সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

বাবা আজ অফিস যাবার সময় বলে গেল, "বাবুন, আজ তো তোদের স্কুলের ফাউণ্ডেসন ডে না কিসের জন্যে ছুটি আছে, পারলে আমার এমআইএস এর পাসবই দুটো নিয়ে গিয়ে পোস্ট অফিস থেকে ইন্টারেস্টটা তুলে নিয়ে আসিস। পাসবই এর ভেতরে উইদড্রয়াল ফর্ম সই করে রেখে দিয়েছি।"  প্রতি মাসে মা-ই পোস্ট অফিস গিয়ে এমআইএসের ইন্টারেস্টটা তুলে আনে। কদিন হল মায়ের হাঁটুর ব্যথাটা বেড়েছে তাই বাবা আমাকে ইন্টারেস্টটা তুলে আনতে বলল।

সকালে জলখাবার খেয়ে মায়ের কাছ থেকে পাসবুক দুটো নিয়ে নিয়ে কাঁধের ঝোলা ব্যাগে রেখে সাইকেলটা বার করতে গিয়ে দেখি পিছনের চাকায় হাওয়া নেই। দুদিন আগেই হাওয়া ভরিয়েছি, মনে হয় চোরা লিক হয়েছে, এখন এই রোদে আর সাইকেল টানতে টানতে সাইকেল সারাই এর দোকানে নিয়ে যাবার ইচ্ছা করল  না, ভাবলাম বিকালে ঠান্ডায় ঠাণ্ডায় বেরিয়ে সাইকেলের চাকার লিক সারিয়ে হাওয়া ভরে আনব। পোস্ট অফিস এখান থেকে দেড় কিলোমিটারের মত হবে, হেঁটে মিনিট পনেরো কুড়ির মধ্যেই পৌঁছে যাব। ব্যাগ থেকে পাসবই দুটো একবার বার করে সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিয়ে মাকে বলে বেরিয়ে পড়লাম। পোষ্ট অফিসটা বাজারের রাস্তার ধারে, আমি পোষ্ট অফিসের কাছাকাছি এসেছি এমন সময় একটা ভ্যান রিক্সা প্রায় আমার গা ঘেঁসে চলে গেল, যেতে যেতে বলছে - "এতো করে হরেণ দিচ্ছি, শুনতে পায় না, এই বয়সেই কানে কালা, রাস্তা ছাড়ে না।"  জিজ্ঞেস করলাম, "হর্ণ দিচ্ছি  বলছেন আপনার ভ্যানে হর্ণ কোথায়?" লোকটা বলল, "হরেণটা খারাপ হয়ে গেছে , আমি মুখে করে তো পঁক পঁক, টিডিট টিডিট কিরিং কিরিং করে আওয়াজ করছিলাম।" বাজারের মধ্যে রাস্তায় বেশ ভিড়, কথা না বাড়িয়ে পোষ্ট অফিসে পৌঁছে এমআইএসের কাউণ্টারে  লাইনে দাঁড়ালাম। লাইনে একটু এগিয়েছি এমন সময় দেখলাম পাশে মানি অর্ডারের  লাইনে আমার কাছেই মণিজেঠু দাঁড়িয়ে। মণিজেঠু আমাদের ক্লাসের আয়ুষের জেঠু, পাটনায় কাজ করতেন, জেঠিমা এখানেই থাকতেন। পাঁচ ছয় মাস আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে মণিজেঠু বাড়ি চলে এসেছেন।  
 
মণিজেঠুকে দেখে আমি বললাম, - "জেঠু, তুমি এখানে? এটা তো মানি অর্ডারের লাইন।"

মণিজেঠু একটু হেসে বললেন, - "হ্যাঁরে বাবুন, আমি মানি অর্ডার করবার জন্যেই তো লাইন দিয়েছি। যখন পাটনায় থাকতাম প্রতি মাসে মাইনে পেয়েই তোর জেঠিমাকে মানি অর্ডার করে টাকা পাঠাতাম।  এখন তো একসাথেই আছি মানি অর্ডার করা হয় না, আজ পেনসন তুলতে এসেছিলাম, তাই ইচ্ছা হলো  তোর জেঠিমাকে মানি অর্ডারে করে আগের মতন টাকা পাঠাই। তোর জেঠিমা যখন পিওনের কাছ থেকে মানি অর্ডারের টাকাটা পাবে তখন বেশ মজা হবে তাই না?"  

ছবিঃ শিল্পী ঘোষ

বর্তমানে হুগলী জেলার চন্দননগরে বসবাস;ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যে প্রীতি থাকলেও কর্মজীবনে লেখালেখির বিশেষ সময় পান নি। স্কুল জীবনে প্রথম লেখা পোল্যাণ্ডের ওয়ারশ থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক যুবপত্রিকায়। তারপর স্কুল কলেজ ও কর্মজীবনে এদিক ওদিক কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। ২০০৫ এ ভারত সরকারের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত ফরাক্কা বাঁধ প্রকল্প থেকে অবসর নেওয়ার পর নতুন করে লেখালেখি শুরু।

More articles from this author

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা