খেলাঘরখেলাঘর

আমাদের এই সংখ্যার প্রচ্ছদকাহিনী "সাদা-কালো"।
শুনে তুমি বলবে, কিরকম একটা ম্যাড়মেড়ে বিষয়বস্তু রে বাবা! সব ছেড়ে শেষে কিনা সাদা রঙ আর কালো রঙ নিয়ে আলোচনা! আরে, আমরা কথাবার্তা  শুরু তো করি, তার পরে দেখা যাক "সাদা-কালো " নিয়ে আমাদের আলোচনা কোন দিকে এগোয়।

আচ্ছা, সাদা রঙের কয়েকটা জিনিষের নাম বলা যাক। যেমন ধর, মেঘ, তুষার, রাতের আকাশের তারা আর চাঁদ, ঝিনুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মুক্তো - এছাড়া আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা হরেক জিনিষ অথবা প্রানীর রঙ সাদা। আর যদি কালো রঙের কথা বলা হয়? - মাথার চুল, চোখের মণি, রাতের আকাশ, অন্ধকার, এই সবই কালো রঙের।

আমার দুই বন্ধু ইকির আর মিকির কে বললাম সাদা আর কালো রঙ দিয়ে ছবি আঁকতে। তো তারা কি আঁকল জান? ইকির আঁকল কালো আকাশের গায়ে ছোট্ট ছোট্ট ঝিকমিকে সাদা তারা আর একটা সাদা গোল চাঁদ। সেই চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ল নদীর জলে, ছুঁয়ে গেল গাছের পাতা। আর মিকির আঁকল আঁধার কালো দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আসা সাদা সাদা অশরিরীর দল। তাদের কুলোর মত কান আর মূলোর মত দাঁত। ছবি দুটোকে পাশাপাশি রেখে দেখালাম দুইজনকে। বললাম- দেখ, সাদা আর কালো তো দুটো রঙ মাত্র। সেই দুটো রং ব্যবহার করে তুমি ইকিরের মত সুন্দর ছবিও আঁকতে পার, আবার মিকিরের মত ভয় দেখানো, বাজে ছবিও আঁকতে পার।

পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, সাদা রংকে মনে করা হয় পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা্র  প্রতীক। সাদা পায়রা হল শান্তির দূত। সাদা পতাকা শান্তির প্রতীক। আর কালো রং-এর সাথে জড়িয়ে আছে মানুষের নানা ভয়, আছে মৃত্যুর অনুসঙ্গ। অন্ধকার রাত অথবা কালো বেড়াল দেখে ভয় পায় না, এমন মানুষ কমই আছে। কিন্তু সাদা আর কালো যখন মিলেমিশে যায়, অথবা হাতে হাত মিলিয়ে চলে, তখন যে ছবি তৈরি হয়, সেটা কেমন হয়?
আমাদের আজকের আলোচনায় তাই আমরা খুঁজে দেখব সেইসব ভাল ভাল জিনিষ, যা সাদায়-কালোয় মিশে তৈরি।  দেখ তো, আমার করা এই তালিকার সাথে তুমি আরো কয়েকটা উদাহরণ যোগ করতে পার কিনাঃ

পথের পাঁচালি

১। সাদা-কালো ছবি ও ছায়াছবিঃ এখন যদিও রঙিন ছায়াছবি বা ফিল্ম দেখতেই আমরা অভ্যস্ত, কিন্তু ছায়াছবি শুরুতে ছিল সাদা-কালোই। পর্দায় ভেসে ওঠা সাদা-কালো চলমান ছবি দেখেই আমাদের সিনেমা দেখার হাতেখড়ি।  সেই সাদা কালো ফিল্মেই তৈরি হয়েছে অনেক বিখ্যাত ছায়াছবি, সে হোক চার্লি চ্যাপলিন অথবা লরেল -হার্ডির মজাদার কান্ডকারখানা, অথবা ঘরের কাছে 'পথের পাঁচালী' আর  'গুপি গাইন বাঘা বাইন' । 'পথের পাঁচালী' ছবিতে সাদা কাশবনের মধ্যে দিয়ে অপু আর দুর্গার ছুটে ছুটে রেলগাড়ি দেখতে যাওয়া, অথবা  'গুপি গাইন বাঘা বাইন'-এ সাদায় কালোয় ভূতেদের নাচ সবই সাদা কালোর জাদু মাখা। আর পুরোনো হলদেটে হয়ে যাওয়া অ্যালবামের মধ্যে সাজিয়ে রাখা অনেকদিন আগের সাদাকালো ছবিগুলির সাথে জড়িয়ে থাকে কত গল্প, কত মজাদার ঘটনা। মা-বাবা বা দাদু-দিদাকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারা যায় সেই সব ছবির পেছনে লুকিয়ে থাকা মজাদার অথবা স্মৃতিজড়ানো ঘটনাগুলি।

প্যান্ডা

২। প্যান্ডাঃ একে কে না চেনে? বিশেষ করে, কুং-ফু প্যান্ডার দৌলতে তো  সাদা-কালো লোমে ঢাকা প্যান্ডাদের আজ সবাই একবাক্যে চেনে। মধ্য পশ্চিম এবং দক্ষিণ পশ্চিম চীনে দেখতে পাওয়া যায় এই বিশেষ ধরনের ভালুকদের। এদের কানের ওপর, চোখের চারপাশে আর দেহকে ঘিরে থাকে কালো লোম। প্যান্ডাদের প্রধান খাদ্য হল বাঁশ। প্যান্ডারা বিপন্ন প্রজাতির প্রানী রূপে চিহ্নিত।

জেব্রা

৩।জেব্রাঃ আমাদের আরেক খুব পরিচিত সাদায় কালোয় মেশা প্রানী হল জেব্রা। জান কি, প্রতিটা জেব্রার গায়ের সাদা কালো নকশা আলাদা আলাদা হয়। সেই নকশা দেখেই শিশু জেব্রা তার মা'কে চিনে নেয়।  তাদের আত্মীয় ঘোড়া এবং গাধাদের মত জেব্রাদের কিন্তু খুব একটা পোষ মানানো যায় না। আর হ্যাঁ, জেব্রারাও কিন্তু বিপন্ন প্রানী। তাদের সুন্দর চামড়া অনেকের কাছেই লোভনীয় বস্তু।

দোয়েল পাখি

৪।দোয়েল পাখিঃ পশুদের কথা বললাম, তাহলে পাখিরাই বাদ যায় কেন? চট করে খুঁজলে হয়ত খুব একটা চোখে পড়বে না, কিন্তু গ্রামের দিকে গেলে দেখতে ঠিকই পাওয়া যাবে সাদায় কালোয় মেশা এই পাখিটাকে।

পেঙ্গুইন

৫।পেঙ্গুইনঃ আমাদের আরেক সাদা-কালো বন্ধু হল পেঙ্গুইন। দুইদিকে হাত ছড়িয়ে দুলে দুলে বরফ মাড়িয়ে চলা এই পাখীকে কে না চেনে? যদিও এদের আদত বাস আন্টার্কটিকা অঞ্চলে, কিন্তু এদের কিছু কিছু প্রজাতিকে এমনকি নিরক্ষরেখার আশেপাশেও দেখতে পাওয়া যায়।

জেব্রা-ক্রসিং

৬।জেব্রা ক্রসিংঃ জেব্রা নিয়ে কথা হয়েছে যখন, তখন জেব্রা ক্রসিং কে বাদ দিই কি করে? রাস্তা পার হওয়ার সময়ে সাদা-কালো দাগের ওপর দিয়ে হাঁটার অভ্যাস নিশ্চয় আছে তোমার। জেব্রার গায়ের মত সাদা কালো বলে পথের এই অংশটুকু জেব্রা ক্রসিং নামে পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করা হয়।

আরো দুয়েকটা বলব নাকি?  ঠাকুমার মাথায় সাদায়-কালোয় মেশানো চুল, অথবা জলখাবারের থাকায় ডিম পোচের পাশে নুন আর গোলমরিচের গুঁড়ো। নিত্যদিনের জীবনে চোখে পড়বে ভালো ভালো সাদা কালোর এহেন হরেক উদাহরণ।

সেইসব নিয়ে নাহয় আলোচনা হবে অন্য কোন এক সময়ে, কেমন? আজ এই পর্যন্তই থাক।


মহাশ্বেতা রায়
পাটুলি, কলকাতা

ছবিঃ
উইকিপিডিয়া
দোয়েলপাখির ছবিঃ
অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।