আঁকিবুকি
ইচ্ছামতীর বর্ষা সংখ্যায় এবারে অনেকগুলি ছবি পাঠিয়েছে ইচ্ছামতীর নতুন বন্ধুরা। কেমন লাগল জানিও কিন্তু আমাদের।
শুভম গোস্বামী, দ্বিতীয় শ্রেণী,ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, কলকাতা
অর্কপ্রভ বসু, পঞ্চম শ্রেণী, পাঠ ভবন
দীপ্তারুণ রায়, তৃতীয় শ্রেণী,দ্য অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চ স্কুল, কলকাতা
সুদীপা কুজুর, তৃতীয় শ্রেণী, বি ডি মেমোরিয়াল ইন্সটিট্যুট, কলকাতা
বিনীতা মজুমদার, তৃতীয় শ্রেণী, ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল
আরাত্রিক রায় ,চতুর্থ শ্রেণী,বি ডি মেমোরিয়াল ইন্সটিট্যুট, কলকাতা
সুপ্রতীক হালদার, সপ্তম শ্রেণী, বি ডি মেমোরিয়াল ইন্সটিট্যুট, কলকাতা
তুমিও কি ইচ্ছামতীর কাছে তোমার আঁকা ছবি পাঠাতে চাও? তাহলে আগামি সংখ্যার জন্য তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দাও আমাদের ইমেল ঠিকানায়।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সকুট/ দ্য সাইলেন্স
আমি আজ একটি ইরানের চলচ্চিত্র নিয়ে লিখব। সিনেমার নাম “সকূট” যার মানে নিরবতা। সিনেমার পরিচালকের নাম মোহসিন মাখমালবাফ। এটি একটি ১০ বছরের ছেলের গল্প। ছেলেটি তাজাকিস্তানে তার মার সাথে থাকে ।যদিও সে চোখে দেখতে পায় না কিন্তু কানে শুনতে পারে। এর নাম খুরশীদ । খুরশীদের এক অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল। সে গান খূব ভাল বাসতো আর সুর শুনে বাদ্য যন্ত্র ঠিক করতে পারতো। সে খুবই গরীব ছিল।বাড়ি ভাড়ার টাকা যোগার করার যন্য তাকে এক বাদ্য যন্ত্রের দোকানে কাজ করতে যেতে হয়। বাড়ির ভাড়া বাকি থাকায় তাকে চাকড়ি নিতে হয়।
রোজই কাজে পৌঁছাতে তার দেরী হয়ে যায় কারণ সে আসে পাসের ফকির বা যাযাবরদের গান শুনতে শুনতে তাদের সঙ্গে পথ চলতে শুরু করে আর সময়মতো দোকানে পৌঁছাতে পারে না। দোকানে খুরশীদের নাদিরা বলে একটি ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় যে খুরশীদের খুব ভাল বন্ধু হয়ে ওঠে।
খুরশীদ রাস্তা হারিয়ে ফেল্লে সেই রোজ খুঁজে নিয়ে আসে। শেষে তার চাকরি চলে যায়। কিন্ত্তু সে নিজের মনে বিথোভেন এর ৫-ম সিম্ফনি শুনতে পায়। তার গানই তার মনকে রাঙ্গিয়ে রাখে।
সিনেমায় দুই ছোট্টচছেলে-মেয়ের অভিনয় দক্ষতা প্রশংষার যোগ্য । ক্যমেরার কাজ ও সুন্দর। গানের ব্যবহারও মানানসই। আমার প্রথম দেখায় ভাল লাগার মধ্যে একটি সিনেমা।
সিনেমাটি ইরানি ভাষায় তাই উপশিরোনামা থাকা দরকার।
রঞ্জনা গুহ
মেক্সিকো সিটি
মেক্সিকো
ছবিঃ
ফিরোজানফিল্মস্
- বিস্তারিত
- লিখেছেন রঞ্জনা গুহ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দস্যি ডেনিস
ডেনিস দেওয়ালের দিকে মুখ করে বসে আছে। তার মা তাকে এই শাস্তি দিয়েছেন। সে মনে মনে ভাবছে- তার মা কিনা তার স্কুলের টিচারদেরই বিশ্বাস করেন, কিন্তু তার নিজের ছেলেকে বিশ্বাস করে্ননা...তাকে যে এভাবে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে...জোয়ি তো কতবার ডেকে ডেকে ফিরে গেল...কখন সে খেলতে যাবে... শাস্তির মেয়াদ ফুরোলে ডেনিস তার আদরের কুকুর রাফ কে নি্যে চলল জোয়ি কে খুঁজতে। জোয়ি হল ডেনিসের ছায়াসঙ্গী। আর ডেনিস তাকে নানারকম বাহাদুরি দেখিয়ে থাকে। যাইহোক, খেলার শুরুতেই ডেনিস বলটাকে নিয়ে জো-ও-ও-রে ছুঁড়ে দিল...
মিস্টার উইলসন ডেনিসের পাশের বাড়িতেই থাকেন। তিনি চা খেতে খেতে সুন্দর বিকেল উপভোগ করছিলেন;হঠাত একটা বল এসে তাঁর চায়ের কাপটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিল! তিনি বলে উঠলেন- আমার সেই রাতের কথা খুব ভাল করে মনে আছে, ডেনিস যেদিন জন্মালো, সেই রাতে আকাশ থেকে তারা খসে পড়েছিল, চাঁদের চারপাশে ছিল এক গোলাকার চক্র। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের ভবিষ্যত দুর্বিপাকে পড়তে চলেছে!!"
এদিকে ডেনিসও বুঝতে পেরেছে তার আর এই চত্ত্বরে থাকা উচিত নয়। সে হাঁটা লাগাল উলটোপথে। সে দেখতে পেল তার বাবা অফিস থেকে ফিরছেন। জোয়ি কে সে বলল -"আজ আমি তোকে একটা খুব সহজ জিনিষ শেখাব" - এই বলে সে তার পা টা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিল।অমনি তার বাবা হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। ডেনিস জোয়িকে বোঝাল যে কাউকে মাটিতে ধড়াম্ করে ফেলাটা কত সোজা। জোয়ি ও একটা নতুন জ্ঞান পেয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি গেল।
এই ভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে ডেনিসের নানান কান্ড কারখানা। সে তো রোজ সকালে সবার বাড়ি আসে খবরের কাগজের সাথে। তার জন্য আজ প্রায় ৪৮ টি দেশের ১০০০ টি খবরের কাগজের কমিক্স পাতাতে জায়গা পাকা।
কার্টুনিস্ট হ্যাঙ্ক কেচাম এর হাত ধরে দুর্দান্ত ডেনিসের চলা শুরু। হ্যাঙ্ক এর আসল নাম হেনরি। ছোট বেলা থেকেই তার আঁকা আঁকির দিকে প্রবল ঝোঁক। মজার মজার ছবি আঁকত হ্যাঙ্ক। ওয়ল্ট ডিসনির 'থ্রি লিটল পিগস্' দেখার পরেই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে সে কার্টুনিস্টই হবে। ১৯৩৮ সাল নাগাদ হ্যাঙ্ক পাড়ি দিল লস অ্যাঞ্জেলেস এ। সে ওয়াল্টার ল্যানজ্ স্টুডিওতে কাজ শিখতে আরম্ভ করল। তৈরি হয়ে নিয়ে সে চলল ডিসনি স্টুডিওর উদ্দেশ্যে। প্রায় ১২ টি ডোনাল্ড ডাক এপিসোডে সে সহকারীর ভূমিকায় কাজ করল।
১৯৪২ তে হ্যাঙ্ক এর জীবনে এল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তিনি ফোটোগ্রাফিক স্পেশালিস্ট হিসাবে ইউ এস নেভি রিসার্ভে কাজ আরম্ভ করলেন। যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্যেও তিনি তাঁর কার্টুনিস্ট সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখলেন। চার বছর পরে তিনি ভাবলেন, আর না, এবার তিনি শুধুই কার্টুন করার দিকেই মন দেবেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও ছোট্ট ছেলে ডেনিস কে নিয়ে নিউ ইয়র্কের কাছাকাছি এলাকায় চলে এলেন। কাজ কর্ম ভালোই চলতে লাগল।
তখন ১৯৫০ সাল। হ্যাঙ্কের বাড়িটা প্রায় কাঁপছে। তার ছেলে ডেনিস সারা ঘর লন্ডভন্ড করে ফেলেছে। ডেনিসের মা চেঁচিয়ে উঠলেন- হ্যাঙ্ক, ইয়োর সন্ ইস আ মিনেস্ !!
আর আমরাও বুঝতে পারলাম 'ডেনিস দ্য মিনেস' এর সৃষ্টির রহস্যটা...কি, তুমিও বুঝতে পারলে তো? ১৯৫১ সাল এর ১২ই মার্চ এসে গেল কমিক স্ট্রীপ জগতের সবচেয়ে দুর্দান্ত ছোট্ট ছেলেটা- যার নাম ডেনিস!
পূর্বাশা
কলকাতা
ছবিঃ
ডেনিস দ্য মিনেস
- বিস্তারিত
- লিখেছেন পূর্বাশা
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
কেন 'বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল'
সেই ছোট্টবেলার পড়ার বইয়ের ছড়াটা মনে আছে ? সেই যে -
'ওল খেও না ধরবে গলা, ঔষধ খেতে মিছে বলা' ?
কথাটার অর্থ কি বল ত ? একটা ত' ও আর ঔ শেখা। আর একটা হল ওষুধ খাও আর না-ই খাও, ওল খেয়ে গলা ধরলে ভারি মুশকিল। দুর্ভোগ যা পোয়াবার সেটা পোয়াতেই হবে! কোন কিছুতেই - কোন ওষুধেই ধরা গলা সারবে না।
কিন্তু কথাটা ঠিক নয়। একবার ছোট বেলায় শাকালু ভেবে ভুল করে কচু খেয়ে যে কষ্টে পড়েছিলাম তা আর কি বলব। শেষে তেঁতুলের আচার খেয়ে রেহাই পাই-- গলার জ্বালা, ব্যথা কমতে তিন চার দিন সময় লেগেছিল!
তা, তোমার বাবা এমনিতে ত খুবই ভাল, তাই'ত ? তবে মাঝে মাঝে ঝামেলার একেকটা কাজ যে করেন, এটাও ত সত্যি, নাকি ? আজ কি করেছেন সেটা রান্না ঘরে এখন একবার গেলেই টের পাবে। রান্নাঘরে গিয়ে বাজারের ব্যাগটাতে উঁকি দিয়ে দেখ। এক টুকরো মানকচু রয়েছে। তার মানে সেই গলা চুলকানি আর ব্যাথা।
কচু
কচু দেখে মাথাটা বিগড়ে গেল ত ? বাবাকে নিয়ে হয়েছে এই এক জ্বালা, বাজারে কচু জাতিয় কিছু দেখতে পেলেই হল, কেনা চাইই চাই! কি না, 'খেয়ে দেখ, খুব ভাল খেতে!' যত্তো সব!
কিন্তু কি আর করবে! কোনও উপায়ে গিলতে হবে আর গলা ধরবে, আর সেটা সারাতে টকও খেতে হবে। ঝাল, মিষ্টি, নোনতা না খেয়ে শুধু টকই খেতে হবে কেন বল দেখি? এত না ভেবে তার চেয়ে চল , 'যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল' প্রবাদটা কেন এসেছে সেটা দেখি বরং। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাতে।
ওল ছাড়াও অন্য কচু জাতীয় সবজি, যেমন মান বা অন্যান্য কচু--এসব খেলেও গলা ধরে। বাড়িতে এসব সবজি এলে বা রান্না হলে বেশির ভাগ মানুষই বিরক্ত হন। স্বাভাবিক। কে আর সাধ করে খেতে গিয়ে কষ্ট পেতে চায় বল!
কিন্তু মানুষের স্বভাবটা ত জান, সে প্রায় সব কিছুই খায়। কোনওটা খেতে খারাপ হলে খাওয়ার উপযোগী করে নেয় নিজের মত করে। এটা ওটা করে একদিন মানুষ আবিষ্কার করে ফেলল যে টক খেলে গলা ধরা সেরে যায়। আর হরেক রকম টকের মধ্যে তেঁতুলই বেশী টক। তাই সাংঘাতিক ধরনের বুনো ওল খেয়ে গলা ধরলে তেঁতুল ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই ওই প্রবাদটা এসেছে।
তেঁতুল
তবে শুধু যে তেঁতুলই খেতে হবে এমন কোন কথা নেই, অন্য টকেও কাজ হয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে রান্না করার সময়ই প্রয়োজন মত টক দিয়ে দেওয়া হয় যাতে গলা ধরার ব্যাপারটা না ঘটে।
কি, জানতে ইচ্ছা হচ্ছে ত' যে ওল খেলে গলা কেন ধরে আর টক খেলে সারেই বা কেন! সেটা বলি এবার।
কিন্তু সে সব জানতে হলে আর অন্য দু'একটা কথা জানতে হয় যে আগে! তেমন কথা গুলো সেরে নি।
'কৃষ্ট্যাল' বা কেলাস কাকে বলে সেটা দেখি আগে, দরকার লাগবে। আমাদের চারপাশে যে সব কঠিন পদার্থ দেখি তাদের কোনও কোনটা দানাদার, যেমন চিনি মিছরি বা ফিটকিরি কিংবা তুঁতে। এদের দানাগুলো নানা আকারের দেখতে হয়, কেউ চৌকো, কেউ বা পিরামিডের মত, বা কারও আকার আবার লম্বাটে সুচের মতও হয়। এছাড়া আরও অনেক রকম দানাদার বস্তু আছে। এদের মধ্যে যাদের সহজেই আমাদের আশপাশে দেখা যায় তেমন কয়েকটির নাম করলাম।
চিনির কেলাস
এখানে তোমাদের একটা কেলাসের কথা জানিয়ে রাখি, যদিও এ লেখাটার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। জল তরল পদার্থ, কিন্তু সেটা জমে যখন বরফ হয়ে যায় তখন এরও কেলাস তৈরী হয় অন্য কঠিন পদার্থের মত। সে কেলাস অনুবীক্ষনের নীচে দেখা যায়। ভারি চমতকার দেখতে সেগুলো- নানা নক্সার বৃত্তাকার ফুলের মত!
তুষার কেলাস
এবার আমরা আমাদের কথায় আসি।
কোন কোনও কঠিন পদার্থ আবার একেবারে মিহি পাউডারের মত, আটা বা ময়দা, গায়ে মাখা ট্যালকম পাউডার। এমন অনেক জিনিষ আছে। এরা কেউই কেলাসের দলে পড়ে না। ওপরে লেখা ঐ দানাদার বস্তু গুলোই হল কৃষ্ট্যাল বা কেলাস। বড় হয়ে যখন রসায়ন বা কেমিস্ট্রি বই পড়বে তখন এ বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।
যে দোকানে সাজা পান বিক্রি হয় সেখানে গিয়ে দেখো একদিন কি কি জিনিষ দিয়ে পান সাজা হয়। এর মধ্যে প্রধান হল খয়ের আর চুন। শুধু খয়ের তেতো, খুব বিচ্ছিরি খেতে আর শুধু চুন যদি খাওয়া হয় জিভ গাল সব কেটে যায়, খুব যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার হয় সেটা। তা সত্ত্বেও পানের প্রধান উপকরন এ দুটিই।
পরিমানমত এ দুটি মিশিয়ে দিলে পান সুস্বাদু হয়। কোনটা কম বা বেশী হয়ে গেলে হয় তেতো লাগবে আর না হয় গাল কাটবে। ঠিকঠাক এরকম মেশানোর ব্যাপারটাকে বলে 'প্রশমন'। অর্থাৎ খয়ের চুনকে প্রশমিত করল বা চুন খয়েরকে প্রশমিত করল। এতে এমন একটা জিনিষ তৈরী হল যেটা খয়েরও না আবার চুনও না।
