সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

চিনি,আসলে ওর নাম কিন্তু চন্দ্রাবলী মৈত্র। জলপাইগুড়ির একটা স্কুলের ক্লাস সিক্সের ছাত্রী। এমনিতে ওর হবি বইপড়া,ছবি আঁকা। রহস্য,অ্যাডভেঞ্চার,আর ভ্রমণের গল্প পেলে আর কিছু চায় না। হাতের কাছে বেশ কয়েকটি এমন বিষয়ের বই রয়েছে অথচ আজ ওর কোনো কাজে মন নেই। থাকবেই বা কী করে?-ও যে কাল স্পষ্ট শুনেছে, মা মিনু পিসির সাথে ফোনে কথা বলার সময় বলেছেন-"এ তো ভারি রহস্যময় ব্যাপার!"----কী সেই রহস্য? এত করে মা কে জিজ্ঞাসা করছে অথচ,মা যেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। শুধু বললেন, "তাড়াতাড়ি শুয়ে পর,সকাল সকাল উঠতে হবে,কাল আমরা মিনু পিসির বাড়ি রসুলপুর যাব"।

ঠিক তখনই চিনির বাবা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন,মা চোখে ইশারায় বাবা কে চুপ করিয়ে দিলেন। চিনি মনে মনে ভাবল একবার পিসির বাড়ি যাই তো,তারপর দেখব কেমন করে মা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখেন ব্যাপারটা।কিন্তু পিসির বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার মত ধৈর্য ও থাকছে না ওর। মনের ভিতর রহস্যের ধোঁয়াটা ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এমনটা হওয়া স্বাভাবিক- মা যে ভাবে ব্যাগ গুছাচ্ছেন! সকাল সকাল রান্না সারা, সেই কখন থেকে ব্যাগ গুছাতে বসেছেন। যা মনে হচ্ছে,বেশ কয়েকদিন রসুলপুরে থাকবে ওরা। সবে মাত্র পনেরো দিন হলো গ্রীষ্মের ছুটির পর স্কুল খুলেছে ওদের। বর্ষা শুরু হয়েছে,ঘেমো গরম। এমন আবওহাওয়ায় মা যে রসুলপুর গিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,এর পিছনে কোনো সামান্য কারণ থাকতে পারে না।

ঠিক বিকাল পাঁচটা পঁয়তাল্লিশে জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে ওদের। চিনি ওর প্রিয় বন্ধু জেলিকে ফোনে ব্যাপারটা জানিয়ে রেখেছে। জেলি বলেছে ও যেন স্কুলের ব্যাপারে চিন্তা না করে। দুপুর দুপুরই ওরা বেরিয়ে পড়েছে বাড়ি থেকে। ট্রেনে ওঠার আগে পর্যন্ত ওর বেশ টেনশন হচ্ছিল। পেটের ভিতরটা কেমন যেন করছিল। ট্রেনে ওঠার প্রায় আধঘন্টাপর, চিনি মায়ের মোবাইল নিয়ে সবে গেম খেলতে বসেছে, এমন সময় মোবাইলে ভেসে উঠলো মিনু পিসির নাম। মা তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে হাত দিয়ে মুখের সামনে আড়াল করে, ফিসফিস করে কথা বলতে লাগলেন। চিনি শুধু শুনতে পেল মা বলছেন,
"আপনি কিছু চিন্তা করবেন না মিনুদি,আমরা এসে যা হয় একটা ব্যবস্থা করব"।

ট্রেন নির্ধারিত সময়ের দু"ঘন্টা পরে বর্ধমান স্টেশনে এসে পৌঁছালো। এখান থেকে হাওড়া বর্ধমান মেনলাইন লোকাল ধরে ওরা চলল রসুলপুর। গাংপুর—শক্তিগড়—পালসিট আসতেই চিনি ওর বাবার সাথে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। পরের স্টেশনই রসুলপুর। স্টেশনে নেমেই ওরা একটা ভ্যান নিলো। প্রায় দু'কিলোমিটার রাস্তা ওদের ভ্যানে যেতে হবে। বৃষ্টি পড়ে রাস্তার অবস্থা ভীষণ খারাপ। মিনু পিসির বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা, এমন সময় ভ্যানটা একটা ইঁটে ধাক্কা খেয়ে গেল উল্‌টে। চিনির ডান হাতের কনুইয়ের কাছে খানিকটা কেটে রক্ত ঝরতে লাগল।

চিনির মা অমনি বলে উঠলেন,-"দেখলে,আমি জানতাম কিছু একটা অঘটন ঘটবে। সব ঐ –ঐটার"-এই পর্যন্ত বলেই থেমে গেলেন।

খানিক বাদেই ওরা এসে পৌঁছাল মিনুপিসির বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে কিছুটা চিতার বেড়াঘেরা,বাকিটা সীমানা হীন। ছোট্ট একটা বাঁশের গেট। ঢোকার মুখেই বাঁধা রয়েছে খান চারেক ছাগল। সোজা সামনের দিকে রয়েছে একটা মাটির বাড়ি। পাশ দিয়ে রাস্তাটা পুকুরঘাটে গিয়ে মিশেছে। রাস্তার বাঁ পাশেই রয়েছে গোয়ালঘর। গোয়ালের পিছনে জমানো হয় গোবর,উনুনের ছাই। আর ঢোকার মুখে ডান দিকে রয়েছে পাকা বাড়িটা। চিনিরা ঘরে ঢুকতেই মিনুপিসি ছুটে এলেন চিনির কাছে। ওর হাতের ক্ষত দেখে আঁতকে উঠলেন। উঠান থেকে লালপাতা নিয়ে এসে রসটা চিনির ক্ষতে লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন,- "জানিস মণি, এ সবই হচ্ছে ঐ অপদেবতার কাজ"। মা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন-" আঃ! মিনুদি,আপনাকে বললাম না,বাচ্চাদের সামনে ঐসব কথা বলবেন না"। চিনি এতক্ষণে একটা বিষয়ে নিশ্চিন্ত হলো,মা যার বিষয়ে এতো চিন্তিত সে আসলে অপদেবতা। চিনি সেই ছোট থেকেই শুনে আসছে মায়ের মুখে অপদেবতারা মানুষের ক্ষতি করে। কিন্তু চিনির এসবে বিশ্বাস নেই।

চিনিকে ঘরে রেখে মা রা সবাই হন্তদন্ত হয়ে পুকুরের দিকে গোয়াল ঘরের পিছনে চলে গেলেন। একটু আগেই মিনুপিসিকে বলতে শুনেছে—জিনিসটা নাকি ছাইয়ের গাদায় মাটি ফুঁড়ে উঠে এসেছে। প্রতিদিন নাকি একটু একটু করে বড় হচ্ছে। ভয়ানক আকার ধারাণ করেছে! কাল থেকে নাকি ডানার মত কি সব দেখা দিয়েছে! মাঝের অংশে আবার একটা গোল গর্ত। চিনি হাজার ভেবেও ঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারলো না। এমন সময় মিনুপিসির ছেলে রাজনদাদর উপস্থিতি বিশেষ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে হস্টেলে থাকে, পরীক্ষা চলছে,আসতে পারবে না। চিনির একা একা একদম ভালো লাগছেনা।

জানালা দিয়ে সূর্যের আলোটা চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল চিনির। ঘুমটা খুব ভালোই হয়েছে তাই,উঠতে দেরি হয়ে গেছে। ঘুমের ঘোর কাটতেই শুনতে পেল বাইরে থেকে বহু মানুষের গুনগুন আওয়াজ ভেসে আসছে। ও লাফ দিয়ে নামলো বিছানা থেকে। দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলো উঠান ভর্তি লোক গিজগিজ করছে। চিৎকার করে মাকে ডাকলো।
নিমেষের মধ্যে ওর মা এসে হাজির। মুখে আঙুল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললেন " চিনি মা, যেন একা একা কোথাও যেও না।"
চিনি ওর মাকে কেন জিজ্ঞাসা করতেই যাচ্ছিল - ঠিক এমন সময় দেখল, একটা কালো আলখাল্লা পড়া লোক,কোমরে লাল কাপড়ের বন্ধন,গলায় ও হাতে পাথরের মালা। চোখে মোটা করে সুরমা আঁকা,মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ। লোকটা বেশ দাম্ভিক চালে এগিয়ে চলেছে গোয়াল ঘরের পিছনে। একজন শিষ্য পিছনে পিছনে ছাই দিয়ে একটা রেখা টানতে টানতে চলেছে।
চিনি আবার ওর মা কে জিজ্ঞাসা করল—"বলো না মা,কী হবে?" এবার ওর মা আগের থেকেও গলাটা চেপে বললেন—" উনি হলেন ফকির বাবা,অনেক তন্ত্র-মন্ত্র জানেন,বাড়িতে যে অপদেবতা বাসা বেঁধেছে,উনি সেই অপদেবতাকে তাড়াতে এসেছেন।তুমি এখন ভিতরে যাও মা।"
ওদিকে বিশাল হাঁড়িতে চলছে খিচুড়ি রান্না। মা-পিসি সবাই ব্যস্ত ফকির বাবার কাজে। চিনির তো ওদিকে যাওয়া নিষেধ, তাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সবার কর্ম-কান্ড। কানে ভেসে আসছে অদ্ভূত সব মন্ত্র

"হিং ক্রিং ফট্‌
ভূত মট্‌ মট্‌
যা চলে যা
তুই চট্‌ পট্‌"...

মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথেই গোটা বাড়ি কালো ধোঁয়ায় ভরে গেলো। আর সেই সঙ্গে শুরু হলো উঠোন জুড়ে কাশির আওয়াজ-খকখক,খুকখুক,ঘরঘর বিভিন্ন রকম কাশির আওয়াজ। সারাদিন অপদেবতা তাড়িয়ে সন্ধ্যে থেকে শুরু হলো আরেক কান্ড। দলে দলে লাইন করে লোক আসতে লাগলো আর সেই ফকির বাবা পঞ্চাশ-একশো টাকার বিনিময়ে সকলকে একমুঠো মন্ত্র পড়া ছাই দিতে লাগলেন। চিনির মা,পিসিও সেই ছাই প্রসাদ নেওয়া থেকে বাদ গেলেন না। কিন্তু চিনির মনে একটা ব্যাপার আশ্চর্য লাগল—ফকির বাবা টাকা নিচ্ছে্ন কেন? ও দাদুর কাছে শুনেছে যাঁরা প্রকৃত সাধু তাঁদের তো অর্থের প্রয়োজন হয় না।

কত রাত পর্যন্ত যে এই সব কর্মকান্ড চলেছে চিনি কিছুই জানে না। রাতে খেয়েদেয়ে ও শোওয়ার আগে পর্যন্তও বাড়িতে অন্তত একশো লোক উপস্থিত ছিল। কিন্তু ভোর রাতে হঠাৎ চিনির ঘুম ভাঙতেই ও উঠানের দিকে চেয়ে দেখল,যে যেখানে বসে ছিল সেখানেই বসে ঘুমাচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি বাইরে এসে চারিদিকে চেয়ে দেখল, সেই ফকির আর তার শিষ্য সেখানে নেই। চিনির মনে সন্দেহ হতেই ও এক ঘটি জল এনে ওর মায়ের মুখে ছিটাতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর মা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখেই চিৎকার করে উঠলেন। ততক্ষণে সবাই চোখ মেলতে শুরু করেছে। ফকির বাবার খোঁজ করতেই দেখা গেল সে ও তার শিষ্য টাকা-পয়সা সহ উধাও। সত্যটা তখন কারোর কাছেই অজানা নয়। সবাই নিজের বোকামির হিসাব কষতেই ব্যস্ত। ঠিক এমন সময় গেটের কাছে শোনা গেল-বম—বম—বমবম—একটা গমগমে আওয়াজ। পরে পরেই একই শব্দের সমস্বরের আওয়াজ। সবাই ছুটে গেটের দিকে যেতেই অবাক হয়ে মাঝ পথেই দাঁড়িয়ে পড়ল।

সামনে দন্ডায়মান পাঁচ সন্ন্যাসী। নিম্নাঙ্গে গেরুয়া বস্ত্র,ঊর্ধ্বাঙ্গ উন্মুক্ত,গলায় রুদ্রাক্ষের মালা,মুখ ভর্তি দাড়ি,চুল মাথার উপর চুড়ো করে বাঁধা। পিছনে দন্ডায়মান চার শিষ্য,তবে তাদের বয়স অপেক্ষাকৃত কম। প্রত্যেকের হাতেই ত্রিশূল,তাতে রুদ্রাক্ষ জড়ানো ডমরু বাঁধা। চিনিও মায়ের পাশে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগে সাধুবাবা দেখলে ভয় লাগত,এখন আর ভয় পায়না,সিক্সে পড়ে,এখন ও বড় হয়ে গেছে।

আগের পরিস্থিতির থেকে তখনও ওরা বেরোতে পারেনি,তাতে সামনে এমন লোকের উপস্থিতি দেখে সবাই প্রায় বাকরুদ্ধ। সামনের সাধুবাবা ত্রিশূলটা একবার জোড়ে মাটিতে ঠুকে বলে উঠলেন,"বম—বম—বমবম"। তারপর মিনুপিসির দিকে আঙুল তুলে বললেন,
"তোর বাড়িতে মা এসেছেন,প্রতিষ্ঠা চাইছেন। তিনিই আমাকে তাঁর দূত করে পাঠিয়েছেন।"

সঙ্গে সঙ্গে মা আর পিসি ধপ করে মাটিতে পড়ে একটা গড় করলেন,তারপর গেট খুলে ভক্তিরসে গদগদ হয়ে সবাইকে এনে বসালেন মাটির ঘরের বারান্দায়। পিসি তাড়াতাড়ি এক ঘটি জল এনে পা ধুইয়ে দিলেন সাধুবাবার। সাধুবাবা কাউকে কিছু না বলেই সোজা চলে গেলেন গোয়াল ঘরের পিছনে,সঙ্গে শিষ্যরা। তারপর হুঙ্কার দিয়ে বললেন,"মায়ের আবির্ভাব হয়ে গেছে, উলুধ্বনি দে,শঙ্খ বাজা।" ততক্ষণে বাড়িতে বহু লোক জড়ো হয়েছে, উলুধ্বনি আর শঙ্খের আওয়াজে যেন কেঁপে উঠলো বাড়িটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাদা কাপড়ে ঘিরে ফেলা হলো জায়গাটা। যেটুকু দেখার আশা জন্মেছিল চিনির মনে, তাও বন্ধ হয়ে গেল।

টানা সাত দিন ধরে বাড়ি জুড়ে চলছে উৎসব। সকাল হতে না হতেই দূর-দূরান্ত থেকে সব লোক ডালা সাজিয়ে পুজো দিতে আসছে। মিনুপিসির বাড়িটা যেন মন্দিরে পরিণত হয়েছে। চিনি, মা আর পিসির আলোচনা থেকে জানতে পেরেছে যে, জিনিসটা নাকি আগের থেকে আকারে বড় হয়েছে। সাধুবাবা বলেছেন এই বস্তুটাই নাকি আস্তে আস্তে দেবী মূর্তিতে পরিণত হবে। আর যত দিন তা না হবে বাবা এখানেই থাকবেন। এখন সবার ভিতরে যাওয়া নিষেধ, দেবী মূর্তিতে রূপান্তরিত হলে এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা হবে,তখন সবাই যেতে পারবে ভিতরে।

বিষয়টা চিনির কাছে বড় অদ্ভূত লাগছে। এখন ও রাজনদাদার অভাব বোধ করছে। ফোনে এখানকার সব কথা জেলিকে জানিয়েছে। চিনি মিনুপিসির পাকা বাড়ির রোয়াকে বসে যখন এই সব আকাশ-পাতাল ভাবছে,ঠিক তখনই দেখল, রাজনদাদা ব্যাগ হাতে বাড়ি ঢুকছে আর অবাক হয়ে দেখছে বাড়ির অবস্থা। চিনি এক লাফে গিয়ে দাঁড়াল রাজনদাদার সামনে। ওদিকে রাজনদাদার হঠাৎ আগমনে বাড়ির সবাই তো অবাক। পিসির মুখটাও একটু যেন পালটে গেল,রাজনদাদা যে এসব কিছু একদম পছন্দ করে না সেটা পিসি ভালো করেই জানেন।

এতদিন ধরে বাড়িতে খিচুড়িই রান্না চলছে। রাজনদাদা আর চিনি সেটাই খেয়ে গিয়ে ঢুকল রাজনদাদার ঘরে। সুযোগ বুঝে চিনি তো রাজনদাদাকে প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বিস্তারিত শোনালো। রাজনদাদাতো শুনেই ছুটছিল,কিন্তু চিনি অনেক কষ্টে ওকে আটকেছে। কারণ ভুয়ো ধর্মীয় কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে গেলে সব তথ্য-প্রমাণ আগে জোগাড় করতে হবে। তাই সবার আগে দেখা দরকার বস্তুটা আসলে কী? চিনি আর রাজনদাদা মিলে একটা বেশ পোক্ত প্ল্যান করেছে।

সন্ধ্যের কিছুক্ষণ পরই,সাধুবাবা সন্ধ্যা আরতির কাজ শেষ করে নিজের ঘরে ঢুকেছেন,মা পিসি রাতের খাবার তৈরী করতে ব্যস্ত। ভক্তগণও যে যার বাড়ি ফিরে গেছে। রাজনদাদা গিয়ে ঢুকলো,সাধুর শিষ্যদের ঘরে। এখন বেশ কিছুক্ষণ ওদের সঙ্গে কাটাবে। এই সুযোগে চিনি ছুটে চলে গেল সেই আশ্চর্য বস্তু দর্শনে। দেখে তো চিনির চক্ষু চড়কগাছ। সকলের অজান্তেই ফিরে এলো ঘরে। রাজনদাদার অপেক্ষা করতে করতে মাঝে জেলিকে ফোন করার কাজটা সেরে নিল, কিছু তথ্য জানতে বলল। ততক্ষণে রাজনদাদাও চলে এসেছে। সব প্ল্যান সারা। জেলির ফোনটা কাল আসার পরই ওরা কাজে নেমে পড়বে।

ঠিক সকাল সাড়ে সাতটা। চিনির মা পুজোর জোগাড় করছেন,ওর পিসিও ব্যস্ত জল খাবারের জোগাড়ে। চিনির মায়ের মোবাইলটা বেজে উঠলো। এখন শুধু অপেক্ষা সঠিক সময়ের। সাধুবাবা স্নান সেরে কী সব মন্ত্র বলছেন। শিষ্যরা পুজোর ঘরে । সাধুবাবা বম—বম—বমবম বলতে বলতে গিয়ে ঢুকলো সেই স্থানে। ভক্তমন্ডলীর ও আগমন শুরু হয়েছে। ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। সঠিক সময় বুঝে চিনি আর রাজনদাদা প্রথমে পা টিপে টিপে কিছুটা এগোলো তারপর এক দৌড়ে চোখের নিমেষে চিনি লাফিয়ে পড়ল ঐ বস্তুটির সামনে। তারপর সাদা কাপড়ের আড়ালটা টেনে সড়িয়ে দিল। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই তখন হতভম্ভ। চিনি চিৎকার করে বলে উঠল-
"সবাই শুনুন,এই সাধুটা আসলে ভন্ড। আর এটা কোনো দেবী নয়,-এটা আসলে একটা ফুল, বিশ্বের সব থেকে বড় ফুল 'র‍্যাফ্লেসিয়া আরনল্ডি'।"

বিস্মিত সকলে তখন চিনির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।মানুষের কাছে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় ও বলতে শুরু করল,
"এটা পরজীবী গাছ। একটা লতার ভেতর থেকে রস টেনে ফুঁড়ে বাইরে আসে কুঁড়ির আকারে তারপর ধীরে ধীরে বড় হয়। আমরা শুধু ফুলটাকেই দেখতে পাই। দৈর্ঘ্য প্রায় একশো সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। আর এর ওজন হতে পারে প্রায় দশ কিলোগ্রাম পর্যন্ত।"
ঠিক তখনই কে যেন বলে উঠল, "এই ফুলটা তো আগে দেখিনি।"
"আরে দেখবে কী করে এটা তো 'দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে' মানে-সুমাত্রা,ইন্দোনেশিয়া,থাইল্যান্ড প্রভৃতি স্থানের বৃষ্টি প্রধান জঙ্গলে হয়। স্যার থমাস স্টামফোর্ড র‍্যাফেল এর নাম অনুসারে এর নাম রাখা হয়েছে র‍্যাফ্লেসিয়া।"

চিনি যখন ফুলের বর্ণনা দিতে ব্যস্ত ঠিক তখনি, এই বিশাল আকৃতির লালচে বাদামী রঙের উপর সাদার ছিটে দেওয়া পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট ফুলটিকে উদরস্থ করতে ব্যস্ত মিনুপিসির আদরের ছাগল রাণী। ওদিকে বিপদের গন্ধ পেয়েই ভন্ড সাধুবাবাতো পালাতে গিয়ে ধরা পরেছে রাজনদাদার হাতে। শিষ্যরা সব ভক্তদের পায়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইছে, ঠিক তখনই বাড়ির সামনে পুলিশ এসে দাঁড়াল। থানায় রাজনদাদার চেনা-পরিচিতি আছে,আগে থেকেই সব বলা ছিল ও.সি. সুব্রত বিশ্বাসকে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে র‍্যাফ্লেসিয়া কীভাবে বর্ধমানের গ্রামে এসে পৌঁছালো সে রহস্য উদ্ধার করতে রাজনদাদা তার কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলবে।


ছবিঃ নভনীল দে

কলেজে কবিতার হাত ধরে সাহিত্য জগতে প্রবেশ। বর্তমানে বিভিন্ন সমকালীন  পত্রিকা ও ওয়েব ম্যাগাজিনে গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। 

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা