অনেক কাল আগে একটা রোমাঞ্চকর উপন্যাস পড়েছিলাম। তার নাম ছিল ' দ্য ইনভিজিব্ল্ ম্যান', লেখক এইচ জি ওয়েলস। এই কাহিনিতে এক গবেষক নিজের গবেষণার ফল হিসেবে নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলতে পেরেছিল। অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পরে কীভাবে সে নিজের এই অবস্থাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল বা পেরেছিল, তাই নিয়েই এই উপন্যাস। এই লেখার যাদের বিষয়ে, সেই সব 'স্বচ্ছ' বা 'স্বচ্ছতাযুক্ত' প্রাণীদের কথা পড়তে পড়তে আমার সেই অদৃশ্য মানুষকে মনে পড়ছিল। অবশ্য তফাৎ একটা আছে — অদৃশ্য মানুষ নিজের ইচ্ছেতে, নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে অদৃশ্য হতে পেরেছিল। কিন্তু এই সমস্ত প্রাণী এবং ফুল যে অস্বচ্ছ বা অর্ধস্বচ্ছ, সেই বিশিষ্টতা প্রকৃতিরই দান। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন চেহারার বৈচিত্রের প্রয়োজন হয় আত্মরক্ষার জন্য। সারা পৃথিবীতে এমন বহু প্রাণী আছে, বিশেষত জলজ প্রাণী, যারা প্রাকৃতিকভাবেই অস্বচ্ছ। এখানে রইল তেমন কয়েকটি প্রাণীর কথা।
১। সায়ানোগ্যাস্টার নক্টিভাগা (Cyanogaster noctivaga)। 'সায়ানোগ্যাস্টার' মানে 'নীল পেটওয়ালা' আর ' নক্টিভাগা' মানে যে রাতে ঘুরে বেড়ায়। এই ছোট্ট মাছগুলিকে শুধুমাত্র রাতের বেলা দেখতে পাওয়া যায় আমাজনের রিও নিগ্রো অঞ্চলে। এর পুরো দেহটাই স্বচ্ছ, আর ভেতরে নীল রঙের পেট আর লালচে কানকো দেখতে পাওয়া যায়।
২। 'গ্লাস ফ্রগ' - 'কাঁচের ব্যাং'! মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ঘন জঙ্গলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এদের চামড়া আর পেশী কাঁচের মত স্বচ্ছ, তাই অমন নামকরণ। স্বচ্ছ হওয়ার ফলে এরা সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে। এদের যদি উলটে দেখো, তাহলে শরীরের ভেতরে হৃদপিন্ড, লিভার, খাদ্যনালী — সব দেখতে পাবে।
৩। 'গ্রেটা ওটো' ( Greta oto)প্রজাতির প্রজাপতিটিকে দেখতে পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য ও উত্তরদিকে। এদের ডানাদুটি একেবারে কাঁচের মত স্বচ্ছ হয়, তাই এদের সাধারণ নাম 'গ্লাসউইং বাটারফ্লাই' (glasswing butterfly)। স্প্যানিশভাষী অঞ্চলে এদের নাম espejitos, মানে 'ছোট্ট আয়না'। এই প্রজাপতিগুলি নিজেদের স্বচ্ছ ডানার কারণে সহজেই নিজের পরিবেশের সঙ্গে মিশে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে, রঙ বদল করা বা রঙ মিলিয়ে আত্মরক্ষার জায়গা খুঁজতে হয় না।
৪। 'স্কেলেটন ফ্লাওয়ার' বা 'কংকাল ফুল'— এই আশ্চর্য ফুলটিকে দেখতে পাওয়া যায় পৃথিবীর মাত্র তিনটি অঞ্চলে — জাপান, চীন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আপালাচিয়ান পর্বতমালার ঘন জঙ্গলে ভরা স্যাঁতসেঁতে, পাহাড়ি জায়গাগুলোতে। কিন্তু এমন নাম কেন? এর কারণ হল, বৃষ্টিতে ভিজলে এই ফুলের সাদা রঙ উবে গিয়ে পাপড়িগুলি স্বচ্ছ হয়ে পড়ে, ভেতরের সব শিরা-উপশিরা দেখতে পাওয়া যায়। আর এমন নয় যে বৃষ্টির জলে সাদা রঙ ধুয়ে যায়। এই ফুলের পাপড়িগুলির কোষের গঠনে এমন ফাঁক আছে যে , বৃষ্টি পড়লে জল সেইসব ফাঁকে জমা হয় আর তার ফলে পাপড়িফুলি জলের মত স্বচ্ছ হয়ে যায়। বৃষ্টি থামার পরে জল শুকিয়ে গেলে পাপড়িগুলো আবার সাদা হয়ে যায়। এমন একটা ব্যাপার ঘটার ফলে এই ফুলেদের কোনো সুবিধা হয় কি না সেটা অবশ্য জানা যায়নি।
ছবিঃ
উইকিপিডিয়া
ন্যাটজিও
বোর্ডপ্যান্ডা
সাইনিউজ