আঁকিবুকি
অহনা পাল
ষষ্ঠ শ্রেণী, শ্যামনগর বালিকা বিদ্যালয়, শ্যামনগর, উত্তর চব্বিশ পরগনা
অনীকা লিন্ অস্টভোল্ড (Anika Lynn Austvold)
প্রি-স্কুল, চাইল্ড গার্ডেন মন্টেসরি, মিনিয়াপোলিস, মিনেসোটা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
Child Garden Montessori, Minneapolis, MN, USA
অর্কদীপ পাল
দ্বিতীয় শ্রেনী, সেন্ট অগাস্টিন স্কুল, শ্যামনগর, উত্তর চব্বিশ পরগনা
চিন্ময়ী ভট্টাচার্যি
প্রথম শ্রেণী, অর্কলন স্কুল, উলানবাতার, মঙ্গোলিয়া
মধুরিমা গোস্বামী
সপ্তম শ্রেণী, দ্য ভবানীপুর গুজরাতি এডূকেশন সোসাইটি স্কুল, কলকাতা
মিহিকা লায়েক
সিনিয়র কে.জি., পোদার জাম্বো কিড্স্, সান্তাক্রুজ পশ্চিম, মুম্বই
নীলাগ্নি দাস
দ্বিতীয় শ্রেণী, আর্মি পাবলিক স্কুল, গুয়াহাটি
সৃজনী ঘোষ
চতুর্থ শ্রেণী, বি.ডি. মেমোরিয়াল স্কুল, কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
মজার পাতা
বলো তো দেখি কী---
১. আগে পা পরে পাখি, তিনটি আখর,
মধ্য ছাড়া করে পাক, দহন সত্বর।
২. বরফের বাড়ী নাম, চারবর্ণে শেষ,
গিরিরাজ সবে জানে,মাঝেতে জিনিষ।
৩. চারঅক্ষরে নাম তার,প্রথমে নবীন,
আগেপিছে কিছু নহে,অন্তে গ্রহগণ।
৪. দুই দুই পিতাপুত্র, তালতলা দিয়ে যায়,
পড়লে তিন আঁটির তাল,সমান ভাগ কি পায়?
(উত্তর পরের পাতায়)
উত্তরমালা :
১। পাবক।
২। হিমালয়।
৩। নবগ্রহ ।
৪। হ্যাঁ, পিতা, পুত্র ও নাতি
ডঃ জি০সি০ভট্টাচার্য্য
বারাণসী,উত্তর প্রদেশ
- বিস্তারিত
- লিখেছেন জি সি ভট্টাচার্য্য
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
গাছেদের রান্নাবান্না
রান্নাঘরে গিয়ে মাঝে মাঝেই তো আমরা কিছু না কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ফেলছি। মা মাঝে মাঝে রান্না ঘরে তোমাকে বিজ্ঞানের পরীক্ষা করতেও দিচ্ছেন। তাই বলে রান্না করাটা কিন্তু মোটেও সহজ ব্যাপার বলে ভেব না। সব উপকরণ ঠিক মাপমত না থাকলে, হাতের নাগালে ইন্ধনের যোগান না থাকলে, মা সুস্বাদু, পুষ্টিকর খাবার করতেই পারবেন না। তবে আমরা এখানে মায়ের রান্না নিয়ে গল্প করব না, এখানে আমরা আলোচনা করব গাছেদের রান্না-বান্না নিয়ে। তার জন্য আমাদের আবার যেতে হবে রান্নাঘরে।
রান্নাঘরটা হল গিয়ে বিজ্ঞানের একটা আড়তবিশেষ। এই দেখনা, খুঁজিলদারি করতে গিয়ে আবার এমন একটা বিষয় বেরিয়ে এল ঐ রান্নাঘর থেকেই যা কিনা গাছেদের কথা জানতে গেলে একান্তই জানা দরকার।
ব্যাপারটা বুঝতে হলে হাতে কলমে কাজ করতে হবে। মা-বাবা, দু'জনেরই সাহায্য একটু দরকার হবে। কি ভাবে, সেটা দেখা যাক,কি বল ?
একটু বায়না করলেই মা-এর কাছ থেকে এক জোড়া কাঁচা ডিম পেয়ে যেতে পার। তেমন একজোড়া যোগাড় করে নাও। এবার একটা গোলমেলে জিনিষ যোগাড় করতে হবে। তাই বাবাকেও গিয়ে ধরতে হচ্ছে, কেননা বাবা না হলে কাজটা করাই যাবে না কিনা!
একটু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দরকার যে ! বাজার থেকে কিনে আনতে হবে না ? কে করবে বল ? যেখানে পাওয়া যাবে সে জায়গাটা তো তুমি চেনই না, তাছাড়া দোকানি কাকুও তো তোমাকে দেবেনই না। ছোটদেরকে কেউ কখনও অ্যাসিডের মত জিনিষ বিক্রি করে নাকি ?
(অবশ্য বাজার থেকে অ্যাসিড না কিনে অন্য ভাবেও সংগ্রহ করতে পার। বাড়ীতে ওয়াশ বেসিন ইত্যাদি পরিষ্কার করার জন্য একটা অ্যাসিড কেনা হয় যার নাম 'মিউরিয়েটিক' অ্যাসিড; এটাও আসলে হাইড্রক্লোরিক অ্যাসিড। এ দিয়েও কাজ চলতে পারে। খবরদার, এটা নিয়ে নিজে কিছু করতে যেও না কিন্তু।)
অ্যাসিড যেমন বাবাকে সংগ্রহ করতে হবে, কাজটাতেও তাঁকেই সাহায্য করতে হবে, না হলে তুমি অ্যাসিডে হাত পুড়িয়ে ফেলবে। একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে আর তার দায় আমার ওপর পড়বে! জেনেবুঝে আমিই বা সেটা চাই কি করে!
আসল কাজ কিভাবে হবে সেটা বলি এবার। ডিম দুটো ডুবে যায় এমন একটা কাচের বাটিতে খানিকটা অ্যাসিড নিয়ে নাও। এবার ডিম দুটো ভাল করে পরিষ্কার করে ধুয়ে, বাবাকে বল বাটির অ্যাসিডে আস্তে করে ডুবিয়ে দিতে। লক্ষ্য কর, ডিমের গা থেকে কেমন বুরবুরি কেটে গ্যাস বেরোতে শুরু করেছে।
কেন এমন হচ্ছে বল দেখি ? আসলে ডিমের খোলাটা হল ক্যালসিয়াম কার্বনেট নামের (ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার চকও ক্যালসিয়াম কার্বনেট) একটা রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরী। এই রাসায়নিকটি অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে। এতে ডিমের খোলাটা অ্যাসিডে গলে গিয়ে ক্রমশঃ পাতলা হতে থাকে, আর বুরবুরি কেটে কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস বের হয়।
এমন হতে থাকলে ত খোলাটা গলে গিয়ে ডিমের ভেতরের সাদা অংশ আর কুসুমটা অ্যাসিডের সাথে মাখামাখি হয়ে যাবার কথা, তাই না ? কিন্তু তা হবে না!এইখানে একটা মজা হবে!
সেদ্ধডিম ছাড়িয়েছ কখনও ? ওপরের শক্ত খোলার ঠিক নীচে একটা পাতলা পর্দা থাকে, দেখেছ ত ? এটা থাকে বলে ডিমটা চট করে ভেঙ্গে বা ফেটে যায় না। এই পর্দাটা হল একটা 'সেমি-পারমিয়েবল মেমব্রেন'। বাংলাতে বলা যায় 'আংশিক-ভেদ্য পর্দা'। এমন বলার কারণ হল, পর্দার এক পাশ থেকে অন্য পাশে কোন তরল পদার্থ যেতে চাইলে খুব অল্প অল্প করে যেতে পারে। কি অবস্থায় পারে সেটা একটু পরেই জানতে পারবে।
এখন অ্যাসিডে ডুবে থাকা আমাদের ডিম দুটোর কি হল দেখি। অ্যাসিডে ডিমের খোলা গলে গেলেও তলাকার পর্দা ত আর গলবে না! তাহলে ব্যাপারটা কি হল বল দেখি ? কুসুমসুদ্ধ ডিমের সাদা অংশ পাতলা পর্দার থলের মধ্যে অ্যাসিডে ভেসে থাকবে, যেন পাতলা একটা ক্যারিব্যাগে জেলির মত কিছু রয়েছে!
একখানা বড় চামচ দিয়ে নরম ডিম দুটোকে তুলে এক বাটি জলে ভাল করে সাবধানে নাড়াচাড়া করে ধুয়ে নাও। এই কাজটাতেও মা বা বাবার সাহায্য নাও।
এবার দুটো আলাদা বাটি নাও, যার একটাতে রাখো কিছুটা জল (পাতিত জল হলেই ভাল), আর একটাতে রাখো নূন জলের 'গাঢ় দ্রবণ'। জলের মধ্যে কয়েক চামচ নূন ভাল করে গুলে নিলেই 'গাঢ় দ্রবণ' তৈরী হয়ে যাবে।
এখন ঐ দুটো বাটিতে তুলতুলে ডিমদুটো ডুবিয়ে দাও। অর্থাৎ একটা ডিম জলে, আর একটা ডিম নূনজলের মধ্যে ডুবে থাকল।
এবার কিছুক্ষনের অপেক্ষা। একটু এখানে পড়াশোনা করে নিতে পার, আর তা না করলে খেলাধুলো করেও আসতে পার। ফিরে এসে কি দেখবে বল দেখি!
একটু আশ্চর্য একটা ব্যাপার ত দেখবেই! সেটা হল, জলের বাটিতে রাখা ডিমটা বেশ বড় আর নূনজলে রাখা ডিমটা আকারে ছোট হয়ে গেছে! কি, ম্যাজিকের মত আশ্চর্য লাগছে ত' !
কারণটা বলি এবার। ডিমের ঐ পাতলা পর্দার ধর্ম হল এই যে, এর দুপাশে দুটো আলাদা ঘনত্বের জলীয় দ্রবণ রেখে দিলে কম ঘনত্বের দিক থেকে বেশী ঘনত্বের দ্রবণের দিকে জল ঐ পর্দার ভেতর দিয়ে চলে যেতে পারে। (ঐ পর্দার কথা বিশেষভাবে বললাম না, বড় হয়ে পরে জানতে পারবে, এখনকার মত এটুকুতেই কাজ হয়ে যাবে)।
জলের বাটির কথা ভাব এবার। পাতলা পর্দার থলের মধ্যে রয়েছে ডিমের ঘন সাদা অংশ আর কুসুম, আর বাইরে রয়েছে পাতলা জল। সুতরাং বুঝতেই পারছ যে পাতলা জলটা ডিমের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, আর সেটা ফুলে গিয়ে বড় হয়ে গেছে। পর্দাটা রবারের মত কিনা!
অন্য বাটিটাতে কি হবে সেটা নিজেরাই বুঝে যাবে, তাও বলে দি। নূনের দ্রবণ আবার ডিমের ভেতরের সাদা অংশ আর কুসু্মের থেকে ঘন। তাহলে এবার উল্টোটাই তো হবে! নাকি ? অর্থাৎ পর্দার থলের ভেতর থেকে জল বেরিয়ে বাইরে চলে আসবে, আর ডিমের আকারটা হয়ে যাবে ছোট, থলেটা একটু চুপসে যাবে আর কি ! এমন ব্যাপার-স্যাপারকে বলে 'অসমোসিস' (osmosis) প্রক্রিয়া।
তা'তো হল, কিন্তু এটা জেনে আমাদের কি লাভ হল ?
তা, লাভ তো একটা হলই, সেটা বলি এবার।
বিজ্ঞানের বইতে নিশ্চয়ই পড়েছ যে আমরা অর্থাৎ প্রাণীরা নিজেদের খাবার তৈরী করতে পারি না, অন্যের তৈরী করা খাবার খাই। এই 'অন্য'রা হল উদ্ভিদ বা গাছপালা। গাছপালা না থাকলে আমরা না খেতে পেয়েই মারা পড়তাম! ওদের তৈরী করা খাবার খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি।
ওরা খাবার তৈরী করে কি করে, সেটাও হয়ত জান কিছুটা। সবুজ রং-এর গাছের পাতা হল গাছের রান্নাঘর। পাতার রং সবুজ হওয়ার কারণ হল এর মধ্যে থাকে 'ক্লোরোফিল' নামের একরকম কণা, যারা সূর্যের আলো শোষন করে। পাতার উল্টো দিকে অনেক ছিদ্র থাকে, এদের নাম 'স্টোমা'। ( একটা ছিদ্র হল 'স্টোমাটা', আর অনেকগুলো একত্রে হল 'স্টোমা')। এই 'স্টোমা'র ভেতর দিয়ে পাতা বাতাস থেকে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড গ্যাস সংগ্রহ করে, আর শিকড়ের সাহায্যে মাটি থেকে শোষন করে জল। সূর্যালোকের খবরদারিতে এরা সবাই মিলে মিশে পাতার মধ্যে তোমার মত রান্নাবাটি খেলে! আর তাইতে হয়ে যায় খাবার!
সেই খাবারেই ত আমরা ভাগ বসাই।
তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ যে আমরা যে মাছ-মাংস খাই, কই সে সব ত আর গাছেরা তৈরী করে না! তাহলে ?
আমরা যে মাছ বা যে সমস্ত প্রানীর মাংস খাই, তারা সবাই কিন্তু সবুজ শ্যাওলা বা ঘাসপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। ওরা বেঁচে না থাকলে আমরা মাছ-মাংস পেতাম কোথায় ? সুতরাং বুঝতেই পারছ, আমরা সব প্রানীরাই গাছের তৈরী খাবারই খাই, কখনও প্রত্যক্ষভাবে কখনও
পরোক্ষভাবে (পরোক্ষভাবে মানে, গাছপালা খেয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীদের খেয়ে)।
(স্টোমার মধ্য দিয়ে যে গাছপালা কেবলমাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইডই শোষণ করে তা কিন্তু নয়, শ্বাসকার্য চালাবার জন্য অক্সিজেনও টেনে নেয়। দিনের বেলা খাবার তৈরী আর শ্বাসকার্য দুটোই চলে, রাতে কিন্তু খাবার তৈরী বন্ধ! কেন ? সূর্যের আলো না থাকলে রান্না হবে কি করে! সূর্যের আলোর খবরদারিটা তো চাই, না কি!
গাছপালা আমাদের আর একটা বিরাট উপকার করে। নিজেরা খাবার বানাবার সময় অক্সিজেন তৈরী করে আর সেই অক্সিজেন স্টোমার ছিদ্র দিয়েই বাতাসে মিশিয়ে দেয়। এটা তো জানই যে অক্সিজেন ছাড়া আমাদের একদম চলবে না! সেই জন্য শহরাঞ্চলে, যেখানে অনেক মানুষ থাকে, অনেক গাড়িঘোড়া চলে, সেখানে অনেক গাছপালা থাকা দরকার যাতে অনেক অক্সিজেন পাওয়া যায়। আর ঠিক এই কারণেই বর্ষাকালে আমরা গাছপালা পুঁতে 'বন মহোৎসব' করি।
স্টোমা কিন্তু আরও কাজ করে, এটা অবশ্য গাছের নিজের জন্য কাজ! গাছের শরীরে বাড়তি জল জমে গেলে অকেজো সেই জলও সেই সব ছিদ্রপথে বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে 'প্রস্বেদন'। দেখ, ঐটু্কু টুকু সব ছিদ্রের কত কাজ! অবাক হতে হয়! তাই না ?)
একটু আগে বললাম যে গাছ শিকড়ের সাহায্যে মাটি থেকে জল শোষন করে, সেটা গাছ করে আগে বলা ঐ অসমোসিস প্রক্রিয়ার সাহায্যে। এটা একটু বলি।
তুমি নিশ্চয়ই জান যে প্রাণী বা গাছপালা অসংখ্য 'কোষ' বা cell দিয়ে তৈরী। এরা এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। এদের দেওয়ালগুলি হল ঐ 'আংশিক-ভেদ্য পর্দা' দিয়ে তৈরী। গাছপালা মাটির ভেতর যে শিকড় চালিয়ে দেয়, সেই শিকড়ের ডগায় থাকে অতি নরম সব রোঁয়া, যার মধ্যেকার কোষের দেওয়ালগুলিও খুব নরম, আর এরা আংশিক-ভেদ্যও। তাই ডিমের মধ্যে যে কারিকুরি হল এখানেও তেমনটাই তো হবে। নাকি ?
কোষের মধ্যে থলথলে জেলির মত সাইটোপ্লাজম থাকে আর বাইরে মাটির মধ্যে থাকে জল, যার ঘনত্ব কম, আর এদের মাঝে রয়েছে ঐ পর্দা। সুতরাং বুঝতেই পারছ যে, কম ঘন জল পর্দা ভেদ করে ঘন সাইটোপ্লাজমের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অর্থাৎ শিকড়ের কোষে জল ঢুকে পড়ল। এই জল কোষের জেলিটার ঘনত্ব কমিয়ে দিল যেটা কিনা তার পাশেরটার থেকে কম হয়ে গেল। তাই এই জল আবার তার পাশেরটাতেও একই উপায়ে ঢুকে পড়ে। এ রকম পর পর চলতেই থাকে। এই ভাবে লক্ষ লক্ষ কোষের মাধ্যমে প্রচুর জল গাছের পাতায় পৌঁছে যায়। তারপর আর কি-ই বা হতে পারে রান্নাবান্না ছাড়া! এই কারণেই, গাছের সবুজ পাতাকে অনেক সময়ে বলা হয় গাছের রান্নাঘর।
পাতায় পৌঁছান পর্যন্ত আর যা যা হয় তা আর বললাম না। কঠিন কঠিন বিষয় গুলো বলে তোমার ছোট্ট মাথাটা ঘুলিয়ে দেবার দরকার কি! তাই না ? বড় হয়ে, মাথাটা যখন এই এত্তবড় হবে, তখন এই বিষয়ে অনেককিছু জানতে পারবে। কোথায় বলত!
কেন ! ঐ যে, ঐ 'জীবন বিজ্ঞান' বইতে!
সন্তোষ কুমার রায়
কোদালিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
ছবিঃ
উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সন্তোষ কুমার রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
স্ট্যানলি কা ডাব্বা
স্ট্যানলি আর তার বন্ধুরা
তুমি কি স্ট্যানলিকে চেন? হয়ত তোমার ক্লাসেই পড়ে স্ট্যানলি। বা হয়ত তোমার স্কুলে, অন্য ক্লাসে, বা অন্য সেক্শনে। যদি না চেন তাহলে বলি -
স্ট্যানলি হল এক ছোট্ট ছেলে। সে স্কুলের বন্ধুদের মজার মজার গল্প বলে আসর জমিয়ে রাখে। সে ইংলিশ শিক্ষিকা রোসি মিসের জন্মদিনে নিজের লেখা কবিতা বলে তাক লাগিয়ে দেয়। বিজ্ঞানের প্রজেক্টে সে নানারকমের ফেলে দেওয়া জিনিষ আর লোহালক্করের টুকরো জুটিয়ে লাইটহাউস বানিয়ে সবাইকে চমকে দেয়। সেই লাইটহাউসের ধারের জলে ভাসতে থাকে সত্যিকারের রঙিন মাছ। যদিও এই প্রজেক্ট দেখে বিজ্ঞান শিক্ষিকা মিস আইয়ার মোটেও খুশি হন না।
রোসি মিস আর স্ট্যানলি
স্ট্যানলি রোজ সবার আগে স্কুলে আসে। স্কুলে এসে হোম ওয়ার্ক করে। স্ট্যানলি টিফিন আনেনা। টিফিনের সময়ে মাঝে মাঝে ওর বন্ধুরা টিফিন ওর সাথে ভাগ করে খায়। কিন্তু নিশ্চিন্তে টিফিন খাওয়া কি আর কপালে আছে? এই সময়ে চলে আসেন হিন্দি মাস্টারমশাই বাবুভাই ভার্মা, যাকে ছেলেরা আড়ালে ডাকে "খড়ুস্" বলে। ভার্মা স্যার নিজে তো ছেলেদের টিফিন থেকে ভাগ বসানই, তার ওপরে তিনি স্ট্যানলিকে বকুনি দেন, নিজের টিফিন না এনে অন্যদের টিফিনে ভাগ বসাচ্ছে বলে ! কি অন্যায়!
লোভী বাবুভাই স্যার
খ্রিসমাসের পরে স্কুলে বেশি করে ক্লাস হবে ঠিক হয়। তার জন্য ছেলেদের বলা হয় বাড়ি থেকে দুটো করে টিফিন নিয়ে আসতে। ক্লাসে সবথেকে বড় টিফিনের ডাব্বা নিয়ে আসে অমন্ মেহেরা। গোলগাল অমনের সবার সাথে টিফিন ভাগ করে খেতে আপত্তি নেই। কিন্তু সেই টিফিনের দিকে যে চোখ পড়ে গেছে ভার্মা স্যারের! ব্রেকের সময়ে ছেলেদের খুঁজতে এসে ভার্মা স্যার দেখেন সব খাবার শেষ! তিনি খুব রেগে যান, এবং সবাইকে ছেড়ে স্ট্যানলিকেই বকেন সবথেকে বেশি। দুঃখে, অপমানে, স্ট্যানলি পরের দিন থেকে বন্ধুদের বলে সে বাড়ি যাচ্ছে মায়ের তৈরি হাতে গরম খাবার খেতে। কিন্তু দুইদিনেই তার এই চালাকি ধরে ফেলে তার বন্ধু অভিষেক। অভিষেক যে স্ট্যানলিকে দেখে ফেলেছে ব্রেকের সময়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে আর ক্লাসে শুধু জল খেতে।
বন্ধুদের চাপাচাপিতে স্ট্যানলি জানায়, তার বাবা আর মা দুজনেই শহরের বাইরে গেছেন, তাই রান্না করে দেওয়ার কেউ নেই। কিন্তু তাতে কি? অমনের অত বড় ডাব্বাটা আর তাহলে কি কাজে লাগল?কিন্তু ভার্মা স্যার? তাঁর কথা ভাবতে বয়েই গেছে ছেলেদের। তাই ফন্দী এঁটে সবাই মিলে আবার টিফিন ভাগ করে খায়, কিন্তু ক্লাসঘরে বসে নয়। একেকদিন স্কুলের এক এক প্রান্তে। আর তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে চলেন লোভী ভার্মা স্যার। কয়েকদিন পরে তিনি তাদের ধরেও ফেলেন। মিথ্যা অহঙ্কারে আর অপমানে, ভার্মা স্যার তাদের প্রচুর বকাবকি করেন। আর স্ট্যানলিকে বলেন, সে যদি নিজের টিফিন না নিয়ে আসে, তাহলে তার স্কুলে আসা বন্ধ!
স্ট্যানলি স্কুলে আসা বন্ধ করে। তার বন্ধুদের মন খুব খারাপ। ওদিকে এক বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাছাই করা ছাত্রদের পাঠানোর চিঠি আসে স্কুলে। স্ট্যানলির বন্ধুরা জানে, এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সেরা বাছাই হল স্ট্যানলি। কিন্তু তাকে পাচ্ছে কোথায়?
স্ট্যানলি কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। নেচে গেয়ে মাতিয়ে দিয়েছিল দর্শকদের। আর হ্যাঁ, সে একদিন স্কুলে এসে হাজির হয়েছিল নানারকমের সুস্বাদু খাবার ভরা বিশাল এক ডাব্বা নিয়ে। তুমি হয়ত ভাবছ, ভার্মা স্যার যখন বললেন টিফিন না আনলে স্ট্যানলিকে স্কুলে আসতে দেবেন না, তখন স্ট্যানলি বাড়ি গিয়ে বড়দের বলল না কেন সেই কথা? বাবা- মা'কে ফোন করে কেন জানাল না? স্ট্যানলিকে হটাত করে টিফিন বানিয়ে দিল কে? স্ট্যানলির মা? স্ট্যানলি যখন অনুষ্ঠানে নাচ গান করছিল, তখন তার বাবা-মা কি সেই অনুষ্ঠান দেখে হাততালি দিয়েছিলেন? - সেই গল্প থাক। নাহয় নাই বা বললাম এখন।
সেই না বলা গল্পটা জানতে হলে, শেষ অবধি দেখতে হবে অমোল গুপ্তে পরিচালিত ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছায়াছবি 'স্ট্যানলি কা ডাব্বা'। এই ছবিতে স্ট্যানলির ভূমিকায় ছোট্ট ছেলে পার্থ আর রোসি মিসের ভূমিকায় দিব্যা দত্ত'র অভিনয় মন কাড়বে। আর হ্যাংলা বাবুভাই স্যারের ভূমিকায় স্বয়ং অমোল গুপ্তেকে দেখে সত্যি সত্যি রাগে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছা করবে -"খড়ুস্ !" সুযোগ করে অবশ্যই দেখার চেষ্টা কর 'স্ট্যানলি কা ডাব্বা'। স্ট্যানলিকে, অমন্ , অভিষেক আর ওদের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে আলাপ করতে খারাপ লাগবে না, দেখ।
মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি, কলকাতা
ছবিঃ
স্ট্যানলি কা ডাব্বা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সত্যজিৎ ও ঋত্বিক
(গত সংখ্যার পর)
জ্যঁ রেনোঁয়া তরুণ সত্যজিৎ রায়কে শিখিয়েছিলেন প্রকৃতির গোপন রহস্য কিভাবে ছবিতে তুলে ধরতে হয়। যাকে আমরা বলি বাস্তব, তারও অঞ্চল বিশেষে এক ধরণের নিজস্ব ছাপ থাকে। পুদভকিন ও চেরকাসভের কাছে তরুণ ঋত্বিক ঘটক হয়ত খেটে খাওয়া জীবন ও সাধারণ মানুষের জয়বার্তা কিভাবে সিনেমার পর্দায় লেখা যায়, তাও জেনেছিলেন। তবু ১৯৫২ সালে যখন স্বাধীন ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র উতসবে ইতালির দুটি ছবি দেখানো হল, তখন শুধু কলকাতায়ই নয়, সারা দেশেই ছবি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁরা অবাক হয়ে গেলেন। প্রথম ছবিটি ছিল 'বাইসাইকেল থিভ্স্', পরিচালক ভিত্তোরিও দি সিকা। দ্বিতীয় ছবিটি ছিল 'রোম- ওপেন সিটি, পরিচালক ছিলেন রবার্তো রসেলিনি। কি এমন অভিনব ছিল এই ছবিদুটিতে?
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত