আঁকিবুকি
ঋষিরাজ পুষ্পলা, ৫ বছর, সেন্ট লুইস, মিসৌরি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
উজ্জয়িনী বিশ্বাস, ৫ বছর, চিত্তরঞ্জন, বর্ধমান
মালিকা দত্ত, ৮ বছর, সন্তোষপুর, কলকাতা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
জগন্নাথধামে কয়েকদিন
২০০৮সালের ডিসেম্বর মাসের ২০-২৫ তারিখ পাঁচ দিনের জন্য আমরা পুরি গিয়েছিলাম। আমাদের এই জার্নি ছিল, হাওড়া থেকে পুরি। তাই ১৯ তারিখ রাত ১০টা ৩৫মিনিটের পুরি এক্সপ্রেসে চেপে আমরা পুরির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরদিন ভোরবেলা,চারিদিক প্রচন্ড কুয়াশা,দুরের কিছু দেখা যাচ্ছে না।
সকালের কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক
সকাল ৭টা ৫০ নাগাত পুরি স্টেশনে এসে ট্রেন থামল। স্টেশন থেকে সোজা অটো করে এলাম সমুদ্রের ঠিক সামনে'স্বপ্নপুরি'হোটেলে। অসংখ্য মানুষ সমুদ্রে আনন্দ করে স্নান করছে। আরও দেখলাম সমুদ্রের ধারে পড়ে থাকা মৃত কচ্ছপের দেহ। শুনলাম এইরকম ভাবে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হচ্ছে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ। কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয় কেউ এদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
বালিতে মরে পড়ে আছে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ
পরদিন সকালবেলা গেলাম জগন্নাথ দেবের মন্দিরে। হোটেল থেকে মন্দির হাঁটা পথ। মন্দিরের ভিতরে প্রচন্ড ভীড়!অসংখ্য মানুষ জগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে পুজো দিচ্ছে। মন্দিরের ভিতর ভোগের বাজারে ভোগ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেখলাম ভোগ তৈরীর ঘর। ঘর ঘেরা থাকলেও ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে,অনেক লোক কাঠের জ্বালে রান্না করছে। মন্দির দর্শন করা ও পুজো দেওয়ার পর আমরা হোটেলে এলাম। পরদিন সকাল ১১টা নাগাত চিল্কা পৌছলাম।
চিল্কা হ্রদ
পুরো চিল্কা হ্রদটা নৌকা করে ঘুরলাম। প্রথমে এলাম ডলফিন পয়েন্টে,পুরো ডলফিন দেখতে না পারলেও ডলফিনের মাথা,লেজ,ডানা বেশ ভালো ভাবে দেখেছি। শুনেছি ওরা ভিষণ লাজুক আর ভিতুও। তবে আমাদের নৌকার খুব কাছেই ওরা ছিল। নিজেদের মতো করে জলের মধ্যে ডুব দিচ্ছিলো আর উঠছিলো। এছাড়া দেখলাম নানা রকমের,নানা রঙের অসাধারণ দেখতে বিদেশী পাখী। ওখান থেকে নৌকা করে'সী মাউথ'দেখতে এলাম।
সী মাউথ
এখানে চিল্কা হ্রদের সাথে বঙ্গোপসাগরের মিলন হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ওখান থেকে নৌকা করে ফিরে এলাম। বিকেল ৪টে নাগাত আমরা হোটেলে ফিরলাম। পরদিন বিকেলবেলা কোনারকের সূর্য মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সন্ধাবেলা কোনারকের লাইটিং দেখার মত!
কোনার্ক এর সূর্যমন্দির
ওখানে সূর্যদেবের রথের চাকা দেখলাম,আগে এই চাকার সাহায্যে সময় নির্ণয় করা হত।
রথের চাকা, যা আসলে সূর্যঘড়ি
কোনারকের মূল মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকলেও বাইরে থেকে মন্দিরটা দেখলাম। কোনারকের সূর্য মন্দির এককথায় অসাধারণ। ৭টা নাগাত ওখান থেকে রওনা দিলাম। ফেরার পথে বারবার মনে হচ্ছিল গাইডের কথা গুলো। বহুকাল আগে এরকমই এক সন্ধ্যেবেলা মন্দিরে আরতি হত। অনেক লোক আসতেন, পুজো দিতেন, অনেক ভোগ দেওয়া হত। মন্দিরের চারপাশ ভরে থাকতো ধূপ-ধুনো আর ফুলের গন্ধে।
পরদিন জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি,পিসির বাড়ি,মা চন্ডীর মন্দির,সোনার গৌরাঙ্গের মন্দির দেখতে গেলাম।
জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি
আর কি খেলাম?পুরিতে খাজার জন্য বিখ্যাত দোকান কাকাতুয়াতে গিয়ে রোজ ভরপেট খাজা, কচুরী, সিঙ্গারা, রাবড়ি খেতাম।
কাকাতুয়ার খাজা
আর দুপুরে বেনফিসে গিয়ে পমপ্লেট মাছ, ঝুরো আলুভাজা, চিংড়ি তো থাকতোই। সমুদ্রের ধারে বসে রোজ বিকেলে খেতাম বাদামভাজা, ঝালমুড়ি আর সকালে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে চা। পুরীর মন্দিরে শ্রী শ্রী জগন্নাথের প্রসাদও দারুন খেতে। আমার আবার ইচ্ছে আছে পুরী যাওয়ার। তখন বাকি জায়গা গুলো ঘুরবো আর ফিরে এসে ইচ্ছামতীতে লিখবো।
তুমি কি সোহিনীর মত "ইচ্ছে মতন" বিভাগে তোমার লেখা দিতে চাও? তাহলে তোমার ইচ্ছে মতন লেখা গল্প, কবিতা,ভ্রমণকাহিনী - যা ইচ্ছে লিখে পাঠিয়ে দাও আমার কাছে।
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
বাড়ির মধ্যে সার্কাস
সার্কাস মানেই তো যেখানে থাকে হুপার্স,এক্রোব্যাট্স,জাগলার আর দমফাটা হাসির সেই সব জোকাররা। কিন্তু আমাদের ফ্যামিলিতে তো মা,বাবা,দাদা,দিদি,বোনেরা
থাকে তাহলে সেখানে সার্কাস হবে কী করে?
সার্কাস মানেই তো মজা। একবার ভেবে দেখো তো আমাদের সবার বাড়িতেও কি নানা রকমের মজার কান্ড কারখানা ঘটে চলে না!সেখানে আমরা মাঝে মাঝেই এমন সব কান্ড করে বসি যা সার্কাসকেও হার মানায়। এই মজার কথাটা প্রথম বুঝতে পারেন বিল কেন(Bil Keane)নামের এক ভদ্রলোক। তিনিই শুরু করেন ফ্যামিলি সার্কাস (Family Circus)নামের এক কমিক স্ট্রিপ।
বিল নিজে নিজেই আঁকতে শিখেছেন। 'দ্য নিউ ইয়র্কার' (The New Yorker) ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কার্টুন দেখে আঁকা প্র্যাকটিস করতেন আর মনে মনে ভাবতেন চারপাশে যা কিছু দেখছেন একদিন সব এঁকে ফেলবেন। বড় হয়ে সত্যি তিনি নানান ম্যাগাজিনে ছবি আঁকতে শুরু করেন। বিল ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সৈনিক। ভাবতে অবাক লাগে যুদ্ধের সময়েও তাঁর কার্টুন আঁকা বন্ধ হয়নি। যুদ্ধ করতে করতে যখন তিনি জাপানে তখন ইয়াঙ্ক (Yank) ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর কমিক স্ট্রিপ। অষ্ট্রেলিয়াতে পৌঁছে তাঁর দেখা হয়ে যায় একটা মিষ্টি মেয়ে থেল কার্নের (Thel Cerne) সঙ্গে। পাঁচ বছর পরে থেলের সাথে বিয়ে হয় বিলের। শুরু হয় বিলের নিজের জীবনের ফ্যামিলি সার্কাস।
বিল তখন ব্যস্ত চ্যানেল চাকল্স (Channel Chuckles)নামের একটি কমিক স্ট্রিপ নিয়ে। বউ থেল হিমসিম খাচ্ছে বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে। আর এই সবের মধ্যেও,এত ব্যস্ততার মধ্যেও বিল লক্ষ্য করছেন তাঁর বাড়িটা একটা মজার জায়গা। পাঁচ ছেলে মেয়ে গেইল্, নিল্, গ্লেন্, ক্রিস্টোফার এবং জিফ সেইসঙ্গে তাদের মা থেল ও বিল নিজে রোজই কিছু না কিছু মজার কান্ড কারখানা ঘটিয়ে চলেছে। আর এদের নিয়েই ১৯৬০ সালে বিল শুরু করলেন তাঁর সাড়া জাগানো দুষ্টু মিষ্টি কমিক স্ট্রিপ ফ্যামিলি সার্কাস। পরিবারের সদস্যরাই হলেন এই কমিক স্ট্রিপের চরিত্র,পাত্র পাত্রী।
ফ্যামিলি সার্কাস কমিক স্ট্রিপে আছে একজন মা,একজন কার্টুনিস্ট বাবা ও তাদের চার ছেলে মেয়ে বিলি,ডলি,জেফি আর পিজে। এছাড়াও আছেন তাদের ঠাকুমা আর আছে দুটো পোষা কুকুর ও একটি বিড়াল। বিল এই কমিক স্ট্রিপটা একটি বৃত্তের মধ্যেই আঁকতে পছন্দ করতেন।তিনি মনে করতেন এই ভাবেই হয়তো বোঝাতে পারবেন পরিবারটির খুশিতে ভরা জীবন যাপন। বিল তুলে ধরলেন নানা মজার ঘটনা। যেমন ধর মাকে বাচ্চারা জন্মদিন এ কেক বানিয়ে চমকে দিতে চায়। এদিকে মা অবাক; বাচ্চাগুলো গেল কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে রান্না ঘরে গিয়ে দেখা গেল সেখানে সব কিছু লন্ডভন্ড। একজন ডিম নিয়ে খেলা করছে; একজন বারোটা মোমবাতি নিয়ে বসে ভাবছে মা'র বয়স কত; আরেকজন চকোলেট খেয়েই চলেছে।
তাঁর এই প্রচেষ্টা যথাযথ সম্মান পায় যখন ফ্যামিলি সার্কাস কিং ফিচারস্ সিন্ডিকেটের (King Features Syndicate) সদস্য হয়ে যায়। আরো অনেক পুরষ্কার আর সম্মান পান বিল। এই কমিক স্ট্রিপের চরিত্রদের কারো বয়স না বাড়লেও বিলের ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে। গ্লেন ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্সের একজন বিখ্যাত অ্যানিমেটর। Little Mermaid আর Arielতো তাঁরই সৃষ্টি। বিলও বুড়ো হয়েছেন কিন্তু ফ্যামিলি সার্কাসে নতুন নতুন ঘটনা আজও ঘটেচলেছে। বিল এর মেয়ে গেইল্ যার আদলে তৈরী হয়েছিল ডলি চরিত্রটি সে এখন নিজেদের কোম্পানীর কাজ কর্ম দেখাশুনো করে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে বিল এখন নতুন গল্পের সন্ধান পান কোথা থেকে? তাঁর ছেলে মেয়েরা তো বড় হয়ে গেছে। আরে ভাই বিল কি থেমে থাকার পাত্র? বিল এখন নতুন গল্পের রসদ পান তাঁর নাতি নাতনিদের কাছ থেকে। এখন বিলের সাথে ছেলে জেফও কাজে হাত লাগিয়েছে ফ্যামিলি সার্কাসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বাবার মতো জেফও এখন তার নিজের ছেলে মেয়েদের কার্যকলাপ খেয়াল করে চলে। সে খেয়াল করে তার বাচ্চারাও মন দিয়ে খবরের কাগজে পড়ে। জেফ জানে তারা আসলে কমিক্স পড়ছে, ঠিক জেফ যেমনটি পড়তো তার ছোটবেলায়। তার বাচ্চাদের রকম সকম আর দুষ্টুমিগুলো একের পর এক উঠে আসে ফ্যামিলি সার্কাসে।
ফ্যামিলি সার্কাস পড়তে পড়তে মনে হয় আরে আমাদের বাড়িতেও তো এমনই সব মজার ঘটনা ঘটে চলে। পিজে যে কিনা ফ্যামিলি সার্কাসের ভাই বোনেদের মধ্যে সবার থেকে ছোটো,কথাও বলতে শেখেনি সেও কিন্তু নানান মজার ঘটনা ঘটিয়ে চুপচাপ সরে পড়ে। যেমন ধরো মায়ের লিপস্টিক দিয়ে দেওয়ালে আঁকিবুকি কেটে ভালো মানুষটি সেজে বসে থাকা এরকম আরো কত কি। তোমার বাড়িতেও নিশ্চই নানান রকমের মজার ঘটনা ঘটে, সেই সব মজার ঘটনা ছবি এঁকে খুব তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দাও ইচ্ছামতীকে। কে জানে হয়তো তুমিই একদিন হয়ে উঠবে আমাদের বিল কেন।
ছবিঃ
পূর্বাশা
ফ্যামিলিসার্কাস
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
বাষ্পের ক্ষমতা
আগের সংখ্যায় (বসন্ত সংখ্যা ২০০৯) তোমাদেরকে কেটলির গুন গুন করার কথা শুনিয়েছিলাম। সঙ্গে আরোও অনেক কথা ছিল।
কেটলি নিয়ে আর দু'একটা কথা হবে নাকি?
হবে? তাহলে চল, রান্নাঘরে হানা দিই আর একবার। কখন সেটা করব জিজ্ঞেস করছ? রান্নাঘর যখন ফাঁকা থাকবে তখন গেলেই হল। তবে পাশে মা বা অন্য কেউ বড় একজন থাকা উচিত।
কেটলিতে জল ভর্তি করে নিয়ে গ্যাসের ওপর বসাও। জলটা একটু বেশি নিতে হবে কিন্তু। তাহলে বাষ্পটা নল দিয়ে বেরোতে পারবে না। কেননা বাষ্প বেরোবার নলের মুখটা জলের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর সেটাই আমরা চাই।
জল ফুটতে থাকলে বাষ্প তৈরি হয়ে সেটা নল দিয়ে বেরোতে না পেরে ভেতরে জমতে থাকবে। ভেতরে বাষ্প জলছে কিনা একটু পরেই টের পাবে ঢাকনার খটাং খটাং আওয়াজ শুনে। নলের মুখ দিয়ে বেরোতে না পেরে বাষ্প ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে ঐ ঢাকনা সরিয়ে। আর তাতেই ঐ শব্দ।
গায়ে জোর না থাকলে কি সেটা সম্ভব?
এটাই হল বাষ্পের ঠেলা বা ধাক্কা মারের ক্ষমতা। ইংরাজিতে একে বলে steam power বা বাষ্পীয় ক্ষমতা।
এই ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর কথা চলেছিল বেশ কয়েকশ' বছর ধরে। কবে থেকে? তা ধর ১৫৫০-৫১ সাল থেকে। সেই সময় থেকে নানা ধরনের কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছে নানারকমের স্টীম বা বাষ্পীয় ইঞ্জিন।
কল-কারখানায় তো কাজ করেছেই, এমনকি রেল গাড়ি চালাবার কাজেও লেগেছে এই ইঞ্জিন।
এখন অবশ্য স্টীম-ইঞ্জিন আর রেলগাড়ী চালাবার কাজে ব্যবহার করা হয়না। ইলেকট্রিক বা ডীসেল ইঞ্জিনেই গাড়ী চলে। কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্তও বাষ্পীয় ইঞ্জিনই ব্যবহার হত।
প্রথম রেল-ইঞ্জিন তৈরি করেন জর্জ স্টিফেনসন। ইনি মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ইঞ্জিন বানানোর কাজে হাত লাগান এবং সফল হন। এই ইঞ্জিন প্রথমে কয়লার ওয়াগন টানার কাজে লাগানো হলেও পরে যাত্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহার হতে থাকে।
জর্জ স্টিফেনসন
প্রথম স্টীম-ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রী পরিবহনের কাজ কবে শুরু হয়েছিল জান? -সেই ১৮২৫ সালে।
স্টীম-ইঞ্জিন দেখেছ? স্টীম ইঞ্জিন আজকাল বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনশালায় রাখা থাকে। যেমন, কলকাতায় হাওড়া স্টেশনের রেল মিউজিয়ামে যত্ন করে সাজিয়ে রাখা আছে পুরোনো দিনের স্মৃতি হিসাবে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা তোমাদের জানিয়ে রাখি। কবে প্রথম হাওড়া স্টেশন থেকে রেল চলেছে জান? সেটা হল ১৮৫৮ সালের ১৫ই আগস্ট। প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিনটানা রেলগাড়ি চলেছিল হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত। যে ইঞ্জিনটা ঐ গাড়িটাকে টেনেছিল তার আদুরে নাম ছিল "ফেয়ারি কুইন" [Fairy Queen ]। বাংলায় কি বলব একে -"পরী রানী"?
ফেয়ারি কুইন
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
এডউইন এস পোর্টার
১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের প্রথম দিকে সিনেমা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে উঠছিল। এই বড় হয়ে যাওয়ার পাঠশালা কিন্তু আটলাণ্টিকের ওপারে, নিউ ইয়র্ক শহরে। সেখানকার একজন সাহেবের গল্প আমরা শোনাব যার নাম এডউইন পোর্টার। মেলিয়ে ছবির মাধ্যমে গল্প বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারেননি কিভাবে ছবিগুলোকে এমন ভাবে সাজানো সম্ভব যাতে কখনই মনে হয়না যে ছবিগুলো জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। পোর্টার ঠিক এই কাজটাই সেরে ফেললেন। তিনি আনলেন গল্প বলার নতুন কায়দা। তিনি এমন ভাবে গল্প বললেন যে ছবিও থেলে থাকল না আর একসঙ্গে দুটো বা তিনটে গল্প বলা গেল।
এডউইন এস পোর্টার
সিনেমায় যেটুকু হাতের কাজ লাগে পোর্টার সেটুকু খুব ভালো করে জানতেন। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন এডিসন সাহেবের কোম্পানিতে মেকানিক হিসাবে। সেখানে কাজ করতে করতেই তিনি মাথা ঘামিয়ে পার করে ফেলেন কিভাবে বইএর মত করে সিনেমার গল্প বলতে হয়। উপন্যাসে যেমন নানা ঘটনার সমাবেশ হয়, তিনি ছবিতে সেই স্বাদ দিতে চেয়েছিলেন।
তাঁর সবথেকে বিখ্যাত ছবি হল 'দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি' (১৯০৩)। ১২ মিনিটের এই ছবির বেশিরভাগটাই স্টুডিও তে তোলা। স্টুডিও সেটের মধ্যে আলো ব্যবহারে তিনি যে কত দক্ষ ছিলেন তার প্রমান এই ছবি। এই ছবির আউটডোর শুটিং অবশ্য হয়েছিল নিউ জার্সি শহরের কাছে।
ছবির পোস্টার
'দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি' কে বলা হয় প্রথম ওয়েস্টার্ন ছবি (western). কথাটা হয়ত একটু সহজ করে বলি। তোমরা নিশ্চয় বিখ্যাত হিন্দি ছবি 'শোলে' দেখেছ? জয়-বীরু আর গব্বর সিং ডাকাতের গল্প? 'দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি' কে বলতে পার 'শোলে'র ঠাকুমা!! এখানে একটা ট্রেন ডাকাতি আর কিভাবে দস্যুদের উদ্দ্যেশ্য ব্যর্থ হল সেই গল্প বলা আছে। পোর্টার এখানে তৈরি করলেন প্যারালেল অ্যাকশন, ব্যবহার করলেন ক্রস- কাটিং। তার ফলে আমরা নানারকম উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে গল্পটাকে পেলাম।
ছবির একটি দৃশ্য
শেষ দৃশ্যে একজন ডাকাত দর্শকদের দিকেই গুলি ছুঁড়ছে !
এইরে! প্যারালেল অ্যাকশন বা ক্রস-কাটিং এসব তো খুব ভারি শব্দ! কি করে বুঝব! জিনিষটা কিন্তু খুব সহজ। ধর, ট্রেনে ডাকাতি হচ্ছে। আর ওদিকে, টেলিগ্রাফ অফিসের অপারেটর টেলিগ্রাফ করে খবরটা চারিদিকে পৌঁছাতে চাইছে। সে অতি কষ্টে গিয়ে কাছের সরাইখানায় সবাইকে খবর দেয়।তখন সবাই বন্দুক বাগিয়ে ডাকাতদের ধরতে বেরিয়ে পড়ে। ততক্ষনে তো ডাকাতরা ট্রেন চালিয়ে অনেকদূর চলে গেছে।পোর্টার করলেন কি, এমনভাবে দুটো ঘটনাকেই দেখালেন যে দর্শক পুরো ব্যাপারটা টানটান উত্তেজনা নিয়ে দেখল- ভুলেই গেল যে দুটো আসলে আলাদা ঘটনা আলাদা জায়গায় ঘটছে। এ এক নতুন রকমের অভিজ্ঞতা হল দর্শকদের কাছে! গল্পটাকে যেন আরো ভাল করে বুঝতে শুরু করল তারা। গল্প বলার এই কৌশল তৈরি করার জন্য পোর্টার বিখ্যাত।
পোর্টার যখন এডিসন স্টুডিও ছেড়ে দিলেন তখন ১৯০৯ সাল। তার আগের বছর এক তরুন অভিনেতা এসে তাঁর কাছে অভিনয়ের সুযোগ চান। পোর্টার তাঁকে সু্যোগও দেন। তৈরি হয় একটি অতি সাধারন ছবি, যার নাম Rescued From An Eagle's Nest. এই কথাটা মনে থাকার কথা নয় এতদিন পরে। কিন্তু সিনেমা নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁরা সেদিনের সেই তরুন অভিনেতাটিকে মনে রেখেছেন। কেন বলতো? কারণ তিনিই প্রথম সিনেমাকে যথার্থ সিনেমা করে তুললেন। ১৯১৪ সালে তৈরি তাঁর ছবি 'বার্থ অফ এ নেশন' [Birth of a Nation] এর হাত ধরেই শুরু হল প্রথম কাহিনীচিত্র - বা গল্প বলা ছবি। তাঁর নাম ডেভিড ওয়র্ক গ্রিফিথ। সত্যজিত রায় তাঁকে বলেছিলেন 'ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের পিতা' । ভাবছ ধ্রুপদী চলচ্চিত্র মানে কি? -ডেভিড ওয়র্ক গ্রিফিথ আর ধ্রুপদী চলচ্চিত্র নিয়ে আমরা গল্প বলব এর পরের বার।
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত