বর্ষার চিঠি
জানো তো এবারে বৃষ্টি খুব কম।
বর্ষাকালেও মেঘের মুখ যে রকম ভার হবার কথা এবার ঠিক তেমনটা নয়।
তুমি ভাবছো, সে আবার কি, ওমা... এই তো কয়েকদিন আগে বেশ বৃষ্টি হলো।
হল ঠিকই, কিন্তু বর্ষাকালে যেমন হয় ঠিক তেমনটা নয়।
এতদূর শুনে লকা আমাকে বললো, “তুমি ঠিক কথা বলেছো বটে। চলো আজ আমাদের গ্রামে বৃষ্টি পুজো। তুমি দেখবে আর ফটোক তুলবে।”
আমি লকার পিছন পিছন চললাম।
লকা যে গ্রামে থাকে সেটা শহর থেকে দূরে। লকা যে স্কুলে পড়ে সেটা তার গ্রাম থেকে কাছে নয়। অনেকটা পথ হেঁটে লকা স্কুলে যায়। লকা স্কুলে মন দিয়ে পড়াশুনো করে, মাদল বাজায় আর চমতকার ফুটবল খেলে। বাবার সাথে মাঠে কাজ করে, বোনকে পড়া শেখায় আর যারা স্কুলে যেতে চায়না লকা ধরে বেঁধে স্কুলে নিয়ে যায়। লকাকে সবাই ভালোবাসে, আর লকা দুষ্টুমিও করে। বন্ধুদের সাথে খেলার পরে মাঠ থেকে ইঁদুর ধরে। তারপর সেই ইঁদুর পুড়িয়ে তার মাংসের ফিস্ট হয়। আমাকেও একবার নেমতন্ন করেছিলো। সেই সন্ধ্যায়, মাঠের মাঝে চুপটি করে আগুনের সামনে বসে ইঁদুর পোড়া খাওয়া...আমার মনে থাকবে চিরদিন।
লকা হেমব্রম। চতুর্থ শ্রেনী। গ্রাম লতাবুনী। জেলা বীরভূম।
বেশ কিছু লোক রাস্তার মাঝে গোল হয়ে ঘিরে বসে কি যেন একটা করছে। কাছে গিয়ে দেখলাম পুজো হচ্ছে।
পুজো করছেন ‘নাইকিয়ারাম’(পুরোহিত)। দেখলাম, ঘট, আমের পাতা, ধূপ। লকা বললো, ফটোক তোলো। গ্রামের মঙ্গলের জন্য, বৃষ্টির জন্য পুজো। আমি ছবি তুললাম।
গতবছর গিয়েছিলাম উত্তরবঙ্গে রাভাদের গ্রাম, চারিদিকে জঙ্গল, ময়ূর। এবারে লালমাটির দেশ বীরভূম। এবারে আদিবাসী সাঁওতাল গ্রাম।
ফিরে আসছি, বৃষ্টি শুরু হল...টিপ...টিপ...টিপ...
আমাদের গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে জলের ফোঁটা। বন্ধু ক্যামেরাম্যান তার দামী ভিডিও ক্যামেরাতে ছবি তুলতে লাগলো।
আর আমার কানে যেন ভেসে এলো ধামসা আর মাদলের শব্দ। আমি দেখলাম তীর আর ধনুক নিয়ে লকাদের গ্রামে উতসব শুরু হয়েছে। বৃষ্টির উতসব।
সবাই আবার মাঠে গেছে...সবাই আবার ধান রুইছে...।
কিন্তু না...সত্যি তেমনটা হয়নি...এবারে বৃষ্টি কম। এবারে অনেকেই ধান রুইতে পারেনি। লকার বাবাও নয়।
মনে মনে বলি আয় বৃষ্টি ঝেঁপে...
তুমিও আমার সাথে বলো। আর পাড়ায় কিম্বা বাড়ির টবে, ছাদে কিম্বা বারান্দায় একটা গাছ লাগাও, জল দাও...একদিন সেই গাছ সত্যি পরিমাণ মতো বৃষ্টি এনে দেবে। তখন লকার বাবা ধান রুইতে পারবে। আর আমরা শহরে বসে সেই ধানের চাল থেকে গরম গরম ভাত খাবো।
খুব ভালো থেকো। তোমার জন্য লকার গ্রামের এক দেওয়াল ময়ূর পাঠালাম। আর তার সাথে থাকলো জল থৈ থৈ অনেক অনেক ভালোবাসা।
লেখা ও ছবি
কল্লোল
- বিস্তারিত
- লিখেছেন কল্লোল লাহিড়ী
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
প্রথম পাতাঃ বর্ষা সংখ্যা ২০১০
দক্ষিণের আকাশে মেঘ করেছে। ভাবি বুঝি বৃষ্টি আসবে। কিন্তু খানিক পরেই দেখি -কোথায় মেঘ! আকাশ পরিষ্কার, মেঘ সৈন্যরা আমার আকাশ ছেড়ে না জানি কোথায় চলে গেছে...ঝকঝক করছে রোদ, নীল আকাশ...বর্ষাকাল না কি গ্রীষ্মকাল , নাকি আগেভাগে চলে এল শরতকাল, বোঝাই দায়!
আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন বইতে পড়েছিলাম -'বৈশাখ-জৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল- আষাঢ়- শ্রাবন বর্ষাকাল'...এইভাবে সারা বছরের দুটো করে মাস, একটা করে ঋতুর জন্য ধরে রাখা; কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেখি, আগের মত নিয়ম মেনে ঋতু পরিবর্তন আর হয়না। তাই আজকাল আষাঢ় মাসের বৃষ্টি যেন আসি আসি করেও আসে না, আর ওদিকে ভাদ্র মাসের প্রবল বৃষ্টি হয়; সেই বর্ষা পিছোতে পিছোতে আশ্বিন মাসে দুর্গা পুজো অবধিও গড়াতে থাকে...
যাকগে, পুজোর কথা পরে হবে। এখন তো আমরা বর্ষাকাল নিয়েই ভাবি! বৃষ্টি কম পড়ুক বা বেশি, বর্ষাকালের কিন্তু একটা নিজস্ব আনন্দ আছে, তাই না? কোন দিন ঘুম থেকে উঠেই দেখলে আকাশের মুখ থমথমে, ঝিরঝির করে ঝরেই চলেছে একঘেয়ে, ঠিক যেন মনে হচ্ছে মায়ের কাছে খুব বকুনি খেয়ে মন মেজাজ গরম; আবার কখনও, বলা নেই কওয়া নেই, হটাত করে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো দুপুরবেলা, যেন পাশের বাড়ির দুষ্টু বন্ধুটা হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে খেলতে যেতে ডাকাডাকি করছে; আবার কখনও বা মেঘ কেটে গিয়ে দেখা যায় পরিষ্কার ঝকঝকে নীল আকাশ...সেই আকাশে ভাসতে থাকে দু-চারটে সাদা মেঘ...কয়েকটা বা ধূসর...
তোমার বর্ষাকাল কেমন কাটছে? তোমার বাড়ির ছাতের ওপরে আকাশটা কি আজকে থমথমে মুখে বসে আছে? নাকি শুরু হয়ে গেছে ঝমঝমে বৃষ্টি? খবরের কাগজ দিয়ে নৌকা বানিয়ে ভাসিয়েছ রাস্তার ধারে জমে থাকা জলে? আর এই সে সেদিন হয়ে গেল রথযাত্রা, সেদিন কি ফুল দিয়ে সাজিয়ে টেনেছিলে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার রথ? পাঁপড়ভাজা খেয়েছ কি রথের দিনে? রথযাত্রা -জন্মাষ্টমী- বাইশে শ্রাবণ, রাখী পূর্নিমা- ঝুলনযাত্রা - বর্ষাকালে কিন্তু উতসবের অভাব নেই । বর্ষা মানেই কিন্তু জলকাদা ভরা রাস্তা নয় , কদম-কামিনী-যুঁই- মাধবীলতা-চাঁপা-গন্ধরাজ-- বর্ষাকালেই কিন্তু যত সুগন্ধী ফুলেদের আসা যাওয়া। আর আছে মেঘলা দিনে মায়ের হাতের গরম খিচুড়ি আর ইলিশমাছ ভাজা।
এবছর আমরা আরেকটা দারুণ জমাটি অনুষ্ঠান দেখতে পেলাম- বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকাতে। সেই জমজমাট প্রতিযোগিতায় শেষ অবধি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির মত জনপ্রিয় দেশগুলিকে হারিয়ে এবারের কাপ জিতে নিল স্পেন। আর এইসব খেলায় রোজ কোন দল জিতবে, সেইটা আগে থেকেই ইশারা করছিল কে? -অক্টোপাস পল!! ভাবো একবার !
এদিকে সাদা-ধূসর মেঘে ঢাকা মাঠ-ঘাট পেরিয়ে, রং-বেরঙা রথে চেপে, কখনো বা রঙিন কাগজের নৌকায় ভাসতে ভাসতে এসে গেল ইচ্ছামতীর নতুন বর্ষা সংখ্যা। এই সংখ্যায় আছে চীনা লোককথা অবলম্বনে একটা বড়সড় রূপকথা, একটা বর্ষাকাল জমিয়ে দেওয়া ভূতুড়ে গল্প আর একটা গোয়েন্দা-গল্প। আছে সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে নানারকম তথ্য ভরা এক প্রতিবেদন। আর অন্যান্য নিয়মিত বিভাগ গুলি তো আছেই। আর আছে বেশ কয়েকজন নতুন বন্ধুর পাঠানো ছবি। আর হ্যাঁ, এবারে, ইচ্ছামতীর বন্ধু মধুরিমা 'ইচ্ছেমতন' বিভাগে লিখে জানিয়েছে তার গরমের ছুটি কেমন কেটেছে। তুমিও কিন্তু পাঠাতে পারো তোমার 'ইচ্ছে মতন' লেখা, ইচ্ছামতীর কাছে। কিভাবে পাঠাবে, জানতে হলে পড়ে দেখ আমাদের 'লেখা পাঠাও ' পাতাটি।
এইবার তাহলে আমি চলি। তুমি বসে পড় এক ঠোঙা ঝালমুড়ি নিয়ে, ইচ্ছামতীর সাথে জমে উঠুক তোমার টাপুর টুপুর দিন রাত্তির।
ভালো থেকো।
চাঁদের বুড়ি
২৩শে শ্রাবণ, ১৪১৭
৯ই অগস্ট, ২০১০
- বিস্তারিত
- লিখেছেন চাঁদের বুড়ি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত