সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চন্দনকৃষ্ণ পাল
পরীর নাম জুঁই

পারাবত এক্সপ্রেস বিমান বন্দর ষ্টেশন ছাড়তেই মম সিঁথি দু'জনেই লাফাতে শুরু করলো।

" ঘটনাটা কি? লাফাচ্ছো কেন?"
বাবা রাগী গলায় ছোট খাটো একটা ধমক দিলেন। সিঁথি কানের কাছে এসে জোরে বললো-
" বাড়ী যাচ্ছি তো এ জন্য।"
মা এবং আশ পাশের সীটের দু'তিনজন যাত্রী একসাথে হেসে উঠলেন।

পরীক্ষা এবং রেজাল্ট শেষ। কাস শুরু হতে আরো কদিন বাকী। মম সিঁথির ঠামার ফোনের পর ফোন। অতএব....। সারাটা রাস্তা গান-নাচ লাফালাফির মধ্যে কাটলো দুজনের। ষ্টেশনে ছোটকা এসেছিলো। ট্রেন থেকে নেমে এক সাথে দুজনে জড়িয়ে ধরলো ছোটকাকে। বাড়ীর কাছে রিক্সা থেকে নামতেই দুজন জোরে বাড়ীর দিকে দৌড় লাগালো। জেঠিমনি, ছোটমনি, ঠামার আদরের আগেই কচি বাছুর, বেড়ালছানা আর কবুতরের পিছনে ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেলো দুজনে। এতো আনন্দের মধ্যেও দিদিভাই এর জন্য তাদের কষ্টের কথা জানাতে ভুললোনা দুজনেই। জ্যেঠুর বড় মেয়ে দিদিভাই সিলেটে পড়ে। দিদিভাইকে ফোন করা হয়েছে। সম্ভবতঃ আগামীকাল সকালেই দিদি ভাই পৌঁছে যাবে বাড়ীতে। মম- সিঁথি সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল দিদিভাই। দিদিভাই যে দিকে মম সিঁথি সেদিকে; রাতে ঘুমানোর সময়ও দিদি ভাই এর দুদিকে দুজন শোবে। এটাই শেষ কথা।

ঠামার নিজের হাতে করা বিশাল একটা ফুল বাগান আছে। মম সিঁথিঁ বাগানে পৌঁছে অবাক হয়। বাগানে ফুল তেমন নেই। কিন্তু এখন তো ফুলের মৌসুম। ওদের পিছন পিছন ঠামা এসে দাঁড়ান। বাগানে। ঠামাকে দেখে সিঁথি প্রশ্ন রাখে-

" ফুল কই ঠামা?"
" কাল রাতে ফুল চোররা অনেক ফুল নিয়ে গেছে।"
" নিক্‌! তুমি কষ্ট পেয়ো না আজ রাতে পরী এসে ঠিকই অনেক ফুল ফুটিয়ে দিয়ে যাবে।"
সিঁথির কথা শুনে হাসি ফুটে ঠামার মুখে।"
বাঁধানো তমাল তলা, শর্ষেতে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, শালগম এর ক্ষেতে ঘুরে মম সিঁথি অবাক হয়ে যায়। বাবাকে অবাক করা প্রশ্ন করে মম-
" এই সব কিছু তোমাদের বাবা।"
" তোমাদের মানে? তোমার নয়?"
লজ্জা পেয়ে যায় মম।
" হ্যাঁ বাবা আমাদের। এই সব আমাদের সবার।"

বাবা ভাবেন শহরে জন্ম হওয়া ছোট্ট বাচ্চাগুলো খঁচায় বন্দী পাখির মতো ছোট্ট একটা ভুবনের বাসিন্দা। এদের জন্য অনেক কষ্ট হয় তার।

সন্ধ্যে বেলা অনেক জাতের পিঠে বানাতে বসে যান ঠামা আর জেঠিমনি। মা ও হাত লাগান। ছোট মনির ছোট্ট মুমু মম সিঁথির সাথে মিশে গেছে। মুমুও এখন ওদের সাথে লেপ্টে আছে। এমনিতে নাকি মুমু কিছু খেতে চায় না। কিন্তু মম- সিঁথির সাথে টুকটাক করে এটা ওটা খাচ্ছে মুমুও। ঠামা প্রথমে পাটি সাপটা বানালেন। ভিতরে ক্ষীর দেওয়া। তার পর বানালেন সাদা পাটি। এই পিঠেটা অদ্ভুত। বিরই চালের শুকনো গুড়ো তাওয়াতে মেলে দিয়ে তার ওপর নারকেল ভাজা ছড়িয়ে পাটি সাপটার মতো গুটিয়ে আনলেন। অদ্ভুত ব্যাপার সেই সাদা চালের গুড়ো জোড়া লেগে ধবধবে সাদা পাটি সাপটা হয়ে গেলো।

" ঠামা গুঁড়োতে পানিতে গুললে না, জোড়া লাগলো কিভাবে?"

বাবা বুঝিয়ে বললেন সাদা গুঁড়োর জোড়া লাগার কাহিনী। আসলে বিরই চালে আঠালো একটা ভাব আছে। ভেজা গুঁড়ো তাপে আরো আঠালো হয়ে যায় ফলে সহজেই জোড়া লাগে।

রাতের খাবার খেয়ে ঘুমুতে যেতে অনে
ক রাত হয়ে যায়। ঠামার দুপাশে দুজন শুয়ে পড়ে। ঠামাকে দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরে দুজন-
" এবার তবে ভূতের গল্প হোক।" মম বলে, " না, না পরীর গল্প।" সিঁথির আবদার,
" ভূতের গল্পে তো মজা বেশী সিঁথি।"
" রাতে আমি ভূতের গল্প ভয় পাই।"
" আমি তোমাদের অন্য গল্প বলি। বাংলাদেশের যুদ্ধের গল্প। তখন ১৯৭১............."

পরীর নাম জুঁই

অদ্ভূত সুগন্ধে ঘরটা ভরে আছে। সিঁথিরা সে খাটে শুয়ে ছিলো তার ডানপাশের জানালাটা খোলা আর উজ্জল চাঁদের আলো এসে পড়েছে সারা ঘরে। জানালার ঠিক পাশেই সে দাঁড়িয়ে আছে, সিঁথির তাকে খুব চেনা মনে হলো।

- কে তুমি?
- তুমি আমাকে চিনতে পারলে না সিঁথিঁ?
- খুব চেনা মনে হচ্ছে। কিন্তু.........
- আমি জুঁই। তোমার বর্ণমালার বই এর সেই পরী গো।
- সত্যি।

এবার সিঁথি চিনতে পারলো। ওর বাংলা বর্ণমালার বইয়ে এই পরীটার ছবি আছে। ভালো করে পরীর দিকে তাকালো সিঁথি। ধবধবে সাদা পোষাক। বেনীতে সাদা ফুল গোঁজা। কি মিষ্টি চেহারা। সিঁথি জুঁইকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো।

- বাড়ি কেমন লাগছে সিথিঁ?
- খুব ভালো। আচ্ছা তুমি কোথায় থাকো?
- আকাশে আমাদের দেশ। ওখানেই।
- তুমি ঢাকায় আমাদের বাসায় আসো না কেন?
- মনে কষ্ট নিওনা সিঁথি। ঢাকায় তোমাদের বাসায় তো ফুল বাগান নেই। ফুল বাগানে ফুল ফুটানোই তো আমাদের কাজ। এই ঠামার বাগানে এসেছি আর তোমার সাথে দেখা করে গেলাম।
- জানো ঠামার বাগানের সব ফুল কাল চোর নিয়ে গেছে।
- কোন চিন্তা নেই। আজ সব গাছে অনেক ফুল ফুটিয়ে দিয়ে যাবো। কিন্তু কাউকে ফুল ছিঁড়তে দিবে না। ফুলকে গাছেই সুন্দর লাগে।
- আচ্ছা ছিঁড়তে দেবো না। তুমি কাল আসবে তো?
- আসবো না মানে অবশ্যই আসবো। আমার বন্ধু এসেছে বেড়াতে আর আমি আসবো না তা কি হয়।
- ঠিক আছে কাল এসো।

- কাল আসবো কিরে এই আমি তো এসে গেছি।
ঘুম ভেঙ্গে যায় সিঁথির। মুখের উপর দিদিভাই এর মুখ। দিদিভাই এসে গেছে। এতক্ষণ সিঁথি স্বপ্ন দেখছিলো। দুহাতে দিদিভাই এর গলা জড়িয়ে ধরে সিঁথি


ছবিঃ অঙ্কিতা নস্কর

চন্দনকৃষ্ণ পাল অনেকগুলি ছড়া ও কবিতাপত্র সম্পাদনা করেন। ঢাকার এক সরকারী সংস্থায় কর্মরত এই লেখকের একাদিক ছোটদের জন্য বই প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা