নির্মাণকাজে থ্রি ডি প্রিন্টিং কীভাবে ব্যবহার হয়?
থ্রি ডি কন্স্ট্রাকশন প্রিন্টিং (3D construction printing / 3DCP or 3DP)হল এমন এক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি যেখানে একটি থ্রি ডি প্রিন্টারের সাহায্যে ইমারত/ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব হয়।
আমরা যখন প্রিন্টাতের মাধ্যমে কাগজে কিছু একটা ছেপে বার করি বা প্রিন্ট নিই, তখন আমরা কালি ব্যবহার করি। কিন্তু বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে, থ্রি ডি প্রিন্টারের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় ইমারত তৈরির কাঁচামাল, যেমন কংক্রিট, মর্টার বা একই ধরণের অন্যান্য মিশ্রন; এমন কি , জায়গা বিশেষে মাটি কিংবা প্লাস্টিকও ব্যবহার করা যায়। থ্রি ডি প্রিন্টারের সাহায্যে এই মিশ্রণ পরতের পর পরত বসিয়ে দ্রুত একটা বাড়ির কিছুটা বা পুরোটা সহজেই নির্মাণ করে ফেলা যায়।
এমন ভাবে যন্ত্রের সাহায্যে বাড়ি তৈরি করার সুবিধা অনেকগুলি — কাঁচামাল কম নষ্ট হয়, শ্রমিকের সংখ্যা কম লাগে তাই মোট খরচ কম হয় আর সাধারণের তুলনায় অনেক কম সময়ে একটা ঘর বা বাড়ি তৈরি করে ফেলা যায়।
থ্রি ডি কন্স্ট্রাকশন প্রিন্টিং ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয়েছে উদ্বাস্তুদের জন্য বাড়ি কিংবা সস্তার অফিসঘর। মাত্র কিছুদিন আগেই ভারতের বেঙ্গালুরুতে তৈরি হয়েছে এই দেশের প্রথম থ্রি ডি প্রিন্টেড পোস্ট অফিস। আর বিশ্বের অনেক গরিব কিংবা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তৈরি হয়েছে স্কুল কিংবা ক্লাসঘর।
দক্ষিণপূর্ব আফ্রিকার মালাউইয়ের মচেজা গ্রামে রাতারাতি তৈরি হয়েছিল বিশ্বের প্রথম থ্রি ডি প্রিন্টেড স্কুল। এই স্কুলঘরটি তৈরি করতে লেগেছে ১৫ ঘন্টারও কম সময়। এই গ্রামে মূলতঃ কৃষিজীবি মানুষেরা থাকেন। সব থেকে কাছের স্কুলটিও অন্তত ৫ কিলোমিটার দূরে। গ্রামের ছোট্ট ছেলেমেয়েদের তাই সেখানে হেঁটে যেতেও কষ্ট হত। এখন তারা গ্রামের মধ্যেই একটা স্কুল পেয়ে খুব খুশি।
২০২২ সালে মাদাগাস্কারের ফিয়ানারান্তসোয়া শহরে তৈরি হয়েছে এমন এক ক্লাসঘর, যেখানে এক সঙ্গে অন্তত ৩০ জন বসে পড়াশোনা করতে পারবে। সাত বছর ধরে পরিকল্পনা করা হলেও, এই ক্লাসঘরের দেওয়াল তুলতে লেগেছে ১৮ ঘন্টা আর তিন সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ হয়ে গেছে।
গত প্রায় দেড় বছর ধরে রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের প্রায় ২০০০ স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩৩০ টা স্কুল পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। এমন খারাপ খবরের মাঝে খুশির খবর এই যে ল্ভিভ শহরে এই মূহুর্তে তৈরি হচ্ছে আপাতত বিশ্বের সব থেকে বড় থ্রি ডি প্রিন্টেড স্কুল। এই স্কুলটি ২০২৪ সাল থেকে চালু হবে। এটি হবে ইউক্রেন তথা ইউরোপের প্রথম থ্রি ডি প্রিন্টেড স্কুল।
মানুষ চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ভালো কাজেও লাগাতে পারে আবার খারাপ কাজেও লাগাতে পারে। খারাপ কাজে লাগানোর উদাহরণ হল যুদ্ধের জন্য অস্ত্র নির্মাণ; আর ভালো কাজের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে এইসব স্কুলবাড়িগুলি।
নিচে দেওয়া রইল একটি ভিডিও, যা দেখে বোঝা যাবে কীভাবে কাজ করে থ্রি ডি কন্স্ট্রাকশন প্রিন্টিংপদ্ধতি।
সূত্র ছবিঃ উইকিপিডিয়া