আঁকিবুকি
দেবারুণ দেব
চতুর্থ শ্রেণী, এপিজে স্কুল, সল্ট লেক, কলকাতা
মধুরিমা গোস্বামী
সপ্তম শ্রেণী, ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, পাটূলি, কলকাতা
নীলাগ্নি দাস
দ্বিতীয় শ্রেণী,আর্মি পাবলিক স্কুল, গুয়াহাটি
প্রতীক চক্রবর্তী
তৃতীয় শ্রেণী, ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল,পাটুলি, কলকাতা
ঋক ঘোষ
চতুর্থ শ্রেণী, বি ডি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, কলকাতা
সৃজনী ঘোষ
পঞ্চম শ্রেণী, বি ডি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, কলকাতা
শুভম গোস্বামী
তৃতীয় শ্রেণী, ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, পাটুলি, কলকাতা
সুপ্রতীক হালদার
অষ্টম শ্রেণী, বি ডি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, কলকাতা
ঊর্বী মুখার্জি
তৃতীয় শ্রেণী, ক্যালকাটা পাবলিক স্কুল
তুমিও কি চাও তোমার আঁকা ছবি ইচ্ছামতীকে পাঠাতে? তাহলে তোমার আঁকা ছবি স্ক্যান করে অথবা ডিজিটাল ফোটোগ্রাফি করে পাঠিয়ে দাও ইচ্ছামতীর মেইল ঠিকানায়।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
গরম ঠান্ডা নিয়ে দু'চার কথা
কেমন আছ তুমি ? গরম কাল তো এশে গেছে, কিন্তু এইবার গরম চলে যাওয়ার আগে হটাত করে আবার ঠাণ্ডা ফিরে এসেছিল। আর এখনও, প্রায়শঃই কালবৈশাখী হচ্ছে বলে মাঝে মাঝেই বেশ গরম কমে যাচ্ছে, তাই না?
আজ এই গরম ঠান্ডা নিয়েই একটু বলি।
ক'দিন পরেই তো বিকেলে খেলা ধুলো করে দৌড়ে এসেই ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা জল ঢক ঢক করে বোতল থেকেই গলায় ঢালবে।
খুব তেষ্টা পায় কিনা এই সময়টা!
এরকম ঠান্ডা জল খাওয়াটা কিন্ত মোটেই ভাল না। কেন, জানতে চাও ? মাকে জিজ্ঞেস কর।
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ত' সবার বাড়িতে এখনকার মত ফ্রিজ ছিল না, আমাদের বাড়িতেও ছিল না। কিন্তু খেলা ধুলো করে এসে তাহলে আমরা কি ঠান্ডা জল পেতাম না ? খুব পেতাম! কিন্তু কি করে বলত ? সাধারনত তখন দৌড়তাম টিউবওয়েল বা নলকূপের দিকে, পেট পুরে ঠান্ডা জল খেতাম। কিন্তু সেটা না থাকলে কি হত বল দেখি ?
গরম কালে সব বাড়িতেই থাকত মাটির কুঁজো। এতে জল রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যেই জল খুব ঠান্ডা হয়ে যেত।
এখনও, যেখানে বিদ্যুত আসে নি, ফ্রিজ চলে না (বা যাদের বাড়িতে ফ্রিজ নেই)-- সেখানে কুঁজোর জলই ত ভরসা। সবাই তো ওই জলই খায়।
যারা কুঁজোর কথা জান না তারা 'মাটির' কুঁজোর নাম শুনে নাক শিঁটকচ্ছো নাকি ? কিন্তু এটা কি জান যে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই এরকম মাটির পাত্রে রাখা জলই খায়।
কিন্তু মাটির পাত্রে রাখা জল ঠান্ডা হয় কি করে। সেই কথাটাই বলব এখন।
এর আগে কোন সময় বলেছিলাম যে আমাদের শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যাবার সময় সঙ্গে করে তাপ নিয়ে যায়, মনে আছে কি ? নেই ? ঠিক আছে, আবার বলছি।
যখন খুব গরম পড়ে, তখন আমাদের খুব অস্বস্তি হয়। কারণ আমাদের শরীরের বাইরের তাপমাত্রা তখন বেশী থাকে আর সেই তাপ আমাদের শরীর ঢুকে পড়তে চায়। কেন বল দেখি ?
এটাও আগে বলেছি। সেটা হল তাপ সব সময় বেশী তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রার দিকে যেতে চায়।
কিন্তু প্রকৃতি দেবী আমাদের এই শারীরিক আস্বস্তি কাটাবার খুব সুন্দর ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। গরম গা-সওয়া না হলেই ঘাম হতে শুরু হয়, যত গরম পড়ে ঘামও তত বাড়ে। শরীরের বাইরে এসে ঐ ঘাম বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে যায়। কিন্তু বাষ্প হওয়ার জন্য যে তাপ চাই সেটা আসে কোত্থেকে ? আমাদের শরীর থেকে ছাড়া আর কোথা থেকেই বা আসবে ! ব্যস !আমাদের গরম শরীরও আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হতে চাইলে যেখানে হাওয়া আছে সেখানে, আর না হয় পাখার তলায় বসতে হবে!
পাখার তলায় বসলে গা জুড়োয় এটা ত আমরা সবাই জানি। আর খেলা ধুলার শেষে মাঠে বসে হাওয়া খেতে কেমন মজা সেটাও ত জানাই আছে! তাই কিনা, বল ? আমাদের
গায়ের চামড়ায় প্রচুর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র আছে। ঐ পথে শরীর থেকে ঘাম বার হয়। এই ছিদ্রগুলোর নাম হল 'লোমকূপ'। এটা বোধ হয় জান। ঐ সব পথ যাতে বন্ধ না হয় তার দিকে খেয়াল রাখা দরকার।বেশী প্রসাধনের জিনিষ ব্যবহার না করাই ভাল। এই সব বেশী ব্যবহার করে লোমকূপগুলো বন্ধ করে দাও যদি, তাহলে ঘাম কি করে শরীরের বাইরে আসবে আর আমরা ঠান্ডাই বা হব কি করে!
কোন কোন প্রাণীর শরীরে লোমকূপ নেই। এমন প্রাণী কোনটা হতে পারে বল দেখি! কুকুর এমন একটা প্রাণী। এদের শরীর লোমকূপ বিহীন। তাহলে এরা ঠান্ডা হয় কি করে ? লক্ষ্য
করলে দেখতে পাবে গরম কালে এরা জিভ বার করে হাঁপাতে থাকে। জিভের লালা বাষ্প হয়ে উড়ে যাবার সময় শরীর থেকে তাপ নিয়ে চলে যায় আর এতে শরীর ঠান্ডা হয়।
কিন্তু আমরা ত কুঁজোর কথা বলছিলাম। এবার তার কথা বলি। কুঁজো তৈরী হয় মাটি দিয়ে। বেলে মাটি হলে আরও ভাল হয়। এই কুঁজোর গায়ে খুব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে অসংখ্য। এতে জল রাখলে ঐ সব ছিদ্র পথে জল বাইরে বেরিয়ে আসে। খালি কুঁজোয় জল রাখলে যে জল বেরিয়ে আসে সেটা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে। কুঁজোর বাইরের দিকটা ভিজে যায় ভেতরে জল থাকলে। এখন ওই জল বাইরে এসেই বাষ্প হওয়ার ফিকির খোঁজে। এবং শেষ পর্যন্ত বাষ্প হয় উবে যেতে থাকে। এতে কি হয়
বুঝতেই পারছ। ঠিক আমাদের শরীরের যেমন হয় ঠিক তেমনই হয় এক্ষেত্রেও। বাইরের জল বাষ্প হওয়ার সময় ভেতরের জল থেকে তাপ সংগ্রহ করে বা তাপ শোষন করে। ফলে কুঁজোর জল ক্রমশঃ ঠান্ডা হতে থাকে আর শেষ পর্যন্ত বেশ ভাল মত ঠান্ডা হয়ে যায়।
এই জল খেলে ফ্রিজের জল আর ভাল লাগবে না, এটা হলফ করে বলতে পারি।
এই ধরনের তাপকে বলে 'লীনতাপ', মানে লুকিয়ে থাকা তাপ। লীনতাপের অনেক উদাহরণ আছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখতে পাই।
বড় হয়ে যখন উঁচু শ্রেণীতে পড়বে তখন এ বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।
আর একটা কথা বলি। ফ্রিজের জল যে ঠান্ডা হয়, তার সাথে কিন্তু এই লীনতাপের কোনও সম্পর্ক নেই।
পেতল বা কাঁসার কলসীতে জল রাখলে কিন্তু মোটেই ঠান্ডা হবে না। কেন বল দেখি! কি করে হবে, ওদের গায়ে ত ছোট বা বড়-- কোনও ছিদ্রই নেই। ধাতু নিরেট হয় কিনা।
সুতরাং জল বাইরে আসবেই বা কি করে, আর ঠান্ডাই বা হবে কিভাবে!
সন্তোষ কুমার রায়
কোদালিয়া
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সন্তোষ কুমার রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
ট্যাঙ্গেল্ড্
অনেক অনেক দিন আগে, এক ফোঁটা সূর্যের আলো এসে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে। সেই আলো থেকে জন্মালো এক জাদু গাছ। সেই গাছে ফুটল এক সূর্যের মত সোনালি ফুল। সেই ফুলের ছিল এক আশ্চর্য ক্ষমতা। সময়ের কাঁটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারত সেই ফুল - যে কোন পুরানো জিনিষ তার ছোঁয়ায় হয়ে উঠত নতুন, যে কোন ক্ষত সেরে যেতে পারত এক নিমেষে, মৃত্যুর মুখ থেকে প্রাণ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারার ক্ষমতা ছিল সেই ফুলের।
কিন্তু, সেই ফুলটাকে আর কেউ খুঁজে পাওয়ার আগেই, সেটা মাদার গথেল নামে এক দুষ্টু বুড়ির চোখে পড়ে গেল । বুড়ি সেই গাছটাকে একটা চুপড়ি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখল। তার চামড়া যখন কুঁচকে বিবর্ন হয়ে যেত, চোখের দৃষ্টি হয়ে যেত ধূসর, কালো চুল হয়ে যেত শনের নুড়ির মত, সে তখন চুপিচুপি সেই ফুলের কাছে এসে গাইত এক ছোট্ট গান। গান শুনে ফুলের থেকে বেরোত সূর্যকিরণের মত জ্যোতি, সেই জ্যোতির স্পর্শে গথেলের কুঁচকানো চামড়া হয়ে যেত মসৃণ, চোখের দৃষ্টি হত উজ্জ্বল, সাদা চুল হয়ে যেত কালো। এক ধাক্কায় গথেলের বয়স কমে অর্ধেক হয়ে যেত। এইভাবে বছরের পর বছর ধরে, মাদার গথেল নিজের বয়স কমিয়ে রেখে রেখে বেঁচে থাকার আনন্দ উপভোগ করছিল।
সেই দেশে রাজত্ব করতেন এক খুব ভাল রাজা আর তাঁর ভালমানুষ রানী। রানী যখন সন্তানসম্ভবা, তখন তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাঁচার আর কোন আশা রইল না। সৈন্য সামন্তরা ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে কানাচে, খুঁজে বার করতে চাইল রানীকে সুস্থ করে তোলার কোন না কোন উপায়। আর তারা একদিন খুঁজে পেল সেই সোনালি ফুল। সেই গাছ তুলে নিয়ে এল তারা। আর সেই ফুল ভেজানো জল খেয়ে সুস্থ হলে রানী। জন্ম দিলেন সূর্যের সোনালি কিরণের মত সোনালি চুলের এক ফুটফুটে রাজকন্যার। রাজা আর রানী নতুন রাজকন্যার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ওড়ালেন রঙিন ফানুস। সারা দেশ আনন্দে মেতে উঠল।
কিন্তু এই আনন্দ বেশিদিন সইল না। এক রাতে, আবার বয়স বেড়ে যাওয়া মাদার গথেল রাজপ্রাসাদে ঢুকল। সে রাজকন্যার সামনে গিয়ে ফিস ফিস করে গাইল সেই গান - আর রাজকন্যার চুল থেকে ঠিকরে পড়ল সোনালি দ্যুতি। সেই দেখে গথেল রাজকন্যার চুল একটুখানি কেটে নিল। কিন্তু যাঃ - কাটা মাত্র সেই চুল রঙ পালটে হয়ে গেল খয়েরি ! তার আর কোন যাদুশক্তি রইল না। মাদার গথেল বুঝতে পারল, এক টুকরো চুলের গোছা দিয়ে তার কাজ হবে না। তাই সে রাজকন্যাকে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গেল। রাজ্যের থেকে অনেক দূরে, গভীর জঙ্গলের মধ্যে, একটা অনেক উঁচু গম্বুজের মধ্যে সে তাকে লুকিয়ে রাখল। সে লুকানো গম্বুজের ভেতরে থেকে বড় হতে থাকল রাজকন্যা -নাম তার রাপুনজেল্ । তার একমাত্র সঙ্গী পাস্কাল নামের এক গিরগিটি।
আরে, এত অবধি পড়ে তুমি নিশ্চয় বলবে - এত তো রাপুনজেল্ এর গল্প, এটাতো আমি জানি। হ্যাঁ , এটা আমাদের সেই খুব চেনা গল্পটাই, কিন্তু একটু অন্য রকম ভাবে বলা হয়েছে। পুরোনো রাপুনজেলের গল্পে এক রাজপুত্র আসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য; কিন্তু এই গল্পে - রাপুনজেলের দেখা হয় এক দুঃসাহসী চোরের সাথে।
সেই চোরের সাহায্য নিয়ে রাপুনজেল গম্বুজ থেকে বেরিয়ে দেখতে যায় প্রতিবছর তার জন্মদিনে দূর আকাশে ভেসে ওঠা রঙিন ফানুসগুলিকে। পথে আসে নানারকমের বিপদ।
কিন্ত চোর ইউজিন আর রাজপ্রাসাদের ঘোড়া ম্যাক্সিমাসের সাহায্যে রাপুনজেল সব বিপদ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে। আর সে খুঁজে পায় তার আসল বাবা মাকেও।
এই ছবির নাম 'ট্যাঙ্গেল্ড্' । রাপুনজেলের এই গল্পটিকে নতুন ভাবে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন ওয়ল্ট ডিজনি পিকচার্স। ওয়ল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওর এটা পঞ্চাশতম অ্যানিমেটেড ছবি।
তাহলে আর কি? সময় নষ্ট না করে যোগাড় করে ফেল এই ছবির একটা ডিভিডি। আর গরমের ছুটিতে দুপুরবেলায় রাপুনজেল আর তার সোনালি চুলের সাথে তুমিও হারিয়ে যাও রূপকথার দুনিয়ায়।
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন মহাশ্বেতা রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সিনেমা জগতের নতুন অভিজ্ঞতা
(গত সংখ্যার পর)
বাংলা ছবির দুনিয়ায় 'উদয়ের পথে' এক অত্যন্ত দামি মলাটবদল এই কারণে যে, এই ছবিতে প্রথম বড়লোক মিল/ কারখানা মালিকের মেয়ের সঙ্গে অতি সাধারণ শ্রমিক নেতার ভালবাসার গল্প দেখান হল। এই প্রথম, আমরা পর্দায় অন্তত ধনী-গরিবের পার্থক্য তুলে দিলাম। আজ পর্যন্ত যেকোন জনিপ্রয় ছবিতে এই একই কথা বলা হয় - যে ভালবাসায় টাকার দাম থাকেনা।
উদয়ের পথে
এই ধারণার মডেল ছবি এই 'উদয়ের পথে'। তাছাড়া ছবিতে এসে গেছিল বাইরের শ্রমিক অশান্তি; ছবিতে দেখা গেল ট্রেড ইউনিয়নের অফিস ঘরে কার্ল মার্ক্স এ ছবি ঝুলছে। চলচ্চিত্র আর শুধু স্বপ্নের উপাখ্যান রইল না, তার মধ্যে অল্প অল্প করে দেখা দিতে লাগল বাস্তব।
এর পরে আমাদের নাম করতে হবে বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর পরিচালিত 'কল্পনা' ছবিটির। যদিও ছবিটির ভাষা হিন্দি, কিন্তু ছবিটি কলকাতায় তৈরি হয়েছিল আর উদয় শঙ্করের ম্যাজিক ছোঁয়ায় নাচ সেখানে নিজেই গল্প বলতে পেরেছে। যাঁরা নিরীক্ষামুলক ছবির কথা ভাবেন, তাঁদের কাছে এ এক মস্ত কৃতিত্ব।
উদয়শঙ্করের কল্পনা
আর , এর পরেই, ১৯৫১ সালে এল 'ছিন্নমূল' । এই প্রথম, জীবন প্রায় দলিলের মত উঠে এল ছবিঘরে। উদ্বাস্তু জীবনের অভিশাপ ও কান্নার বিবরণ দেওয়ার সময়ে পরিচালক নিমাই ঘোষ কোন রকম আপোস রফা করেন নি। মাত্র ১০,০০০ ফুটের এই ছবিটি আজ পর্যন্ত শহুরে উদ্বাস্তুর দুর্দশার সবচেয়ে প্রামাণ্য বর্ণনা। এই ছবির অভিনেতারা চলচ্চিত্রের পেশাদার অভিনেতা ছিলেন না। তাঁরা অনেকেই নাটকের কর্মী। তাঁদের অভিনয় দক্ষতা ছিল অবাক হয়ে যাওয়ার মত। এই ছবির ক্যামেরার কারিকুরী তো মুগ্ধ করে দেয়। এজন্যই বিখ্যাত সোভিয়েত পরিচালক পুদভকিন নিজে সে যুগের রুশ পত্রিকা প্রাভ্দায় ছিন্নমূলের একটি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। নিমাই ঘোষের বাজেট ছিল অত্যন্ত কম, এত কম যে তাঁকে প্রায় প্রতিটি প্রথম শট্কেই ওকে শট্ বলে মেনে নিতে হয়েছে। রিটেক করার সুযোগ পান নি। তবুও অপরিসীম নিষ্ঠায় তিনি আমাদের সিনেমার ভাষায় জীবনের প্রত্যক্ষ ছাপ এঁকে দিলেন ।
ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটল যা আমাদের ছায়াছবিকে সাবালক করে দিল ৫০ দশকের গোড়াতেই । প্রথমেই বলতে হবে পৃথিবীর দুই দিকপাল পরিচালক ফ্রান্সের রেঁনোয়া ও রুশদেশের পুদভকিনের কলকাতা সফরের কথা। এতদিন অবধি আমরা ছবি বলতে বুঝতাম আমেরিকার হলিউড ঘরানার ছবি। আর নয়ত এই সব ছবিকে নকল করে তৈরি করা বাংলা বা হিন্দি ছবি। এই দুজন বড় পরিচালক আমাদের তরুণ চলচ্চিত্রকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের জানালেন যে ছবি অন্যরকম ভাবেও করা যায়। কিভাবে আমাদের আশেপাশের ঘটে চলা সত্যিকারের ঘটনাগুলিকে ব্যবহার করে ছবি নানাধরনের গল্প বলতে পারে, সে খবর আমরা জানলাম এই দুই স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সাক্ষাতকার পড়ে। সিনেমা মানেই যে শুধু হলিউড নত, আলাদা ভাবেও গল্প বলতে পারে, সেটা জানা কম কথা নয়।
জঁ রেঁনোয়া আর সেভোলোদ পুদভকিন
তরুণ চলচ্চিত্র উতসাহী ঋত্বিক ঘটক আর সত্যজিত রায় এই দুজনের কাছ থেকে নানা রকমের অভজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। আর নের পরেই হয় সব থেকে বড় এক অভিজ্ঞতা - ১৯৫২ সালে স্বাধীন ভারতে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসব। সেকথা বলব এর পরের বার।
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক
চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবিঃ
ইন্টারনেট
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
শিল্পের ইউরোপ- পর্ব ৩
১ - প্যারিসের মাটিতে নামবার আগে আকাশ থেকে যে দুটো মনুষ্য নির্মিত ইমারত চোখে পড়বে তার মধ্যে প্রথম হল স্বনামধন্য আইফেল টাওয়ার । দ্বিতীয় হল "লা ইনভালিডস"-এর সুবিশাল সোনালী গম্বুজ ।
২ - লা ইনভালিডস তৈরী হয় ১৬৭৯ সালে বৃদ্ধ বৃদ্ধা এবং আহত সৈনিকদের হাসপাতাল হিসেবে । পরবর্তীকালে এই খানেই স্থান পায়ে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট-এর সমাধি । রোমের সেন্ট পিটার'স ব্যাসিলিকা-র অনুকরণে তৈরী, "এগ্লিসে ডু ডোমে" নামেও পরিচিত এই কীর্তিস্তম্ভ ফরাসী baroque শিল্পের এক অনন্য উদাহরণ ।
৩ - মেরি ম্যাগডালীন-এর স্মৃতিতে বানানো এই চার্চ-এ বছরের ৫২ সপ্তাহের রূপক হিসেবে রয়েছে ৫২ টি স্তম্ভ ।
৪ - প্যারিস-এর ল্যুভর্ মিউসিয়ামের তলায়ে রয়েছে এই বিখ্যাত কাঁচের উল্টো পিরামিড যা এসে মিলছে এক ছোট্ট সোজা পিরামিড-এর মুখোমুখি । ড্যান ব্রাউন-এর উপন্যাস 'দা ভিঞ্চি কোড' -এ আমরা "ব্লেড অ্যান্ড চ্যালিস” নামে পরিচিত এই শিল্পকীর্তির উল্লেখ পাই আর তিনি কল্পনা করেছেন যে এই ছোট্ট পিরামিড টা আসলে মাটির নিচে আরেকটি পিরামিড-এর শিখরাংশ এবং এই নীচের পিরামিড এর ভেতরে আছে যীশু খ্রিষ্টের স্ত্রী মেরি ম্যাগডালীনের আসল সমাধি ।
৫ – ওবেলিস্ক ডে লাক্সার । ৩৩০০ বছর আগে এই ওবেলিস্ক মিশরে লাক্সার মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে শোভিত ছিল । মিশরের রাজা ফ্রান্স কে উপহার দেন ৫৫৫ ফিট উঁচু এই সুবিশাল ওবেলিস্ক । ভাবতেই অবাক লাগে, তখনকার যুগে কি করে নিয়ে আসা হয়েছিল এই সুউচ্চ প্রস্তর নির্মিত স্তম্ভ, এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ।
৬ – লুসার্নের “লায়ন মনুমেন্ট” । ১৭৯২ সালের ফরাসী বিপ্লবের সময় ৭০০ সুইস গার্ডের স্মারক হিসেবে বেরথেল থরওয়াল্ডসেন এই মুর্তি নির্মান করেন পাথর কেটে এক পাহাড়ের গায়ে । এই ৭০০ জন বীর সৈনীকরা জানতেন না যে যাদের বাঁচাবার জন্যে তারা লড়াই করছেন, সেই রাজা ষোড়শ লুই , মেরি অ্যান্টয়নেট ও তাদের সন্তানদের নিয়ে ততক্ষণে পলায়ন করেছেন তাদেরকে না জানিয়েই । এই পিঠে ছুরি মারার মতন কাজের তীব্র নিন্দা করেন এবং তারই উপমা হিসেবে শিল্পীর এই দুখী সিংহের পিঠে একটা ভাঙ্গা বর্শা গেঁথে দেন ।
৭ – ইউরোপের সব থেকে সুন্দর "স্কোয়ার" হল ব্রাসেল্সের "গ্র্যান্ড প্লেস" । অসাধারণ এই শহরের আধুনিকতার বেড়া টপকে এখানে এলে মনে হবে সপ্তদশ শতাব্দীতে চলে এসেছি । অপুর্ব সুন্দর সুপ্রাচীন ক্যাথিড্রাল গুলোর গায়ে গায়ে অমুল্য সব শীল্পের নিদর্শন রয়েছে যা আমরা আগামী দুটো ছবিতেও দেখতে পাব ।
৮ ও ৯ – ব্রাসেল্সের ক্যাথিড্রালের গায়ে শীল্পকীর্তি।
১০ – “ম্যানেকিন পিস” নামক এই শিশুর প্রস্রাবরত মুর্তি ব্রাসেল্সের চিহ্ণ হয়ে গেছে । ১৩৮৮ সালে এই মুর্তি নির্মান করা হয় । এই মুর্তির একটি ইতিহাস হল, যখন জার্মান সেনারা বেলজিয়ামে এসে ত্রাসের সৃষ্টি করে, সব লোকেদের ওপর জুলুম চালায়ে, তখন এক ছোট্ট বালক এক বারান্দা থেকে সেই সেনাদের মাথায়ে প্রস্রাব করে । এটা তখনকার বেলজিয়ামের দুঃসাহসিকতার এক চিহ্ন হিসেবে দেখে অনেক মানুষ । তাই আজও সবাই এক নামে চেনে এই ম্যানেকিন পিস-কে।
১১ – এভেরার্ড টে সের্ক্লায়েস-এর শায়িত মুর্তি । এই মুর্তি তামার তৈরী । ব্রাসেল্সের মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে এই মুর্তিকে ছুঁলে তা সৌভাগ্য নিয়ে আসে । তাই এখানে যেই আসে সেই ছুঁয়ে দেখে এই মুর্তি, পায়ের ধারের সারমেয়টিকে, এবং পরীর মুখটি । বাকি নির্মান পুরো তামার হলেও, মানুষের নিত্য স্পর্শ করা অংশগুলি তাই চকচকেই থেকে গেছে।
লেখা ও ছবিঃ
ঋতম ব্যানার্জি
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন ঋতম ব্যানার্জি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত