আকাশ মায়ের কোলে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে দুটি ভাই বোন, চাঁদ আর সূর্য। দুজনের দিন কাটছিল মহা আনন্দে হেসে খেলে। চাঁদ ভাই আর সূর্য্যি বোন দুজনে দুজনকে ভালবাসত খুব। মহা শূন্যে হুটোপুটি লুটোপুটির শেষ ছিল না তাদের। এইরকম করে খেলতে খেলতে একসময় বড় হয়ে উঠলো তারা দুজনে। বড় হয়ে চাঁদের খেলার সঙ্গী হয়ে উঠলো মেঘেরা, তাদের সাথী করে চাঁদ , বজ্র আর বিদ্যুতের সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে থাকতো সারাক্ষণ, বোনের কথা তার আর মনেও থাকত না।
এদিকে বড় হয়ে সূর্য্যি বোন হয়ে উঠলো যেমন রূপসী তেমন গুণবতী।তার রূপের ছটায় চারিদিক আলো করে রাখত সে। চাঁদ ভাই তার সাথে খেলে না আর তাই পাখিরা হয়ে উঠলো তার বন্ধু , পাখিদের ক্লান্ত ডানায় নরম স্পর্শ বুলিয়ে দিত সে, তাতে তারা খুব আরাম পেত। গাছ গাছালি আর ফুলেরাও ছিল সূর্যের বন্ধু। আকাশের কোল থেকে মাটিতে নেমে এসে তাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলত সে সারাবেলা। আর মাঝে মাঝে ভাইএর জন্য চোখের জল ফেলত সে। চাঁদ ভাইএর সঙ্গে তার যে আর দেখাই হয় না।
একদিন মহা প্রলয় এল। চারদিক ঘন মেঘে ঢাকা, সূর্যের আলো ঢেকে গিয়ে অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক, আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। চাঁদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে সূর্য খুঁজে বেরাতে লাগলো তাকে। সারা আকাশ জুড়ে কোথাও চাঁদ নেই। এদিকে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে ছিল চাঁদ। সে দেখল আকাশের গায়ে অপরূপ সুন্দর একটি মেয়ে। কিন্তু সেই মেয়ে যে তারই বোন সূর্য সেটা সে বুঝতে পারল না। সূর্যকে দেখে সে চিনতে পারল না। সে সূর্য কে হরণ করার চেষ্টা করল। বল প্রয়োগ করে তাকে টেনে হিঁচড়ে মেঘের আড়ালে নিয়ে যেতে চেষ্টা করল। ভাইএর এই ব্যবহারে বেচারি সূর্য রাগে, দুঃখে অপমানে একমুঠো ছাই ছুড়ে মারল চাঁদের মুখে। তারপর তার হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে গেল দূরে। সেই থেকে সে প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনও চাঁদের মুখ দেখবে না।
পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে চাঁদের আফশোসের সীমা রইল না। সে সূর্যের কাছে ক্ষমা চাইতে যেতে চাইল। অনেক অনুনয় করে মেঘের হাতে চিঠি পাঠাল সূর্যের নামে। কিন্তু কোন লাভ হল না। সূর্য আর কোনদিন চাঁদ কে দেখা দেয়নি। তাই আকাশের গায়ে চাঁদের উদয় হলেই সূর্য লুকিয়ে পরে আজও। চাঁদের মন খারাপ তখন জ্যোৎস্না হয়ে ঝরে পরে মাটিতে।
(মেঘালয়ের লোককথা)
ছবিঃ বৃষ্টি প্রামাণিক