রসায়নশাস্ত্রে প্রশমন ব্যাপারটা একটা সাধারন ঘটনা। হামেশা ঘটে। আমাদের চার পাশে যেসব পদার্থ দেখি সেগুলো সব তিন শ্রেনীতে ভাগ করা যায়, যেমন অম্ল, লবন আর ক্ষার। যারা টক তারা হল অম্ল, যেমন হাইড্রোক্লোরিক বা সালফিউরিক অ্যাসিড, লেবু, তেঁতুল এই সব। আরও অনেক নাম করা যায়।
আমরা যে নুন খাই সেটা একটা লবন। এর নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। তবে এটা ছাড়াও আরও রাশি রাশি লবন আছে। নাম শুনবে আর কয়েকটার ? যেমন, ক্যালশিয়াম সালফেট, মাগনেশিয়াম ক্লোরাইড,পটাশিয়াম ক্লোরাইড-- এমন অজস্র সব নাম। আর কাপড়কাচা সোডা, সাবান, পান খাওয়ার চুন-- এরা হল ক্ষার জাতিয় পদার্থ।
পানের ক্ষেত্রে চুন আর খয়েরের যা সম্পর্ক, অম্ল আর ক্ষারের সম্পর্কও প্রায় সেই রকম। দুটোকে পরিমানমত মিশিয়ে দিলেই ওদের মধ্যে বিক্রিয়া হবে আর একে অপরকে প্রশমিত করবে। তার ফলে তৈরী হবে দু'একটা নতুন জিনিষ যাতে অম্ল বা ক্ষার কারও গুনাগুন বজায় থাকবে না। অম্লের টক ভাব থাকবে না আর ক্ষারের কষা বা কটু ভাবও থাকবে না। রসায়ন শাস্ত্রে এ ব্যাপারটাকে বলা হয়'প্রশমন'। নতুন তৈরী হওয়া পদার্থগুলোর সংখ্যা একাধিক হতে পারে। এদের একটির নাম হল লবন।
কেলাস, প্রশমন, অম্ল, ক্ষার - এমন সব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বললাম কেন তা এখনই বুঝতে পারবে। তৃনভোজি প্রানিরা গাছপালা খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার গাছপালারও ত বেঁচে থাকার ইচ্ছে আছে, বল ! তারা কি ভাবে আত্মরক্ষা করবে সেটাওত ভাবার! তবে আমাদের ওপর ছেড়ে না দিয়ে সেটা প্রকৃতি দেবী নিজেই ঠিক করে রেখেছেন। প্রত্যেকের জন্যই নানা রকমের ব্যবস্থা করা আছে তাঁর। কচু,ওল, মান - এসব গাছেরও তেমনি আছে, আর সেটার সাথেই যুক্ত এই গলা ধরার ব্যাপারটা।
কচু গাছ
এই সব গাছের গোড়া, কান্ড, পাতা - সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এক ধরনের সুচের মত সরু সরু কিন্তু শক্ত শক্ত কেলাস। অনেক সময় কেলাসগুলো আবার গোছা করে বাঁধা রয়েছে বলে মনে হয়, যদিও বাঁধাছাঁদার কোনও ব্যাপার নেই।খালি চোখে এদের দেখতে পাবে না, অনুবীক্ষন যন্ত্রে দেখতে হয় । খুব ছোট কিনা। এদের নাম হল 'রাফাইড' (raphide)। বাংলায় কি বলে তা বলতে পারব না।
রাফাইড
আমরা বা অন্য কোন প্রানী এই সব গাছকে আক্রমন করলে তাদের ওই সব সরু কেলাস আমাদের গায়ে- হাতে অথবা খেয়ে ফেললে মুখে গলায় -- সর্বত্র বিঁধে যায় আর সেখানে আটকে থাকে।
তোমার হাতে সরু সুঁচ যদি বিঁধিয়ে রাখা হয় তাহলে যন্ত্রনা হয় কিনা বল। আর মুখের মধ্যে যদি সেটা হয় তাহলে ত চিত্তির একেবারে!
কিন্তু মুশকিল কি জান ? আমাদের মুখের লালা কিন্তু এদের গলাতে বা সরাতে পারে না। কেন পারে না সেটাও একটা অবাক ব্যাপার! এটা নিয়ে একটু পরে বলছি।
সুঁচগুলো কি দিয়ে তৈরী সেটা বলি। এরা তৈরী ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা ক্যালসিয়াম অক্স্যালেট নামের এক ধরনের ক্ষারধর্মী পদার্থ দিয়ে। এরাই সুচের মত সরু সরু কেলাস।
ক্ষারধর্মী পদার্থকে প্রশমন করতে পারে এমন একটা পদার্থ না পেলে ওই কেলাসগুলোকে সরাবে কে ? অম্ল বা টক ছাড়া আর কে পারবে ? তেঁতুল হল তেমনই একটা খাদ্য যার মধ্যে কিনা রয়েছে অম্ল। এটা খাওয়া মাত্র মুখের ভেতর থাকা ক্ষার জাতিয় কেলাসগুলোর সাথে বিক্রিয়া করে সেগুলোকে প্রশমিত
করে ফেলে। অর্থাৎ কেলাসরা আর কেলাস থাকে না, যেন গলে গিয়ে, অন্য বস্তুতে পরিনত হয়, তারপর খাবারের সাথে পেটের মধ্যে চলে যায়।
একটু পরে গলাধরা সেরে যায়। সুতরাং ওল খেলে যতই গলা ধরুক তেঁতুল বা লেবুর মত কোন টক খেলেই হল। তাই যত জংলী ওলই হোক, বাঘা তেঁতুল থাকলে নিশ্চিন্ত ! তাহলে ওল খেতে আর আপত্তি কি ?
আমাদের মুখের লালার কথা বলব বলেছিলাম, মনে আছে ত ?আমাদের লালা হল ক্ষারধর্মী। তাই লালা অন্য আর এক ক্ষারধর্মী কেলাসের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে না, সে কারনে লালা নিজে গলা ধরা সারাতে পারে না। আর একটা কথা। আচার দেখে মুখে জল আসে না এমন মানুষ আছে ? হলফ করে বলা যায় যে নেই। তার মানে কি সবাই ভীষন হ্যাংলা ? না তা নয়। এই ব্যাপারটা আসলে আমাদের নিয়িন্ত্রনের বাইরে। তুমি চাও আর না-ই চাও, গল গল করে লালা বেরবেই। আর আচার মুখে দিলে যে কি হয় সেটা'ত তোমাদের জানাই আছে।
যে কোন আচারই হল অম্ল। অম্ল মুখের ভেতর এলেই ক্ষারধর্মী লালা তার সাথে বিক্রিয়া করতে পারবে, এটা বুঝতে পেরে মুখে থাকা লালাগ্রন্থি গুলো ভারি সক্রিয় হয়ে পড়ে। এতে যে পরিমান লালা ঝরে, সুড়ুত করে টেনে নিতে না পারলে ভারি মুশকিল !
সন্তোষ কুমার রায়
রূপনারায়ণপুর, বর্ধমান
ছবিঃ
উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সন্তোষ কুমার রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
ভারতে এল সিনেমা
পর্ব আট
সাগরপারের কথা তো অনেক হল। এবার বরং আমাদের দেশের কথা একটু ভেবে দেখা যাক। কি ভাবছিলাম আমরা সিনেমা নিয়ে? মজার কথা এই যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অপরাজিত' উপন্যাসে কিশোর অপু যখন জানতে চাইছিল, কলকাতা শহরে বায়োস্কোপ যেখানে দেখানো হয়, সেই জায়গাটা কোথায়, প্রায় সেই সময়েই কলকাতার এক বালক, যার নাম সত্যজিত রায়, প্রথম বাংলা বায়োস্কোপ দেখে। সে ছবি তার মন ভরায়নি। কিন্তু সেই গল্প পরে। আগে জেনে নিই, ভারতে প্রথম সিনেমা কবে কোথায় দেখানো হল।
একদিন জুলাই মাসে, বর্ষার এক ভেজা বিকেলে, বম্বের (এখনকার মুম্বই) সাহেব ও মেমসাহেবরা প্রথম লুমিয়ের ভাইদের তৈরি কয়েকটা ছবি দেখেন। সেই সন্ধ্যায় টিকিটের দাম ছিল অনেক - এক টাকা!!
প্রথম ছবি প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপন
ওয়াটসন হোটেল, বম্বে (মুম্বই )তে যেখানে প্রথম ছবি দেখানো হয়েছিল
দর্শকেরা বেশ মজা পেয়েছিল। এই প্রদর্শনীর সফলতায় উতসাহ পেয়ে ধীরে ধীরে বম্বের নানা জায়গায় ছবি দেখানো শুরু হয়। শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য থাকতো বিশেষ 'জেনানা শো' আর শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সস্তায় বিশেষ প্রদর্শনী ব্যবস্থা- যেটাকে বলা হত 'চার-আনা-ওয়ালা শো'।
কলকাতায় সম্ভবতঃ প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয় চৌরঙ্গীর রয়্যাল থিয়েটারে- ১৮৯৭ সালের ২০শে জানুয়ারি। স্টেটসম্যান পত্রিকার বিজ্ঞাপন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। তবে ছায়াছবি আরো বেশি মর্যাদা পেতে শুরু করল যখন সেই সময়ের বিখ্যাত থিয়েটার, স্টার থিয়েটার, তাদের নাট্য প্রদর্শনীর ফাঁকে ফাঁকে এক রিলের ছবি দেখানো শুরু করল। স্টার এর প্রদর্শন যন্ত্রটির নাম ছিল 'বায়োস্কোপ'। সেই থেকেই বাঙালিদের মধ্যে 'সিনেমা'র বদলি শব্দ হয়ে গেছে 'বায়োস্কোপ'।
এভাবে যখন টুকরো টুকরো ছবি দেখানো হচ্ছে, তখন আবার ফাদার লাফো, কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স্ কলেজে বিজ্ঞানের ক্লাস নিতে নিতে দেখাচ্ছেন ছোট ছোট শিক্ষামূলক ছবি। এভাবেই বাংলা ছবি একদিন খুঁজে পেল ভারতীয় ছায়াছবির সত্যিকারের পথিকৃত হীরালাল সেন কে।
তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, কলকাতায় ম্যাডান রা আর বম্বেতে আব্দুলআলি-ইউসুফআলি তাঁবু খাটিয়ে সার্কাসের মত করে ছবি দেখাচ্ছেন। কেমন ছিল এইসব ছবি? -ইউরোপ-আমেরিকার নানা দৃশ্য, যেমন রানীর অন্তিম যাত্রা, বা রাষ্ট্রপতি ম্যাকিনলের হত্যা- এইরকম সব ঘটনা। আমাদের দেশীয় লোকজনের কাছে এসব প্রায় ম্যাজিক মনে হত। তাদের ততটা ভালোও লাগত না।
এইরকম একই অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে নামী ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'ওয়ান হাণ্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিটিউড' এ লাতিন আমেরিকায় প্রায় এক ই রকমের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিচ্ছেন- একটা ছোট্ট হলদে ট্রেনে করে ছবি এল; মাকোন্দো নামের ছোট্ট শহরে লোকেরা প্রদর্শনীগুলিতে সিনেমাকে নেহাতই জাদু-ভেলকি ভেবে বিরক্তই হচ্ছিল; অবশেষে শহরের মেয়র তাদেরকে শান্ত করার জন্য বললেন- সিনেমা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় যে তাই নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে।
ভারতবর্ষের মানুষেরও একই অভিজ্ঞতা হল। তারপর এখানেও ধীরে ধীরে আমাদের নিজস্ব নিসর্গ চিত্র বা সামাজিক উতসবের ছবি তোলা শুরু হল। পশ্চিম ভারতে এরকম মানুষ ছিলেন হরিশ্চন্দ্র সখারাম ভাটওয়াডেকর। আর পূর্ব ভারতে হীরালাল সেন।
ভারতীয় জীবনযাত্রা দেখিয়ে প্রথম দিকের মজাদার ছবি
কলকাতায় যখন মনুমেন্ট ময়দানের একটু দক্ষিণে তাঁবু ফেলে ফরাসি পাতে কোম্পানি ছবি দেখাতে এল, প্রায় তখন থেকেই মূলতঃ পূর্ববঙ্গীয় এই যুবক নানা ধনীগৃহে ও বাগান বাড়িতে এইসব ছবি দেখাতেন। 'দ্য বেঙ্গলি' নামে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন আমাদের জানাচ্ছে যে অমরেন্দ্রনাথ দত্তের ক্লাসিক থিয়েটারে, নাটক প্রদর্শনীর বিরতিতে কিছু চমকপ্রদ চিত্র প্রদর্শিত হবে, যেমন- ভ্রমর, আলিবাবা, দোল লীলা ইত্যাদি; বিজ্ঞাপনের তারিখ ১৯০১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি।
আলিবাবা
বিল্বমঙ্গল ছবির বিজ্ঞাপন
সালুঙ্কে - প্রথম পুরুষ অভিনেতা যিনি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন
হীরালাল ও হরিশচন্দ্র দুজনেই দিল্লি- দরবার, রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের রাজ্যাভিষেক এই জাতীয় কিছু তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, ১৯১৭ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে হীরালাল সেনের সমস্ত ছবি ছাই হয়ে যায়। তার মাত্র দুদিন বাদেই স্বয়ং হীরালাল সেন নিজেও চিরবিদায় নেন। হারিয়ে গেল বাংলা সিনেমার আদিপর্বের ইতিহাস।
যে মানুষটি বাংলা সিনেমা তৈরি করা ও দেখানোর পুরো ব্যবস্থাটাই সাজিয়ে তোলেন, তিনি নিজে কিন্তু মোটেই বাঙালি নন-পার্শী ছিলেন। তার নাম ছিল জামশেদজি ফ্রানজি ম্যাডান। মধ্য কলকাতার চাঁদনি অঞ্চলে তাঁর নামে একটা রাস্তা আছে। তাঁর এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানি হীরালালের মৃত্যুর বছরই প্রথম বাংলা কাহিনীচিত্র বানায়- সে ছবির নাম ' সত্যবাদী রাজা হরিশচন্দ্র'।
রাজা হরিশ্চন্দ্র ছবির বিজ্ঞাপন
শুধু বানায় না, দেখানোরও ব্যবস্থা করে। অবশ্য বোম্বে শহরে ইতিমধ্যেই এক মারাঠী ব্রাহ্মণ ভারতবর্ষের প্রথম কাহিনীচিত্র 'রাজা হরিশচন্দ্র' বানিয়ে ফেলেছেন। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরষ্কার পেলেন ১৯১৩ সালে। আর ভারতীয় সিনেমার প্রথম দর্শকরা সেই একই বছরে বড় পর্দার সামনে বসে চোখ বড় বড় করে দেখল কিভাবে রাজা হরিশচন্দ্র ধর্মের জন্য সব ত্যাগ করলেন। এইসব নিয়ে আরো নানা গল্প হবে আগামি সংখ্যায়।
(ক্রমশঃ )
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক, চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগ,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি নেওয়া হয়েছে এই বইগুলি থেকেঃ
বেঙ্গলি ফিল্ম ডিরেক্টরি, নন্দন
সো মেনি সিনেমাস -বি ডি গর্গ
ফিল্ম ইন্ডিয়া লুকিং ব্যাক ১৮৯৬-১৯৬০, দ্য ডিরেক্টরেট অফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালস্, নিউ দিল্লি
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত