল্প এবং ছড়ার বই লিখেছিলেন। ছোট ছোট শিশুদের পড়াশোনার বিষয়ে তাঁরা ভাবনা চিন্তা করতেন, এবং সেই সময়ে বেড়ে ওটা কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির সাথে যুক্ত ছিলেন ]


ছবিঃ অর্কপ্রিয়া কোলে

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা