শিল্পীর তুলিতে সিপাহী বিদ্রোহের ছবি
উফ! হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম! কত্তদিন পরে তোমার সঙ্গে দেখা!ইতিমধ্যে কত ঘটনা ঘটে গেল তোমার আমার জীবনে! কেউ কারোর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারলাম না।তবে তোমরা সবাই কেমন নতুন ক্লাসে উঠে গেলে; নতুন বই-খাতার গন্ধ। আমার নিজেরই ইচ্ছে হচ্ছে তোমার সঙ্গে গিয়ে বেঞ্চে বসে পড়ি। কিন্তু ‘সময়’ বড় বিচ্ছিরি জিনিস, কিছুতেই পিছু হাঁটে না। তবে যদ্দুর মনে পড়ে, আমরা সময়ের হাত ধরে এসে দাঁড়িয়েছিলাম সিপাহী বিদ্রোহের চৌকাঠে।
আমাদের পরাধীন ভারতে প্রথম বড় সংগঠিত বিপ্লব বলতে সিপাহী-বিদ্রোহ-কেই বোঝায়। মঙ্গল পান্ডের নাম শুনেছ নিশ্চই। মনে কর দেখি কোথায় শুনেছ! আমার বিশ্বাস ইতিহাস বই এর পাতায় নয়। বরং সিনেমার পোস্টারে।আমির খানের ‘Mangal Pandey—The Rising’…. কি, মনে পড়ছে না? তবে এটা খুব সত্যি যে তুমি যত সিনেমা দেখতে পাও তাতে এটা স্মৃতিতে না থাকার-ই কথা।তবে কি জান, সিপাহী বিদ্রোহের সঙ্গে নামটা খুব জড়িয়ে আছে।মনে করিয়ে দিলাম একবার।
বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে ইতিহাসের সম্পর্ক সতঃসিদ্ধ। পলাশির যুদ্ধের পরেও একশ’ বছর কেটে গেল। ততদিনে সামরিক শক্তি, ছলে-বলে-কৌশলে প্রায় গোটা ভারতকেই গিলে ফেলেছে ইংরেজরা।তবে মজার ব্যাপার কি জান, তাদের উপনিবেশ ধরে রাখার প্রধান অবলম্বন ছিল ভারতীয় সৈন্যবাহিনী।ইংরেজরা এদের ‘সিপাহী’ নামে ডাকত।
১৮৫৭ সালে গোটা ভারতে এই সিপাহীরা ঘোষণা করেছিল এক মহাবিদ্রোহ।বৃটিশ শাসন ব্যবস্থার ভিত টলে ওঠে।ইংরেজরা এরকমটা যে হবে আশাই করে নি।সিপাহী-দের নামে এই বিদ্রোহের নাম তারা দেয় সিপাহী-বিদ্রোহ। এটা কোন সাধারণ মহাবিদ্রোহ ছিল না। সিপাহীরা চেয়েছিল বৃটিশ শাসন টুকরো করে ফেলে ভারতের স্বাধীনতা পুনরূদ্ধার করতে। দিল্লী-র সিংহাসনে বসবেন বাহাদুর শাহ জাফর – এই প্রতীকী স্বাধীনতার ইস্তাহার লালাকেল্লা থেকে ঘোষণা করেছিল মহাবিদ্রোহের নায়কেরা।হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব ধর্মমতের মানুষ এই মহাবিদ্রোহে যোগ দেন। উদ্দেশ্য, পরশাসন থেকে মুক্তি,নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিদেশিদের অত্যাচার আর অবিচার থেকে মুক্তিলাভ। কোনো সামন্ততান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক শাসন প্রতিষ্ঠা করা কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ছিল না।একশ’ বছর অবাধ লুন্ঠন চালিয়েছিল ইংরেজরা। দুর্ভিক্ষ, মহামারী-তে দেশ ছারখার হলেও রাজস্ব আদায় আর আমাদের দেশের ধনরত্ন নিজেদের দেশে পাচার বন্ধ হয় নি কোনোদিনই।সিপাহী-বিদ্রোহ তার বিরূদ্ধেই প্রথম সঙ্ঘবদ্ধ গণ-অভ্যুত্থান। ১৮৫৭-১৮৫৯, এই দু’বছর স্থায়ী হয়েছিল এই ভয়ঙ্কর গণবিদ্রোহ। অবশ্যই হঠাৎই এই বিদ্রোহ ঘটে যায় নি। বিদ্রোহের প্রথম স্ফুলিঙ্গ দেখা দেয় বাংলার মাটিতে, কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরের সেনা-শিবিরে।
১৮৫৭ সালের ২৯শে মার্চ। বিদ্রোহী-বীর মঙ্গল পাণ্ডেকে শায়েস্তা করতে গিয়ে দু জন সাদা চামড়ার সেনা অফিসার গুলিতে আহত হন। মঙ্গল পাণ্ডেকেও তারা গুরুতর ভাবে আহত করে।
বিদ্রোহী বীর মঙ্গল পান্ডে
বিদ্রোহের অপরাধে মঙ্গল পাণ্ডের সামরিক আদালতে বিচার হয়। বিচারে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসি হয় ১৮৫৭ সালের ৮ই এপ্রিল। মঙ্গল পাণ্ডেই ছিলেন প্রথম যিনি অবিচার, বৈষম্য ও ধর্মমতে নিষিদ্ধ চর্বি মেশানো এনফিল্ড রাইফেলের টোটা ব্যবহারের বিরূদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের পক্ষ থেকে বিদ্রোহের ডাক দেন। মঙ্গল পাণ্ডে-কে স্যালুট।
ইংরেজরা মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসি দিল সিপাহীদের শিক্ষা দিতে।উল্টে সেই ফাঁসি যে সিপাহীদের আরও ক্ষেপিয়ে তুলবে তা বৃটিশরা বুঝতেই পারে নি।
সেই গল্প পরের পর্বে বলব।
স্বাধীনতার গল্প ধারাবাহিকের আগের পর্বগুলির লিঙ্ক পাবে এই পাতার নিচে- এই লেখকের অন্যান্য লেখা তালিকায়।
ছবিঃউইকিপিডিয়া