আঁকিবুকি
মোহর কুন্ডু
ষষ্ঠ শ্রেনী
ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, পাটুলী , কলকাতা
শুভম গোস্বামী
দ্বিতীয় শ্রেণী
ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, পাটুলী , কলকাতা
ঊর্বী মুখার্জি
দ্বিতীয় শ্রেণী
ক্যালকাটা পাবলিক স্কুল
মধুরিমা গোস্বামী
ষষ্ঠ শ্রেনী
ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুল, পাটুলী , কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
বল তো দেখি কি?
১. অন্তরেতে শুষ্ক সে যে জল নাহি তায়,
প্রথমার্দ্ধে মহাশক্তিমান,
আদি অন্তে জাতি দেখি অনার্য্যের প্রায়,
চারে মিলে পতঙ্গ সৃজন।
২. দশা বড় ভালো নয়,প্রথমার্দ্ধে তার,
চারে মিলে দশ হয়, মুখেতে যাহার।
৩.প্রথম দুইয়েতে বৃক্ষ, শেষ দুইয়ে লোকের বাস,
চারে মিলে পূজনীয়, দেবপূজা বারোমাস ।
৪.পাখি বলে সবে জানে, প্রথম দুইঅক্ষরে মীন,
শেষদুইয়ে লালবর্ণ, ভেবে নাম বলা সমীচীন ।
৫. তরল আছে যার প্রথমার্দ্ধে, বৃত্ত অবশেষে,
চারে, উৎসবের মধ্যমণি, মিষ্টান্ন বিশেষে ।
উত্তরমালা
১.ভীমরুল
২.দশানন
৩.শালগ্রাম
৪.মাছরাঙা
৫.রসগোল্লা
অধ্যাপক জি. সি. ভট্টাচার্য
বারানসী, উত্তর প্রদেশ
- বিস্তারিত
- লিখেছেন জি সি ভট্টাচার্য্য
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
প্রথম পাতাঃশীত সংখ্যা ২০১১
শীত এবারে বেশ ভালই পড়েছে। উত্তর দিক থেকে হু হু করে ছুটে আসছে ঠাণ্ডা হাওয়া, দিনের বেলা সূর্যের আলোটা কি আরাম আরাম লাগছে...রাতে মনে হচ্ছে কম্বলের তলা থেকে বেরোবোই না... কি ভাবছ, চাঁদের বুড়ির কি আবার শীতও লাগে নাকি? লাগে বাপু লাগে! চাঁদের বুড়িরও শীত লাগে, ইচ্ছামতীরও লাগে। তাই তো পৌষের রোদে পিঠ দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে কমলালেবু খেতে খেতে আমি আর ইচ্ছামতী একটু বেশি আলসেমি করে ফেললাম। আর সেজে গুজে আসতে দেরীও করলাম একটু।
আসার পথে আবার শীতবুড়োর সাথে দেখা। শনের নুড়ির মত চুল দাড়ি নেড়ে, ঠকঠক করে লাঠি ঠুকে ঠুকে আসছে। তাকে বললাম- তুমি বড় গোলমেলে লোক! খামোখা শীতে কাবু করছ আমাদের। এই কথা শুনে সেই বুড়ো ফোকলা মুখে হেসে বলল- খালি ঠাণ্ডাটাই দেখলে, আর ওদিকে যে বাগান ভরে রঙিন ফুল এনে দিলাম, নানারকমের সব্জী আর ফল এনে দিলাম, সে তো কই বললে না? ইশকুলে ছুটি পাচ্ছ, সে ছুটিতে চড়ুইভাতি করতে যাচ্ছ, এদিক সেদিক বেড়াতে যাচ্ছ, ঘামে হাঁসফাঁস করছ না - কই সে তো ভাবছ না?
এই কথা শুনে আমি আর ইচ্ছামতী ভেবে দেখলাম, বুড়ো তো ঠিক কথাই বলেছে; এদিকটা তো আগে ভেবে দেখা হয়নি। তাই আমি আর ইচ্ছামতী দুজনে ঘাড় নেড়ে নেড়ে বললাম- ঠিক, ঠিক, আমরা একথা তো ভুলেই গেছিলাম।
ওদিকে শীতবুড়ো তো আমাদের কথায় গোঁসা করে , নিজের ঝুলি থেকে আরো খানিক উত্তুরে হাওয়া বার করে আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে বলল- বেশ বেশ, আমি চলে যাব শীগ্গির, আর গিয়েই পাঠাব গ্রীষ্মকে। দেখ তখন বেশি মজা হয় কিনা - এই বলে ফোকলা গাল ফুলিয়ে উল্টোবাগে হাঁটা দিল। ইচ্ছামতী তখন ছুটে গিয়ে তার হাত টেনে ধরল, আর আমি তাকে বললাম - আহাঃ, এত রাগ কর কেন, তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে যেও না, ইচ্ছামতীর নতুন শীত সংখ্যা আসছে, বন্ধুরা সেটা পড়ে শেষ করা অবধি নাহয় থাক। তোমার গায়ে দেওয়ার জন্য নকশী কাঁথা দেব, গরম গরম আস্কে পিঠে বানিয়ে দেব, বসে বরং খাও, আর আমাদের একটু শীতের আমেজ নিতে দাও।
বুড়ো এত সব ভাল ভাল কথা শুনে মুচকি হেসে বলল- আর নলেন গুড়ের পায়েস খাওয়াবে না?
আমি বললাম - তাও খাওয়াবো।
তা এই যে সবে পৌষ সংক্রান্তি গেল, তুমিও কি খেলে? নরম গরম পিঠেপুলি? আর কি কি করছ এই শীতে? বেড়াতে গেলে কোথাও? ফাঁক পেলে রোদ্দুরে খুব খানিকটা খেলে নিলে? বড়দিনের উতসব, আর নতুন ইংরেজি বছরের আনন্দ তো সবে গেল। এখনও সামনে আছে নেতাজীর জন্মদিন, প্রজাতন্ত্র দিবসের আড়ম্বর আর হ্যাঁ, অবশ্যই সরস্বতী পুজো। এই সব বাদ দিয়ে কি আর শীত কাল হয় বল?
আর শীতের রোদ মাখা আমেজ নিয়েই এসে গেল ইচ্ছামতীর নতুন শীত সংখ্যা ২০১১। লেপের ওম, কমলালেবু আর নানারঙা চন্দ্রমল্লিকার সাথে এই শীতের শেষ কটা দিনে তোমার সাথে থাকুক ইচ্ছামতী।
ভাল থেকো।
চাঁদের বুড়ি
৩রা মাঘ, ১৪১৭
১৮ই জানুয়ারী, ২০১১
মঙ্গলবার
- বিস্তারিত
- লিখেছেন চাঁদের বুড়ি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সমুদ্রের জল আর বৃষ্টির জল
তুমি কি ঋককে চেনো ? চেনোনা। কি করে চিনবে ? তোমার সাথে ত আর আলাপ নেই।
আসলে ও আমার এক ছোট্ট এক বন্ধু। তার মনে নানা প্রশ্ন, তার অনেকগুলোই শুনলে চমকে উঠবে তোমরাও। কেমন উদ্ভট উদ্ভট প্রশ্ন তা শোন, যেমন, একটা বাসের সংগে একটা বাঘের লড়াই হলে কে জিতবে, অথবা একটা লরির সাথে যদি শূওরের লড়াই হয় তাহলেই বা কে জিতবে--এমনি সব প্রশ্ন।
তুমিই বল এমন সব কথার কোন উত্তর হয় ?
কিন্তু সেই ঋকই একদিন ধাঁ করে জিজ্ঞেস করে বসলো, সেদিন যে বললে সমুদ্রের জল বাষ্প হয়ে মেঘ হয় আর সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়, তাহলে সমুদ্রের জল নোনতা হলে বৃষ্টির জল নোনতা নয় কেন ?
এ প্রশ্নটা কি উড়িয়ে দেবার মত ? মোটেই নয়। তাই এড়িয়ে যাওয়া গেল না।
যতই বলি, এখন সময় নেই, পরে বলব ততই চেপে ধরে। এখনই শোনা চাইই চাই তার। অগত্যা কি আর করা।
তোমারও শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে ত ? ঠিক আছে। কিন্তু তাহলে ত আবার সেই রান্না ঘরে গিয়েই ঢুকতে হয়। কি রাজি ? এর আগেও ত অনেকবার গিয়েছি সেখানে, তাই না ? চল আর একবার যাই।
এবার মাকে বলে কয়ে একটা সসপ্যান নিয়ে নাও,আর এর মধ্যে অর্দ্ধেকের মত জল নাও। বড় এক চামচের মত নুন (লবন) ঐ জলে নিয়ে ভাল করে মেশাও যাতে সবটা মিশে যায়। একটু চেখে দেখ, জলটা নোনতা লাগবে।
এবার মা'কে বল গ্যাসের উনুন জ্বালিয়ে তাতে নুনজলটা চাপিয়ে দিতে। প্রথমে শোঁশোঁ আওয়াজ উঠবে, তারপর জলটা বুরবুর করে, শেষে টগবগ করে ফুটতে থাকবে। এই সময় দেখবে জল থেকে খুব ধোঁয়া উঠছে। ঠিক বললাম ? উঁহু , ভুল হল। কেন বলত ? নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার যে জল থেকে যে ধোঁয়া ওঠে আসলে তা ধোঁয়া নয়, সেটা জলীয়বাষ্প। ফুটন্ত জল থেকেই ঐ বাষ্প উঠছে। এ প্রসঙ্গে আগে বলেছি। তাইত ? না কি ?
এবার একটা কাজ করলে একটা কান্ড দেখতে পাবে। একখানা স্টিলের বড় থালা সাঁড়াশী দিয়ে ধরে সসপ্যানের ওপর এমন ভাবে ধর যাতে থালাটার একদিক একটু কাত হয়ে থাকে আর বাষ্প সরাসরি উঠে থালার গায়ে লাগে। নিজে না করাই ভাল, বরং মা'কেই একটু ধরে থাকতে বল।
কি দেখতে পাবে বলত ? প্রথমে থালার বাষ্প লাগা দিকটা ঘোলাটে হয়ে যাবে, তার পর বিন্দু বিন্দু জল জমতে শুরু করবে। কেননা থালাটা বাষ্পের তুলনায় ঠান্ডা, তাই গরম বাষ্প ঠান্ডার পরশে জলবিন্দুতে পরিণত হবে। এইভাবে বেশ কিছুটা জল জমলে জলবিন্দু গুলো বড় বড় ফোঁটার আকারে থালার গা যেদিকে কাত করা আছে সেদিক বেয়ে নীচে পড়তে থাকবে।
একটা পরিষ্কার বাটিতে এই জল সংগ্রহ কর। এবার একটু জল চেখে দেখত নোনতা কিনা ! কি ? নোনতা লাগছে ? মোটেই না। একদম সাধারন জলের মত ! সসপ্যানের জলটাও এখন একবার চাখ, দেখবে সেই নোনতাই রয়েছে।
ব্যাপারটা কি হল তাহলে ? একই জল ছিল ত! একবার নোনতা, আর একবার সাধারন জল--এটা কি রকম হল!
কি হল আসলে সেটা বলি। যখন নূনজলে তাপ দেওয়া হল আর সেটা ফুটতে শুরু করল তখন তা থেকে তাপ পেয়ে শুধু জলই বাষ্প হয়ে ওপরে উঠে গেল আর জলবিন্দুর আকারে থালাতে জমতে শুরু করল, তারপর বাটিতে জমল। নূন ত আর বাষ্প হয় নি, তাই সেটা সসপ্যানের জলেই থেকে গেল। সুতরাং বাটির জল সাধারন জলের মত হবে নাতো কি ! এখানে একটা কথা বলে রাখি। জলে নূন না মিশিয়ে চিনি মেশালেও একই ব্যাপার হত। নীল রঙের তুঁতে মিশিয়ে দিলেও একই ফল হবে, বাটিতে সংগ্রহ করা জল কিন্তু নীল না হয়ে সাধারন জলের মতই হবে। এই ধরনের ঘটনাকে বলে 'পাতন' প্রক্রিয়া। দূষিত জলকে এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা হয়। অসুখ হলে ইঞ্জেকশন দেবার সময় এই
জল ব্যাবহার করা হয়, ইংরাজীতে এর নাম distilled water বা পাতিত জল। এই পাতন করার জন্য অবশ্য আমি যে ভাবে বললাম তেমন করে হয় না, এর জন্য আলাদা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় যার নাম 'পাতনযন্ত্র'।
এখন ঋকের প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই।
সূর্যের তাপে সমুদ্রের নোনা জল থেকে জলটা বাষ্পিভুত হয়ে সোজা ওপরে উঠে যায়, আর ওপরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় সেই বাষ্প জমে জল হয়ে মেঘের আকারে জমা হয়।
এই জমা জল থেকেই না বৃষ্টি হয়! তাহলে আর বৃষ্টির জল নোনতা হবে কি করে, তোমরাই বল।
বৃষ্টির জল হয়ে গেল সাধারন জলের মত আর নূনটা পড়ে থাকল সমুদ্রের জলে। বৃষ্টির জলকে সাধারন জল বললাম বটে, ও জল কিন্তু একদমই সাধারন নয়, একেবারে বিশুদ্ধতম জল। এই জল নিশ্চিন্তে পান করা চলে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে। বৃষ্টি শুরু হলেই এই জল সংগ্রহ করা চলবে না, একটু পরে করতে হবে, কেননা প্রথমদিকের জলে বাতাসের ধুলোময়লা মিশে যেতে পারে। তাতে জল দূষিত হয়ে পড়বে।
তুমি বড় হয়ে যখন রসায়নের (chemistry) বই পড়বে তখন এ বিষয়ে আরও অনেককিছু জানতে পারবে।
দেখ, ঋকের সাথে সাথে তুমিও অনেক কিছু শিখে গেলে!
তাহলে ঋক যা বলে সবটাই উদ্ভট নয়।
কিছু জানতে হলে তুমিও প্রশ্ন করতে পার, সাধ্যমত উত্তর দেবার চেষ্টা করব, কেমন ?
সন্তোষ কুমার রায়
কোদালিয়া, কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সন্তোষ কুমার রায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
কলকাতায় প্রথম যুগের সিনেমা -পর্ব ২
(গত সংখ্যার পর)
ধীরে ধীরে ছবি তোলার রাজত্বেও একটা শৃঙ্খলা ও নিয়ম কানুনের পত্তন হল। যেমন তেমন করে ছবি তোলার বদলে ছবিরও কারখানার মত স্টুডিও তৈরি হল, যেখানে নিযুক্ত থাকতেন ক্যামেরাম্যান, সম্পাদক, অন্যান্য কলাকুশলী এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এরকম স্টুডিও বলতে আমাদের মনে আসে কলকাতার নিউ থিয়েটার্স, মহারাষ্ট্রের পুনেতে প্রভাত স্টুডিও আর বম্বে টকিজ, আর চেন্নাইয়ের চন্দ্রলেখার কথা। এই স্টুডিওগুলির ঘরানাই ছিল আলাদা আলাদা। বম্বে টকিজের হিমাংশু রায় আর দেবীকা রানীর ছবির সঙ্গে প্রভাত স্টুডিওর ধর্মমূলক ছবির তেমন কোন মিল ছিল না। যেমন, দক্ষিণের নাচ গান আর দেব-দেবী ভরা ছবির সাথে নিউ থিয়েটার্সের সাহিত্যধর্মী ছবির কোনও মিল ছিল না।
দেবীকা রানী
যাক, আমরা কলকাতায় ফিরে আসি। এসময়ে দেখতে পাব, শব্দ ও সনলাপ ব্যবহার করার সুযোগ বাংলা ছবিকে অনেকটাই পালটে দিয়েছে। এই বদলে দেওয়ার প্রথম বড়মাপের চিহ্ন ১৯৩৩ সালে তৈরি 'চন্ডীদাস'। মধ্যযুগের বাঙালি বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাসের সঙ্গে সমাজের নীচুতলার মানুষ রামি ধোপানির ভালবাসার গল্পটিকে সিনেমার পর্দায় নিয়ে এলেন দেবকী কুমার বসু। সেই যুগে, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে রাজনীতির স্তরে যে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে ,সেই ভাবনা এই ছায়াছবিকেও ছুঁয়ে গেছিল। 'সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই' - চন্ডীদাসের এই মর্মকথা সেদিন মানুষের মনকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছিল, যে আমাদের দেশে এই ছবিটিই প্রথম সিল্ভার জুবিলি করে।
যখন জনপ্রিয়তার কথাই বলা হল, তখন আমাদের ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়া 'দেবদাস' ছবিটির কথা বলতেই হবে। এই ছবি ৩০ দশকের মাঝামাঝি ডবল ভার্সানে (হিন্দি এবং বাংলাতে) তৈরি করা প্রথম ছবি ও আজকের ভাষা ব্যবহার করে বললে- সত্যিকারের ব্লক-বাস্টার। এই ছবিতেই আমরা প্রথম স্টার সিস্টেম বা নক্ষত্রব্যবস্থার সূচনা দেখলাম। আসামের জমিদার ও প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র প্রমথেশ বড়ুয়া বা বড়ুয়াসাহেব দর্শকের কাছে হয়ে উঠলেন ভালবাসার আঘাতে চুরমার হয়ে যাওয়া যুবকদের প্রতিনিধি। এই 'দেবদাস' ছবির যে কত পুণঃনির্মান হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবেনা। মাত্র কিছুদিন আগেইন তৈরি হয়েছে একই গল্পের ওপর ভিত্তি করে 'দেব-ডি' ছবিটি। আজ হয়ত অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু একসময়ে বড়ুয়াসাহেবের চলন বলন সব কিছুই সারা দেশে অনুকরণ করা হত।
প্রমথেশ বড়ুয়া আর যমুনা বড়ুয়া
দেবকী কুমার বসু এবং প্রমথেশ বড়ুয়া দুজনেই মূলতঃ নিউ থিয়েটার্সের ছাদের তলায় বার করতে পেরেছিলেন কিভাবে ছবিতে গল্প বলতে হয়। বড় বড় লেখকদের চিত্রনাট্য এবং সংলাপ রচনার কাজে ডেকে নিয়ে নিউ থিয়েটার্স তাঁদেরকে সেই সুযোগ করে দিল। সে যুগের অনেক বড় লেখকই- যেমন প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, সলিলানন্দ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, পরে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়- ছবির চিত্রনাট্য লেখার কাজে মন দেওয়ায় আমাদের সিনেমাতে একটা ভাল গল্প বলার ঘরানা গড়ে ওঠে।
তার সঙ্গে সঙ্গে প্রমথেশ বড়ুয়ার ছবিতে সম্পাদনার বৈশিষ্ট ও ইন্ডোর শুটিং এ আলোর ব্যবহার বেশ অভিনব ভিল। ঋত্বিক ঘটক একথার উল্লেখ করেছেন। যেমন সত্যজিৎ রায় স্বীকার করেছেন দেবকী কুমার বসুর ছবিতে নতুনত্বের কথা।যদি আমরা বাংলা ছবির ইতিহাসের এই সব পথীকৃৎদের কথা ভুলে যাই, তাহলে ইতিহাসকেই তো ঠিক ভাবে চিনতে পারব না।
এইরকমই আরেকটি প্রচন্ড জনপ্রিয় ছবি ছিল ১৯৩৭ সালে ভারতলক্ষ্মী পিকচার্সের পক্ষ থেকে মধু বসুর তৈরি করা 'আলিবাবা' ছবিটি। এই ছবির "ছি ছি এত্তা জঞ্জাল" গানটি আজ পর্যন্ত আমরা গুন গুন করে গাই।
কানন দেবী
কারিগরী দিক থেকেও যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছিল। মধু বসু রিফ্লেক্টর আর ব্যাক লাইট খুব সফল্ভাবে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। পরিচালক হিসাবে বড়ুয়া সাহেবের ছিল হলিউড ঘরানার আলোকসম্পাতের প্রতি তীব্র মনো্যোগ। ইতিমধ্যে নীতিন বসু বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক প্রবর্তন করেন। ফলে খুব সহজেই বিখ্যাত গায়ক গায়িকাদের ঠোঁটে বসিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। ছবিঘরগুলি আর শুধু বিদেশী ছবির আধিপত্যে থাকল না, আমাদের বাঙালি পরিবারের ভাই বোন বন্ধুরা সবাই বড়ুয়াসাহেব আর কাননবালার ভক্ত হয়ে উঠলেন।
বলতেই হবে, এত কিছুর পরেও সিনেমা ঠিক প্রকৃত অর্থে শিল্প হয়ে ওঠেনি। কিন্তু চল্লিশের দশকে এল কিছু রূপান্তর। মুক্তি পেল প্রথমে ১৯৪৪ সালে 'উদয়ের পথে', ১৯৮৭ এ 'কল্পনা' আর ১৯৫১ সালে 'ছিন্নমূল' । সেই রূপান্তরের গল্প পরের পর্বে।
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক
চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবিঃ
উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত