সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
রাজার দেউল

[অনুবাদ সম্পর্কেঃ 'রজাই হুকুম দিছে—এদিম ছেদিম বাই' অনেকটাই বাংলা 'ইকিড় মিকিড় চাম চিকিড়, চামের আগা মজুমদার'-এর মতো অসমীয়া শিশুক্রিড়ার ছড়া। 'রজার দ'ল' -এর প্রসঙ্গও সেরকম ছেলেভোলানো ছড়া তথা 'নিচুকনি গীত'-এর পুরোনো পরম্পরা। সেটি ধরেই বহু মঞ্চে অভিনীত সাহিত্য আকাদেমি পুরষ্কারে সম্মানিত নাট্যকার হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুর নাটকটি রচনা করেছিলেন। এবছর ২০২১-শেও গুয়াহাটির মঞ্চে নাটকটি অভিনীত হয়েছে এনএসডি-র আয়োজিত কর্মাশালাতে।

হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুরের জন্ম ১৯৪১। মাস দুই আগে তিনি জন্মের আশি বছর পার করেছেন। ২০১৭তে অসমীয়া শিশু সাহিত্যে, তথা নাটকে জীবনজোড়া অবদানের জন্যে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। শিশুনাটকগুলো জড় করে এর আগে 'শিশুনাট সমগ্র' প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৪তে। বইটিতে মাত্র ১০টি নাটক সংকলিত হলেও অপ্রকাশিত নাটকের সংখ্যা আরও অনেক, যেগুলো নানা মঞ্চে অভিনীত হয়েছে। একাধিক শিশু উপন্যাসও তিনি লিখেছেন। 'খরিয়ে মেলিলে পাট' ও 'কণ পরুআর বিলৈ' এর মধ্যে অন্যতম। আকাশবাণীর স্বকৃত গীতিকবি তিনি। 'মই কিয় নাস্তিক হলো' নামে ভগৎ সিঙের বইয়ের অসমিয়া অনুবাদও করেছিলেন। সারা অসম জনসাংস্কৃতিক পরিষদের দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন। আকাদেমি পুরস্কার ছাড়াও 'মাধবীলতা সাহিত্য বঁটা ২০০৯' 'ধর্মেশ্বর কটকী শিশু সাহিত্য বঁটা ২০১১' -র মতো বেশ কিছু পুরস্কারেও তিনি সম্মানিত হয়েছেন।]

*****
রাজার দেউল

কচিকাঁচা শিশুমনে রঙের আলো বিলিয়ে দিতে রোদ আসে দেশ বিদেশের সওদা নিয়ে সোনা আর রূপার কাছে। তাদের হাতে মুঠো ভরে দিয়ে যায় রং... ফুলের পাপড়ির রং, প্রজাপতির পাখার রং, আকাশের রামধেনুর রং...রঙই রং। কিন্তু বেলা চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে সোনা রূপার হাত থেকে সেই রংগুলো হারিয়ে গেল। সোনা রূপা আবার রং চেয়ে শহরের বড় বাগানটিতে গেল। আদর যত্নের অভাবে বাগানটি শুকিয়ে গেছিল। মালিদাদার আদরে যত্নে বাগিচাটি আবার সজীব হয়ে উঠল।

ভোগবিলাসী রাজার দেউলে জাকজমক করে রাজার পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। রাজপুরোহিতের প্ররোচনাতে রাজার লোকেরা এসে নানা রঙের ফুলগুলোকে ধ্বংস করতে চাইছে।নিজের অধিকার সাব্যস্ত করে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মালিদাদা রাজার মাটির নিচের কারাগারে বন্দি হল।

বাগিচার রং হারিয়ে গেল। হারিয়ে যায় সোনা রূপার মনের রং। তাদের চোখের সামনে একটি রংহীন আলোবিহীন পৃথিবী। দেশে-বিদেশে রঙের ফেরি করে বেড়ানো শক্তির আধার, আলোর আধার রৌদ্রবেলা আবার আসে পিঠে রঙের ঝুলি নিয়ে। কণ্ঠে তার আশার গান। অসহায় দৃষ্টিতে রংহীন মন নিয়ে সোনা রূপা বসে থাকে নির্বাক নিস্পন্দ হয়ে। বেলা আবার ছোট্ট খোকাখুকীদের রং দেয়। খোকা-খুকীরা সংকল্পবদ্ধ হয়—যে মন্দিরের জন্যে যুতি, টগর, সেঁউতি, মালতির সুবাস হারিয়ে গেল, সোনা রূপার মনের রং হারিয়ে গেল সেই মন্দির ভাঙতে হবে।

রঙের ফেরিওয়ালা রৌদ্রবেলা সবাইকে একতার গোপন মন্ত্র শেখায় —

ভাঙব কি না ভাঙব এত শুধোব কেন?
ভাঙতে হবে রাজার মন্দির...
দীন হও, দুর্বল হও
এ কথা জেনে নিয়ে মন কর স্থির...
সোনা রূপা মন্ত্রটি আওড়াল —
আমরা শিখেছি দেউল ভাঙা
রাজার দেউল ভেঙে পড়েছে
আকাশ হয়েছে রাঙা।

*****
রাজার দেউল

নাটকের পাত্র-পাত্রী —
১) রঙের ফেরিওয়ালা পুরুষ, রোদ বা বেলা
২) সোনা — বালক।
৩) রূপা— বালিকা।
৪) মালতি — বালিকা
৫) সেজ়ুঁতি — বালিকা
৬) চম্পা বালিকা
৭) গোলাপ— বালিকা
৮ ) টগর — বালিকা
৯) মালি — পুরুষ
১০) রাজপুরোহিত — পুরুষ।
১১) ১ম, ২য়, ৩য় সান্ত্রি — পুরুষ।
১২) ১ম ও ২য় প্রহরী— পুরুষ।

*****
রাজার দেউল

(পিঠে রঙের বোঝা নিয়ে রঙিন পোশাকে রং বিক্রেতা মঞ্চে প্রবেশ করবে। চার দিকে যাকে তাকে উদ্দেশ্য করে বলবে,“রং চাই, রং? রং চাই কি, রং? লাল, হলুদ, সবুজ, গোলাপি, বেগুনি, নীল,গেরুয়া কী রং চাই গো! সোনালি,রূপালি, মুগা রং চাই? কে কিনবে রং? রং নেবে কে কিনে গো, রং।

সঙ্গীত বেজে উঠবে। গান করে করে রঙের ফেরিওয়ালা আনন্দে নাচবে। নাচতে নাচতে পিঠের বোঝা নামিয়ে, ঝুলি খুলে ওর পসরা মেলে ধরবে।)

গান
(রচনা : ভুপেন হাজরিকা)

রং নেবে কে কিনে,অ রং নেবে কে কিনে
হৃদয় ভরা রং এনেছি দেব জনে জনে ...২

শালি ধানের সোনা ছোঁয়া হলুদে ধানের ক্ষেতে
আর হলুদ পেলাম শর্ষে ফুলের হলুদ পাপড়িতে
হলদে রঙের ডালি ভরা দেব মনে মনে
রং নেবে কে কিনে

রং নেবে কে কিনে, অ রং নেবে কে কিনে
হৃদয় ভরা রং এনেছি দেব জনে জনে ...১

সবুজ ভরা দূরের ঐ বনানীতে
দূর আকাশের নীল নীল সীমাখানিতে
উড়ে গিয়ে বকটি হারাল ,
বক পাখির সাদা হারিয়ে
খোঁজে বেলা গেল ফুরিয়ে
বকটি কোথায়ই লুকাল
বেত গাছের সবুজ ডালে
লুকিয়ে থাকা সাদা বক
হেসে হেসে বলে,
আমার মত সাদা তুমি পার দিতে এনে।
হেঙুল বরণ ছেড়ে এবার সিঁদুরে পথে গেলাম
সুর্যি মামার দেখা পাব জেনে
সুর্যি বলে, সব কিছু রং জমা করে রামধনুখানি
তার থেকে অল্প নিলে
মনের মাঝে ঢেলে দিলে
স্বপন পাবে রঙিন রঙিন আঁখির কোণে কোণে
রং নেবে কে কিনে ।

রং নেবে কে কিনে , অ রং নেবে কে কিনে
হৃদয় ভরা রং এনেছি, দেব জনে জনে ...১

(দুদিক থেকে দুটি শিশু সোনা রূপা প্রবেশ করবে)

মামনি মামনি,রং এনেছি এই
দেশবিদেশে যেতে হবে সময় হাতে নেই। ২

নাও নাও রং নাও,আন সবারে ডেকে
রঙের দাম নেব না রং নাও গো মেখে
যত খুশি রং নাও দলে দলে এসে
সেই রঙেতে রাঙাও ধরা খিলখিলিয়ে হেসে ২
এস জনে জনে

রং নেবে কে কিনে , অ রং নেবে কে কিনে
হৃদয় ভরা রং এনেছি দেব জনে জনে ...২

(রং বিক্রেতা রঙের বোঝা পিঠের থেকে নামিয়ে মেলে ধরবে)

সোনা — ও মা! এত্তো সব রং! (হাত তালি দেবে)
রূপা — রঙই রং দেখছি!
সোনা — আমাদের কিন্তু বেশি করে দেবে।
রোদ— হ্যাঁ তো! দেব তো। হাত পাত, হাত পাত। বস! দুই হাতে দুমুঠো করে চার হাতে চার মুঠি।এই ঠাকমার/ নানির জন্যে,এই মায়ের জন্যে...
সোনা — আর দিদির জন্যে?
রূপা — আর ঠাকুরদার/ নানার জন্যে?
সোনা — বোনটি যে রইলই।
রূপা — ভাইও তো রইল।
সোনা — আর আমার? আমার ভাগের কী হবে?
রূপা — আমার ভাগের ?
রোদ — দুই হাতে দুমুঠো করে চার মুঠো তো হলই। আর যে দেব জায়গা কই? পাতা নেই, টাতা নেই।কীসে বা দেব?
সোনা — ঝুলি ভরে দাও। তোমার মতো পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যাব।
রোদ— অহ! কিন্তু আর ঝুলি নেই যে।
রূপা — একটা সেলাই করে দাও তবে।
রোদ— সুচ পাব কই, সুতো কই পাব?
সোনা — জোছনাদিদি দেবে। জোছনা দিদি ঝুলি সেলাই করতে সুচ দেয় তো।
রূপা — জোছনাদিদি,সুচ একটা দাও। সুচ কেন গো, ঝুলি সেলাই করতে গো...
রোদ — অহ! সেই চাঁদের বুড়ি! কিন্তু এখন তো সেই বুড়ি দিদি নেই। জোছনা দিদি তো রাতে আসবে।
সোনা — তবে রাত হোক,আমরা রাত অব্দি অপেক্ষা করব।
রোদ — আহা! সে হবে না। আমি ততক্ষণ থাকতে পারব না যে...। মামনি,অ মামনি,রং এনেছি এই দেশবিদেশে যেতে হবে সময় হাতে নেই। আমাকে অনেক দেশে যেতে হবে।তোমাদের মতো ছোটো ছোটো শিশুরা, দেশ বিদেশের শিশুরা আমার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকবে তো।আমি সবাইকে রং দিয়ে যাব,ঝুলির রং শেষ হয়ে যাবে।আবার রং জোগাড় করব,ঝুলি ভরিয়ে নেব... আবার বিলিয়ে যাব।
রূপা — তুমি রংগুলো কোত্থেকে গোটাও?
রোদ — আমি কোত্থেকে রং নিয়ে আসি জান না? আকাশের রামধনুর থেকে। মাঠের সোনালি ধানের থেকে। প্রজাপতির পাখার থেকে। রং বেরঙের ফুলের পাপড়ি থেকে।
সোনা— তবে তো আমরাও প্রজাপতির পাখা থেকে ফুলের পাপড়ি থেকে রংগুলো জোগাড় করতে পারব?
রোদ — পারবে তো!কিন্তু সব রং এক সঙ্গে কই জড়ো হয়ে থাকে জান?
সোনা ও রূপা — কই, কই?
রোদ — রং আছে কই? কই আছে রং? সাত রং কে দেয় রামধনুকে? রং আছে ফুলে,রং আছে আকাশে সব রং গিয়ে জড়ো হয় সুর্যিতে।
সোনা— সব রং গিয়ে জড়ো হয় সুর্যিতে !
রোদ — হ্যাঁ, সুর্যিতে।কিন্তু সুর্যি মানে কী?
সোনা— রোদ!
রূপা — বেলা!
রোদ — আর বেলা মানে কী?
সোনা—বেলা মানে... বেলা মানে... ।
রূপা — বেলা মানে?
রোদ — বেলা মানে দেরি,বিলম্ব।এখন অনেক বেলা হল।আমার যাবার বেলা হল। দেশে বিদেশে ব্যাপার আছে,আমি আর থাকতে পারছি না গো।যাচ্ছি তবে?

(আগের সেই গানের সুর বাজতে থাকবে আর ধীরে ধীরে রং বিক্রেতা রোদ পিঠে ঝুলি তুলে নিয়ে চলে যবে।)

সোনা— অহ! ভুলেই তো গেলাম। তাঁকে আবার আসতে বললাম না যে?
রূপা — বলে দে তো। চেঁচিয়ে বলে দে।
সোনা— (দূরে রং বিক্রেতা যাবার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলতে গিয়ে মুখ মেলে থেমে যায়) কী বলে ডাকব? তাঁর নামটাই তো জিজ্ঞেস করা হল না।
রূপা — (চেঁচিয়ে) ওঅ... রং ওয়ালা, রং ওয়ালা!
রোদ — (নেপথ্য থেকে চেঁচিয়ে) কী হয়েছে মামনি?
সোনা — (চেঁচিয়ে) তুমি আবার আসবে কিন্তু।
রোদ — (আড়াল থেকে) আসব।আবার আসব।
রূপা — তোমার নামটা কী বলে যাও।
রোদ — যে নামে ডাকো।সুর্যি,রোদ,বেলা...
রূপা — বেলা! রং বিক্রেতার নাম বেলা। বেলা আবার আসবে।এবারে এলে ঝুলি ভরে রং নেব কিন্তু।
সোনা — দেখি, তোর মুঠিটি খোল তো। তোকে কী রং দিল দেখি।
রূপা — (মুঠো খুলে অবাক হয়ে)। যাহ! আমার হাতে একটুও রং নেই যে! ডাক ডাক। বেলা কে আবার ডাক।

(দুজনেই রোদ চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে উতাল হয়ে চেঁচিয়ে ডাকে 'ও বেলা, বেলা! ও রোদ! রোদ!' উলটো দিক থেকে কোনও জবাব আসে না।কেবল তাদেরই ডাকের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। সেই প্রতিধ্বনির মাঝেই সঙ্গীত বেজে উঠবে। সেই সঙ্গীতে বিষাদের সুর। গানটিতে সন্ধ্যা মুখার্জির গাওয়া, প্রণয় রায়ের কথাতে 'নতুন সূর্য আলো দাও' গানটির রবীন চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া সুর বেছে নেওয়া যেতে পারে। অথবা স্বাধীন সুর বেছে নেওয়া যেতে পারে।এক দল শিশু ছেলে মেয়ে সেই গান গাইতে গাইতে আর নাচতে নাচতে এসে মঞ্চে ঢোকবে। সোনা রূপা মঞ্চের দুই পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে সেই নাচ দেখতে থাকবে।)

ভোরের সূর্য রং দাও রূপ দাও ২

সাত রঙা দোল খেলা শেষে তুমি লুকোলে গিয়ে গো কই?
তোমার রঙে সাজালে ধরণী ঐ।
হাতে নিয়ে রঙের সাজি রং বিলাও ২
অবাক চোখে আকাশ দেখি নীলিমা সাজাও।

ভোরের সূর্য রং দাও রূপদাও ১

আমরা এসেছি তোমার দুয়ারে মেলে দাও ঝুলিটি তোমার
সাত রঙে সাজাও ধরণী সবুজ ক্ষেত খামার।

বাড়াও হাত, এই প্রভাত রঙে সাজাও
কাতর মিনতি খেলেনা খেলার ফুল ফোটাও।

ভোরের সূর্য রং দাও রূপ দাও ১

তুমি এলে আলো আসে রং আসার পাখা মেলাও।

(ধীরে ধীরে মঞ্চ আঁধার হবে। আবার আলো পড়লে দেখা যাবে মঞ্চের মাঝে কোনও একটা উঁচু জায়গাতে সোনা আর রূপা বসে আছে।)

রূপা — আবার কবে রোদ আসবে?
সোনা — দেশ বিদেশ ঘুরে কত দিন পরে আবার আসে বা।
রূপা — আমরা তবে আবার রং পাব কই?
সোনা — রং থাকে কই?
রূপা— রং বিক্রেতা বেলার হাতে।
সোনা — আর কই কই থাকে?
রূপা— কই বা থাকবে আর? হ্যা, মনে পড়েছে! দাঁড়া, বেলা বলেছিল তো। 'রং আছে কই? কই আছে রং?
সাত রং কে দেয় রামধনুকে?'
সোনা — হ্যাঁ! মনে পড়েছে— 'রং আছে ফুলে, রং আছে আকাশে
সব রং গিয়ে জড়ো হয় সুর্যিতে।'
রূপা — তাহলে চল আমরা ফুল বাগানে যাই। ফুলের কাছে গিয়ে রং দিতে বলি।
সোনা — শহরের মাঝখানের ঐ যে বড় ফুল বাগিচা, সেখানে যাই চল। সেখানে নানা রঙের অনেক ফুল আছে। সাত রঙের সব কটা রং।
রূপা— চল।
(আলো ক্রমে নিষ্প্রভ হয়ে আসবে।নেপথ্যে বিষ্ণুরাভার গান 'বিলতে হালিছে ধুনীয়া পদুমী,ফুলনিতে ফুলিছে ফুল' -এর সুরে যন্ত্র সঙ্গীত বাজতে থাকবে। মঞ্চে আলো জ্বলবার আগে অব্দি এই সুর বাজবে। আলো ফুটতেই সুর বদলে যাবে। এবারে বাজবে নজরুলগীতি 'হলুদ গাঁদার ফুল'-এর সুর।মঞ্চে ছোটো ছোটো চারখানা বেদি সাজানো থাকবে। চারখানা বেদিতে চারটি সমবয়সী বালিকা রঙিন পোশাকে সেজে শুয়ে থাকবে। হাতে হাত ধরে সোনা রূপা এসে মঞ্চে প্রবেশ করবে দাঁড়িয়ে যাবে।)

সোনা — ওমা! ফুলগুলো দেখি নেতিয়ে পড়ে আছে। কী হল?
রূপা— একটাও ফুল ফুটেনি যে!

(দুজনেই একটা একটা করে ফুলের ভূমিকাতে থাকা চারটি বালিকার কাছে যায়।)

সোনা — (প্রথমজনের কাছে গিয়ে) এ কী দেখছি! দেখ কীভাবে ডাল পাতাগুলো ভেঙে ছিঁড়ে পড়ে আছে।
রূপা— (দ্বিতীয়জনের কাছে গিয়ে) কোমল পাতা একটাও মেলে নি। দেখ! একটিও কলি নেই।
সোনা — (তৃতীয়জনের কাছে গিয়ে) এ যে মালতী। চেনাই যাচ্ছে না। কলিগুলো দেখ তো। কেউ যেন ভেঙে ছিঁড়ে চলে গেছে।
রূপা — (চতুর্থজনের কাছে গিয়ে) ও মা! এ কী! টগরকে দেখ। এমনি শুকিয়ে গেছে। কী বা হয়েছে ফুলগুলোর? বাগিচাটিরই কী হয়েছে রে!
সোনা — আয় তো জিজ্ঞেস করে দেখি।
একসঙ্গে দুজনে — ও ফুল! ফুল! ফুটো না কেন? ( ফুলগুলো নীরব)
ও ফুল! ফুল! ফুটো না কেন? ( ফুলবালিকারা সামান্য নড়াচড়া করে)
ও ফুল! ফুল! ফুটো না কেন? ( ফুলবালিকারা 'উহ! আহ!' করে ছটফট করে কোঁকাতে শুরু করে। সোনা-রূপা প্রথম বালিকার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে)
ও ফুল! ফুল! ফুটো না কেন?
প্রথম বালিকা — বেড়া নেই, ঝাঁপ নেই ! গরু ছাগলে চিবিয়ে খায়। ফুটব আমি কেন?
সোনা — বেড়া দেব,ঝাঁপ দেব।রাখালকে এনে ভাত দেব।তবে সে ফুটো যেন ।
দ্বিতীয় বালিকা — ফুটি কী করে? বারোমাসই পড়ে আছি ঝোপে ঝাঁড়ে ঘিরি।
রূপা — মালিদাদা এসে যদি ছেটে দেয় ঝাড় তখন কি মেলবে পাপড়ি?
তৃতীয় বালিকা — মস্ত মস্ত পোকাগুলো যা করে, এসে কুটে কুটে খায়-- পাপড়ি মেলি কী করে?
সোনা — আগুনে পোকা দেব মেরে । ছাই হয়ে যাবে পুড়ে।ফাঁসি কাঠে ওদের এমন ঝুলাব কি-- তখন তো ফুটবে ফুল, বল সখি!
চতুর্থ বালিকা — তেষ্টায় দেখো না গলা শুখায়। এক ফোটা নেই জল। শুকনো ডালে ফুল ফুটাব, কোথায় বা পাই বল?
রূপা — জল দেব মিষ্টি শীতল।পালিয়ে যাবে তেষ্টা।তখন তো গো পাপড়ি মেলার করতে পার চেষ্টা।
সোনা ও রূপা — ও ফুল! ফুল! ফুটবে কি তবে বল?
প্রথম বালিকা — ফুটব।
দ্বিতীয় বালিকা — ফুটব।
তৃতীয় বালিকা — আমিও ফুটব।
চতুর্থ বালিকা — আমিও ফুটব।

(চার ফুলবালিকা এবারে সোনা রূপাকে মাঝে নিয়ে নেচে নেচে গাইবে)

ফুটব গো সই ...
আমরা ফুটব গো সই, ফুটব আবার,
পাপড়ি মেলে দুলব।
সাত রঙের আলোর পানসি
বাগানে ভাসায়ে ছুটব।
ফুটব গো সেঁউতি, মালতী ফুটব।
ফুটব আমি দুধ সাদা জুঁই।
ফুটব তো চম্পা, টগরও ফুটব
থাকব বল কী করে গো শুই।
সুবাস ছড়াব, ঢালব সুরভী
এ উপবন ফের হবে গরবী।
ফুটব গো সই ফুটব...

(গানটি চলতে চলতেই মঞ্চ ধীরে ধীরে আঁধার হয়ে আসবে। মঞ্চে আবার আলো পড়লে দেখা যাবে একই পোশাকে ফুলবালিকা চারজন আবার এসেছে।সঙ্গে জুড়েছে আরও দুজন।গলার ওড়নার,সম্ভব হলে চুলের ফিতার রং গেছে পালটে। তাদের মাঝখানে আধা বয়সের মালি।সোনা রূপা নেই।গান চলতে থাকবে একই সুরে।শুধু কথা যাবে পালটে।এবারে বালিকারা নাচতে নাচতে জায়গা বদল করবে না।বরং গোল করে বা সার ধরে দাঁড়িয়ে হেলতে দুলতে থাকবে। মালি তাদের শেকড়ে খুঁড়ে যত্ন নেবার অভিনয় করতে থাকবে। এরা সমবেত কণ্ঠে গাইতে থাকবে। )

গান

ফুটেছি গো সই...
আমরা ফুটেছি গো সই, ফুটেছি আবার
পাপড়ি মেলে – দেখো, দুলছি।
সাতরঙের আলোর পানসি
বাগানে ভাসায়ে ছুটছি।
ফুটেছি গো সেঁউতি, মালতী ফুটেছি।
ফুটেছি আমি দুধ সাদা জুঁই।
ফুটেছি তো চম্পা, টগরও ফুটেছি
রইতে পারি না গো শুই।
সুরজের রং,মলয় সুবাস
কলির খিল খিল হাসি
ভ্রমরের ধুন, করে গুণ গুণ
পাখিরা বাজায় ডালে বাঁশি
সুবাস ছড়াল,গড়াল সুরভী
প্রজাপতি উড়ে ঘুরে গরবী।
ফুটেছি গো সই...

(গানের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ ক্রমে আঁধার হয়ে আসবে। গান শেষ হলেও ক্ষীণ স্বরে সুর বাজতে থাকবে। মঞ্চে আলো এলে আবারও ফুল বালিকাদের মঞ্চে হেলতে দুলতে দেখা যাবে।কেবল মালিকে দেখা যাবে না। কপালে লাল তিলক, গেরুয়া বসন, হাতে জপের মালা নিয়ে ভয়ঙ্কর সাজে রাজপুরোহিতের প্রবেশ।)

রাজপুরোহিত —
বাহ! আমার চোখে হয় নি তো কোনও ভুল।
যেদিকে তাকাই, দেখি ফুলই শুধু ফুল।
আমাকে তোল, আমাকে তোল
উপবন জুড়ে ফুলেই বিভোল
ফুলের রঙে রূপে সবাই মশগুল
ফুলই ফুল, শুধু ফুলই ফুল।

(যন্ত্রসঙ্গীতের স্বর তীব্র হবে । ফুলবালিকারা ঢেউর মতো হেলতে দুলতে থাকবে। সঙ্গীতের স্বর আবার নম্র হবে। )

রাজপুরোহিত —
কী যে মজা,কী যে মজা
রাজা বানিয়েছে বড় মন্দির
তাঁর মূর্তি সেখানে বসে থাকবে স্থির।
আসবে অগণন ভক্ত প্রজা
রাজা তো নয় যেন দেবতার পূজা।
সুগন্ধী ফুলে হবে সজ্জা
কী মজ্জা! কী মজ্জা!

(আবার সেই তীব্র স্বরের সঙ্গীত। আবার সেই ফুলবালিকাদের হেলে দোলা। রাজপুরোহিত প্রতিটি বালিকার কাছে যাবে আর থুতনিতে ধরে নিজের সংলাপ বলবে।)

রাজপুরোহিত — (প্রথমজনকে) মালতী! কী সুন্দর! কী রূপ!
(দ্বিতীয়জনকে) সেঁউতি দেখছি। কী গন্ধ! কী সুরভী। মন প্রাণ কেড়ে নিচ্ছ যে!
(তৃতীয়জনকে) অহ! আমার চম্পা! আহ! কী যে মন কেড়ে নেওয়া সুবাস গো। (মাথাতে শুঁকে টোকা দেবে)
(চতুর্থজনকে) ওমা! এ যে টগর। সাদা সাদা পাপড়ি।
(পঞ্চমজনকে) তুমি জুঁই! কী সুন্দর! কী চমৎকার! আহ!
(ষষ্ঠজনকে) আরে! এ গোলাপ না? জুড়ি মেলা ভার। রং দেখবে, না গন্ধ নেবে, না নরম কোমল পাপড়িগুলোই ছুঁয়ে দেখবে? দেহ-মন গলে যায়। দেখি, একটা ফুল ছিঁড়েই দেখি তো।

(ছিঁড়তে গেলেই গোলাপ 'ও মা গো!' বলে চেঁচিয়ে উঠবে। রাজপুরোহিত হাত সরিয়ে আনবে।)

রাজপুরোহিত — আহ! বড় রগ চটা দেখি। হাত মেলতেই পারি না। এই যে, যদি ছিঁড়তেই না পারি তবে আর ফুল কেন? ( আবার হাত মেলে। ফুলে হাত দিয়েই 'উফ! কী রে বাবা!' বলে সরে আসে।) ইস! ইস! দিলেই না কাঁটায় বিঁধে! ইস ইস ইস! রক্ত বেরিয়ে এসেছে। সামান্য ফুলের এতো দম্ভ! দাঁড়া! ছিঁড়ব বলেছি, তো ছিঁড়বই। যাই কই?

(গোলাপ বালিকার গলাতে চেপে ধরবে। সঙ্গে সঙ্গে সব কটা ফুলবালিকা হুলস্থূল লাগিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে, 'মরলাম গো! বাঁচাও! বাঁচাও! মালিদাদা ! ও মালিদাদা! দৌড়ে আসো!')

মালিদাদা — (নেপথ্যে) কী হয়েছে? কী হয়েছে? এতো চেঁচামেচি কেন?

গোলাপ— মালি দাদা তাড়াতাড়ি এস।
মালতী — একটা পিশাচ এসেছে, মালি দাদা তাড়াতাড়ি এস।
টগর — আমাদের বাঁচাও!
মালিদাদা — (মঞ্চে এল) কী হল?

(রাজপুরোহিতকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। ওকে দেখে রাজপুরোহিতও ফুল থেকে হাত সরিয়ে আনে।)

রাজপুরোহিত — তুমি? তুমিই মনে হচ্ছে এদের মালিদাদা?
মালিদাদা — হ্যাঁ। আপনি এসে এখানে চুপে চাপে ফুল তুলছেন কেন?
রাজপুরোহিত — বাহ! যেভাবে কথা বলছিস! যেন এটি তোরই বাগান?
মালিদাদা — কার বাগান আবার? এ তো আমদেরই বাগান।
রাজপুরোহিত — এহ! তোমাদের কী করে হবে? শহরের যত উদ্যান আছে, যত কিছু জিনিস আছে সব কিছুর মালিক রাজা।সব কিছু রাজার।এই উদ্যানও রাজার। এর ফুলগুলোও তাঁর।
মালিদাদা — কী করে হবে? আগাছা জঙ্গল পরিষ্কার করে ফুলেদের যত্ন নিলাম আমি,জল দিয়েছি। পোকা তাড়িয়েছি। বেড়া দিয়েছি—রাজার কী করে হবে? এই উদ্যান আমার।
রাজপুরোহিত — এহ! রাখ ! রাখ—এই সব ফুটানির কথা বাদ দে।ইনি এলেন আবার রাজার উপর মহারাজা।এই বাগানই নয়, সংসারের সব বাগান রাজার। ফুলগুলোও রাজার। আমাকে মনে হয় চিনিস নি তুই।
মালিদাদা — চিনেছি তো। ফুল চোর।
রাজপুরোহিত — কী! কী বললে? দাঁড়া, আমাকে চিনিসনি বলেই ওভাবে বলছিস—চিনতে পারলে বলতি না। আমি রাজপুরোহিত।
মালিদাদা — হলেই বা ,তাতেই কী? সেই দিয়ে আমি কী করব? উদ্যানে রাজপুরোহিতের কী কাজ?
রাজপুরোহিত — কাজ আছে। কাজ আছে।আমি কি এমনি এসেছি এখানে? শুন! আমাদের রাজা বহু ধন ব্যয় করে, শ শ হাজার হাজার লোক লাগিয়ে, সোনা রূপা মণি মুক্তো জুড়ে এক প্রকাণ্ড দেউল বানিয়েছেন।

(নেপথ্যে সঙ্গে সঙ্গে ঢোলের শব্দ। কাঁধে ঢোল নিয়ে ঘোষক ঘোষণা করে মঞ্চের একদিক থেকে আর দিকে বেরিয়ে যাবে । )

ঘোষক — শুনুন! শুনুন সবাই! রাজার আদেশ!আগামী অমাবস্যার রাতে স্বর্ণপুর নগরের রাজপ্রাসাদের পুব দিকে নির্মিত 'রাজার মন্দিরে'র দ্বার উন্মোচন করা হবে। পুজোতে ফুল, দীপ, ধূপ, ধুনা, চন্দন আর নৈবেদ্য নিয়ে সবাই সময় মতো উপস্থিত থাকবেন।
রাজপুরোহিত — শুনেছ? শুনেছ কি?
মালিদাদা — শুনলাম।রাজা দেউল বানিয়েছেন,ভালোই করেছেন। পুজোর আয়োজন করেছেন, সেটিও ভালো করেছেন। সেখানকার প্রধান পুরোহিত আপনাকেই সাজে। কিন্তু আমার সেখানে কী কাজ?
রাজপুরোহিত — আমি তো রাজপুরোহিত হয়েই আছি। শেষের কথাগুলো শোন। পরশু অমাবস্যার রাতেই মন্দিরে প্রথম পুজো হবে। আমাদের রাজা নিজেই বেদীতে বসবেন। দেশের চারদিক থেকে ভক্তদের স্রোত বইবে মন্দিরে। তাঁরা রাজাকে পুজো দিতে আসবে। বুঝতেই পারছ কতবড় উৎসব হবে? শুধু প্রজারাই আসবে না, অন্যান্য দেশের রাজা মহারাজারাও আসবেন।
মালিদাদা — আসবেন, ভালোই হবে। প্রজাদের ঢল নামবে, রাতে দিনে পুজো হবে।আমাদের কী হবে তাতে? সেখানে যে যাব আমাদের সময়ই বা কই?
রাজপুরোহিত — তুই গেলে যাবি, না গেলে নেই। আমি কি তোকে নেমতন্ন দিতে এসেছি?
মালিদাদা — তবে আর আমার সামনে দাঁড়িয়ে এত বক বক করছ কেন? আমাকে কি কিছু করতে হবে?
রাজপুরোহিত — পরশু রাজার মন্দিরের পুজোতে সাজির পরে সাজি, টুকরির পর টুকরি মনে মনে ফুল লাগবে। পুজোতে তো লাগবেই। পুরো দেউল ফুল দিয়ে সাজানো হবে। হাজার হাজার ভক্ত ফুলের পাপড়ির উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াবে। ফুলের সুকোমল আসনে বসবে। সে জন্যেই রাজার হুকুম— রাজ্যে যেখানে যত ফুল আছে রাজার লোকে গিয়ে সব তুলে আনতে হবে।
মালিদাদা — সে কী করে হবে? সে কক্ষনও হতে পারে না।
রাজপুরোহিত — রাজার হুকুমের কি আর নড়চড় হতে পারে? যেমন আদেশ তেমন কাজ হতেই হবে। এই উদ্যান আমার দেখা সবচাইতে সুন্দর, নজর কাড়া। রঙ বেরঙের কত বিচিত্র ফুল। কী তার সুগন্ধ! কী বা সুবাস। রাজা বড় খুশি হবেন।বড় আনন্দিত হবেন।বড় ভালো লাগবে তাঁর।
মালিদাদা — সে হবে না। এক উদ্যানের একটি ফুলও আমি ছিঁড়তে দেব না। কত আদরে, কত যত্নে আমি এদের বড় লালন পালন করেছি, বড় করেছি—আমিই জানি। আমি কখনও তা হতে দিতে পারি না। সে যদি হত কোনও দেবতার মন্দির তবুও না হয় একটা কথা ছিল।
রাজপুরোহিত — এহ! এর কথা শুন। যদি ছেঁড়াই যাবে না, যদি রাজার পূজায়, দেবতার পূজায় দেওয়াই না হল তবে আর ফুল কেন? রাজার আদেশের উপরে কথা! তোমার দেখছি বড় সাহস! আমিই ছিঁড়ব। কী করবে তুমি?

(রাজপুরোহিত ফুল ছিঁড়তে উদ্যত হল। ফুলবালিকারা “মরলাম গো! খেয়ে ফেলল গো! মালিদাদা বাঁচাও!” বলে চেঁচাবে। দুই তিনজনে ভয়ে কাঁদতেও শুরু করবে।)

রাজপুরোহিত — বাহ! এদেরও দেখি বড় মুখ ফুটে। দাঁড়া, যাবি কই? সান্ত্রি পাঠিয়ে তোদের বারোটা বাজাচ্ছি। একটা কলিও রক্ষা পাবে না।
মালিদাদা — আমি কাতর মিনতি করছি রাজপুরোহিতমশাই। আপনি সান্ত্রি পাঠাবেন না। এদের জীয়ন্তে মরা করবেন না। এরা নিজেরাই আপনাকে বেছে বেছে ফুল তুলে দেবে। এদের শাস্তি দেবেন না। বেচারা কোমল কলিগুলোকে ফুটতে দিন। (ফুলবালিকারা ফিসিফিসিয়ে কেঁদে যাবে)
রাজপুরোহিত — হবে না! একটা ফুলের পাপড়িও রক্ষা পাবে না।রাজার আদেশ অমান্য করবার, দেবতার পুজোতে অবহেলা করবার শাস্তি তোরা হাতে হাতে পাবি। রাজাই এখন দেবতা। রাজার বাইরে কোনও দেবতা নেই!
মালিদাদা — (পুরোহিতের পায়ে ধরে) এত নিষ্ঠুর হবেন না ঠাকুরমশাই! দয়া করুন। আমি নিজেই বেছে বেছে সেরা ফুলগুলো আপনাকে দিয়ে আসব গিয়ে।
রাজপুরোহিত — হয়েছে হয়েছে। সান্ত্রির নাম শুনে পেটে হাত পা লুকিয়ে গেছে। দেখি, পথ ছাড়। (মালিকে পায়ে ঠেলে চলে যায়।)
মালিদাদা — ঠাকুরমশাই! রাজপুরোহিত মশাই! (ফুলবালিকারা কাঁদতে থাকবে। মালি এক এক করে ওদের মাথাতে আদর করতে থাকবে) কী করি এখন? কী করেই বা তোদের রক্ষা করি? অন্য কেউ হলে কথা ছিল না।রাজারা আদেশ মানলেও বিপদ, না মানলেও বিপদ। আমি এখন কী করি? —চোখের সামনে সান্ত্রিরা তোদের দুমড়ে মুচড়ে ফেলবে। আমি কী করে এই সব সহ্য করব ? কাঁদবি না রে কাঁদবি না।

(মালি বালিকাদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকবে। ওদিকে সোনা রূপা এসে ঢুকবে।)

সোনা — মালিদাদা! মালিদাদা!
রূপা — কী হল? তুমি কাঁদছ কেন মালিদাদা?
সোনা — (ফুলবালিকাদের) কী হয়েছে? তোমরা কাঁদছ কেন?
মালিদাদা— সর্বনাশ হয়ে গেছে রে সোনারা। সব সর্বনাশ হয়ে গেল। আমদের সবার আশা পিশাচগুলো পায়ে পিষে চলে গেল। এখন আর কোনও উপায় নেই।
রূপা — কী হয়েছে বল তো। তোমাদের কে কী করল? পিশাচগুলোই বা কারা?
সোনা — কাঁদবে না তো মালিদাদা। (বালিকাদের) তোমরাও কাঁদবে না। বল তো দেখি, বল কী হয়েছে?
মালিদাদা— আমাদের রাজা বুঝি প্রকাণ্ড দেউল একটা তুলেছেন।
সোনা — হ্যাঁ, তুলেছেন তো। বিশাল দেউল। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আকাশের অনেক উপরে সূর্যের কিরণ পড়ে দেউলের কলসিটাও সূর্যের মতোই ঝলকায়। চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। লোকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
মালিদাদা— শুনেছি গো বাবারা, শুনেছি! একটু আগে রাজপুরোহিত এখানে এসেছিলেন। তিনি রাজার আদেশ আমাদের শুনিয়ে গেলেন।
সোনা — রাজপুরোহিত এসেছিলেন, এখানে?
রূপা — কেন এসেছিলেন রাজপুরোহিত?
সোনা — কী হুকুম শোনালেন তিনি, মালিদাদা?
মালিদাদা — রাজার আদেশ। পরশু দেউলে রাজার পুজো হবে। রাজ্যে যেখানে যত ফুল আছে সব তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের উদ্যানেও রাজা আর রাজপুরোহিতের নজর পড়েছে গো। এখন কী করবি?
সোনা — কী! এ কক্ষনো হতে পারবে না। মরে গেলেও আমরা ফুল ছিঁড়তে দেব না।
রূপা — কিন্তু আমাদের কথা কি রাজা শুনবেন? আমরা কী করে রাজাকে বাধা দেব? রাজার লোকে যদি এসে জোর করে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়?
মালিদাদা— হ্যাঁ, তাই তো। জোরে ছিঁড়ে নিয়ে যাবে। আমি রাজপুরোহিতকে কত কাকুতি মিনতি করলাম। হাতে পায়ে ধরলাম। না, কোনও ফল হল না। আমাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে চলে গেলেন। বললেন, এবারে বুঝি রাজা সান্ত্রি পাঠিয়ে দেবেন। কলিগুলোকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
রূপা — তবে এখন কী হবে?
সোনা — এ্যাই, চল আমরা শহরের সব মানুষকে গিয়ে বলি। সান্ত্রিদেরকেও অনুরোধ করি।
মালিদাদা — কিচ্ছু লাভ হবে না গো, কোনও কাজ হবে না। দেখিস নি উদ্যানের কী অবস্থা হয়েছিল? কেউ একটা রা করেছিল? রাজার মুখের সামনে কেউ রা করে না।গরু ছাগলে খেয়ে যায় বলে বেড়া দিলাম,পোকা গুলো পিষে পিষে মারলাম।এখন যদি রাজা এক পাল হাতি পাঠিয়ে দেন, এই বেড়া, এই ঝাঁপে আটকাব কী করে?
রূপা — পুরো রাজ্যের সমস্ত ফুল যদি এভাবে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয় তবে রংগুলো কই থাকবে? প্রজাপতি থাকবে কই? আমরা কোথায় রং পাব?
সোনা — রং না হলে যে সব কালো হয়ে যাবে। সব ফ্যাকাশে হয়ে যাবে— তাই না মালিদাদা?
মালিদাদা — হ্যাঁ তো। সবার মুখের হাসি মিলিয়ে যাবে। সব মানুষ রাজার মতো, রাজপুরোহিতের মতো, সান্ত্রিদের মতো পাথর হয়ে যাবে।
রূপা — তবে আমরা কোনওভাবেই ফুল ছিঁড়তে দেব না।
সোনা — দেব না তো। কখনওই দেব না।
রূপা — দেব না। কিছুতেই দেব না।
মালিদাদা — দেব না গো।কিছুতেই দেব না।এভাবে ফুল ছিঁড়তে দিলে রং সব হারিয়ে যাবে। আর অন্ধকার দেশে শুধু রাজা আর রাজপুরোহিতই থাকবে। সান্ত্রিরা কী বুঝবে ফুলের মূল্য?
রূপা — সেরকম হলে নিশ্চয় রোদও আসবে না। চাঁদও উঠবে না।
সোনা — উঠবে না তো। রোদ রং দেয়। ফুল না থাকলে রং দেবে কাকে? চারদিক অন্ধকার হয়ে যাবে।
মালিদাদা — তাই আমরা ফুল ছিঁড়তে দেব না।
সোনা — দেব না ! কক্ষনো দেব না। মরে গেলেও দেব না।
মালিদাদা — (ফুলবালিকাদের দিকে তাকিয়ে) এ্যাই। তোরা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছিস কেন? মন খারাপ করতে হবে না। হাস, হাস দেখি তো। হেলে দুলে হাস। আমরা আছি না? আমরা কখনও ফুল ছিঁড়তে দেব না। তোরা হাস, আনন্দ কর, স্ফূর্তি কর।

(ফুলেরা খিলখিলিয়ে শরীর দুলিয়ে হাসতে শুরু করে। তাদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে মালি, সোনা আর রূপা গান ধরে।)

গান
ফুল, ফুল, ফুল—
কী হয়েছে ভুল
এত নীরব হলে কেন,
মুখের হাসি উড়ে গেছে, বাজ পড়েছে যেন।

ফুল ফুল ফুল...

কোন দানবের চোখ
কোন পিশাচের নোখ
তোমার রূপে আঁচ ফেলেছে
বুক ধুকপুক ভয়—কেঁপেই চলেছে

ফুল ফুল ফুল...

ভয় করিসনে সই,
(তোদের) কাজের কথা কই।
কলির নিচে বিষের কাঁটা
অস্ত্র আছে হাতে —সেই হোক না ঝাঁটা

ফুল ফুল ফুল...

(ওদের) মুখের উপর মার
ঝাঁটা ছুঁড়ে মার
হেসে খেলে নাচ
সোনা রূপা পাশে আছি, মালিদাদা আর

ফুল ফুল ফুল...

( সবাই খিলখিলিয়ে হাসবে। তেমন সময় জনা কয় সান্ত্রি এসে ঢুকবে। হাতে লাঠি, বল্লম, বর্শা। সঙ্গে সঙ্গে হাসি বন্ধ হয়ে যাবে।)

১ম সান্ত্রি — এ্যাই, এখানে মালিটা কে?
মালিদাদা— কেন? মালি কেন?
২য় সান্ত্রি — দরকার আছে। ওকে চাই। তুই ই কি মালি?
মালিদাদা— হ্যাঁ, আমিই মালি? তাতে কী হয়েছে?
৩য় সান্ত্রি — কী হয়েছে মানে? তুই বুঝি রাজপুরোহিতকে কিল ঘুসি মারাটাই বাকি রেখেছিস? বাগানের ফুল বুঝি পাড়তে দিবি না তুই?
১ম সান্ত্রি — তোর দেখি, অনেক সাহস। রাজার হুকুম মানিস না!
রূপা — দাঁড়াও তো দেখি, সান্ত্রিদাদা। মালিদাদাকে শুধু ধমক দিচ্ছ কেন?
২য় সান্ত্রি — তুই আবার কোত্থেকে এসে টপকালি ওর হয়ে কথা বলতে? কচি খুকি! যা এখান থেকে।
সোনা — তোমরা কিছু না বুঝেই চেঁচামেচি শুরু করেছ।আমাদের কথা আগে শুনে নাও দেখি।
৩য় সান্ত্রি — এহ। এলেন এই আরেকজন। কথা বোঝাবার পণ্ডিত। আমরা কিছু শুনতে পারব না। রাজার আদেশ! মালিকে ধরে নিয়ে যেতে হবে। এ্যাই , চল চল। ধর একে। বাঁধ! (বাকিরা মালিকে ধরে বেঁধে ফেলবে।) এ বড় বলিয়ে কইয়ে হয়েছে। চল চল। এখন টের পাবি।
রূপা — মালিদাদাকে এভাবে বাঁধবে না। ব্যথা পাবে তো। মালিদাদাকে ছেড়ে দাও সান্ত্রিদাদা!
সোনা — তোমাদের মিনতি করছি, মালিদাদাকে ছেড়ে দাও। ও কোনও দোষ করে নি।
তিন সান্ত্রি একসঙ্গে — সর! সরে দাঁড়া। যা বলছি না।
মালিদাদা — দেখ̖, দেখ̖ সবাই। এই ফুলগুলো ছিঁড়ে নিয়ে গিয়ে রাজা উৎসব করবেন। তোরা সবাই মনে মনে সহ্য করছিস যে? রাজার আদেশ হল বলেই ন্যায় অন্যায় বিচার করে দেখতে পারিস না?
১ম সান্ত্রি — এ্যাই, চুপ কর। খবরদার বলছি! রাজার বিরুদ্ধে কথা বলবি না। মেরে পিঠের ছাল তুলে নেব। চল! চল!

(মালিদাদাকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে এগোয়। সোনা রূপা “মালিদাদাকে ছেড়ে দাও, নিয়ে যেও না” বলে সান্ত্রিদের হাতে পায়ে ধরবে। ৩য় সান্ত্রি তাদের ঠেলে ফেলে দিয়ে “চল চল” বলে মালিকে ঠেলে , টেনে নিয়ে এগুতে থাকল। সোনা রূপা “মালিদাদা! মালিদাদা!”বলে কাঁদতে থাকে। মঞ্চ ক্রমে অন্ধকার হয়ে আসে। আবার আলো পড়লে দেখা যাবে ফুলবালিকারা মাথা নুয়ে বসে আছে। সোনা রূপা একটি বেদিতে দাঁড়িয়ে আছে।)

রূপা — সোনা!
সোনা — হুঁ। এ কী হল?
রূপা — মালিদাদাকে এরা কী করবে?
সোনা — বেঁধে রাখবে। রাজার পাতাল কারাগারে ভরিয়ে রাখবে।
রূপা — কারাগার কী?
সোনা — চোর ডাকাত, দুষ্ট লোক যাতে বেরিয়ে আসতে না পারে এমন করে পুরে রাখবার অন্ধকার ঘর।
রূপা — মালিদাদা তো চোর, ডাকাত, দুষ্ট মানুষ নয়। কত ভালো মালিদাদা!
সোনা — রাজার কথা যেই শোনে না রাজার মতে সেই দুষ্ট।
রূপা — (একটু ভেবে নিয়ে) আসলে তো রাজাই দুষ্ট, তাই না?
সোনা — দুষ্টই তো।
রূপা — আসলে রাজাকেই এই কারাগার না কি, সেই অন্ধকার ঘরে এমন ভাবে ভরিয়ে রাখতে হয় যেন আর বেরোতে না পারে। আর...
সোনা — আর কী?
রূপা — আর মালিদাদাকে রাজা করতে হয়। বেশ ভালো হবে না?

(নেপথ্যে প্রহরীর পায়ের শব্দ। সেই সঙ্গে হুঙ্কার 'খবরদার!হুঁশিয়ার!' দুদিক থেকে বর্শা হাতে দুই প্রহরী এসে প্রবেশ করবে। গম্ভীর পায়ে এদিক থেকে ওদিকে আসা যাওয়া করতে থাকবে।)

১ম প্রহরী— কাল অমাবস্যা না?
২য় প্রহরী— হ্যাঁ, তো। কালকেই তো দেউলে পুজো।
১ম প্রহরী— তবে তো রাতভোরেই ফুল তুলতে রাজার লোক আসবেই?
২য় প্রহরী— হ্যাঁ তো। এখন পুরো রাত ধরে পাহারা দিতে থাক̖, যাতে কেউ একটা ফুলের পাপড়িও নিয়ে যেতে পারে না।
১ম প্রহরী— কী অদ্ভূৎ! ফুলকেও আবার পাহারা দিতে হয়? এমন কান্ড কিন্তু জীবনে এই প্রথম দেখলাম রে!
২য় প্রহরী— দেখবি , দেখবি। এই রাজার দিনে এমন আরও বহু কিছু দেখবি।
(নেপথ্যে শঙ্খ ঘন্টা কাঁসর বাজবে)
১ম প্রহরী—এই! পাহারা দে! পাহারা দে!

(টহল দিতে দিতে দুজনেরই প্রস্থান। মঞ্চের আলো ক্রমে নিষ্প্রভ হবে। নেপথ্যে শেয়াল কুকুরের ডাক। সোনা রূপা উপরে আলো কেন্দ্রীভূত হবে।)

সোনা —রূপা !
রূপা —ওঁ ?
সোনা —ভোর বেলা তবে কী করবি? শুনলি না? ফুল ছিঁড়তে রাজার লোক আসবে। রাতভোরেই আসবে বুঝি।
রূপা —কী করবি বা?
সোনা —যা আছে কপালে , হবে। মালিদাদাকে মনে পড়ছে?
রূপা — এরা মালিদাদাকে শাস্তি দিচ্ছে নিশ্চয়।

(নেপথ্যে আবার 'খবরদার!হুঁশিয়ার!' প্রহরী দুজন আবার যাতায়াত করতে থাকবে। নেপথ্যে থেকে মেয়েদের সমবেত কণ্ঠে ছেলেভোলানো গান হতে থাকবে...)

গান

ছেলে ঘুমাল, পাড়া জুড়াল
বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কীসে।।

ধান ফুরল, পান ফুরল
খাজনার উপায় কী?
আর ক'টা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি।।

ছেলে ঘুমিও না,পাড়া জুড়বেনা
বর্গী আছে দেশে
ধানের গোলা ফুরিয়ে যাবে
খড় কুড়বে শেষে

ওরা আজও ফন্দি আঁটে
সূর্য নেবে লুটেপুটে
আমরা সবাই ঘুমিয়ে গেলে
সূর্য নাববে কীসে।।

(প্রহরীর প্রস্থান)

সোনা —রূপা!
রূপা —হুঁ।
সোনা—তুইও তো বেশ গান পারিস। একট গান কর না।
রূপা —কী গান?
সোনা —এই এরকম পাড়া জুড়ানোর গান... চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে...
রূপা—ফুল আর ফুটছে কই? ফুটবে না।
সোনা —তবে এই না ফুটার গানই গা...
রূপা—কী গান করব আমি, সব গানই তো ফুরিয়ে গেল, সেই রূপ কথার গল্পে যেমন নটে গাছটি মুড়িয়ে গেল...

গান
(অরিন্দম গাঙুলির সুর করা আছে।)
আমার কথাটি ফুরা'ল
নটে গাছটি মুড়াল
"কেন রে নটে' মুড়ালি?'
"গরুতে কেন খায়'
"কেন রে গরু খাস?'
"রাখাল কেন চরায় না'
"কেন রে রাখাল চরাস না?'
"বৌ কেন ভাত দেয় না'
"কেন লো বৌ ভাত দিস না?'
"কলাগাছ কেন পাত ফেলে না'
"কেন রে কলাগাছ পাত ফেলিস না?'
"জল কেন হয় না'
"কেন রে জল হস্ না?'
"ব্যাঙ কেন ডাকে না'
"কেন রে ব্যাঙ ডাকিস না?'
"সাপে কেন খায়'
"কেন রে সাপ খা'স?'
"খাবার ধন খা'ব নি? গুড়্ গুড়ুতে যা'ব নি?'
যাহ! ভাল্লাগছে না। আর গাব না...।

সোনা — গা না, গা। থেমে গেলি কেন?
রূপা— উহু! ভালো লাগে না।
সোনা — কেন?
রূপা— সেই তো একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর গান। নটে গরুর কথা বলবে, গরু রাখালের কথা, রাখাল বৌয়ের কথা...এভাবে চলতেই থাকবে। কিছু একটা না করলে ফুল ফুটবে কেন?
সোনা — আসলে তো দোষ সেই সাপগুলোরই, তাই না।সাপে ব্যাঙ না খেলে এরা দিব্বি ডাকতে পারে। ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হয়, বৃষ্টি হলে... এরকম সবাই সবার কাজ করে যেতে পারে।
রূপা— সাপের আবার দোষ কোথায় দেখলে? দোষ ওর বাপ-দাদার হে।
সোনা — সাপের বাপ ঠাকুরদাকে পাতালে কারাগারে নিয়ে গিয়ে ভরিয়ে রাখতে হয়।
রূপা— কী করে দেবে? ওরা নিশ্চয় বুড়ো হয়ে মরেই গেছে। এখন সাপ সেই রীতিটাই শুধু মেনে আসছে।
সোনা — আঁধারে মাধারে যেখানে খুশি লুকিয়ে থাকা এই সাপগুলোকে আমি এক্কেবারে দেখতে পারি না।
রূপা— আমিও...
( আবার 'খবরদার! হুঁশিয়ার!' বলতে বলতে প্রহরী দুজনে এসে বার দয়েক টহল দিয়ে চলে যাবে। সোনা রূপা ভয়ে জুবুথুবু হবে।)
সোনা — রূপা!
রূপা — হুঁ।
সোনা — কী ভাবছিস?
রূপা— ভাবছি, সকাল হলে কী করব? শহরের সবাইকে কি ডেকে আনব?
সোনা — শহরের সবাই আজ উৎসবে মত্ত। কেউ আসবে না।
রূপা— কেন? আমাদের মা বাবা, ঠাকুরদা ঠাকুরমা। দাদা দিদি। কাকা কাকিমা।
সোনা — এলেনই বা। রাজার সঙ্গে কী আর পেরে উঠবেন? সবাইকে নিয়ে গিয়ে কারাগারে পুরে দেবে।
রূপা — তবে কী করবি?
সোনা — সেই রং বিক্রেতা বেলা যদি আসত।
রূপা — সে এখন কোন রাজ্যেই বা আছে।
(আবার প্রহরীর প্রবেশ। টহল দেবে। মুরগ ডাকবে। পাখিদের কুজন স্পষ্ট হতে থাকবে। ক্রমে মঞ্চে ক্রমে আলো বাড়তে থাকবে ।)
১ম প্রহরী — এই, ভোর হচ্ছে মনে হয়।
২য় প্রহরী — হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে।
১ম প্রহরী — যাহ! আমাদের কাজ শেষ তবে। ফুল তুলতে আর কিছু পরেই লোক আসবে।
২য় প্রহরী — চল , ধীরে ধীরে দেউলের দিকে এগোই।

(প্রহরী চলে যাবে। মঞ্চে পুরো আলো। নেপথ্যে ক্রমে সেই গান শোনা যাবে 'রং নেবে কে কিনে,অ রং নেবে কে কিনে' । সোনা রূপা প্রবল উচ্ছ্বাসে পরস্পরের মুখের দিকে তাকাবে। গানের স্বর কাছে আসতেই এরা সেইদিক ধরে মঞ্চের প্রায় কিনারে চলে গিয়ে ডাক দেবে ' বেলা! বেলা! রোদ! রোদ!'। রোদ ভেতরে আসবে। গান আধাতেই থেমে যাবে।)

রোদ — আরে! তোমরা দেখছি! এত ফুলের ভিড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমরা কী করছ?
রূপা — আমরা তোমার কথা ভেবে ভেবেই পথ তাকিয়ে আছি, জানো রোদ? তুমি যেভাবে এসেই গেলে আমাদের যেন মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। নিজেদের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না।
সোনা— তুমি কি আমাদের মনের কথা টের পেয়ে গেলে?
রোদ— হ্যাঁ, সোনারা! আমি ছোটোদের মনের কথা খুব ভালো বুঝে ফেলি।
রূপা — জান,রোদ আমরা খুব বিপদে পড়েছি।
রোদ — বিপদ? কেমন বিপদ? বল তো দেখি।
সোনা— তুমি চলে যাবার পরেই আমাদের রংগুলো সব হারিয়ে গেল।
রোদ — অহ! তাই বুঝি?
রূপা — আমরা রঙের খুঁজে এই বাগানে এলাম।
সোনা— বাগানে এসে দেখি একটাও ফুল নেই।
রূপা — সব ফুল গরু ছাগলে খেয়ে ফেলেছিল। এত্ত এত্ত ঝোপ ঝাড় জঙ্গল। বেড়া নেই, ঝাঁপ নেই। জল না পেয়ে তেষ্টাতে সব ফুল মিইয়ে গিয়েছিল।
সোনা— বড় বড় পোকা।
রোদ — ইস! ইস! তা তোমরা করলে কী?
রূপা — আমরা মালিদাদাকে ডেকে আনলাম।
সোনা— মালিদাদা বেড়া দিল, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করল। যত্ন পেয়ে ফুলফুলো পাপড়ি মেলে দিল।
রোদ — তাই বুঝি? খুব ভালো করেছ। তা তোমরা রং পেলে কি পেলে না?
রূপা — রাজা আজ সমস্ত ফুল পেড়ে নিয়ে যাবে। রাজা আদেশ করেছেন।
রোদ — রাজার দেউলে আজ পুজো। অনেক ফুল চাই। দেশের সমস্ত ফুল।
রূপা — জান, বেলা? রাজা মালিদাদাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে পুরে রেখেছে। (হালকা কান্না)
রোদ — আহ! তাই কি?
সোনা— এখন আমরা কী করি, রোদ?
রোদ — রাজাকে মজা শেখাতে হবে, এই তো? আর ফুলগুলোকেও বাঁচাতে হবে। আমি একটা মন্ত্র জানি। মন্ত্রটি তোমাদের শিখিয়ে দেব।
রূপা — মন্ত্র? মন্ত্র তো জানে পুরোহিত।
সোনা— কী করতে হবে?
রূপা — তুমি যেভাবে বলবে আমরা সেভাবেই করব।
রোদ — আমাদের কী করতে হবে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। দেখি, হাত পাত তো।
রূপা — রং দেবে বুঝি?
রোদ — হ্যাঁ, রং দেব। (সোনাকে) এই তোমার দুই হাতে অঞ্জলি ভরে লাল রং। (রূপাকে) আর তোমার দুই হাতেও আগুন রঙের, সিঁদূর রঙের, ভোরের সূর্য রঙের লাল লাল রং।
রূপা — বাহ! বাহ! রঙই রং! রঙই রং!
রোদ — এখন মুঠো বন্ধ কর। আমাদের তিনজনের দুটো করে মুঠো। ক মুঠো হল?
সোনা, রূপা — ছয় মুঠো।
রূপা — তাতে কী হল?
রোদ— এই দুই মুঠি। আমার মুঠির উপরে তোমার মুঠি রাখ। মুঠির উপরে মুঠি। ছয় মুঠি। ছয়টি মুঠি এক সঙ্গে লেগে গিয়ে কী হল?
রূপা— কী হল?
সোনা — ছয় মুঠো এক সঙ্গে কী হল?
রোদ— ছয় মুঠো জুড়ে গিয়ে হল রাজার মন্দির, রাজার দেউল।
রূপা — রাজার দেউল?
রূপা — হ্যাঁ, এটি কার দেউল?
সোনা, রূপা — রাজার দেউল।
রোদ— ভাঙব কি?
সোনা, রূপা — না, ভাঙবে না।
রূপা — কালাকে ডাক দেব?
সোনা, রূপা — না, ডাকবে না।
রূপা — ধলাকে ডাক দেব?
সোনা, রূপা — না, ডাকবে না।
রূপা — কালা ক্কাচ! ধলা ক্কাচ! ঘেক্কাচ! ভাঙব কি না ভাঙব এত শুধোব কেন?
ভাঙতে হবে রাজার মন্দির...
দীন হও, দুর্বল হও
এ কথা জেনে নিয়ে মন কর স্থির...
(সঙ্গে সঙ্গে রূপা ডানদিকে, সোনা বাঁদিকে মঞ্চের বাইরের দিকে তাকিয়ে চেঁচাবে)
রূপা — ঠাকুরদা, দাদু, দিদিমা! (নান্‌ নানি!)বাবা! মা! এস ! এস! আমরা দেউল ভাঙা শিখেছি।
সোনা— দাদা! দিদি! কাকু! কাকিমা! (ফুফু ,খালা) এসো, এসে দেখে যাও ! আমরা দেউল ভাঙা জেনে গেছি।
রূপা — আমাদের বন্ধুরা! বান্ধবীরা—খেলার সাথি, সঙ্গীরা এস। দৌড়ে এস।
সোনা,রূপা —
আমরা শিখেছি দেউল ভাঙা ।
রাজার দেউল ভাঙল ওই
আকাশ হয়েছে রাঙা।

(একদল বালক বালিকা এসে ঢুকবে। রোদকে মাঝখানে রেখে এরা হেলে দুলে গাইতে শুরু করবে। প্রথম পাঁচ পঙক্তির প্রতিটি প্রথমে গাইবে সোনা বা রূপার কোনও একজন—সেই জন রোদ নিজেও হতে পারে।বাকিরা দ্বিতীয়বার দোহার দেবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম পংক্তি গাইবে সোনা, বাকিরা দোহার দেবে। অষ্টম ও নবম পঙক্তি গাইবে রূপা। বাকিরা দোহার দেবে। গানটি মূলের অনুবাদ নয়। অসমিয়া প্রবাদ ব্যবহার করে তৈরি মূলের এমনিতেও অনুবাদ প্রায় অসম্ভব ছিল। পরিবর্তে এটি নেয়া হয়েছে নচিকেতা ঘোষের সুর করা, গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারে লেখা থেকে। বাংলা চলচ্চিত্র 'ইন্দ্রাণী' তে এই গানটি রয়েছে। )

ভাঙরে ভাঙরে ভাঙ ভাঙরে পাথর ভাঙ (২)
ভাঙ কপাট, ভাঙ বিষাদ, ভাঙরে ভয়, জিৎ সওয়ার (২)
ভাঙ আঁধার, অন্তরে আন ডেকে আলোর জোয়ার (২)
সন্মুখে ঘুম ভাঙা ঐ রাঙা নতুন দিন (২)
শক্তিরে চিনব আজ, সাধব ভাই যা কঠিন (২)
ভাঙরে কঠোর হাতে বজ্র হানি
ভাঙরে অলস সুখের ঘুমের গ্লানি
ভাঙ ভাঙ... ভাঙ... ভাঙরে...

অশ্রু নয়,কান্না নয়, সন্মুখে সূর্যোদয়
অন্ধকার, দ্বন্দ্বভার ঘুচল আজ নাইরে ভয়

অশ্রু নয়, কান্না নয়...
বহ্নিতে দগ্ধপ্রাণ আজ হল স্বর্ণময়...
অশ্রু নয় কান্না নয়...
পাথর ভাঙরে ভাঙরে ভাঙ ভাঙরে...

(গানের সুরে সুরে নাচতে নাচতে মাঝের ধীর লয়ের সুযোগে বালক বালিকারা একের উপরে অন্যে চড়ে একটি মন্দিরের আকার দাঁড় করাবে। এবং শেষে সঙ্গীত ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেউল ধ্বসে পড়বার চিত্ররূপ দেখাবে। আর নাটক শেষ হবে।)

রাজার দেউল

অনুবাদ এবং গান বিষয়ে আরও কিছু কথাঃ

মূলকে অক্ষত রেখে করা কোনও অনুবাদই ভালো অনুবাদ নয়। তবু বড়দের জন্যে লেখা গল্প, উপন্যাস,প্রবন্ধ অব্দি মূলের অনেকটা ধারে কাছে রেখে দেওয়া যায়।প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে কবিতা, নাটক ইত্যাদি।বিশেষ করে যদি সেই সব ছোটোদের জন্যে হয়।আর সমস্যা হয় রূপকথা লোককথার অনুবাদে।লোকের মুখে মুখে অনুবাদে রূপকথা,লোককথা,প্রবাদের প্রবচনের অনুবাদ হতে হতে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাস বহু প্রাচীন।ফলে এগুলো আবার অনুবাদ করবার কোনও মানেই হয় না।এই যেমন এই নাটকে যেখানে আমরা 'নটে গাছটি মুড়োলো' ছড়াকে গান হিসেবে ব্যবহার করলাম, সেটি নিয়েছি তো দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের 'ঠাকুরমার ঝুলি' থেকে।সামান্য রকম ফেরে এটি অসমিয়াতেও প্রচলিত আছে।লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার 'এজনী মালিনী আৰু এজোপা ফুল' রচনাতেও রয়েছে।নাট্যকার হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুর সেটিই খানিক নিজের মতো করে ব্যবহার করেছিলেন।তফাৎ হচ্ছে অসমিয়া মূলে ব্যাঙ বা 'ভেকুলি'কে নিয়ে পরের কথা এগিয়েছে। আমরা সাপকে ধরে এগুতে বাধ্য হয়েছি।

সমস্যা আরও আছে।মূল নাটকের 'সোণটি,জোনটি' অনুবাদে 'সোনা , রূপা' হয়ে গেছে।কারণ 'জোন' বাংলা নাম হয় না।হয় জ্যোৎস্না বা জোছনা—আর সেটি করলে এখানে ছন্দ সমস্যা দেখা দেয়।হ্যাঁ গদ্যের ছন্দ।সেরকম অসমিয়া নাটকে 'বেলি' শব্দের বাংলা অনুবাদ হয় 'বেলা'।আর বেলা বাংলাতে মেয়েদের নাম।ফলে আমাদের এটি রেখেও 'রোদ' নামটি নিয়ে আসতে হয়েছে। এবং দুটিই রাখবার স্বাধীনতা নিলাম।

প্রথম গানটি ভূপেন হাজরিকার গলাতে অসমিয়া বাংলা দুই রূপেই আছে।নিজেই গেয়েছেন।নাট্যকার সেটিকেই ব্যবহার করেছেন।আমরা এরই বাংলা রূপটি নিয়েছি। আমরা নিশ্চিত নই এর বাংলা কথাও কি ভূপেন হাজরিকা নিজেই লিখেছিলেন,না কেউ অনুবাদ করেছেন।দ্বিতীয় গানটি 'ভোরের সূর্য রং দাও রূপ দাও' নাট্যকারের স্বাধীন রচনা।সুতরাং আমাদেরও অনুবাদের চেষ্টা করতে হল। তিনি সুরের নির্দেশ এই গানে দেন নি। আমরা জুড়ে দিলাম।গানটিতে সন্ধ্যা মুখার্জির গাওয়া,প্রণয় রায়ের কথাতে 'নতুন সূর্য আলো দাও' গানটির রবিন চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া সুর বেছে নেওয়া যেতে পারে। আন্তর্জাল,বিশেষ করে ইউট্যুব আমাদের সেই সুবিধে করে দিয়েছে।কোনও পরিচালকেরও তাতে অসুবিধে হবার কথা নয়। তৃতীয় এবং চতুর্থ কোনও গান নয়,গানের সুর ব্যবহারের কথা বলা আছে। এর প্রথমটি বিষ্ণুরাভার গান 'বিলতে হালিছে ধুনীয়া পদুমী,ফুলনিতে ফুলিছে ফুল' ব্যবহারে অসুবিধে হবার কথা নয়।দ্বিতীয়টি 'আমার মইনা শুব এ' এই বিখ্যাত অসমীয়া ছেলেভোলানো গানের বদলে আমরা নজরুলের 'হলুদ গাঁদার ফুল'-এর সুর ব্যবহারের পরামর্শ দিই।তাতে বাঙালি দর্শকের কাছে সুরটি চেনা মনে হবে।পঞ্চম গান 'আমরা ফুটব গো সই...' এবং ষষ্ঠ গান 'আমরা ফুটেছি গো সই...' স্বাধীন রচনা, সুতরাং স্বাধীন অনুবাদ।সুর পরিচালক ভেবে নিতে পারেন।একই সুরে দুটি গান।সপ্তম গান 'ফুল, ফুল, ফুল—কী হয়েছে ভুল' সম্পর্কেও একই কথা।অষ্টম গানটিই গুরুত্ব পূর্ণ। সেই 'রজাই হুকুম দিছে—এদিম ছেদিম বাই' অসমীয়া ছড়াটি। যে ছড়া ধরে নাটকটি রচিত।যাতে রাজার অত্যাচারের কাহিনি,জুঁই,মালতি ফুলবালিকাদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ের কথা রয়েছে।এর বাংলা প্রতিকল্প আমাদের মনে হয়েছে হতে পারে শুধু 'ছেলে ঘুমাল,পাড়া জুড়াল --বর্গী এল দেশে' ছড়াটিই।এর সুর পরিচালক ভেবে নিতে পারেন।এটি আমাদের পরম্পরাতেই রয়েছে।নবম 'নটে গাছটি মুড়োলো' গানের কথা আগেই লিখেছি।এর একটি সুন্দর সুর করা গীতরূপ রয়েছে অরিন্দম গাঙুলির গলাতে এখানে— https://www.youtube.com/watch?v=LZLH5svWY2Q ।'Arindam Ganguly – Topic'বলে ইউটিউবে সন্ধান করলেও মিলবে।দশম তথা শেষ গানেরও বাংলা প্রতিকল্প মেলা কঠিন ছিল। আমরা 'ভাঙরে ভাঙরে ভাঙ ভাঙরে পাথর ভাঙ' গানটি ব্যবহার করলাম।নচিকেতা ঘোষের সুরে,গৌরি প্রসন্ন মজুমদারে কথাতে গানটি বাংলা চলচ্চিত্র 'ইন্দ্রাণী'তে গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এতে 'সম্মুখে'র বদলে বাংলাতে বিরল 'সন্মুখ' শব্দটি রয়েছে। এর ভূপেন হাজরিকার গাওয়া আরেকটি রূপান্তর রয়েছে।কিন্তু সেটি বড়দের গান হয়ে যাবে ভেবে আমরা নিলাম না। নাট্যকার নিজেই শুরুতেই ভূপেন হাজরিকার গান ব্যবহার করাতে আমরা অনুবাদে এভাবে নাটকের বাইরে অন্য সূত্র থেকে গান ব্যবহারের সুযোগ ব্যবহার করলাম।

নাটকটি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হবার কথা ছিল। সেন্সর বোর্ড ধরে নিয়েছিল এটি ধর্মদ্রোহী নাটক, তাই শেষে মন্দির ভাঙার দৃশ্য বাদ দিতে বলেছিল। নাট্যকার সেই প্রস্তাবে রাজি হন নি। তাতে নাটকের মূল আত্মাই নষ্ট হয়ে যেত। আমরা মালি আর রাজপুরোহিতের সংলাপে কথাটি স্পষ্ট করে দিয়েছি

More articles from this author

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা