শুরু হয়ে গেছে- বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব, দুর্গোৎসব। নিত্য নতুন মন্ডপে, আলোর রোশনাইতে দশদিক উজ্জ্বল। আমাদের মা দুর্গা এসেছেন বছর ঘুরে, আমাদের সব দুর্গতি নাশ করার জন্য। আমাদের মেয়ে উমা এসেছেন বাপের বাড়ি, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কয়েকটা দিন বিশ্রামের জন্য। এ ক'দিন নাহয় তোলা থাক যত পড়ার বই, যত হাতের কাজ, যত সব হিসাবের খাতা; থাক পড়ে ঘরের কোণে সারাবছরের রুটিন।
দুগ্গা ঠাকুরের গল্প পড়তে পড়তে, শুনতে শুনতে, ইচ্ছামতী আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল- দুগ্গা কি সবসময়েই বড় ছিলেন নাকি? আগে তো ছোট্ট মেয়ে ছিলেন নিশ্চই, তারপরেই না বড় হয়েছেন, যেমন হচ্ছে ইচ্ছামতী। আমি ভাবলাম, সত্যিই তো, আমরা সর্বদাই দেখি, দুর্গার মাতৃমূর্তি- তিনি অসুর দমন করছেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি আসছেন; কিন্তু ছোট্টবেলার উমার খোঁজ রাখি কি? আমাদের চিরকালের চেতনায় মা দুর্গার যে ছবি আঁকা, সেই মায়ের ছোটবেলার চেহারা যদি ভাবি আমরা, তাহলে কিরকম হবে সেই ছবি?
ইচ্ছামতীর আবদারে আমরা সবাই মিলে সেই ছবি এঁকে ফেললাম। আমাদের এই ইচ্ছে-দুর্গার দশ হাতে দিলাম সবার জন্য পেটভরা খাবার, বিশুদ্ধ জল, ঘরের আলো, শিক্ষা ও সৃজনীশক্তির প্রতিশ্রুতি; জ্ঞানের রশ্মি ও তথ্যের ভান্ডার; সমস্ত রকমের মানসিক দীনতা-মলিনতা- সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে বেড়ে ওঠার শক্তি; আর সাথে দিলাম আত্মরক্ষার অস্ত্র; কারণ সুন্দর এই পৃথিবীতে তো হিংসা-মারামারি-হানাহানির শেষ নেই ;দুষ্টলোকের সংখ্যাও কম নয়; তাদেরকে পরাস্ত করার জন্য এবং তাদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল প্রত্যেকের জানা উচিত। এবং প্রত্যেকটি ছোট ছোট মেয়ে এবং ছেলের চরিত্রগঠণে যেটা সব থেকে জরুরী - সেই নির্ভীক চিত্ত, সৎ আত্মা।
আমাদের ছোট্ট দুর্গার আসন তৈরি হয়েছে রামধনুর সাত রঙ দিয়ে; আর সাথে তো একটি ছোটখাটো সিংহছানা থাকতেই হয়!
ইচ্ছামতীর এই দুর্গাকে তোমার কেমন লাগল জানিও। তুমি আর তোমার মত যত আছে ইচ্ছামতীর ছোট ছোট বন্ধুরা, সে তুমি হও খুকুমণি বা খোকাবাবু, মনে-প্রাণে প্রত্যেকে হয়ে ওঠ এক একজন দুর্গা।
ছবিঃঅনুভব সোম