জীবন কখন কোন পথে আমাদের নিয়ে যায় সে কথা আগে থেকে বলা যায় না। কিছুদিন আগে আমার স্বামীর কর্মসূত্রে আমরা আফ্রিকার কঙ্গোতে চলে আসি। অচেনা এক মহাদেশে এসে নতুন করে জীবন শুরু করা খুব সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু পরে ভেবে দেখেছি, এমন নতুন এক দেশে এসে ভালোই হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বা উত্তর আমেরিকা সম্পর্কে আমরা অনেক সহজে অনেক তথ্য পেয়ে যাই। কিন্তু তত সহজে জানতে পারি না দক্ষিণ আমেরিকা বা আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে। এখানে এসে যেমন আমি নিজেও এখানকার মানুষ, ও প্রকৃতিকে চিনতে পারছি, তেমনই আমার কাছের মানুষদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি এসবের সঙ্গে।
আমরা মাত্র মাস তিনেক হল এসেছি কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসা শহরে। এর মাঝেই , আমার স্বামীর কর্মসূত্রে আমরা কয়েক দিনের জন্য ঘুরে এলাম আফ্রিকার আরেক দেশ ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে।
ইথিওপিয়া দেশটি আফ্রিকার উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত। ইথিওপিয়া দেশটাও কঙ্গোর মত এক 'ল্যান্ডলক্ড' দেশ - এর চারপাশে রয়েছে সুদান, ইরিত্রিয়া , জিবুতি, সোমালিয়া এবং কেনিয়া। সুদান, ইরিত্রিয়া , ইথিওপিয়া, জিবুতি, সোমালিয়া - এই দেশগুলিকে একত্রে দেখলে মনে হয় যেন একখানা গন্ডারের শিং - তাই এই অঞ্চলটি 'Horn of Africa' নামেও পরিচিত। ইথিওপিয়ার রাজভাষা হল 'আমহারিক'। এছাড়া অন্যান্য স্থানীয় ভাষা সহ ইথিওপিয়ার মানুষরা ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করেন। ফলে আমাদের খুব সুবিধে হল, কারণ কঙ্গোতে বিদেশি ভাষা হিসেবে ফরাসি ভাষা ব্যবহার হয়। ইথিওপিয়া আফ্রিকার একমাত্র দেশ , যেখানে কোনো দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন হয় নি এবং বহুদিন অবধি রাজকীয় শাসন চলেছিল। আজকের দিনে, ইথিওপিয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশ। কিনশাসা থেকে বিমানে আদ্দিস আবাবা পৌঁছাতে সময় লাগল সাড়ে চার ঘন্টা। আর গিয়েই ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নিতে হল দুই ঘন্টা।
আদ্দিস আবাবা শহরটাকে প্রথম দেখেই খুব ভালো লেগে গেল। এখানকার ঝকঝকে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর দেখে বোঝা যায় এই দেশ ক্রমশঃ নিজেকে উন্নত করার চেষ্টায় রয়েছে। আমরা উঠেছিলাম আদ্দিস আবাবার শেরাটন হোটেলে। এই হোটেলের চারপাশের বাগান এত সুন্দর ভাবে সাজানো, নানারকমের মরসুমি ফুল, বিশেষ করে নানা রঙের জবা ফুল দেখতে দেখতে আমার একটা গোটা দিন কেটে গেল।
রাজকীয় শেরাটন হোটেল
আমরা প্রথম যে দর্শনীয় স্থানে গেলাম, তার নাম 'ইউনিটি পার্ক' (Unity Park)। ইথিওপিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় মেনেলিক এর তৈরি প্রাসাদ, ন্যাশনাল গ্র্যান্ড প্যালেসকে ঘিরে তৈরিকরা হয়েছে এই ইউনিটি পার্ক। ইথিওপিয়ার জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহ্মেদ (Prime Minister Abiy Ahmed) এই পার্কটি নির্মাণ করেন, যাতে ভ্রমণার্থী এবং স্থানীয় মানুষ — সবার কাছে এই দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জাতীয় সম্পদগুলির সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায়।
ইউনিটি পার্কের ভেতর
গ্র্যান্ড পালেসকে পেছনে রেখে ছবি তো তুলতেই হয়।
গ্র্যান্ড প্যালেসের ভেতরে
পরের দিন আমরা ঘুরতে গেলাম এন্টোটো পার্কে ( Entoto Park) । আদ্দিস আবাবার উত্তর দিকে রয়েছে এন্টোটো পর্বতাঞ্চল। পার্কটি সেখানেই অবস্থিত। এই সবুজে ভরা পাহাড়গুলি যেন আদ্দিস আবাবা শহরের ফুস্ফুস্ — এই শহরের বাতাস পরিষ্কার রাখে আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।পাহাড়ের ওপরে উঠতে উঠতেই আমরা শীতল বাতাসের স্পর্শ পাচ্ছিলাম।
এন্টোটো পার্কে ঢোকার গেট
ওপরে উঠে মন ভরে গেল। বড় বড় গাছের ফাঁক দিয়ে অনেক নীচে দেখা গেল খেলনা শহরের মত আদ্দিস আবাবাকে। আমাদের মতই সেখানে ছুটি কাটাতে গেছিলেন অনেক স্থানীয় মানুষ ও। এই পাহাড়ে অল্পবয়সীদের জন্য নানারকমের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট্স্ -এর ব্যবস্থা করা রয়েছে।
পাহাড়ের ওপর থেকে গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে আদ্দিস আবাবা
স্থানীয় কিশোরীদের চুলের কত বাহার; এক সঙ্গে ছবি না তুলে থাকা যায় !
পরের দিন কাজকর্মের ফাঁকে সময় করে আমরা দেখতে গেলাম ইথিওপিয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা হোলি ট্রিনিটি ক্যাথেড্রাল নামেও পরিচিত। এই গির্জাটি ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স অর্থোডক্স তেওয়াহেডো ক্যাথেড্রাল নামেও পরিচিত। ১৯৪২ সালে ইতালির বিরুদ্ধে জয়ের পরে এই গির্জাটি নির্মিত হয়। এই গির্জার প্রাঙ্গনে সম্রাট হেইলে সেলাসি এবং সম্রাজ্ঞী মেনেন আস্ফ এর সমাধি ছাড়াও, সাম্রাজ্যবাদী ইতালির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের সমাধি রয়েছে। এই প্রাঙ্গনেই রয়েছে সম্রাট মেনেলিকের সময়ের আরেকটি প্রাচীন গির্জা, যার নাম বেল উওল্ড চার্চ (Bale Wold Church/ Church of the Four Heavenly Creatures) । এখানে রয়েছে একটি মিউজিয়াম, যেখানে রাখা আছে ১৯৩৭ সালে ইতালিয় আগ্রাসনের সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দেহাবশেষ।
হোলি ট্রিনিটি ক্যাথেড্রালের একাংশ ; (ভিতরে) সম্রাট হেইলে সেলাসির সমাধি
এরপর একদিন আমরা সময় করে গেলাম ইথিওপিয়ার জাতীয় জাদুঘর ( National Museum of Ethiopia) দেখতে। এই জাদুঘরে , ইথিওপিয়ার নানারকমের শিল্প-সংস্কৃতির উদাহরণের পাশাপাশি রয়েছে মানবসমাজের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্বিক এবং প্রত্নতাত্বিক আবিষ্কারের উদাহরণ ।
ন্যাশ্নাল মিউজিয়ামের সামনে
এখানে রয়েছে প্রচুর প্রাচীন হোমিনিডদের ফসিল হয়ে যাওয়া দেহাবশেষ, যেগুলির মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল 'লুসি'। 'লুসি' ছিল সেই প্রথম স্ত্রী হোমিনিড যে সম্ভবতঃ প্রথম দুই পায়ে হেঁটেছিল।
বাঁদিকে - 'লুসি'; ডানদিকে - 'লুসি'কে খুঁজে পাওয়ার বিবরণ
এই জাদুঘরে আছে চারটি একজিবিশন হল। বেসমেন্টে 'লুসি'কে দেখে এসে, আমরা প্রথম তলে আমরা দেখলাম প্রাচীন ও মধ্যযুগে ইথিওপিয়ার মানুষদের ব্যবহার করা জিনিষপত্র; সেখানে সম্রাট হেইলে সেলাসির ব্যবহার করা সামগ্রীও ছিল। দ্বিতীয় তল আমার খুবই ভালো লাগল, কারণ সেখানে আমরা দেখলাম ইথিওপিয়ার পুরনো এবং নতুন শিল্পীদের আঁকা ছবি। আর তৃতীয় তলে ছিল ইথিওপিয়ার সাংস্কৃতির জীবন সম্পর্কে তথ্যবহুল পরিবেশনা।
ইথিওপিয়ার দেশজ হস্তশিল্প
পুরনো ও নতুন শিল্পীদের আঁকা ছবি
খাওয়া-দাওয়া
কোনো নতুন জায়গায় গিয়ে, সেখানকার স্থানীয় খাবার চেখে না দেখলে সেই জায়গাটাকে কখনোই পুরোপুরি চেনা যায়না। আমাদের হোটেলে, অতিথিদের স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা জন্য মঙ্গলবার নির্দিষ্ট দিন। খেয়াল করে দেখলাম, খাবার বানানোর অনেক পদ্ধতিতেই ভারতিয় রান্নার সঙ্গে বেশ মিল। ইথিওপিয়ার প্রধান খাদ্য হল ইঞ্জেরা। ইঞ্জেরা তৈরি হয় 'টেফ' এর আটা দিয়ে। 'টেফ' এই অঞ্চলের এক প্রাচীন শস্য। ইঞ্জেরা দেখতে এবং খেতে খানিকটা আমাদের দেশের 'দোসা'-র মত। ইঞ্জেরার সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের মাংস, ডাল বা সবজি দিয়ে তৈরি নানা স্বাদ ও রঙের ঘন গ্রেভি এবং সবজি সেদ্ধ খাওয়া হয়।
বাঁদিকেঃ পরিবেশনের জন্য সাজিয়ে রাখা ইঞ্জেরা; ডান দিকেঃ ইঞ্জেরার সঙ্গে খাওয়ার জন্য নানা স্বাদের আমিষ ও নিরামিষ পদ
খাবারগুলি সাজিয়ে রাখা সুদৃশ্য সব পাত্রে; বিশেষ ধরণ্র ঢাকনাগুলি আমাদের দেশের আসামের ঝাঁপির কথা মনে করায়
কফি
যাঁরা নিয়মিত কফি পান করেন, তাঁরা জানেন, ইথিওপিয়ার কফিকে বিশ্বের সেরা কফি বলে মনে করা হয়। এই কফির ইতিহাস জানো কি? আমরা শুনলাম এক স্থানীয় বন্ধুর কাছ থেকে। নবম শতকে , কালদি নামের এক মেষপালক, ইথিওপিয়ার কাফফা অঞ্চলে প্রথম কফি বিন্স্ এর সন্ধান পান । তাঁর পোষা ছাগলের পাল সেই বিন্স্ খেয়ে বেশি লম্ফঝম্প করছিল, তারা বিশ্রাম নিতেও ভুলে গেছিল। সেই দেখে তিনি আন্দাজ করতে পারেন এই বিন্স্ খাওয়ার সুবিধা বা অসুবিধাগুলি।
ইথিওপিয়াতে কফির দানাগুলি ফল থেকে আলাদা না করেই শুকানো হয়, তাই এখানকার কফির স্বাদ একটু অন্যরকম হয়। এই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের কফি চাষ করা হয়। আমরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কিনতে গিয়ে অবাক হয়ে গেছি- এত রকমের যে কফি হতে পারে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। সেখানে আস্ত বিন্স্ থেকে গুঁড়ো কফি, সবই পাওয়া যাচ্ছিল।
ইথিওপিয়াতে কফি 'বুনা' নামে পরিচিত, এবং এটি এখানকার সবথেকে জনপ্রিয় পানীয়। কলকাতা শহরে যেমন প্রতিটা রাস্তাতেই একটা অন্তত চায়ের দোকান আছে, এখানে তেমন রয়েছে কফি জয়েন্ট। একেকটা দোকানের সাজসজ্জা একেক রকমের। এই দেশের প্রতি বাড়িতে 'কফি সেরেমনি' বা কফি পান করার বিশেষ প্রথা পালন করা হয়। আমাদের হোটেলেও আমরা সেই প্রথার অভিজ্ঞতা পেলাম। এই প্রথায়, সুগন্ধী টাটকা ফুল আর ঘাস ছড়িয়ে প্রথমে মন্দ আত্মাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। কফি বিন্স্ গুলিকে একটা পাত্রে প্রথমে সেঁকে নেওয়া হয়, তারপরে হামানদিস্তা দিয়ে গুঁড়ো করা হয়। তারপরে, গরম জলের সঙ্গে, কফি তৈরির বিশেষ পাত্র 'জেবেনা'তে ঢেলে দেওয়া হয়। একবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে তাতে আবার জল দেওয়া হয়। এইভাবে পাত্রের কফির গুঁড়ো দিয়ে তিনবার কফি তৈরি করা যায়। কফি তৈরি হলে বিশেষ ছোট্ট কাপে করে সেটি পান করতে দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে পপকর্ন।
জেবেনা এবং কফি খাওয়ার কাপ
হোটেলে কফি সেরেমনির ব্যবস্থা; বাঁদিকে নানা উপকরণ, ডান দিকে সুন্দর ভাবে সাজানো ট্রে নিয়ে পারম্পরিক পোষাকে কর্মচারী
আমাদের ইথিওপিয়ার কফি খুবই পছন্দ হয়েছে। এখানে কফি বেশিরভাগ সময়েই দুধ ছাড়া খাওয়া হয়, অনেকটা আমাদের দেশের কড়া লিকার চায়ের মত। আমরা জানতে পারলাম যে যে কোনোও সামাজিক অনুষ্ঠান সবসময়ে শুরু হয় এই কফি সেরেমনি দিয়ে। বন্ধুবান্ধব- আত্মীয়-প্রতিবেশী, সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্কের প্রতীক এই কফি সেরেমনি।
নৃত্য-গীত
'Food is music to the body, music is food to the heart.' — এমনই বলেন গুণীজনে; তাই খাবার-দাবারের কথার পরে গান-বাজনার কথায় আসতেই হয়। আফ্রিকার প্রতিটি দেশের সঙ্গীতের ঘরানা আলাদা, এবং প্রতিটি দেশই নিজেদের গান-বাজনার পরম্পরা নিয়ে খুব গর্বিত। এখানে মানুষ নানারকমের স্থানীয় বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গতে নাচে মেতে ওঠেন। ইথিওপিয়ার গানবাজনার স্বাদ পেতে আমরা এক শুক্রবার সন্ধ্যাবেলায় গেলাম 'আবিসিনিয়া' নামের এক হোটেলে, যেখানে সন্ধ্যাবেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে স্থানীয় খাওয়াদাওয়াও হয়। ইথিওপিয়ার গানবাজনা এমনই বচন্মনে, ছন্দে ভরা, যে নিজের অজান্তেই তুমি তাল মেলাতে শুরু করবে। তাই কিছুক্ষণ পরে, অনেক দর্শকই মঞ্চে উঠে চলে গেলেন নাচ গানে যোগ দিতে।তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলাম আমিও। কীভাবে কে জানে, সবাই বুঝে গেলেন যে আমি ভারত থেকে এসেছি। তাঁরা সবাই আমাকে ' নমস্তে' বলে অভিবাদন জানাতে লাগলেন। সেই মূহুর্তে, নতুন দেশের মানুষদের কাছে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে আমার খুবই ভালো লেগেছিল।
ইথিওপিয়ার নৃত্যগীতের অনুষ্ঠান, সঙ্গে পারম্পরিক খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা
পারম্পরিক পোষাক
আমরা খেয়াল করে দেখলাম, চারদিকেই স্থানীয় মানুষেরা নিজেদের পারম্পরিক পোষাক পরতে স্বচ্ছন্দ - সেটা বাজারহাটেই হোক বা কোনো জমায়েতে। ইথিওপিয়ার মহিলাদের জাতীয় পারম্পরিক পোষাক হল 'হাবেশা কেমিস'। এটা একটা লম্বা , সাদা সুতির জামা, যাতে নানারকমের রঙিন সুতোর নকশা করা থাকে। এর সঙ্গে নেওয়া হলে 'নেতেলা' নামের এক ধরনের শাল। এই দেশের প্রত্যেক জনজাতির পোষাকে থাকা আলাদা নকশা । প্রকৃতি এবং আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করেও বদলায় মানুষের পোষাক। জনজাতিভেদে বদলে যায় চুলের স্টাইল, গয়নাগাঁটি আর জামার নকশা। হারার অঞ্চলের মেয়েদের জামায় থাকে বেগুনি, লাল আর কালো রঙের নকশা; আবার ওরোমো জনজাতির মানুষেরা চামড়ার পোষাক ও পরেন। আমরা জানলাম, 'নেতেলা'-ই একমাত্র শাল নয়। রয়েছে 'ফোতা' নামের চৌখুপি নকশা করা তোয়ালে, 'দোচো" নামের লম্বা শাল যা শুধু বিবাহিত মহিলারা ব্যবহার করেন আর 'গাবি' নামের পাতলা কম্বল। স্ত্রী ও পুরুষ উওভয়েই 'গাবি' ব্যবহার করেন বাড়িতে, শীত এড়ানোর জন্য। ছেলেদের পারম্পরিক পোষাক হল হাঁটু অবধি শাদা শার্ট, সাদা ট্রাউজার্স আর গাবি।
আদ্দিস আবাবার শিরো মেডা মার্কেট এমন পারম্পরিক পোষাক বিক্রির জন্য বিখ্যাত। অসংখ্য দোকানে বিক্রি হচ্ছে নানা রকমের নকশা করা নানা ছাঁদের জামা। অনেক দেখশুনে আমরা নিজেদের জন্যেও কিনে নিলাম ইথিওপিয়ার পারম্পরিক পোষাক।
ইথিওপিয়া চামড়ার জিনিস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এবং আফ্রিকাতে এক নম্বরে রয়েছে। আমাদের গাড়ির চালক আমাদের নিয়ে গেলেন ওখানকার এক বিশেষ বাজারে, যেখানে নানারঙের চামড়ার দারুণ সব জিনিস বিক্রি হচ্ছে। আমরা সেখান থেকে নিলাম চামড়ার ব্যাগ, জুতো আর জ্যাকেট।
বাঁদিকেঃ নানা ধরণের পারম্পরিক পোষাক; ডান দিকেঃ ইথিওপিয়ায় তৈরি চামড়ার জিনিস ব্যবহার করতে পেরে খুশি আমরা
আমরা এমন একটা দেশে গেছিলাম, যেটা খুব জনপ্রিয় 'ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন' নয়। অথচ এই কদিনে আমরা কত নতুন বিষয়ে জানলাম, শিখলাম। প্রতিটা অজানা জায়গারই অনেক গল্প বলার থাকে, তার মুখোমুখি না গিয়ে বসলে তাকে চেনা যায় না। দশ দিনের আদ্দিস আবাবা ভ্রমণ শেষ করে ফিরতে ফিরতে আমি অনুভব করলাম, এই কদিনের অভিজ্ঞতা আমি খুবই উপভোগ করেছি। আমাদের এই সফরের শেষে, আমি যেন এক নতুন মানুষ হয়ে ফিরে এসেছি।
ছবিঃ লেখক
মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদঃ মহাশ্বেতা রায়