আমাদের স্কুলের বুড়ো হেড পন্ডিতমহাশয় মরিয়া গেলে যিনি নূতন হেডপন্ডিত নিযুক্ত হইয়া আসিলেন, তাঁহার নামা শ্রীরমানাথ বিদ্যাভূষণ। তিনি সংস্কৃত কলেজ হইতে বি.এ. পাশ করিয়াছিলেন। নূতন পন্ডিত মহাশয়ের বয়স বেশি নহে- বোধ হয়, তেইশ-চব্বিশ বৎসর হইবে। বয়স কম হইলেও তিনি খুব পন্ডিত ছিলেন, পড়াইতেও খুব ভাল পারিতেন। কিন্তু তাঁহার একটা মুদ্রাদোষ বড়োই প্রবল ছিল। তিনি একটা কথা বলিতে গেলে তাহার মধ্যে দশটা 'আরে অর্থাৎ' বলিতেন। এই কথাটিই তাঁহার কাল হইয়াছিল।
প্রথম যেদিন তিনি আমাদের শ্রেণিতে পড়াইতে আসিলেন, সেদিন তাঁহার এই 'আরে অর্থাৎ' শুনিয়া ক্লাসশুদ্ধ ছেলে হাসিয়া অস্থির হইয়াছিল। আমাদিগকে হাসিতে দেখিয়া পন্ডিতমহাশয় বড়োই লজ্জিত হইলেন। কিন্তু আমাদের হাসির কারণ কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া বলিলেন, 'তোমরা- আরে অর্থাৎ- হাসো কেন?শিক্ষকের সহিত- আরে অর্থাৎ- এমন ব্যবহার করা- আরে অর্থাৎ- কি ভালো?' ইহাতে হাসি থামিবে কেন, আরও বাড়িয়া চলিল। কলিকাতা শহরের বড়ো স্কুল, আমরা উচ্চশ্রেণির ছাত্র, আমাদের অনেকের অবস্থাও ভালো। তিনি নূতন লোক, সেই দিন প্রথম কার্যে উপস্থিত হইয়াছেন- এ অবস্থায় আমাদিগকে তিরষ্কার করিতে পারিলেন না। হেডমাস্টারের নিকট যে অভিযোগ করিবেন , সে সাহসও তাঁহার হইল না। তিনি বারংবার বলিতে লাগিলেন, 'তোমরা- আরে অর্থাৎ- হাসিও না। ' কিন্তু কাহার কথা কে শোনে। আমরা সেই একদিনেই 'আরে অর্থাৎ' শিখিয়া ফেলিলাম এবং সেই দিনেই এই নূতন পন্ডিতমহাশয়ের নাম হইল 'আরে অর্থাৎ''।
-----------------------------------------------
তারপরে সেই 'আরে অর্থাৎ' পন্ডিতমশাইয়ের কি হল? জানতে হলে পড়তে হবে জলধর সেনের লেখা গল্প 'আরে অর্থাৎ' । ইস্কুল নিয়ে একগুচ্ছ গল্পের সংকলন 'ইস্কুলের গল্প' বইতে।
ইস্কুলের গল্প
শিশু সাহিত্য সংসদ
৯০ টাকা
ছবিঃ ইন্টারনেট