সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদের বুড়ির চরকা চিঠি ১৪২২/১০ - এসে গেল ইচ্ছামতীর পুজোর উপহার- 'পুজোস্পেশ্যাল ২০১৫'

বছরঘুরে আবার এল শরৎকাল। আর আবার এল দুর্গাপুজো। আবার আকাশ হয়েছে ঝকঝকে নীল, সেই নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের দল, সেই সব মেঘেদের মধ্যে যেগুলি একটু বেশি দুষ্টু, তারা মাঝেমধ্যে এক-আধ পশলা বৃষ্টি হয়ে ঝমঝমিয়ে ধেয়ে আসছে ; ভোরেরবেলা কোথাও কোন শিউলি গাছের থেকে নিঃশব্দে টুপটাপ ঝরে পড়ছে শিউলি ফুলেরা। নীলবরণ অপরাজিতারা মায়ের গলার মালা হওয়ার অপেক্ষায় মগ্ন। খাল-বিল গুলি ভরে উঠেছে পদ্মফুলে।

কেউ কেউ ব্যাগ -বাক্স গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ছে দেশ ভ্রমণে; কেউ বা আবার সারা বছর দূর দেশে কাটিয়ে পুজোর ক'টা দিন ফিরছে নিজের বাড়ি- বাবা-মা-ভাই-বোনের কাছে -ঠিক যেমন আসেন মা দুর্গা, ছেলেমেয়ে নিয়ে, বাংলার ঘরে ঘরে , পাড়ায় পাড়ায়, শহরে আর গ্রামে।

এইসব মানুষদের আছে একটা নির্দিষ্ট গন্তব্য; আছে সেখানে গিয়ে ঘুরে ফিরে আনন্দ করে, আবার কয়েকদিন পরে ফিরে যাওয়ার একটা নির্দিষ্ট ঠিকানায়- নিজের কাজের জায়গায়, নিজের অফিসে, নিজের স্কুলে। কিন্তু সারা পৃথিবীতে যত মানুষ আছে, তাদের মধ্যে এইরকম নিশ্চিন্ত জীবনের অধিকারী মানুষের সংখ্যা খুব খুব কম। এই মূহুর্তে, সারা পৃথিবী জুড়ে অন্সংখ্য, অগুন্তি মানুষ , তাদের জীবনের সামান্য সঞ্চয়গুলিকে পুঁটুলি বেঁধে পাড়ি দিচ্ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশ। পেরোচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া, পেরোচ্ছে সমুদ্র, পেরোচ্ছে পাহাড়-বনভূমি। তাদের এই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া কোন আনন্দের বেড়াতে যাওয়া নয়; যে জায়গা ছেড়ে তারা যাচ্ছে, সেখানে তারা আর কোনদিনও ফিরে আসবে না। পৃথিবীতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা এখন বড় বেশি; তাদের নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নানারকমের কারণ, সেইসব কারণগুলি নিয়ে এই মূহুর্তে আর আলোচনা করব না। তাদের একটা পোশাকী নাম আছে -'শরণার্থী'; ইংরেজিতে 'রিফিউজি'। 'শরণার্থী' মানে হল যে আশ্রয় চাইছে। সারা পৃথিবী জুড়ে যত শরণার্থী, তারা আশ্রয় চাইছে অন্য দেশে, অন্য মানুষদের কাছে। চাইছে একটু নিশ্চিন্ত আশ্রয়, দুবেলা দু'মুঠো খাবার, একটু কাজ করার, পড়াশোনা করার সুযোগ।

চাঁদের বুড়ির চরকা চিঠি ১৪২২/১০ - এসে গেল ইচ্ছামতীর পুজোর উপহার- 'পুজোস্পেশ্যাল ২০১৫'

আমাদের মা দুর্গার আরেক নাম 'শরণ্যা', কারণ তিনি সব মানুষকে তাঁর কোলে , বা তাঁর পায়ের কাছে আশ্রয় দেন। কথাটা তো আসলে আক্ষরিক ভাবে সত্যি নয়। সত্যি কথাটা হল, প্রতিটা মানুষের মন নিজ নিজ ধর্মের ঈশ্বরের কাছে আশ্রয় চায়। কিন্তু আসল মানুষটাকে পেটের খাবার জোটাতে, মাথার ওপরের ছাদ জোটাতে, পরনের কাপড় জোটাতে, শান্তি ও স্বস্তিতে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে একমাত্র অন্য মানুষেরাই। এই কথাটা যদি আমরা মাথায় রাখতে পারি, তাহলে আমাদের মন আপনা থেকেই আমাদের প্রিয় ঈশ্বরের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে - সে ঈশ্বরকে আমরা ঈশ্বর, আল্লা, গড, ওয়াহে গুরু বা মা দুর্গা- যে নামেই ডাকি না কেন ।

আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে, বাংলায় ছিলেন এক মহামানব - তাঁর নাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁকে নিয়ে আমাদের অনেক গল্প জানা; তাঁর পান্ডিত্যের জন্য তিনি শুধুমাত্র 'বিদ্যাসাগর' উপাধিই পান নি, তিনি ছিলেন অতি দয়ালু এক মানুষ। অন্য মানুষদের দুঃখ তিনি সহ্য করতে পারতেন না। একবার তিনি তাঁর মা'কে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, জাঁকজমক করে দুর্গা পুজো করার চেয়ে সেই টাকা দিয়ে গরিব-দুঃখী মানুষের সেবা করা বেশি যুক্তিপূর্ণ। তাঁর মা সেই যুগের গ্রামের মানুষ এবং যথেষ্ট ধর্মবিশ্বাসী হলেও, ছেলের কথার যুক্তি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপুজো করা বন্ধ করে দেন, আর সেই খাতে জমানো টাকা দীন- দুঃখী মানুষদের নানাভাবে সাহায্য করতে ব্যয় করেন।

চাঁদের বুড়ির চরকা চিঠি ১৪২২/১০ - এসে গেল ইচ্ছামতীর পুজোর উপহার- 'পুজোস্পেশ্যাল ২০১৫'

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই কথাটা আজকের দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করতে চায়না বা মানতে চায় না। তাই কাদের পাড়ার মন্ডপ ক'টা পুরষ্কার পেল, কে প্রথম হল, কে দ্বিতীয় হল, সেই নিয়ে স্কুলের পরীক্ষার মত প্রতিযোগিতা করে। বড় বড় শহরে, বিশেষতঃ কলকাতা শহরে একেকটা পুজোর মন্ডপ তৈরি হতে, এবং সাথে অন্যান্য জমকালো কান্ডকারখানা ঘটাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। সেই টাকার কিছুটা করে অংশ যদি গরীব দুঃখী মানুষদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা হত, তাতে যে মা দুর্গা অনেক বেশি আনন্দিত হতেন এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।

তাই বলে এটাও বলছি না যে দুর্গাপুজোতে কোনরকমের জাঁকজমকই হবে না। এইসব নানাধরণের সুন্দর সুন্দর মন্ডপ তৈরি হয় বলেই তো আবার কত কারিগর, কত হস্তশিল্পী , বছরে কয়েক মাসের জন্য কাজ পান। নতুন নতুন শিল্পধারার সাথে আমাদের পরিচিতি ঘটে। কিন্তু সেইসব আলোঝলমল মন্ডপের পাশে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকা তোমার বয়সী ছোট্ট মেয়েটাও যদি একটা নতুন জামা পরতে পেত, তোমারই মত, তাহলে কি ব্যাপারটা আরো ভাল হত না?

চাঁদের বুড়ির চরকা চিঠি ১৪২২/১০ - এসে গেল ইচ্ছামতীর পুজোর উপহার- 'পুজোস্পেশ্যাল ২০১৫'

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, আমাদের দুর্গোৎসব শুধুমাত্র ধর্মীয় এক উৎসব নয়, এ হল সৃষ্টির উৎসব, সংস্কৃতির উৎসব, একে-অপরের সাথে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার উৎসব। তাই এই উৎসবে আমরা অন্য সবার সাথে যতটা আনন্দ ভাগ করে নিতে পারব, আমাদের নিজেদের আনন্দ ততটাই বেড়ে যাবে। আর সেই আনন্দ ভাগ করে নিতে ইচ্ছামতীও তোমার জন্য নিয়ে হাজির তার পুজোর উপহার- 'পুজোস্পেশ্যাল ২০১৫' । নানা স্বাদের বড় ও ছোট গল্প, ছড়া, কবিতা, রূপকথা, জানা-অজানা তথ্যে ভরা বিবিধ স্বাদের সব নিবন্ধ অপেক্ষা করে রয়েছে তোমার জন্য। ইচ্ছামতীর তিন ছোট্ট বন্ধু লিখে পাঠিয়েছে ছড়া আর গল্প; ছবি এঁকে পাঠিয়েছে আরো অনেকে। সবক'টা লেখা অবশ্যই পড়ে দেখ, আর তোমার কেমন লাগল, আমাদের চিঠি লিখে জানিও।

এবারের পুজোস্পেশ্যাল সাজিয়ে তুলতে চাঁদের বুড়ির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাহায্য করেছেন ইচ্ছামতীর অনেক নতুন আর পুরনো বন্ধু। তাঁদের মধ্যে দু'জনের কথা না বললেই নয় - ইচ্ছামতীর লেখক বন্ধু অনিরুদ্ধ সেন আর শিল্পী বন্ধু চন্দ্রিমা ঘোষ। নিজেদের কর্মব্যস্ততার মাঝে, এঁরা দুজন আলাদা করে সময় বার করে সম্পাদনার কাজে অনেক অনেক সাহায্য না করলে এই চাঁদের বুড়ির ্সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে কাজকর্ম শেষ করতে আরো সময় লেগে যেত।

তাহলে আর বেশি কথা নয়। এবার শুধু ঠাকুর দেখার ফাঁকে ফাঁকে ইচ্ছামতীর বিভিন্ন উপহারগুলিকে পড়ে দেখা - যখন ইচ্ছা, যেখানে খুশি; ইচ্ছামতী যে সমস্ত রকমের স্মার্ট ডিভাইসেই দিব্যি সুন্দরভাবে দেখতে এবং পড়তে পারা যায়, সে তো জানই।

এই উৎসবের দিনগুলি হোক সুস্থ, আনন্দময়, আলোয় ভরা।

তোমার পরিবারের সবার জন্য এবং তোমার জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।


চাঁদের বুড়ির চরকা চিঠি ১৪২২/১০ - এসে গেল ইচ্ছামতীর পুজোর উপহার-পুজোস্পেশ্যাল ২০১৫

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা